Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 11

সব

English

 বাংলাদেশ

 আন্তর্জাতিক

 অর্থনীতি

 মতামত

 খেলা

 বিনোদন

 উত্তর আমেরিকা

 ভিডিও

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
 গ্যাজেটস
 খবর
 রিভিউ
 বিজ্ঞান
 ফ্রিল্যান্সিং


 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংবাদ

বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়


মো. সোহরাব হোসেন
২৮ জুন ২০২০, ০৯:৫৪
আপডেট: ২৮ জুন ২০২০, ১০:০৭

প্রিন্ট সংস্করণ

  

র‌্যাবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ চ্যাপটারের


জেনারেল সেক্রেটারি সোহরাব হোসেন।করোনাভাইরাস দ্বারা সংঘটিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ
কোভিড-১৯। এর সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি কিন্তু মৃত্যুর হার কম। করোনা একটি দুর্দান্ত
শক্তিশালী ভাইরাস, যা একই সঙ্গে মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে
পারে। তবে এটি নিউমোনিয়া, এজমা, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের
জন্য বেশি বিপজ্জনক। করোনা রোগীর মুখ, নাক ও চোখ দিয়ে এ ভাইরাস সুস্থ মানবদেহে সংক্রমিত
হয় এবং একই সঙ্গে আক্রান্ত রোগী রেসপিরেটরি, কার্ডিয়াক, রেনাল ও গ্যাস্ট্রো-ইনটেসটিনাল
সিস্টেমকে দ্রুত আক্রমণ ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিউমোনিয়া, অ্যাজমা,
হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, যাদের সংখ্যা মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ।
বাকি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় তাদের খুব একটা ক্ষতি
করতে পারে না এবং সামান্য চিকিৎসা ও মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী পথ্যাপথ্য
খেলেই ভালো হয়ে যায়। করোনা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর
অধিকাংশ দেশে তা বিস্তার লাভ করেছে। সারা বিশ্বে ৯৯ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত
এবং প্রায় ৫ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন আক্রান্ত এবং ১
হাজার ৬৯৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর)। করোনা সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে
লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বৃদ্ধির শেষ কোথায়, তা সবার অজানা।
করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মিছিল যেভাবে দীর্ঘ হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ খুব দ্রুত পৃথিবীর
অন্যান্য অধিক সংক্রমণশীল দেশের কাতারে চলে আসছে। বিজ্ঞানসম্মত কারণেই হয়তো ওই সব
দেশে করোনায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তবে করোনা–মহাযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য তাদের মতো
যদি আমাদের সমরাস্ত্র থাকত, তাহলে এ দেশে করোনা রোগীর মৃত্যুসংখ্যা হয়তো এত নাও হতে
পারত। কিন্তু সামনের দিনে যে ভয়াবহ অবস্থা ঘটতে যাচ্ছে, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। কোনো
উপায়ই কি নেই করোনার এ ধ্বংসলীলা বন্ধ করার?

কয়েক দিন আগে প্রথিতযশা বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রাশিদুল হাসানের (চেয়ারম্যান
ইনজিনিয়াস হেলথ কেয়ার লিমিটেড) একটি উপস্থাপনা দেখে শত কষ্টের মধ্যেও একটু আশার
আলো যেন দেখলাম। তিনি যে পদক্ষেপগুলোর কথা বললেন, কী করে বাংলাদেশে করোনার
মৃত্যুহার শূন্যে নামানো যায় এবং কী করে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে করোনা সংক্রমণের চক্র ভেঙে এর
বিস্তার রোধ করা যায়। আর তা হলো তিনি র‍্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করে দ্রুত করোনা রোগী
শনাক্ত করে তার চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। এ কৌশল প্রয়োগ করে অনেক রোগীকে তিনি
ভালো করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, যেমন: দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স,
স্পেন, ইতালি, তুরস্ক, ইরান ইত্যাদি র‍্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করছে।
যেসব দেশ করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে, তাদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর,
তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশ করোনা রোগী দ্রুত পরীক্ষা এবং পৃথক থাকা নীতি
অবলম্বন করেই সফল হয়েছে। এটি সত্য যে বিভিন্ন প্যারামিটারে করোনা নিরূপণ, প্রতিরোধ ও
চিকিৎসা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতা পূর্বাপেক্ষা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আরটি পিসিআর
পরীক্ষা একটি উত্তম ব্যবস্থা, তাতেও কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু যে হারে মানুষ আক্রান্ত
হচ্ছে, তাতে এর মতো একটি ল্যাবরেটরিভিত্তিক পরীক্ষাব্যবস্থা দেশের সর্বত্র আক্রান্ত সব করোনা
রোগীর জন্য উন্মুক্ত করা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে গিয়ে
জনবহুল পরিবেশে সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তি বিলম্বে
রিপোর্ট পাওয়ার কারণে চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হয় এবং সে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল
হয়ে পড়ে। বিড়ম্বনার ভয়ে পরীক্ষা না করে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে। প্রফেসর
রাশিদুল হাসান আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী অনেকটা দেশীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা
করেই রোগী ভালো করছেন।

