Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 3

আমি যদি মুজিব হতাম

ভূ মিকাঃ হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জ ন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।  আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের
ইতিহাসে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ,তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি জাতির
অবিসংবাদিত নেতা। পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছুক্ষণ পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বৈষম্যের পরাধীনতার গ্লানি । ১৯৪৮
সালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে  পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে এদেশের জনগণের সঙ্গে এদেশের জনগণের দ্বন্দ্ব আরো স্পষ্ট
হয়। নিপীড়িত জাতির ভাগ্যাকাশে যখন দুর্যোগের কালো মেঘ, তখনই শেখ মুজিবুর রহমানের গৌরবময়
আবির্ভাব। অসাধারণ দেশপ্রেম ও দূরদর্শী নেত ৃত্ব দিয়ে তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলে। অনন্যসাধারণ
ব্যক্তিত্ব, জীবনাদর্শ ও  কর্ম কীর্তি ই  তাকে দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির স্বীকৃ তি। বাঙালি হৃদয়ে তার স্থান চির
অমলিন। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি চিরভাস্বর হয়ে  আছেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ ১৭ ই মার্চ ,১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের  টু ঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতু নের 
ঘরে জন্ম নেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ত ৃতীয় । বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে তার বিয়ে  হয়। তাদের দুই মেয়ে-
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে- শেখ কামাল, শেখ জামাল  ও শেখ রাসেল।

শিক্ষাজীবন , বাল্যকাল ও প্রাক রাজনৈতিক জীবনঃ বঙ্গবন্ধু র প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের
গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক   বিদ্যালয়। পরবর্তীকালে তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে
১৯৪৪ সালে আইয়ে এবং ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
আইন বিভাগে ভর্তি হন। গিমাডাঙ্গা মিশনারি স্কু লের ছাত্র থাকাকালীন একবার স্কু ল পরিদর্শনে এসেছিলেন
অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
শিশু মুজিব তাদের কাছে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তু লে ধরেন। এরফলে বাংলা এবং
সোহরাওয়ার্দী দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ মানবদরদী। গ্রামের হতদরিদ্র
মানুষের দুঃখ দেখে নিজের মনের ভেতরে এক প্রকার কষ্ট অনুভব করতেন। তাদের মুখে তার নিজের খাবার তু লে
দিয়েছেন এমন ঘটনা একটি-দুটি নয়;  অনেক। একবার  বন্যায় সকলের ধান নষ্ট হলে তিনি নিজের বাড়ির ধান
মানুষকে দান করে দেন তাছাড়া শীতকাল এলেই অনেক অসহায় শীতার্ত কে তিনি তা নিজের চাদর দান করে
দিয়েছেন। অধিকন্তু তখন থেকেই তিনি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলত... অন্যায় কিংবা অন্যায়কারী যত শক্তিশালীই
হোকনা কেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিবাদ করতে বিন্দু পরিমান বিচলিত হতেন না ।
আর রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করে দেশ ও জাতির ঘোষিত বন্ধু র ভূ মিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। তার মুখে একটি
স্বপ্ন- বাঙালি জাতির অধিকার পুনরুদ্ধার করা যা ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে হারিয়ে যায়। 

রাজনৈতিক জীবনঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৬ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচিত হন । ছাত্র শেখ মজি ু বরু রহমান ক্রমেই নেতা মজি ু বের বিকশিত হতে থাকেন ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
থাকাকালীন  রক্ষণশীল নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্তৃ ত্ব খর্ব করতে তিনি ১৯৪৮ সালের চৌঠা
জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নাম ধারণ করে।
ভাষা আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা পালন করেন ১৯৪৮ সালে
ভাষার প্রশ্নে তার নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয়, ১৯৫২ সালের একু শে ফেব্রুয়ারির পর ধীরে
ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন দূরদর্শিতা সম্পন্ন রাজনৈতিক  নেতা। এসময় শেখ মজি ু বরু রহমান মস
ু লিম লীগ ছেড়ে দেন এবং
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর সাথে মিলে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ তিনি দলের
প্রথম যুগ্ম  সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালের
যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিত্ব লাভ করেন এবং এদেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শোষণ বঞ্চনার
প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৬৬ সালে তিনি পেশ করেন
বাঙালি জাতির ইতিহাসে মুক্তির সনদ ছয় দফা সময় নিরাপত্তা আইনে তিনি বারবার গ্রেপ্তার হতে থাকেন
আগামীকাল জামিনে মুক্ত হলেন তিনি আবার গ্রেফতার হন ১৯৬৯ সালে ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
কর্তৃ ক আয়োজিত রেসকোর্স ময়দানের লক্ষ মানুষের এক নাগরিক সংবর্ধনায় তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূ ষিত করা 
হয়। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃ ত্বে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জ ন করে এবং
পাকিস্তান কেন্দ্রীয় পরিষদের নিরঙ্কু শ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জ ন করেন এতে তিনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের গণমানুষের
লাভ করেন কিন্তু সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের
অধিবেশন অনির্দি ষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন এর প্রতিবাদে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭
মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বর্ত মান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন-
          
