Download as doc, pdf, or txt
Download as doc, pdf, or txt
You are on page 1of 12

ফরয_সালাতের_পরে_সম্মিলিত_মুনাজাত

-----------------------------------------------------------------
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত শেষে দো‘আ কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত।
তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দো‘আ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক
হলো এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দো‘আ করা হচ্ছে, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বা তাঁর
সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দো‘আ করেছিলেন কি না?
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের
দেশের লোকদের সাধারণতঃ তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়।
🏷 যারা সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছু ক্ষণ বিভিন্ন যিকির-আযকার আদায় করেন যা
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
🏷 যারা সালাম ফিরানোর পর কোনো যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নত
সালাত আদায়ের জন্য।
🏷 যারা সালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সাথে একত্রে মুনাজাত করেন। মুনাজাত
শেষ হওয়ার পর সুন্নত সালাত আদায় করেন।
আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের সমর্থনে কোনো না কোনো দলীল প্রমাণ
রয়েছে।
💡 💡 💡#প্রথম_দলের_প্রমাণ: 💡 💡 💡
প্রথম দলের দলিল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহলো বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের
পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। যা আল্লাহর
রাসূল (‫ )ﷺ‬ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে
কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক সংকলন করেছেন।
💡 💡 💡#দ্বিতীয়_দলের_প্রমাণ: 💡 💡 💡
দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হলো এই হাদীসটি:
🔵 আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬যখন সালাম
ফিরাতেন তখন ‘আল্লাহুম্মা আনতাসসালাম ওয়ামিনকাসসালাম তাবারাকতা ইয়া যালজালালি
ওয়াল ইকরাম’ পড়তে যতটু কু সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় বসতেন না।”
📚(তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকিরটু কু আদায় করতে যতটু কু সময় লাগে এর
চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আসলে এ
হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।
হাদীসটির ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহর রাসূল (‫ )ﷺ‬যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি
সালাম ফিরানোর পর এতটু কু সময় মাত্র কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লীদের দিকে
মুখ ফিরিয়ে বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরয সালাতের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে
বসতেন তা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। 📚(মজমু আল ফাতাওয়া : ইমাম ইবনু তাইমিয়া)
সুতরাং এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত হয় না যে, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬সালাম
ফিরিয়ে এ দো‘আটু কু পড়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নত সালাত আদায়ের জন্য।
ফরয সালাত আদায়ের পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল বর্জ ন করে তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের
জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নত নয়। বরং সুন্নত হলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যিকির,
দো‘আ, তাসবীহ, তাহলীল সাধ্য মত আদায় করে তারপর সুন্নত আদায় করা।
💡 💡 💡#তৃ তীয়_দলের_প্রমাণ: 💡 💡 💡
তৃ তীয় দল যারা ফরয সালাতের পর সম্মিলিত ভাবে (জামাআতের সাথে) মুনাজাত করেন
তাদের দলিল হলো ঐ সকল হাদীস যাতে সালাত শেষে দো‘আ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং
দো‘আ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস
থেকে সরাসরি অন্য কোনো প্রমাণ নেই। এমন কোনো হাদীস তারা পেশ করতে পারবেন না
যাতে দেখা যাবে রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬প্রত্যেক সালাত জামা‘আতের সাথে আদায়
শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তু লে মুনাজাত করেছেন।
তারা যে সকল হাদীস প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চান তার শিরোনাম হলো,
ِ ‫صلَ َوا‬
‫ت‬ َّ ‫ اَل ُّدعَا ُء ُدب َُر ال‬،‫ت‬
ِ ‫صلَ َوا‬
َّ ‫ْب ال‬َ ‫ال ُّدعَا ُء َعقِي‬
তারা মনে করে নিয়েছেন আকীবাস সালাত ও দুবুরাস সালাত অর্থ সালাম ফিরানোর পর।
আসলে তা নয়। এর অর্থ হলো সালাতের শেষ অংশে। এ সকল হাদীসে সালাতের শেষ অংশে
অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দুরূদ পাঠ করার পর সালামের পূর্বে দো‘আ করার কথা বলা হয়েছে।
পরিভাষায় যা দো‘আয়ে মাছু রা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। সালাত শেষে দো‘আ কবুল
সম্পর্কে যত হাদীস এসেছে তা সবগুলো দো‘আ মাছু রা সম্পর্কে । যার সময় হলো সালাম
ফিরানোর পূর্বে। আর দো‘আ মাছু রা শুধু একটা নয়, অনেক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সালাতের
শেষে দো‘আ সংক্রান্ত এ সকল হাদীসে ‘বা’দাস সালাত’ বলা হয়নি। হাদীস গ্রন্থে এ সকল
দো‘আকে
‫ت‬ِ ‫صلَ َوا‬ َ ‫ت أو ال ُّدعَا ُء َعقِي‬
َّ ‫ْب ال‬ َّ ‫اَأْل َ ْد ِعيَا ُء ُدب َُر ال‬
ِ ‫صلَ َوا‬
(সালাত শেষের দো‘আ) অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে দুটো বিষয়: একটা হলো সালাত শেষের দো‘আ। দ্বিতীয়টা হলো সালাত শেষের যিকির।
প্রথমটির স্থান হলো সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির স্থান হলো সালাম ফিরানোর পর।
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কাইয়্যেম প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মত এটাই।
এ মতটি কুরআন ও হাদীসের আলোকে বেশি যুক্তি গ্রাহ্য। বান্দা যখন সালাতে থাকে তখন সে
আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে। দো‘আ মুনাজাতের সময় তখনই। যখন সালাতের সমাপ্তি
ঘোষিত হলো তখন নয়। তখন সময় হলো আল্লাহর যিকিরের।
🔴 যেমন আল্লাহ বলেন,
﴿]١٠٣ :‫ُودا َو َعلَ ٰى ُجنُوبِ ُكمۡۚ ﴾ [النساء‬ ْ ‫صلَ ٰوةَ فَ ۡٱذ ُكر‬
ٗ ‫ُوا ٱهَّلل َ قِ ٰيَ ٗما َوقُع‬ َ َ‫فَإِ َذا ق‬
َّ ‫ض ۡيتُ ُم ٱل‬
“যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে।” 📚
[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
এ সম্পর্কি ত হাদীসগুলোর ভাষা এবং সাথে রাসূলাল্লাহ (‫)ﷺ‬-এর আমলসমূহ
গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টিই বুঝে আসে যে, সালাম ফিরানোর পরের সময়টা
দো‘আ করার সময় নয়, যিকির করার সময়।
তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় যে রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬ফরয সালাতের পর কখনো কি
দো‘আ করেন নি? হ্যাঁ করেছেন। তবে তা সম্মিলিতভাবে নয়।
যেমন হাদীসে এসেছে,
🔵 আল-বারা ইবন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা যখন রাসূলাল্লাহ (
‫ )ﷺ‬এর পিছনে সালাত আদায় করতাম। আমরা তার ডান দিকে সালাত আদায়
করতে পছন্দ করতাম। তিনি আমাদের দিকে মুখ করতেন। আল-বারা বলেন, তখন তাকে
বলতে শুনতাম, ‘‘হে আল্লাহ! আপনার শাস্তি থেকে আমাকে বাঁচান, যে দিন আপনি আপনার
বান্দাদের উঠাবেন।’’ 📚(বুখারী)
জামা‘আতের সাথে তিনি মুসল্লীদের নিয়ে দো‘আ করেছেন, এমন কোনো বর্ণনা নেই। যা আছে
তা তার বিপরীত। যেমন বর্ণিত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করুন! সেখানে রাসূলাল্লাহ (
‫ )ﷺ‬একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন ‘‘আমাকে বাঁচান...।’’ সকলকে
সাথে নিয়ে দো‘আটি করলে বলতেন ‘‘আমাদেরকে বাঁচান।’’
আরেকটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন।
🔵 মু‘আয ইবন জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬তার হাত ধরে বলেন, “হে
মু‘আয! আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর কসম আমি তেমাকে ভালোবাসি।
তারপর তিনি বলেন, তু মি অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের পর বলবে, হে আল্লাহ! আপনার যিকির,
আপনার শোকর ও আপনার জন্য উত্তম ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।’’
📚(আবু দাউদ, নাসায়ী)
দেখুন! প্রখ্যাত সাহাবী মু‘আয ইবন জাবাল কাওমের ইমাম ছিলেন। রাসূলাল্লাহ (
‫ )ﷺ‬তাকে ইয়েমেনের গভর্নর, শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। তিনি
সালাতে ইমামতি করতেন। রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬তাকে এ দো‘আটি সকলকে নিয়ে