করোনা রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুহার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে মনে হয়, এটি মোকাবিলায় পরীক্ষা
ও চিকিৎসাব্যবস্থার চলমান কৌশলে পরিবর্তন আনা বিশেষ প্রয়োজন। আমি এ দেশের একজন ক্ষুদ্র
অথচ সচেতন নাগরিক হিসেবে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, করোনা নিয়ন্ত্রণ জাতীয় ও
টেকনিক্যাল কমিটি, সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু প্রস্তাব করছি, যা অনেকাংশে
সরকারিভাবেও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু করোনার বিস্তার রোধ ও মৃত্যুর হার হ্রাস না পাওয়ায় এর
আশঙ্কাজনক অবস্থা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে আমার প্রস্তাবগুলো গ্রহণযোগ্য
বলে বিবেচিত হলে তা বাস্তবায়নে সবিনয় অনুরোধ করছি।

ক. কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধ এবং মৃত্যুর হার শূন্যতে নামানো:

করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি ‘টাইম বাউন্ড রোডম্যাপ’ প্রস্তুত করা এবং তা বাস্তবায়ন করার
জন্য প্রখ্যাত ভাইরোলোজিস্ট, বক্ষব্যাধি, মেডিসিন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে করোনা কন্ট্রোল
অ্যাকশন সাবকমিটি করা, যারা প্রয়োজনীয় এসওপি প্রস্তুত করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়
বাস্তবায়নপূর্বক রোডম্যাপ অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে করোনার সংক্রমণ রোধ ও মৃত্যুর হার
শূন্যতে নামানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

খ. দ্রুত করোনা রোগী শনাক্তকরণে র‍্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করা:

আরটিপিসিআর মেশিনে করোনা রোগী শনাক্তের পাশাপাশি করোনা র‍্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করে
দ্রুত রোগ শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান ও রোগী পৃথক করে এক ব্যক্তি থেকে অন্য
ব্যক্তিতে এর বিস্তার রোধ করা। এ ক্ষেত্রে দেশীয়ভাবে যদি টেস্ট কিট সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়, তবে
বিদেশ থেকে দ্রুত তা আমদানি করে সব রোগীর পরীক্ষার জন্য উন্মুক্ত করা। এতে সন্দেহভাজন
রোগী সহজে রোগ শনাক্ত করে নিজ থেকেই পৃথক থাকতে পারবে এবং অন্যকে রোগ ছড়াবে না।
আরটিপিসিআরের ওপর চাপ কমবে। করোনা বিস্তার হ্রাস পাবে। এ রোগ সংক্রমণের প্রাথমিক
অবস্থায় রোগীর শারীরিক অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালো থাকে। সুতরাং প্রাথমিক অবস্থায় যথাযথ
চিকিৎসা প্রদান করা হলে যেকোনো রোগীর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ফলে মৃত্যুর হারও
কমবে। করোনায় টেস্ট কিট ব্যবহার করার আরেকটা সুবিধা, এ প্রক্রিয়ায় রোগীর দেহে করোনা
অ্যান্টিবডি উপস্থিতি নিরূপণ করা হয়। সুতরাং ওই রোগী আরোগ্যের পর তালিকাভুক্ত করে তাদের
রক্ত সংগ্রহপূর্বক প্লাজমা থেরাপি প্রস্তুত করা সহজ হবে। মানুষ যদি ফার্মেসি থেকে করোনা টেস্ট
কিট ক্রয় করে নিজ ঘরে বসে, ফার্মেসিতে বা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করতে পারে,
তাহলে আক্রান্ত হলেও নিজই পৃথক থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবে। রোগাবস্থা বেশি খারাপ
হলে দ্রুত রেফারেল হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে পারবে।

