Professional Documents
Culture Documents
Shortpdf
Shortpdf
অন্তরের র�োগব্যাধি
Ĺ শারীরিক অসস্থতার
ু আলামত
Ĺ অন্তরের ব্যাধি : আলামত ও প্রতিকার
Ĺ অন্তর ও শরীরের র�োগের মধ্যে পার্থক্য
প্রথম মজলিস
অন্তরের র�োগব্যাধি
মসজিদের ভেতর-বাহির ল�োকে ল�োকারণ্য। কানায় কানায় ভরে গেছে চারপাশ;
তিল ধারণের ঠাঁই নেই যেন। উপস্থিত হয়েছেন সমসাময়িক অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী,
ভক্ত-অনুরক্ত, আলিম, তালিবুল ইলমসহ অগণিত জনসাধারণ। জ্ঞানের প্রতি
এক-বুক পিপাসা নিয়ে চাতক পাখির মত�ো চেয়ে আছেন যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের
দিকে। তিনি আর কেউ নন—শাইখুল ইসলাম তাকিউদ্দিন আহমদ ইবনু আবদুল
হালিম ইবনু তাইমিয়া।
শাইখ আল�োচনা শুরু করলেন। সকলেই যেন সমানভাবে শুনতে পায়—তাই
আসন ঠিক মধ্যখানে। উপস্থিত প্রত্যেকের হাতেই কাগজ ও কলম। সকলেই
প্রস্তুত তাঁর মূল্যবান কথামালা কাগজের খাতায় এবং হৃদয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ
করে নেওয়ার জন্য। ক�োথাও ক�োন�ো আওয়াজ নেই। সুনসান নীরবতা বিরাজ
করছে চারদিকে। নিস্তব্ধতা ও গম্ভীরতার চাদর যেন ছেয়ে আছে পুর�ো মজলিস।
সহসাই এমন পিনপতন নীরবতা ভেঙে শাইখের সুমধুর কণ্ঠে ধ্বনিত হল�ো—
أ َْ
اهلل ِم ْن ُش ُر ْو ِر � ْن ُف ِس َنا َو ِم ْن َس ِّي َئ ِت ُ
ِ ال َح ْم ُد ِ ّٰ ِل َن ْس َت ِع ْي ُنه َو َن ْس َت ْغ ِف ُره َو َن ُع ْوذ ِب
َ َ ْ َو،هللا َف َل ُم ِض َّل َل ٗه
َو أ� ْش َه ُد أ� ْن،من ُي ْض ِل ْل َفل َه ِاد َي له ُ َم ْن َي ْه ِد،أ� ْع َما ِل َنا
ُ َ َ
َص ّٰلى، َو أ� ْش َه ُد أ� َّن ُم َح َّم ًدا َع ْب ُد ٗه َو َر ُس ْوله،هللا َو ْح َد ٗه ل َش ِر ْي َك له ُ َل إ ٰل َه َإ ِّل
ِ
ًهللا َع َل ْي ِه َو َع ٰلى ٰا ِل ٖه َو أ� ْص َحا ِب ٖه َو َس َّل َم َت ْس ِل ْيما
ُ
‘সকল প্রশংসা আল্লাহর; আমরা তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করি; তাঁর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা ও মন্দ কাজের অনিষ্ট
থেকে তাঁর কাছেই পরিত্রাণ চাই। আল্লাহ যাকে সুপথে পরিচালিত করেন,
19
অন্তরের রোগব্যা
তাকে কেউ বিপথে নিতে পারে না। আর তিনি যাকে বিপথে নেন, তাকে
কেউ সুপথে আনতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি—আল্লাহ ছাড়া ক�োন�ো
ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর ক�োন�ো শরিক নেই; আমি আরও সাক্ষ্য
দিচ্ছি—মুহাম্মাদ ﷺতাঁর বান্দা ও রাসূল। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হ�োক তাঁর
ওপর, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর।’
আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন—
َ الل َم َر ًضا َو َل ُه ْم َع َذ ٌاب أ� ِل ٌيم ب َما َك ُانوا َي ْك ِذ ُب
ون ُ َّ ِفي ُق ُلوبه ْم َم َر ٌض َف َز َاد ُه ْم
ِ ِِ
‘তাদের অন্তরে আছে ব্যাধি; অনন্তর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরও
বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবং তাদের মিথ্যাচারের কারণে তাদের জন্য রয়েছে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ [1]
ْ َّ ِل َي ْج َع َل َما ُي ْل ِقي
الش ْي َط ُان ِف ْت َن ًة ِل َّل ِذ َين ِفي ُق ُلو ِب ِه ْم َم َر ٌض َوال َق ِاس َي ِة ُق ُل ُوب ُه ْم
‘এজন্য যে, শয়তান যা প্রক্ষেপণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন,
তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে আছে ব্যাধি এবং যারা পাষাণহৃদয়।’ [2]
ْ َ ُ ْ ُ ْ َ ٌ َ َ ْ ُ ُ َ َّ َ َ ُ َ ُ ْ َ ْ َ ْ َ ْ َ
ون ِفي ال َم ِد َين ِة ل ِئن لم ينت ِه المن ِافقون وال ِذين ِفي قلو ِبهم مرض والمر ِجف
ًَل ُن ْغر َي َّن َك به ْم ُث َّم َال ُي َجاو ُ ِر َون َك ف َيها إ َّال َقليال
ِ ِ ِ ِ ِِ ِ
‘মুনাফিকরা এবং অন্তরে ব্যাধিগ্রস্তরা এবং মদিনায় গুজব রটনাকারীরা
যদি বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে সক্ষমতা
দান করব। অতঃপর এই শহরে তারা আপনার প্রতিবেশী হয়ে অল্প দিনই
থাকতে পারবে।’ [3]
َّ
ون َو ِل َي ُق َول ال ِذ َين ِفي ُق ُلو ِب ِه ْم َ اب َو ْال ُم ْؤ ِم ُن
َ اب َّال ِذ َين أ� ْو ُتوا ْالك ِـ َت
َ َو َال َي ْرَت
ُ َّ َم َر ٌض َو ْال َك ِاف ُرو َن َم َاذا أ� َر َاد
الل ِب َه َذا َم َث ًال
ين ِإ َّال
َ الظا ِل ِم َ َو ُن َن ّز ُل ِم ْن ْال ُق ْ آر�ن َما ُه َو ِش َف ٌاء َو َر ْح َم ٌة ِل ْل ُم ْؤ ِمن
َّ ين َو َال َيز ُيد
ِ ِ ِ ِ
ًَخ َسارا
‘আমি কুরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা র�োগের নিরাময় এবং
মুমিনদের জন্য রহমত। পাপীদের ত�ো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।’ [3]
ْ َ ْ ُ ْ َ َ َ ْ ُ ُ َر
َو ُيذ ِه ْب َغ ْي َظ ُق ُلو ِب ِه ْم،ين ويش ِف صدو قو ٍم مؤ ِم ِن
‘তিনি মুমিনদের অন্তরসমূহ প্রশমিত করবেন এবং তাদের মনের ক্ষোভ
দূর করবেন।’ [4]
ু আলামত
শারীরিক অসস্থতার
শারীরিক অসুস্থতা মূলত সুস্থতার বিপরীতার্থক। এটি দেহাভ্যন্তরে সৃষ্ট এমন এক
সমস্যা, যার কারণে মানুষের অনুধাবনশক্তি কিংবা প্রাকৃতিক সঞ্চালনশক্তিতে
বিঘ্ন ঘটে। অনুধাবনশক্তিতে বিঘ্ন ঘটার অর্থ হল�ো—দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তি
হারিয়ে ফেলা অথবা ক�োন�োকিছুর বিপরীত অবস্থা অনুভব করা। যেমন : মিষ্টি
দ্রব্যকে মনে হল�ো তিক্ত, কিংবা এর উল্টো। এমনও হতে পারে—সে এমন কিছু
আঁচ করতে পারছে, বাস্তবে যার ক�োন�ো অস্তিত্বই নেই।
[1] সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত-ক্রম : ৩১
[2] সূরা ইউনুস, আয়াত-ক্রম : ৫৭
[3] সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-ক্রম : ৮২
[4] সূরা তাওবা, আয়াত-ক্রম : ১৪-১৫
21
অন্তরের রোগব্যা
আল�োচনা করা যাক। বিভিন্ন তাফসিরগ্রন্থে ض ٌ َم َرশব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে
َش ٌّكশব্দ দিয়ে, আবার কখন�ো-বা করা হয়েছে َر ْي ٌبশব্দ দিয়ে। অর্থাৎ, যে