করার নির্দে শ দিতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা দেন নি। তিনি তাকে একা একা দো‘আটি করার
জন্য বলেছেন। হাদীসের ভাষাই তার প্রমাণ।
রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমি
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে
‘নাস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।
যারা ফরয সালাত শেষে কোনো যিকির-আযকার না করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নত
(মুস্তাহাব) ছেড়ে দিল। আবার যারা সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে উঠে গেল তারা
একটা সুন্নত বাদ দিয়ে সে স্থানে অন্য একটি বিদ‘আতী আমল করল।
তাই সারকথা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর সব সময় জামা‘আতের সাথে মুনাজাত
করা একটি বিদআত। যা আল্লাহর রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬করেন নি, সাহাবায়ে কেরাম
ও তাবেঈগণ করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই।তবে এই সুন্নত গুলা আদায় করে একাকী হাত
তু লে মোনাজাত করে সমস্যা নেই।
এমনিভাবে ইমাম সাহেব যদি সকলকে নিয়ে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কোনো কোনো সময়
দো‘আ-মুনাজাত করেন তবে তা নাজায়েয হবে না।
__________________________________________
#হাত_তু লে_দুআর_প্রমাণে_পেশকৃ ত_যঈফ_হাদীস_সমূহঃ
🔵 আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বলেছেন: যখন কোন বান্দা
প্রত্যেক সালাতের পর দু’হাত প্রশস্ত করে, অতঃপর বলে, হে আমার মাবুদ এবং ইবরাহিম,
ইসহাক্ব (আঃ) এর মাবুদ এবং জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীল (আঃ) এর মাবুদ, তোমার কাছে
আমি চাচ্ছি, তু মি আমার প্রার্থনা কবুল কর। আমি বিপথগামী, তু মি আমাকে আমার দ্বীনের
উপর রক্ষা কর। তু মি আমার উপর রহমত বর্ষণ কর। আমি অপরাধী, তু মি আমার দারিদ্রতা
দূর কর। আমি দৃঢ়ভাবে তোমাকে গ্রহণ করি। তখন আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে যায় তার খালি
হাত দু’খানা ফেরত না দেয়া।
📚(ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াম ওয়াল লাইল ৪৯পৃঃ)
হাদীসটি যঈফ। হাদীসটির সনদে আব্দুল আযীয ইবনু আব্দুর রহমান ও খাদীফ নামে দু’জন
দূর্বল রাবী রয়েছে। তা সত্ত্বেও অত্র দুর্বল হাদীসে একক ব্যক্তি হাত তু লে দু’আ প্রমাণিত হয়,
দলবদ্ধভাবে দু’আ প্রমাণিত হয় না।
🔵 আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬সালাম ফিরার পর
ক্বিবলা মুখ হয়ে দু’হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদকে পরিত্রাণ
দাও। আইয়াশ, ইবনু আবী রবী’আহ, সালাম ইবনু হিশাম এবং দূর্বল মুসলমানদের পরিত্রাণ
দাও। যারা কোন কৌশল জানে না। যারা কাফিরদের হাত হতে কোন পথ পায় না – 📚(ইবনু
কাসীর, ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৫৫; সুরা নিসা ৯৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)। হাদীসটি যঈফ (ইবনু হাজার
আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ৭/২৭৪, রাবী নং ৪৯০৫)
আলোচ্য হাদীসে আলী ইবনু যায়েদ ইবনু জাদআন যঈফ রাবী। 📚(ইবনু হাজার আসক্বালানী,
তাক্ববীর, পৃঃ ৪০১, রাবী নং ৪৭৩৪। এ রাবীকে শায়খ আলবানীও দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন, দেখুন
“যিলালিল জান্নাহ” (৬৩০), “আল ইসরা ওয়াল মি’রাজ” (পৃঃ ৫২) ও কিসসাতু মাসীহিদ
দাজ্জাল” গ্রন্থে (পৃঃ ৯৪) অন্য প্রসঙ্গে বর্ণিত একটি হাদীসে)
আলোচ্য হাদীসটি মুনকার তথা সহীহ বুখারী ও মুসলিম সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত সহীহ হাদীস
বিরোধী। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকুর পর দু’আ করার
কথা রয়েছে। অথচ এ দূর্বল হাদীসে সালামের পরের কথা রয়েছে। বুখারীর হাদীসে হাত তোলার
কথা নেই, কিন্তু এ হাদীসে হাত তোলার কথা বলা হয়েছে। অথচ ঘটনা একটিই এবং দু’আ হল
কুনুতে নাযেলা। 📚(সহীহুল বুখারী, হা/২৯৩২, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৮, মুসলিম ৬৭৫,
নাসাঈ ১০৭৪, আবু দাউদ ১৪৪২, ইবনু মাজাহ ১২৯৪, আহমাদ ৭৪১৫, ও দারেমী ১৫৯৫)
অতএব সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আর প্রমাণ পেশ করা শরীয়ত বিকৃ ত করার শামিল।
🔵 ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বলেছেন, সালাত দু’ দু’রাকাত
এবং প্রত্যেক দু’রাকাতেই তাশাহুদ, ভয়, বিনয় ও দীনতার ভাব থাকবে। অতঃপর তু মি