গ. দেশব্যাপী জটিল রোগীর দ্রুত চিকিৎসা প্রদানে জেলা সদর হাসপাতালগুলোকে করোনা
রেফারেল হাসপাতালে উন্নীত করা:

বড় শহর ছাড়াও বিশেষ করে জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন ও
ভেন্টিলেশন সুযোগ সমৃদ্ধ করে করোনা রেফারেল হাসপাতালে উন্নীত করে দেশের সর্বত্র জটিল
করোনা রোগীর দ্রুত সুচিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

ঘ. দেশের সব এলাকা থেকে করোনা রোগী খুঁজে বের করতে পর্যাপ্ত ভলান্টিয়ার নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ
প্রদান:

হাসপাতাল ছাড়াও (প্রকাশ্য বা গোপনে) দেশের সব প্রান্তে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানরত সব
রোগীকে ট্রেসিং ও ট্র্যাকিং পদ্ধতিতে সরকারি পরিসংখ্যানের আওতাভুক্ত করে সুচিকিৎসা নিশ্চিত
করা। যাতে বিনা চিকিৎসা বা অপচিকিৎসায় কোনো রোগী মারা না যায় এবং পরিবার, সমাজ বা
জনগোষ্ঠীতে কোনো রোগীই রোগ ছড়াতে না পারে, এর জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি কর্মীদের
পাশাপাশি দেশব্যাপী সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে ভলান্টিয়ার
হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা, যারা শহর, বন্দর, গ্রাম, সর্বত্র বিচরণ করে করোনা রোগীর তথ্য সংগ্রহ,
তাদের চিকিৎসা ও আরোগ্যলাভে সহায়তা প্রদান করবে এবং জনসাধারণকে মাস্ক ধারণ ও
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সাবান, পানি দিয়ে হাত ধুতে অভ্যস্ত করাবে।

ঙ. স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে করোনা নিরূপক যন্ত্র সরবরাহ:


করোনা রোগীর শরীরে রোগ তীব্রতা নিরূপণের জন্য অক্সিজেন কনসেনট্রেশন নিরূপক যন্ত্র বা
অক্সিমিটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি উপজেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং বিশেষ করে সিটি
করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড লেভেলে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোয় সরবরাহ করা। যাতে সন্দেহভাজন
যেকোনো রোগীর জন্য প্রাথমিক পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণে হাসপাতালে গমন সহজতর
হয়। এভাবে একসময় করোনায় মৃত্যুর হার এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে করোনা বিস্তার নিয়ন্ত্রণে
আসবে।

চ. বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে বিদ্যমান
অব্যবস্থা দূর করা:

করোনায় সাধারণ মানুষ ছাড়াও চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিক প্রভৃতি পেশাজীবী আক্রান্ত
হচ্ছেন, যা করোনাযুদ্ধে সংগ্রাম করার অন্তরায়। তাঁদের এভাবে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই
যুক্তিসংগত কোনো কারণ রয়েছে। সুতরাং তা অনুসন্ধান করে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক।
সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যবিধি না মেনে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ
যেমন অজ্ঞতা, অভাব, অভ্যাস ও মানসম্পন্ন সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা। এসব কারণ অনুসন্ধান করে
তাদের অজ্ঞতা দূর করতে সচেতন করা, অভাবী ও রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয়, স্থানীয়
সরকার প্রতিষ্ঠান ও সামাজিকভাবে তাদের খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান। স্বাস্থ্যবিধি ভাঙতে
অভ্যস্ত ব্যক্তিদের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করে তা মানতে বাধ্য করা।

বর্তমান বিশ্বে করোনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়া সবচেয়ে বেশি সফল দেশ। সে দেশে অর্জিত
সফলতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিম্নরূপ:

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা সংক্রমণ প্রথম নিরূপিত হয় ২০ জানুয়ারি। ২৭ জানুয়ারি কোরিয়া ডিজিস
কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন সেন্টার (কেসিডিসি) কর্তৃক সে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ওষুধ কোম্পানির
নির্বাহী অফিসার এবং অন্যান্য সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের একত্র করে করোনা
মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও রোডম্যাপ প্রস্তুতে সহযোগিতা কামনা করা হয়। ফলে তারা
করোনাযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী, যেমন: সবার জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী, টেস্ট
কিট, দ্রুত রোগ নিরূপণের অন্যান্য দ্রব্য এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুত করা
শুরু করে। টেস্ট কিট প্রস্তুতে প্রায় ৩০টি কোম্পানিকে সরকারি লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যারা নিজ
দেশের চাহিদা পূরণ করে ১২০টি দেশে তা রপ্তানি করছে। করোনা সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে
সব নাগরিক মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর অতিশয় প্রাধান্য দিতে শুরু
করে। টেস্ট কিট দিয়ে রোগ নিরূপণ করাকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। করোনা শনাক্তকরণে
সন্দেহভাজন জনসাধারণকে এক জায়গায় একত্র না করে ড্রাইভ থ্রু ও ওয়াক থ্রু পদ্ধতিতে রাস্তাঘাট,
দোকানপাট, বসতবাড়ি, অফিস-আদালত, সর্বত্র মানুষের করোনা পরীক্ষা করে রোগ নিরূপণ করা
হয়। এর ফলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটেই প্রতিটি রোগীর রোগ শনাক্তকরণ সম্ভব হয়। এভাবে প্রায় তিন
সপ্তাহে ২ লাখ ৭০ হাজার জনের করোনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৭২৮ জন রোগী শনাক্ত করা হয়
এবং আক্রান্ত রোগীদের পৃথক করে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। রোগীর দেহে রোগ তীব্রতা
নিরূপণে চেস্ট এক্স-রে এআই ইমেজ সাপোর্ট ডিসিশন টুলের সাহায্যে কয়েক সেকেন্ডেই ফুসফুসের
সংক্রমণ অবস্থা নিরূপণ করা হয় এবং আক্রান্ত রোগীদের মৃদু সংক্রমণ, মধ্যম অবস্থা, তীব্র ও অতি
তীব্র আক্রান্ত প্রভৃতি শ্রেণিতে বিভক্ত করে তাদের অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে ৮
হাজার ৭১৭ জনকে (৮১%) রোগমুক্ত করা হয় এবং ২৪২ জন (২.৩%) কোভিড-১৯ রোগী মারা
যায়। যখন (২৬ এপ্রিল ২০২০) যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৫০ হাজার এবং স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যে
২০ হাজারের অধিক মানুষ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এভাবে সে দেশে সার্বিক
জীবনযাত্রা সচল রেখে কোনো ধরনের লকডাউন না দিয়ে জনগণ সঠিক নিয়মানুবর্তিতা চর্চা করেই
প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ কোটি জনসংখ্যা–অধ্যুষিত দক্ষিণ কোরিয়া করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে
সক্ষম হয়।

করোনা নিয়ন্ত্রণ একটি ভয়ংকর যুদ্ধ, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনীয়। বঙ্গবন্ধুর অমর বাণী,
‘তোমাদের যা কিছু আছে, তা–ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’—এ আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র
জাতি স্বাধীনতার জন্য এক মোহনায় উপনীত ও মরণপণ যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিল আর
অর্জিত হয়েছিল আজন্মকালের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। অনুরূপভাবে করোনাযুদ্ধেও আমাদের সবাইকে
অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির একাংশ যেমন সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ
করেছিল, আরেকাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রশ্রয় ও সেবাশুশ্রূষা করে উজ্জীবিত করেছিল এবং
অনেকেই আশ্রয়হীন উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও আশ্রয় প্রদান করেছিল। করোনাযুদ্ধেও আমাদের
সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজকে, পরিবার এবং সমাজকে রোগমুক্ত রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, করোনা
রোগীকে চিকিৎসা প্রদানে সার্বিক সহযোগিতা এবং আক্রান্ত পরিবার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও
আর্থিক সাহায্য প্রদান করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সহযোগিতা করতে হবে। করোনা দেশ থেকে অল্প
সময়ে চলে যাবে—এ ধারণা করা দুরূহ এবং সব রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসসেবা দেওয়াওি
সম্ভব নয়। কাজেই বঙ্গবন্ধুর ‘তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গোড়ে
তোলো’—এ আহ্বানকে সামনে রেখে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ঘরে ঘরে করোনা
চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই ইনশা আল্লাহ দেশ করোনামুক্ত হবে এবং ‘এ আঁধার
কেটে যাবে একদিন’—মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ উক্তি বাস্তবতা লাভ করবে।