শব্দ দিয়ে দেহের র�োগ ব�োঝান�ো হয়, ঠিক একই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে মনের
ব্যাধি ব�োঝাতে। যেমন : মুজাহিদ ও কাতাদাহ রাহিমাহুমাল্লাহ কুরআনের
আয়াত—ض ٌ ِفي ُق ُلوبه ْم َم َر-এর তাফসিরে َم َر ٌضশব্দের ব্যাখ্যা করেছেন َش ٌّك
ِِ ٌ َم َرশব্দের ব্যাখ্যা করেছেন— َش ْه َو ٌة ٰإلى
শব্দ দিয়ে। আবার কখন�ো কখন�ো ض
ّ ِالزٰنىবা ব্যভিচারের
َْ َّ প্রতি ْ আসক্ তি দিয়ে। যেমনটি দেখা যায় কুরআনের আয়াত
َ َ َ َ َ
فيطمع ال ِذي ِفي قل ِب ِه مرض-এ َم َر ٌضশব্দের ব্যাখ্যায়। সুতরাং আমরা বুঝতে
َ
পারলাম—দেহের মত�ো মনেরও র�োগ আছে। কুরআনের ভাষায় যাকে বলা
হয়েছে সন্দেহ, সংশয় বা পরনারীর প্রতি আসক্তি। [1]
‘আরও একটি বিষয় খেয়াল করা যাক। আমরা প্রায়ই দেখতে পাই—অসুস্থ
মানুষ যে কারণে কষ্ট পায়, সুস্থ কেউ হয়ত�ো তাতে কষ্ট পায় না। এজন্য দেখা
যায়—সামান্য শীত, গরম কিংবা ছ�োট�োখাট�ো কাজে অসুস্থ মানুষটি কষ্ট পাচ্ছে,
ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সুস্থ কারও জন্য এসব কিছুই না। অসুস্থ ল�োকটির
এই অক্ষমতার কারণ হল�ো—অসুস্থতার দরুণ সৃষ্ট দুর্বলতা। র�োগব্যাধি মূলত
শারীরিক শক্তি হ্রাস করে মানুষকে দুর্বল করে দেয়। এই অবস্থায় সে একজন সুস্থ
ও শক্তিশালী মানুষের মত�ো সবকিছু করতে সক্ষম থাকে না।
‘একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে র�োগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে হয়। র�োগব্যাধির
সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার একজন র�োগাক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে নতুন
ক�োন�ো র�োগ প্রবেশ করলে অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। তবে ক�োন�ো প্রতিষেধক
দেয়া গেলে অসুখ কমে যায়।
‘সহজ কথায়—যে কারণে মানুষ র�োগাক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে, সেই কারণ
বৃদ্ধি পেলে তার র�োগ ও দুর্বলতা বাড়তে থাকে, কমতে থাকে শারীরিক শক্তি
ও সক্ষমতা। এভাবে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে ঘটতে এক পর্যায়ে হয়ত�ো সে মারাই
যায়। এমতাবস্থায় যদি সে এমন ক�োন�ো পথ্য বা প্রতিষেধক গ্রহণ করে যা তার
অসুস্থতা দূর করতে সক্ষম, তাহলে সে সুস্থ হতে থাকে এবং ফিরে পেতে থাকে
হারান�ো শক্তি ও সামর্থ্য। ঠিক একই ঘটনা ঘটে মনের র�োগের ক্ষেত্রেও।’
আবার আরজ করলাম, ‘মুহতারাম, আপনার কথা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম
যে, অন্তরের ব্যাধি মূলত সন্দেহ, সংশয় কিংবা প্রবৃত্তির কুমন্ত্রণা থেকেই জন্ম
নেয়। কিন্তু অন্তরের ব্যাধি এবং দৈহিক র�োগের মধ্যে একটি বড় পার্থক্য রয়েছে।
তা হল�ো—দৈহিক র�োগে আক্রান্ত হলে মানুষ শরীরে ব্যথা অনুভব করে,
অপরদিকে অন্তরের ব্যাধির ক�োন�ো ব্যথা নেই। আমার ধারণা উভয়ের মধ্যে
এটি একটি ম�ৌলিক ব্যবধান।’
শাইখ ইবনু তাইমিয়া বললেন, ‘না, বিষয়টি তেমন নয়। বরং অন্তরের ব্যাধির
কারণেও ব্যথা অনুভব হয়। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি উদাহরণ দিচ্ছি,