ক্বিবলামুখী হয়ে তোমার দু’হাতকে তোমার মুখের সামনে উঠাবে এবং বলবে, হে আমার
প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! যে এরুপ করবে না তার সালাত অসম্পূর্ণ। 📚(মিশকাত, পৃঃ
৭৭, হাদীস/৮০৫ ‘সালাতের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ) হাদীসটি যঈফ। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু নাফি’ ইবনিল
আময়া যঈফ রাবী। (আলবানী, যঈফ আবু দাউদ, হা/১২৯৬, যঈফ ইবনে মাজাহ, হা/১৩২৫,
ইবনু খুজায়মা, হা/১২১২, যঈফু ল জামে আস সগীর, হাদীস/৩৫১২; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৮০৫-
এর টিকা নং ৩; তাক্বরীবুত তাহযীব পৃঃ ৩২৬, রাবী নং ৩৬৫৮)
এ হাদীসটি দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও এতে নফল সালাতের কথা বলা হয়েছে এবং এককভাবে দু’আর
কথা এসেছে।
🔵 খাল্লাদ ইবনু সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬যখন দু’আ করতেন,
তখন তাঁর দু’হাত মুখের সামনে উঠাতেন। 📚(মাযমাউয যাওয়ায়েদ, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৯)
হাদীসটি যঈফ। হাফস ইবনু হাসি ইবনু উৎবা যঈফ রাবী (তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ১৭৪, রাবী
নং ১৪৩৪)
🔵 আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বলেছেন, তোমরা হাতের
পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না। অতঃপর তোমরা যখন দুআ শেষ কর তখন তোমাদের
হাত দ্বারা চেহারা মুছে নাও। 📚(হাদীসটি দুর্বল, দেখুন যঈফ আাবু দাউদ, ১৪৮৫, উল্লেখ্য
তোমরা হাতের পেট দ্বারা চাও পিঠ দ্বারা চেয়ো না, এই অংশ টু কু সহীহ, দেখুন সহীহ আবু
দাউদ, ১৪৮৬, সহীহ জামেউস সগীর, ৫৯৩ ৩৬৩৪ ও সিলসিলাহ আহাদীসিস সহীহাহ, ৫৯৫)।
প্রকাশ থাকে যে, হাত তু লে দুআ করার পর হাত চেহারায় মুছার প্রমাণে কোন সহীহ হাদীস নেই।
বিস্তারিত দেখুন – 📚(ইরওয়াউল গালীল ২/১৭৮-১৮২ , হা/৪৩৩ ও ৪৩৪ এর আলোচনা
তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/২২৫৫ এর টিকা নং ৪)
🔵 সায়িব ইবনু ইয়াযিদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬যখন
দুআ করতেন তখন দুহাত উঠাতেন এবং দুহাত দ্বারা চেহারা মুছে নিতেন।
📚(আবু দাউদ, হা/১৪৯২; মিশকাত হা/২২৫৫)। হাদীসটি যঈফ। আলোচ্য হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু
লাহইয়াহ নামক রাবী যঈফ। (যঈফ আবু দাউদ, হা/১৪৯২, পৃঃ ১১২; আউনুল মাবুদ, ১ম
খন্ড,পৃঃ ৩৬০; তাক্বরীব পৃঃ ৩১৯ রাবী নং ৩৫৬৩)
🔵 আসওয়াদ আমিরী তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ (
‫)ﷺ‬এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি সালাম ফিরালেন এবং
ঘুরলেন তখন হাত উঠিয়ে দুআ করলেন। 📚(ইবনু আবী শায়বা, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৭)
প্রকাশ থাকে যে, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬তার হাত উঠালেন এবং দুআ করলেন, এই
অংশটু কু মূল হাদীসে নেই।
📚(ইবনু আবী শায়বা, আল মুসান্নাফ, ১/৩৩৭, সালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৭৬)
মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী এবং আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী তারা নিজ নিজ গ্রন্থে
হাদীসগুলো আলোচনা করেছেন । কিন্তু সহীহ যঈফের মানদন্ডে হাদীসগুলো সহীহ নয়। তাই
এখনও যারা এ হাদীস বক্তব্য বা লিখনীর মাধ্যমে প্রচার করতে চাইবেন তাদেরকে অবশ্যই
হাদীসের মূল কিতাব দেখে পরিত্যাগ করতে হবে অন্যথা তারা হবেন নবীর উপর
মিথ্যারোপকারী এবং মিথ্যা প্রচারকারী, যাদের পরিণতি ভয়াবহ। 📚(মুসলিম, মিশকাত
হা/১৯৮, ১৯৯ ইলম অধ্যায়)
🔵 আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের একজন লোককে সালাত শেষের পূর্বে হাত তু লে দুআ করতে
দেখলেন। যখন তিনি দুআ শেষ করলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের তাকে বললেন,
রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬সালাত শেষ না করা পর্যন্ত হাত তু লে দুআ করতেন না – 📚
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ , ১ম খন্ড , পৃঃ ১৬৯)। হাদীসটি যঈফ, (মুনকার), সহীহ হাদীস
বিরোধী। সহীহ হাদীসে সালাতের মধ্যে রুকুর পর কুনুতে নাযেলা পড়ার সময় হাত তু লার কথা
আছে – (আহমাদ, তাবারানী, সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল, ২/১৮১, হ/৮৩৮-এর আলোচনা
দ্রঃ)। তবে সালাতের পর হাত তোলার কোন সহীহ হাদীস নেই ।
🔵 আবু নাঈম (রাঃ) বলেন, আমি ওমর ও ইবনু যুবায়ের (রাঃ) কে তাদের দুহাতের তালু মুখের