মানুষের জন্য করিব কাজ, যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, 


আল্লাহর কাছে করিব প্রার্থনা, মানুষকে রক্ষা করেই বৃদ্ধি করুন এ দেশের সম্মান, 
মানুষ ও সৃষ্টির সেবা করেই আখিরাতে জান্নাতে করে নেব স্থান, এ হলো মোর সুদৃঢ় পণ।
লেখক: ডা. মো. সোহরাব হোসেন
জেনারেল সেক্রেটারি, র‌্যাবিস ইন এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ চ্যাপটার
dr.sohrabhossain@gmail.com
 
আরও সংবাদ

বিষয়:
গবেষণাকরোনাভাইরাস

লামার রক্ত থেকে করোনার সম্ভাব‌্য থেরাপি উদ্ভাবন

করোনার ভ্যাকসিন আর মাত্র ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ: যুক্তরাষ্ট্র

করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিরা প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছেন


মহামারিতে কার্বন নিঃসরণ রেকর্ড পরিমাণ কমেছে
মন্তব্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন অথবা নিবন্ধন করুন

গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে ঢাকায় আনা হয়েছে


আলোচিত রিজেন্ট কেলেঙ্কারির মূল হোতা মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে গ্রেপ্তারের...

বাংলাদেশ

এক মাসের মধ্যে টিকা আনার চেষ্টায় রাশিয়া


করোনাভাইরাসের মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এর প্রতিষেধক বা টিকা...

আন্তর্জাতিক

গোঁফ কামিয়ে বোরকা পরে পালাচ্ছিলে সাহেদ : র‍্যাব


রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম সাতক্ষীরা সীমান্ত...

বাংলাদেশ

রিজেন্ট মামলার প্রধান আসামি সাহেদ গ্রেপ্তার


বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতাল প্রতারণা মামলার প্রধান পলাতক আসামি ও রিজেন্ট...

বাংলাদেশ

লকডাউন ওয়ারী: ১৩ নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনই 'পজিটিভ'


পুরান ঢাকার ওয়ারীর লকডাউন এলাকায় গত রোববার করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নমুনা...

বাংলাদেশ
লতিফুর রহমান একজন বিরল ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা
বেশির ভাগ যখন অসৎ পথে দ্রুত ধনী হওয়ার পথে হেঁটেছে, তখন লতিফুর রহমান প্রাধান্য...

বাংলাদেশ

সিরিজ জিতলে হোল্ডাররা পাবেন ২৫ লাখ টাকা


সাউদম্পটানে দুর্দান্ত এক জয় পেয়ে ৩ টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে...

খেলা

এন্ড্রু কিশোরের শেষ বিদায় আজ


রাজশাহীতে এন্ড্রু কিশোরের আজই শেষ দিন। হিমঘর থেকে রাজশাহী সিটি চার্চে, সেখান...

বিনোদন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    

 প্রচ্ছদ
 বাংলাদেশ
 আন্তর্জাতিক
 অর্থনীতি
 খেলা
 মতামত
 বিনোদন
 ফিচার
 জীবনযাপন
 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
 অন্য আলো
 পাঁচমিশালি
 আমরা
 শিক্ষা
 ছবি
 ভিডিও
 আর্কাইভ
 বিজ্ঞাপন
 সার্কুলেশন
 পবিত্র হজ
 উত্তর আমেরিকা

 ২২২২১

 ট্রাস্ট

 প্রতিচিন্তা

 কিশোর আলো

 abc রেডিও

 প্রথমা
Prothom Alo is the highest circulated and most read newspaper in Bangladesh. The online portal
of Prothom Alo is the most visited Bangladeshi and Bengali website in the world.
Privacy Policy | Terms of Use
© স্বত্ব প্রথম আলো ১৯৯৮ - ২০২০

সম্পাদক ও প্রকাশক: মতিউর রহমান

প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০-২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫

ফোন: ৮১৮০০৭৮-৮১, ফ্যাক্স: ৫৫০১২২০০, ৫৫০১২২১১ ইমেইল: info@prothomalo.com


By using this site, you agree to our updated Privacy Policy and our Terms of Use. OK

You might also like