Final - Working Paper For Virtual IMM On Libya Issue

You might also like

Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 4

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আফ্রিকা অনুবিভাগ
ঢাকা

বিষয়ঃ লিবিয়ায় সংঘটিত সাম্প্রতিক নৃশংস হত্যাকান্ডে ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত এবং একাধিক বাংলাদেশি
আহত হওয়ার প্রেক্ষিতে লিবীয় রুট ব্যবহার করে অবৈধ মানব পাচার ও মানবিক বিপর্যয় রোধে সমন্বিত উদ্যোগ
গ্রহণকল্পে ভার্চু য়াল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার কার্যপত্র।

সভার তারিখঃ বুধবার, ০৩ জুন ২০২০


সভাপতিঃরাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব

সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী মানব পাচার ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে যার কারণে প্রচু র প্রাণহানি ও
ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমাগতভাবে স্থল এবং জলপথে বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে (যেমন,
ভারত,নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য, তু রস্ক,মরক্কো, আলজেরিয়া,সুদান ইত্যাদি) মানব পাচার সংঘটিত হচ্ছে এবং
লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার জলসীমায় প্রায়শঃ নৌকাডু বিসহ এতদঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অপহরণ-হত্যাকান্ডের মতো
বিবিধ মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।

০২। গত ২৮ মে ২০২০ তারিখে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদাহ শহরে নৃশংস হত্যাকান্ডে দুঃখজনকভাবে ২৬
জন বাংলাদেশি প্রাণ হারান। এই ঘটনায় ১১ জন বাংলাদেশি মারাত্নকভাবে আহত হন এবং একজন বাংলাদেশি
প্রাণে বেঁচে আত্মগোপন করেন। মর্মান্তিক ঘটনার পরপরই দূতাবাস থেকে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল
দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দূতাবাসকে জানাতে এবং ঘটনার সাথে যুক্ত অপরাধীদের বিচারেরর মুখোমুখি করা
ও হতাহত বাংলাদেশিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া, মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের
সুষ্ঠু তদন্ত এবং মৃতদেহের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নির্দে শনা না পাওয়া পর্যন্ত নিহত বাংলাদেশিদের মৃতদেহসমূহ
সংরক্ষণ করার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু গত ২৯ মে ২০২০ তারিখ বিকালে নিহত সকল অভিবাসীর মৃতদেহ
বাংলাদেশ দূতাবাসকে না জানিয়ে স্থানীয়ভাবে মিজদাহ শহরে দাফন করা হয়। লিবিয়ায় চলমান যুদ্ধ, করোনা
পরিস্থিতি এবং স্থানীয় মিলিশিয়াদের চাপে মৃতদেহসমূহ ত্রিপলিতে প্রেরণ না করে বা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন

1
আফ্রিকা অনুবিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
না নিয়ে স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়েছে। লিবিয়ান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃ পক্ষের সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাস
কর্তৃ ক আত্মগোপনে থাকা ০১ জন বাংলাদেশি এবং আহত ১১ জন বাংলাদেশিকে ত্রিপলীতে স্থানান্তরপূর্বক
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

০৩। উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সাল থেকে লিবিয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে দেশটি কার্যত পশ্চিমাঞ্চলীয় এবং
পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী দুই সরকারে বিভক্ত হয়ে যায় এবং গৃহযুদ্ধ ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এই অবস্থার
মধ্যেই গত ০৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল খলিফা হাফতার
প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজধানী ত্রিপলী আক্রমণ করে। বর্ত মানে ত্রিপলী দখলের
যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী মরণঘাতী যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে লিবিয়ার সীমানার নিরাপত্তা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এ
সুযোগে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র লিবিয়াকে ইউরোপ গমনের ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করে
আসছে। বাংলাদেশের কিছু লোক এই আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

০৪। সাধারণত পাচারকারীরা প্রতি বছর একটি নির্দি ষ্ট মৌসুমে (মে মাস হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময়ে) সাগর
অনুকূ ল থাকায় লিবিয়ার উপকূ ল হতে অভিবাসীদের ভূ -মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রেরণের অপচেষ্টা
চালিয়ে থাকে। এছাড়া, লিবিয়া হতে ইউরোপ গমনের মূল ট্রানজিট হিসাবে বিবেচিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জোয়ারা/
সাবরাতা শহরে মানবপাচারকারী বর্ত মানে সক্রিয় হয়েছে। ফলে প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের
প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও পাচারকারীরা সাগর পথে ইউরোপে প্রেরণ অব্যাহত রেখেছে। আইওএমসহ আন্তর্জাতিক
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী এসকল অভিবাসীদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আরো অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বর্ত মানে সাগর পথে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার
অপেক্ষায় আছে, যারা মূলত পাচারকারীদের দেশীয় এজেন্টদের সহায়তায় করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পূর্বেই
লিবিয়ায় আগমন করেছে। এমতাবস্থায়, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশিদের লিবিয়া হতে ভূ মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে
ইউরোপ গমনের প্রচেষ্টার হার বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর ন্যায় তাদের মধ্যে
অনেকেই নৌকাডু বির দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।