সামনে করে দুআ করতে দেখেছি। অত্র হাদীসে মুহাম্মাদ ইবন ফোলাইহ এবং তার পিতা তারা
দুজনই যঈফ রাবী।
📚(আল আদাবুল মুফরাদ, তাহক্বীক্ব, হা/৬০৯ পৃঃ ২০৮; দুআয় হাত তোলা অনুচ্ছেদ, পৃঃ ২০৮)
__________________________________________
#যে_সকল_স্থানে_হাত_তু লে_দোয়া_করা_যায়:
🔶 🔶 বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য 🔶 🔶
🔵 আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫)ﷺ‬এর
যামানায় এক বছর দুর্ভি ক্ষ দেখা দিল। সে সময় একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
খুৎবা প্রদানকালে জনৈক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! বৃষ্টি না
হওয়ার কারণে সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার পরিজন অনাহারে মরছে। আপনি আমাদের
জন্য দোয়া করুন। অতঃপর রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬স্বীয় হস্তদয় উত্তোলন পূর্বক দোয়া
করলেন। সে সময় আকাশে কোন মেঘ ছিল না। (রাবী বলেন) আল্লাহর কসম করে বলছি, তিনি
হাত না নামাতেই পাহাড়ের মত মেঘের খন্ড এসে একত্র হয়ে গেল এবং তার মিম্বার থেকে নামার
সাথে সাথেই ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। এভাবে দিনের পর দিন ক্রমাগত পরবর্তি জুম’আ
পর্যন্ত হ’তে থাকল। অতঃপর পরবর্তি জুম’আর দিনে সে বেদুঈন অথবা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে
বলল, হে আল্লাহর রাসূল (‫ )ﷺ‬অতি বৃষ্টিতে আমাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে,
ফসল ডু বে যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দোয়া করুন। তখন তিনি
দু’হাত তু ললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের পার্শ্ববর্তি এলাকায় বৃষ্টি দাও, আমাদের
এখানে নয়। এ সময় তিনি স্বীয় আঙ্গুলী দ্বারা মেঘের দিকে ইশারা করছিলেন। ফলে সেখান
থেকে মেঘ কেটে যাচ্ছিল। 📚(বুখারী, প্রথম খন্ড, পৃঃ ১২৭, হা/৯৩৩ জুম’আর সালাত’ অধ্যায়)
📚একই বিষয় সম্পর্কি ত আরও হাদীস দেখুন – বুখারী প্রথম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০২৯ ‘ইস্তিস্কা’
অধ্যায়।
বৃখারী, প্রথম খন্ড, পৃঃ ১৩৭; মুসলিম, প্রথম খন্ড, পৃঃ ২৯৩-২৯৪।
📚মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৯৮ ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ।
বুখারী, প্রথম খন্ড, পৃঃ ১৪০, হা/১০৩১; মিশকাত হা/১৪৯৯।
🔶 🔶 বৃষ্টি বন্ধের জন্য 🔶 🔶
উপরে এক নম্বরে আলোচিত দলীল সমূহ।
🔶 🔶 চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময় 🔶 🔶
🔵 আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ (‫)ﷺ‬এর
জীবদ্দশায় এক সময় তীর নিক্ষেপ করছিলাম। হঠাৎ দেখি সূর্য গ্রহণ লেগেছে। আমি তীর গুলো
নিক্ষেপ করলাম এবং বললাম, আজ সূর্য গ্রহণে রাসূল সাঃ এর অবস্থান লক্ষ্য করব। অতঃপর
আমি তাঁর নিকট পৌছলাম। তিনি তখন দু’হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করছিলেন এবং তিনি “আল্লাহু
আকবার”, “আলহামদু লিল্লাহ”, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলছিলেন। শেষ পর্যন্ত সূর্য প্রকাশ হয়ে
গেল। অতঃপর তিনি দু’টি সূরা পড়লেন এবং দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। 📚(মুসলিম
১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের সালাত অধ্যায়)
🔶 🔶 উম্মাতের জন্য রাসূলাল্লাহ (‫)ﷺ‬এর দোয়া 🔶 🔶
🔵 আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬সূরা
ইবরাহীমের ৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত
এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে জিবরীল! তু মি আমার মুহাম্মাদের নিকট
যাও এবং জিজ্ঞেস কর, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে
কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রাসূল সাঃ তাঁকে বললেন, আল্লাহ তায়ালা তা অবগত।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জিবরীলকে বললেন, যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং
তার উম্মাতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ কবর না’। 📚(মুসলিম, ১ম খন্ড,
পৃ১১৩, হা/৩৪৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)
🔶 🔶 কবর জিয়ারতের সময় 🔶 🔶
🔵 আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাতে রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬আমার নিকটে ছিলেন।
শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন। তিনি অল্প সময়
এ খেয়ারে থাকলেন যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে
দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেন এবং দরজা বন্ধ করে দিলেন। তখন আমিও কাপড় পরে চাদর
মাথায় তাঁর পিছনে চললাম। তিনি “বাক্বীউল গারক্বাদে” -[জান্নাতু ল বাক্বী] পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ
সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন। 📚(মুসলিম, ১ম
খন্ড, পৃঃ ৩১৩, হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৫)
🔵আয়েশা (রাঃ) বলেন, কোন এক রাতে রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বের হলেন, আমি
বারিরা রাঃ কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতু ল বাক্বীতে
গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তু লে দোয়া করলেন। তারপর ফিরে আসলেন।
বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে
আল্লাহর রাসূল (‫ !)ﷺ‬আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন
জান্নাতু ল বাকীতে গিয়েছিলাম কবর বাসীর জন্য দোয়া করতে। 📚(ইমাম বুখারী, রাফউল
ঈয়াদাঈন, পৃঃ ১৭, হাদীস সহীহ; মুসলিম হা/৯৭৪ (মর্মার্থ))
🔶 🔶 কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তু লে দোয়া 🔶 🔶
🔵 আউতাসের যুদ্ধে আবু আমেরকে তীর লাগলে আবু আমের স্বীয় ভাতিজা আবু মুসার মাধ্যমে
বলে পাঠান যে, আপনি আমার পক্ষ থেকে রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬কে সালাম পৌঁছে
দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন। আবু মুসা আশ’আরী (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (‫)ﷺ‬এর
কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযু করলেন। এবং হাত তু লে প্রার্থনা
করলেন, “হে আল্লাহ ! উবাইদ এবং আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও। (রাবী বলেন) এ সময়
আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম। তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! ক্বিয়ামতের দিন তু মি তাকে
তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকের উর্ধ্বে করে দিও”।
📚(বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৪৪, হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু’আ সমূহ’ অধ্যায়)
🔶 🔶 হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময় 🔶 🔶
🔵 আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) তিনটি জামারায় সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি
পাথর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। প্রথম দু’জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর ক্বিবলামুখী
হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে দু’হাত তু লে দু’আ করতেন। তবে তৃ তীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর
দাঁড়াতেন না। শেষে বলতেন, আমি রাসূল সাঃ কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি। 📚
(বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩৬৭, হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
🔶 🔶 যুদ্ধক্ষেত্রে 🔶 🔶
🔵 ওমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বদরের
যু্দ্ধে মুশরিকদের দিকে লক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার। আর তাঁর সাথীদের
সংখ্যা মাত্র তিনশত উনিশ জন। তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করতে
লাগলেন। এ সময় তিনি বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তু মি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ। হে
আল্লাহ! তু মি যদি এই জামা’আতকে আজ ধ্বংস করে দাও, তাহ’লে এই জমীনে তোমাকে ডাকার
মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে তিনি উভয় হাত তু লে ক্বিবলা মুখী হয়ে প্রার্থনা
করতে থাকলেন। এ সময় তাঁর কাঁধ হতে চাদরখানা পড়ে গেল। আবু বকর (রাঃ) তখন
চাদরখানা কাঁধে তু লে দিয়ে রাসূল (‫)ﷺ‬কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর
রাসূল (‫ !)ﷺ‬আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি আপনার
সাথে কৃ ত ওয়াদা পূরণ করবেন। 📚(মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৩, হা/১৭৬৩, ‘জিহাদ’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ – ১৮)
🔶 🔶 কোন গোত্রের জন্য দু’আ করা 🔶 🔶