কুরআনুল কারিম থেকে প্রমাণও পেশ করছি। দেখ�ো, ক্রোধ বা রাগ এক ধরনের
অনুভূতি। আমরা এটিকে কলবের একটি সমস্যা বা ব্যাধি হিসেবে ধরে নিতে
পারি। শত্রুপক্ষ ত�োমাকে পরাস্ত করলে তুমি ক্রুদ্ধ হও। এবং এই পরিস্থিতি
ত�োমার হৃদয়ে একরকম কষ্টও তৈরি করে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন—
ْ َ ْ ُ ْ َ َ َ ْ ُ ُ َر
َو ُيذ ِه ْب َغ ْي َظ ُق ُلو ِب ِه ْم، ين ويش ِف صدو قو ٍم مؤ ِم ِن
“তিনি মুমিনদের অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করবেন। তাদের অন্তরের ক্রোধ
দূর করবেন।” [1]
‘বক্ষ্যমাণ আয়াতে আমরা দেখতে পাচ্ছি—মন থেকে ক্রোধ দূরীকরণকেই
ُ َ َ َُ
কুরআনে শিফা বা সুস্থতা বলা হয়েছে। আরবরা বলে থাকে—فل ٌن َشفى غ ْيظ ُه
অর্থাৎ, অমুকের রাগ প্রশমিত হয়েছে। আমরা আরও দেখতে পাই—নিহতের
আত্মীয়রা হত্যার বিচার পেলে খুশি হয়, এতে তারা আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে,
তাদের ক্রোধ প্রশমিত হয়। এমন আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে।
‘এই যে মনের অশান্তি দূর হওয়া এবং প্রশান্তি লাভ করা—এটাই হল�ো ক্রোধ,
দুশ্চিন্তা কিংবা মনের যাতনার মত�ো র�োগ থেকে সুস্থতা। এই সবগুল�ো সমস্যার
কারণেই মানুষ মনের মধ্যে ব্যথা অনুভব করে, যন্ত্রণায় ভ�োগে। এমনিভাবে َش ٌّك
ٌ
(সন্দেহ) ও ( َج ْهلঅজ্ঞতা)-এর র�োগও মানুষকে ব্যথিত করে। দেখ�ো, নবীজি
ﷺইরশাদ করেন—
[1] আবু দাউদ, হাদিস-ক্রম : ৩৩৬; এটি মূলত হাদিসের একটি অংশ। হযরত জাবিরের সূত্রে বর্ণিত
সনদে হাদিসটি যঈফ। আবু দাউদে একই অর্থে কাছাকাছি শব্দে ইবনে আব্বাসের সূত্রে হাদিসটি বর্ণিত
আছে। শুয়াইব আরনাউত ইবনু আব্বাসের সনদকে হাসান বলেছেন। হযরত জাবিরের বর্ণনায়
أ َهـ ّـا
� َّال
এর স্থলে এসেছে।
25
অন্তরের রোগব্যা
আসে, জ্ঞান ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ শ�োনে, তখন অন্তর র�োগমুক্ত হয়, অগ্রসর
হয় কল্যাণের দিকে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
ّ ٰ َّ َ ِّل َی
الشیط ُن ِف ْت َن ًة ِل َّل ِذ َین ِفی ُق ُلو ِب ِهم َّم َر ٌض جع َل َما ُی ِلقی
“এ কারণে যে, শয়তান যা প্রক্ষেপণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে
দেন তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে র�োগ আছে।” [1]
‘বক্ষ্যমাণ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, আল্লাহ এমন ল�োকদের ব্যাপারে
ফিতনার কথা বলছেন, যাদের অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত। আর শয়তান মূলত ব্যাধিগ্রস্ত
অন্তরেই সন্দেহের বীজ বপন করতে সক্ষম হয়। এদিকে ঈমান থেকে দূরে সরার
কারণে তাদের হৃদয় শুষ্ক ও পাষণ্ড হয়ে থাকে । র�োগাক্রান্ত হওয়ায় এইসকল
ল�োকদের অন্তর থাকে দুর্বল। তাই শয়তান তাদের হৃদয়ে কুমন্ত্রণা ঢেলে দেওয়ার
সুয�োগ পায় এবং তা তাদের জন্য ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে মুমিনদের