০৫। দূতাবাসের পক্ষ হতে মিজদার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশিদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদেরকে দেশ
থেকে লিবিয়া পর্যন্ত আনয়নকারী বিভিন্ন দালাল ও এজেন্টের যে সকল তথ্য পাওয়া গেছে তা দূতাবাস অত্র
মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। এ সকল তথ্য যাচাই-বাছাইপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃ ক

2
আফ্রিকা অনুবিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পূর্বের ঘটনাসমূহে বিভিন্ন পাচারকারী চক্রের হাত থেকে
উদ্ধারকৃ ত বাংলাদেশিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণপূর্বক তাদের পাচারকারী দালাল এবং দেশীয় বিভিন্ন এজেন্টদের নাম
ঠিকানাসহ প্রতিবেদন দূতাবাস কর্তৃ ক প্রেরণ করা হয়েছে। তবে দেশি এবং বিদেশি দালাল চক্র শক্তিশালী, সুচতু র
এবং ক্ষেত্রবিশেষে তারা ভয়ঙ্কর। এছাড়া, লিবিয়ায় সক্রিয় বাংলাদেশি এজেন্ট/দালাল চক্রের একটি তালিকা
ইতিপূর্বে ঢাকার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

০৬। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ৩৭ হাজার
বাংলাদেশিকে জরুরিভিত্তিতে দেশে ফেরত আনা হয়। পরবর্তীতে, বিভিন্ন সময়ে লিবিয়া সরকার কর্তৃ ক
বাংলাদেশি ডাক্তার ও নার্স নিয়োগের প্রস্তাব পেলেও বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ২০১৫ সাল
থেকে লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের যাওয়া সরকারিভাবে বন্ধ রাখা হয়। তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন দুষ্ট চক্র দেশে এবং বিদেশে
তাদের নেটওয়ার্কে র প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বনপূর্বক বাংলাদেশের বেকার যুবকদের ইউরোপে
প্রেরণে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন দেশ এবং রুট হয়ে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বেনগাজী দিয়ে তাদেরকে লিবিয়ায় এনে থাকে।
এ সব বিবেচনায়, বেকার যুবকদের বড় অংকের অর্থ খরচ করে (প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা), জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে, বৈধ কাজের নিশ্চয়তা ছাড়া এবং অবৈধভাবে প্রবাস জীবন বেছে নেবার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ
সামগ্রিকভাবে সরকার কীভাবে নিরুৎসাহিত করতে পারে তা সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে নিরুপন করা অতীব
জরুরি।

০৭। এছাড়াও, অবৈধ প্রবাস জীবনের ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা নিরুৎসাহিতকরণে নিম্নলিখিত বিয়য়গুলো বিবেচনা
করা যেতে পারেঃ

- সামগ্রিক বিষয়টির কু ফল সম্পর্কে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো যেতে পারে।

- বিদেশ গমনেচ্ছু বেকার যুবকদের তালিকা প্রণয়ন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে গমনেচ্ছু বেকার যুবকদের গতিবিধি
সম্পর্কে অবগত থাকা এবং অস্বাভাবিকতা (যেমন নির্দি ষ্ট সময়ের জন্য নিখোঁজ ব্যক্তির ক্ষেত্রে) পরিলক্ষিত হলে
তা আইন শৃংখলা বাহিনীকে অবহিতকরণ।

- এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বিভিন্ন পাচারকারী চক্রের হাত থেকে উদ্ধারকৃ ত বাংলাদেশিদের সাক্ষাৎকার থেকে
প্রতীয়মান হয় যে, তারা বাংলাদেশের নির্দি ষ্ট কয়েকটি জেলা, যেমন মাদারিপুর, শরিয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও

3
আফ্রিকা অনুবিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আগত এবং তাদের বেশিরভাগ এর মূল গন্তব্য বিভিন্ন পথ ঘুরে ইতালি পৌঁছানো। এক্ষেত্রে এ
অঞ্চলগুলোকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে এতদঞ্চলের বিদেশ গমনেচ্ছু তরুণ-যুবকদের তালিকা
প্রণয়নপূর্বক স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের নিরুৎসাহিত করণের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।

- বিমান বন্দরে বহিরাগমনের বিষয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থললবন্দরসমূহে বহিরাগমনের সময় প্রয়োজনীয়
ডকু মেন্টসমূহ সঠিকভাবে যাচাইকরণ।

- ঢাকা থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পূর্বে সঠিকভাবে তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন, বিশেষ করে কাজের
উদ্দেশ্যে যারা ভিজিট ভিসায় বিভিন্ন দেশে যায়।

- প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দূতাবাসের ছাড়পত্র আছে কিনা দেখা যেতে পারে।

- যেহেতু লিবিয়া যাওয়া সরকারিভাবে বন্ধ, তাই এক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গন্তব্যস্থল সম্পর্কে তথ্য যাচাই
করা প্রয়োজন।

- মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে দূতাবাস প্রদত্ত তালিকা ও ভিকটিমদের তথ্য অনুযায়ী যথাযথভাবে অনুসন্ধানপূর্বক
কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

*****

4
আফ্রিকা অনুবিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

You might also like