🔵 আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা আবু তু ফাইল রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬এর কাছে
গিয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! দাউস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূ ত হয়ে গেছে, আপনি তাদের
জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন। তখন রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬ক্বিবলামুখী হ’লেন
এবং দু’হাত তু লে বললেন , হে আল্লাহ! তু মি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে
সঠিক পথে নিয়ে আস। 📚(বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ ২০৯, হা/৬১১
সনদ সহীহ)
🔶 🔶 সাফা মারওয়া সায়ী করার সময় 🔶 🔶
🔵 আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং
পাথরের নিকট এসে পাথর চু ম্বন করলেন, বায়তু ল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং সাফা পাহাড়ে এসে
তার উপর উঠলেন। অতঃপর তিনি বায়তু ল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলন পুর্বক
আল্লাহকে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন। 📚(সহীহ আবু দাউদ,
হা/১৮৭২ সনদ সহীহ, মিসকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)
🔶 🔶 কুনুতে নাযেলার সময় 🔶 🔶
🔵 আবু উসামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬কুনুতে নাযেলায় হাত তু লে
দু’আ করেছিলেন।
📚(ইমাম বুখারী, রাফউল ঈয়াদাঈন, সনদ সহীহ)
🔶 🔶 খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)এর অপছন্দ কর্মের কারণে হাত তু লে দু’আ 🔶 🔶
🔵 সালেমের পিতা হ’তে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬খালিদ ইবনু ওয়ালিদকে বনী
জামীমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠালেন। খালিদ তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তারা
এ দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। কিন্তু ‘ইসলাম গ্রহণ করেছি’ না বলে তারা বলতে লাগল, ‘আমরা
নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করেছি’ তখন খালিদ তাদেরকে কতল ও বন্দী করতে লাগলেন এবং
বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের হাতে সমর্পণ করতে থাকলেন। একদিন খালিদ আমাদের
প্রত্যেককে স্ব স্ব বন্দী হত্যা করার নির্দে শ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি নিজের
বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবে না। অবশেষে
আমরা নবী করীম সাঃ এর খেদমতে হাযির হলাম এবং তার কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলাম।
তখন রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬স্বীয় হস্ত উত্তোলন পূর্বক প্রার্থনা করলেন, ‘হে আল্লাহ!
খালিদ যা করেছে তার দায় থেকে আমি মুক্ত’ – এ কথা তিনি দু’বার বললেন। 📚(বুখারী, ২য়
খন্ড, পৃঃ ৬২২, হা/৪৩৩৯ ‘মাগাযী’ অধ্যায়)
🔶 🔶 সাদাক্বাহ আদায়কারীর ভু ল মন্তব্য শুনে হাত তু লে দু’আ 🔶 🔶
🔵 আবু হুমায়েদ সায়েদী (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬ইবনু লুত্ববিইয়াহ
নামক ‘আসাদ’ গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করলেন। তখন
সে যাকাত নিয়ে মদীনায় ফিরে এসে বলল, এ অংশ আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এ অংশ
আমাকে হাদীয়া স্বরুপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬ভাষণ দানের
জন্য দাঁড়ালেন এবং প্রথমে আল্লাহর গুনগান বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তোমদের
কোন ব্যক্তিকে সে সকল কাজের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করি, যে সকল কাজের দায়িত্ব আল্লাহ
তায়ালা আমার উপর সমর্পণ করেছেন। অতঃপর তোমাদের সে ব্যক্তি এসে বলে বলে যে, এটা
আপনাদের প্রাপ্য যাকাত, আর এটা আমাকে হাদীয়া স্বরুপ দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতা-
মাতার ঘরে বসে থাকল না? দেখা যেত কে তাকে হাদীয়া দিয়ে যায়। আল্লাহর কসম, যে ব্যক্তি
এর কোন কিছু গ্রহণ করবে, সে নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন তা আপন ঘাড়ে বহন করে হাযির
হবে। যদি আত্মসাৎকৃ ত বস্তু উট হয়, উটের ন্যায় ‘চি চি’ করবে, যদি গরু হয় তবে ‘হাম্বা
হাম্বা’ করবে। আর যদি ছাগল-ভেড়া হয় , তবে ‘ম্যা ম্যা’ করবে। অতঃপর রাসূল সাঃ স্বীয়
হস্তদ্বয় উঠালেন, তাতে আমরা তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ!