উপহাস করতে করতে ঈমান আনার ব্যাপারেও তাদের মনে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়।
তাই ঈমান আনা তাদের জন্য হয়ে যায় নিদারুণ পরীক্ষা। এ-সম্পর্কে আল্লাহ
তাআলা ইরশাদ করেন—
ْ َ ُ ُ َّ ٌ َ َّ ُ ُ َ َّ َ َ ُ ٰ ُ َ َ َّ َ
ون ِفی ال َم ِد ِین ِةل ِئن لم ینت ِه المن ِفقون و ال ِذین ِفی قلو ِب ِهم مرض و الم ِرجف
“মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে র�োগ আছে তারা এবং মদিনায় গুজব
রটনাকারীরা যদি বিরত না হয়।” [2]
َّ
َو ِل َی ُق َول ال ِذ َین ِفی ُق ُلو ِب ِهم َّم َر ٌض
“এবং যাতে যাদের অন্তরে র�োগ আছে, তারা বলে যে...” [3]
‘উল্লিখিত আয়াতে লক্ষণীয় বিষয় হল�ো—এখানে যাদের অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত বলা
হয়েছে, তাদের হৃদয় কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের অন্তরের মত�ো একেবারে মৃত
না। আবার মুমিনদের অন্তরের মত�ো সুস্থও না। বরং সন্দেহ ও কামনার র�োগে
তাদের হৃদয় র�োগাক্রান্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—
[1] সূরা হজ, আয়াত-ক্রম : 5৩
[2] সূরা আহযাব, আয়াত-ক্রম : ৬০
[3] সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত-ক্রম : ৩১
26
রূহের চিকিৎসা
ۡ َّ ۡ
َف َیط َم َع ال ِذ ۡی ِف ۡی َقل ِب ٖه َم َر ٌض
“ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে।” [1]
‘এখানে ব্যাধি অর্থ প্রবৃত্তির লালসা। কেননা র�োগব্যাধিমুক্ত কারও সম্মুখ দিয়ে
ক�োন�ো নারী হেঁটে গেলে সে হয়ত�ো তার দিকে তাকাবেই না। অপরদিকে
লালসাগ্রস্ত মানুষ ল�োভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। এবং সে তার আত্মার
দুর্বলতা ও হৃদয়ের র�োগের স্তর অনুপাতে মন্দ কর্মের দিকে ধাবিত হবে। তাই
নারীরা যখন ক�োমল কণ্ঠে ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলে, তখন অসুস্থ হৃদয়ের
মানুষেরা কুচিন্তায় নিমজ্জিত হয়।’
এতটুকু বলে শাইখ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিষয়টি কি স্পষ্ট হল�ো?
ত�োমাদের আপত্তি কি কাটল?’
আমি বললাম, ‘জি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।’
শাইখ বললেন, ‘আজকের মত�ো এখানেই সমাপ্তি ঘ�োষণা করছি। এ মজলিসে
আমরা আত্মার ব্যাধি নিয়ে আল�োচনা করলাম। ইনশাআল্লাহ, আগামী মজলিসে
এর প্রতিকার নিয়ে আল�োচনা হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’
‘প্রথম
প্রথম প্রতিষেধক—আল-কুরআন : কুরআন হল�ো অন্তরস্থ যাবতীয় ব্যাধির
জন্য শিফা স্বরূপ—বিশেষত সংশয় ও সন্দেহের মত�ো র�োগের জন্য ত�ো
মহ�ৌষধ। কুরআনের বাণী-বর্ণনা, আয়াত ও নিদর্শন হক ও বাতিলের মধ্যে
স্পষ্ট পার্থক্যরেখা টেনে দেয়; অনুভব-অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা
বিনষ্টকারী এবং সংশয় উদ্রেককারী যাবতীয় ব্যাধি এমনভাবে সমূলে ধ্বংস করে
যে, এরপর আর বান্দার সত্য-মিথ্যা চিনতে, হক-বাতিল বুঝতে বেগ পেতে হয়
না; প্রতিটা বিষয় সে নিজস্ব রূপ ও প্রকৃতিতে দেখতে সক্ষম হয়৷’