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
 
 ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তা নি হানা দা র বাহি নী নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে
অর্থাৎ ২৬ শে মার্চে র প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধু কে গ্রেফতার
করে নিক্ষেপ করা হয় কারাগারের শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ । দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মক্তি
ু যদ্ধে
ু র পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জ ন করে এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্ত ন করেন। 

যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পরিচালনাঃ স্বদেশ প্রত্যাবর্ত নের পর বঙ্গবন্ধু র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পরিচালনায় এক দূরদর্শী পরিকল্পনায়
গ্রহণ করেন তিনি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশকে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন আসে একের পর এক
আঘাত চারিদিকে হাহাকার রাহাজানি স্বজন হারানোর বেদনা। কিন্তু তিনি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে গড়ে তুলতে
ছিলেন সর্বদা সচেষ্ট। 

মৃত্যুঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্যতীত সকলকেই মেরে ফেলা হয়।
সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই হত্যাকাণ্ড, তৈরি হয় রাজনৈতিক শূন্যতা। ব্যাহত
হয় গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারা।

অবদানঃ দ্বিধাবিভক্ত পরাধীন জাতিকে সুসংগঠিত করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা এবং সঠিক নেতৃ ত্ব দেওয়া
সহজ কাজ নয় অথচ এই কাজটি বঙ্গবন্ধু খুব সহজেই করতে পেরেছিলেন । স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম
পরিচালনা করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান ও যোগ্যতা তার ছিল মানুষকে উদ্ভব যুদ্ধ করার মত অসাধারণ বজ্রকন্ঠ।
অনলবর্ষী  বক্তা হিসেবে তাঁর ছিল বিপুল খ্যাতি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চে র ভাষণে। অকৃ ত্রিম
দেশ প্রেম, সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসা অমায়িক ব্যক্তিত্ব, উপস্থিত বুদ্ধি থাকে বাঙালি জাতির
অবিসংবাদিত নেতা এ পরিণত করেছে। স্বাধীনতার পর তিনি খবু বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। যতটুকু সময় ক্ষমতায়
ছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তার  সুযোগ্য নেতৃ ত্ব পররাষ্ট্র নীতি ও দূরদর্শিতা বাংলাদেশকে
বিশ্বের মেলে ধরে তার নেতৃ ত্বে রচিত হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির
জীবনের সূচনা করেছে এক নব দিগন্ত। আত্মপরিচয়হীন জাতি খুঁজে পেয়েছে তার অস্তিত্ব  আত্মমর্যাদা। 

কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন- “আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব
এবং সাহসিকতায় তিনি হিমালয়। এভাবেই হিমালয় দেখেছি  আমি।“ 

আমি যদি মুজিব হতামঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব তিনি আমারে এক
আদর্শ মানুষ। তার দূরদর্শী বিচক্ষণ এবং সঠিক নেত ৃত্ব আমাকে দেশ প্রেম সযু োগ্য নেত ৃত্ব এবং এক মহান নেতা হতে উদ্বদ্ধ

করে তার রাজনৈতিক জীবন আমাকে ধৈর্যশীল অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে
ভালোবাসতেউদ্বুদ্ধ করে। আমি যদি মজি ু ব হতাম তবে একজন সয ু োগ্য নেত ৃত্বে হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতাম দেশপ্রেমের
চেতনায় দেশকে সোনার বাংলাদেশ পরিণত করতাম  এবং একজন গণমানুষের নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে
তু লতাম। অন্যায়ের সাথে আপোষ নয়; অন্যায়ের প্রতিবাদ করতাম এবং বিশ্ববাসীর সাথে সুরক্ষা করতাম যে কারো
সাথে সকলের সাথে মিত্রতা কারো প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়েও নির্দে শের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সচেষ্ট
থাকবএবংঅন্যায় দুর্নীতি বিরুদ্ধে নিজেকেসর্বদা সচেষ্ট রাখতাম।

উপসংহারঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে যার নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্যমান তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা অনন্য ভূ মিকা পালনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির
জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃ ত ফলে মৃত্যুতে অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসে তিনি কিংবদন্তি হয়ে রয়েছেন তার
আদর্শের মৃত্যু নেই;তাইতো কবি অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন-
যতদিন রবেপদ্মা যমুনা
গৌরী মেঘনা বহমা্
‌ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।

You might also like