নিশ্চয়ই তোমার নির্দে শ পৌঁছে দিলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি পৌঁছে দিলাম’।
📚(বুখারী, পৃঃ ৯৮২, হা/ ৬৬৩৬ ‘কসম ও মানত’ অধ্যায়)
🔶 🔶 মুমিনকে কষ্ট বা গালি দেয়ার প্রতিকারে হাত তু লে দু’আ 🔶 🔶
🔵 আয়েশা (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬কে হাত তু লে দু’আ করতে দেখেন। তিনি
দু’আয় বলছিলেন, ‘নিশ্চয় আমি মানুষ। কোন মুমিনকে গালি বা কষ্ট দিয়ে থাকলে তু মি
আমাকে শাস্তি প্রদাণ কর না’। 📚(সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, হা/৬১০, পৃঃ ২০৯; সিলসিলাহ
সহীহা, হা/৮২-৮৩, সনদ সহীহ)
সম্মানিত পাঠকগণ! এখানে হাত তু লে দু’আ করার প্রমাণে অনেকগুলো হাদীস পেশ করা হল,
যদ্দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাত তু লে দু’আ করার বিধান শরীয়াতে রয়েছে। উক্ত হাদীছ গুলোতে
এককভাবে হাত তু লে দু’আ করার কথা এসেছে। শুধু প্রথম হাদীসটিতে সম্মিলিতভাবে দু’আ
করার কথা এসেছে যা ইসতিস্কা বা পানি চাওয়া সংক্রান্ত। ইসতিস্কা বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত
হয়েছে, যাতে সম্মিলিতভাবে দু’আ করার কথা আছে। তাই এই দু’আ করতে গিয়ে রাসূলাল্লাহ (
‫)ﷺ‬এর নিয়ম পদ্ধতির এক চু লও ব্যতিক্রম করা যাবে না। যে ক্ষেত্রে যেভাবে
দু’আ করার কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে সেভাবেই দু’আ করতে হবে। কেননা দু’আও
ইবাদতেরই অংশ বিশেষ। অতএব এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা বিদ’আতে পরিণত হবে।
📚(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭ ‘ঈমান’ অধ্যায়)
__________________________________________
#সালাত_শেষে_যে_সকল_দোআ_হাদীস_দ্বারা_প্রমাণিত:
আমি এখানে সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল (‫ )ﷺ‬যেসকল দুআ ও যিকির আদায়
করেছেন ও করতে বলেছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চাই। যাতে পাঠক
রাসূলাল্লাহ (‫)ﷺ‬এর এই সুন্নাতকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ সম্পর্কি ত
বিদআত পরিহার করেন।
🔵 সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬যখন যখন সালাত
শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম . . .
(হে আল্লাহ! তু মি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তু মি কল্যাণময়ত, হে
মর্যাদাবান, মহানুভব!
🔘 ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হল -যিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী- রাসূলাল্লাহ (
‫ )ﷺ‬সালাত শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন কিভাবে? বললেন, তিনি বলতেন,
আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)। 📚
(মুসলিম)
🔵 মুগীরা ইবনু শোবা (রাঃ) মুয়াবিয়া (রাঃ) এর কাছে লিখেছেন যে, রাসূলাল্লাহ (
‫ )ﷺ‬যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাহ
ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর,
আল্লাহুম্মা লা- মানেআ লিমা আতাইতা ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ান ফাউ জাল
জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর
কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল কিছু র ওপর ক্ষমতাবান। হে
আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেয়ার কেউ নেই। আর আপনি যা বাধা দেবেন তা
দেয়ার মত কেউ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোনো উপকার করতে
পারে না।) 📚(বুখারী ও মুসলিম)
🔵 আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরানোর
পর বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া
আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা
নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহ, লাহুন নিমাতু ওয়ালাহু ফজলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুখলিছীনা লাহুদ্দ্বীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোনো
মাবুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁর। তিনি সকল
কিছু র ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত
করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো
ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁরই। সকল সুন্দর ও ভাল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি
ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি,
যদিও কাফেরা তা পছন্দ করে না)
🔵 ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬প্রত্যেক সালাতের শেষে এ
বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন। 📚(মুসলিম)
🔵 আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ (‫ )ﷺ‬বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক
সালাতের পর তেত্রিশবার ছু বহানাল্লাহ বলবে, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ বলবে ও
তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার বলবে এর পর লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল
মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতেফরয
সালাত শেষে মোনাজাত সম্মিলিতভাবে এটা বিদাত তাই আসুন জেনে নেই সুন্নতি পদ্ধতি,,,,
ফরয সালাত

You might also like