‘কুরআনে রয়েছে প্রজ্ঞা-হিকমত, ওয়াজ-নসিহত, ভীতি-প্রদর্শন, সুসংবাদ-
জ্ঞাপন এবং শিক্ষণীয় ঘটনাবলির বিবরণ, যা অন্তরের র�োগমুক্তিকে একরকম
অপরিহার্য করে ত�োলে। কুরআনের সংস্পর্শে এলে অন্তর সকল সৎকাজের
প্রতি আগ্রহী হয় এবং যাবতীয় অনিষ্টতা ও কদর্যতা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে;
ভাল�োবাসতে শুরু করে সরল-সঠিক পথ, ঘৃণা ও অবজ্ঞা তৈরি হয় ভ্রান্ত পন্থার
প্রতি, যদিও একসময় ভুলের প্রতিই তার আসক্তি ছিল, ভাল�োর প্রতি ছিল
অনীহা।’
‘কুরআন হল�ো চিত্ত-বিনষ্টকারী র�োগব্যাধির জন্য এমন এক প্রতিষেধক, যা
র�োগপ্রতির�োধ করেই যাবে, যতক্ষণ-না অন্তর সুস্থ হয়, চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘটে
এবং ওই স্বভাব ও প্রকৃতিতে ফিরে আসে, যেমন শরীর সুস্থ হলে তার স্বাভাবিক
প্রক্রিয়া ফিরে পায়। মানুষের অন্তরের খ�োরাক হল�ো ঈমান ও কুরআন। এই
আহার গ্রহণে আত্মা পরিশুদ্ধ ও পরিপক্ব হয়। ঠিক যেমন পরিমিত পানাহারে
মানুষের সুস্বাস্থ্য বহাল থাকে এবং স্থিতি লাভ করে। অধিকন্তু অন্তরের পরিশুদ্ধি
দৈহিক সুস্বাস্থ্যের মত�ো।’
দ্বিতীয় প্রতিষেধক—যাকাত : যাকাতের শাব্দিক অর্থ হল�ো বৃদ্ধি পাওয়া,
‘দ্বিতীয়
পরিপক্ব হওয়া। এখানে এটিই উদ্দেশ্য। কিন্তু কীভাবে? যাকাত শব্দটিকে কর্তার
সাথে সম্পৃক্ত করলে অর্থ দাঁড়ায়, ক�োন�ো কিছুর বৃদ্ধি ঘটা, সুপরিপক্ব হওয়া।
দেহের মত�ো মনেরও উন্নতি-অগ্রগতির প্রয়�োজন আছে। উপরন্তু পরিশুদ্ধ ও
পরিপক্ব হওয়া অবধি অন্তরের সমৃদ্ধি ও উন্নতি একান্ত প্রয়�োজনীয়।’
‘তবে লক্ষণীয় বিষয় হল�ো, দৈহিক উন্নতি ও ঋদ্ধি অর্জনের জন্য স্বাস্থ্যকর
খাবার গ্রহণের পাশাপাশি যেমন ক্ষতিকর খাবার পরিহার করতে হয়, তেমনি
148
রূহের চিকিৎসা
মনের বেলায়ও এটি প্রয�োজ্য। অর্থাৎ পরিমাণ মত�ো উপকারী খাবার খেলে এবং
অখাদ্য-কুখাদ্য ত্যাগ করলে দৈহিক উন্নতি সাধিত হয়। অনুরূপভাবে আত্মিক
ঋদ্ধি ও পরিশুদ্ধির জন্য উপকারী উপাদান গ্রহণ করা এবং ক্ষতিকর সবকিছু
পরিহার করা আবশ্যক। কৃষিকাজের ক্ষেত্রেও এই পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিচর্যা ছাড়া ভাল�ো ফলন আশা করা নিছক ব�োকামি।’
তৃতীয় প্রতিষেধক—সাদাকাহ : সাদাকাহ সাধারণ কিছু নয়। এটি গুনাহকে
‘তৃ
এমনভাবে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। সাদাকাহর মাধ্যমে
অন্তর পরিশুদ্ধি লাভ করে। তাছাড়া যাকাত শব্দটি গুনাহ থেকে পবিত্রতা হবার
অর্থকে জ�োরাল�োভাব ফুটিয়ে ত�োলে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
ْ
ُخذ ِم ْن أ� ْم َوا ِل ِه ْم َص َد َق ًة ُت َط ِّه ُر ُه ْم َو ُ َتز ِّكي ِهم ِب َها
“আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করুন, যার মাধ্যমে আপনি
তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং যা তাদের পক্ষে বরকতের কারণ হবে।”’ [1]
‘অনুরূপভাবে অশ্লীলতা-কদর্যতা, পাপাচার ও অনাচার ত্যাগ করলেও অন্তর
পবিত্র হয়। মনের মধ্যে এসবের উপস্থিতি দেহের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান
বিদ্যমান থাকার মত�ো। যেমন বিষাক্ত রক্ত বের করে ফেললে শরীর ব্যথামুক্ত
হয়, প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, স্বস্তি ও শান্তি অনুভূত হয়, অনন্তর স্বাস্থ্যেরও
উন্নতি হয়, একইভাবে বান্দা যখন গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করে,
তখন তার আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, নেকআমলের প্রতি স্পৃহা জাগে এবং
বিভিন্ন অনিষ্ট ও কদর্যতা থেকে মুক্ত থাকায় মানসিক স্বস্তি ও প্রশান্তি অনুভূত
হয়। তাই বলা হয়—অন্তরের বৃদ্ধি ও ঋদ্ধি হল�ো পরিশুদ্ধি ও পরিপক্বতার
মধ্যে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
الل َع َل ْي ُك ْم َو َر ْح َم ُت ُه َما َ ز َك ٰى ِم ُنكم ّ ِم ْن أ� َح ٍد أ� َب ًدا ُ َ َ َ
ِ َّ َول ْول ف ْضل
“যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের
কেউ কখনও পরিশুদ্ধ হতে পারতে না।” [2]
ভয় কর।”’ [1]
আমি বললাম, ‘শাইখের কথা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, পাপাচার ও
অনাচার ত্যাগ করাই অন্তরের ঋদ্ধি ও পরিশুদ্ধির কারণ। তাছাড়া গুনাহ ও
কুকর্ম যদিও বাস্তবতার বিবেচনায় একরকম কমতি ও ঘাটতি, কিন্তু যখন অন্তর
গুনাহমুক্ত হয়, তখন এর পরিবর্তে তাতে বৃদ্ধি ও ঋদ্ধি ঘটে।’
শাইখ বললেন, ‘হ্যাঁ, বিষয়টি এমনই। অর্থাৎ যদিও তাযকিয়ার [2] মূলে হল�ো
খাইর-বরকত বা বৃদ্ধি-সমৃদ্ধি, তথাপি এটি অর্জিত হয় অকল্যাণ দূরীকরণের
মাধ্যমেই। একারণেই তাকিয়া উভয়টির সমন্বয়ে সাধিত হয়। আল্লাহ তাআলা
বলেন—
َ َّال ِذ َين َل ُي ْؤ ُت. ين
ون َّالز َك َاة َ َو َو ْي ٌل ِّل ْل ُم ْشرك
ِِ
“আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ, যারা যাকাত আদায় করে না।” [3]
‘বক্ষ্যমাণ আয়াতে যাকাত দ্বারা উদ্দেশ্য—তাওহিদ ও ঈমান। অধিকন্তু এর
মাধ্যমেই অন্তরের প্রাথমিক ও সর্ববৃহৎ পরিশুদ্ধি ঘটে। কেননা এটি ইসলামের
এমন এক মূলমন্ত্র, যা অন্তরে আল্লাহর প্রভুত্বের ওপর দৃঢ়তা স্থাপন করে এবং
সৃষ্টিকুলের দাসত্বের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে। আর এটাই হল�ো পবিত্র কালিমা—
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর হাকিকত তথা বাস্তবতা। আর এই প্রত্যয়ই কেবল
আত্মশুদ্ধির দ্বার উম্মুক্ত করতে পারে।’
চতুর্থ প্রতিষেধক—তাযকিয়া : ‘তাযকিয়ার শাব্দিক অর্থ হল�ো—ক�োন�ো কিছু
‘চতু
পবিত্র করা। এই পবিত্রকরণ হতে পারে কারও ব্যক্তিসত্তায়৷ আবার হতে পারে
কারও বিশ্বাস ও বর্ণনায়। প্রথমটির উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে—عدلته
অর্থাৎ তাকে তুমি ন্যায়পরায়ণ বানালে; এভাবে তখন বলা যাবে, যখন ত�োমার
ওসিলায় কারও নফস ন্যায়পরায়ণতার গুণে গুণান্বিত হবে। দ্বিতীয়টির উদাহরণ
হল�ো কুরআনের আয়াত—
َ
َفل ُ َتز ُّكوا أ� ُنف َس ُك ْم
[1] সূরা নাযিয়াত, আয়াত-ক্রম : ১৮-১৯
[2] আত্মশুদ্ধি
[3] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত-ক্রম : ৬-৭
151
অন্তরের আরোগ্য ও শু