Professional Documents
Culture Documents
Sense Organs of
Sense Organs of
Man]
• সংজ্ঞা:- প্রাণীদের যে সব গ্রাহকঅঙ্গ পরিবেশ থেকে বিশেষ ধরনের উদ্দীপনা সংগ্রহ করে নির্দি ষ্ট স্নায়ুর মাধ্যমে স্নায়বিক কেন্দ্রে প্রেরণ করে,
তাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় বা সেন্স অর্গ্যান বলে ।• মানুষের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি হল (১) চক্ষু বা চোখ [Eye], (২) কর্ণ বা কান [Ear], (৩) নাসিকা
বা নাক [Nose], (৪) জিহ্বা বা জিভ [Tongue] এবং (৫) ত্বক বা চর্ম [Skin] । এদের এক কথায় পঞ্চ-ইন্দ্রিয় বলে ।
জিহ্বা বা জিভ [Tongue]:- জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় [Organ of taste] বলে ।
জিহ্বার সাহায্যে স্বাদ ছাড়াও ঠান্ডা, গরম, চাপ এবং স্পর্শ অনূভব করা যায় । অবস্থান [Location]:- মানুষের মুখবিবরের মেঝেয়
মাংসল জিহ্বাটি অবস্থিত । গঠন [Structure]:- জিহ্বাটি ঐচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত । জিহ্বার উপরের পৃষ্ঠ কর্ক শ এবং নীচের পৃষ্ঠ
অর্থাৎ তলদেশ মসৃন । জিহ্বাটি একটি পাতলা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি বা মিউকাস পর্দা [mucous membrane] দ্বারা আবৃত । স্বাদকোরক:-
জিহ্বার উপরিভাগে স্বাদ গ্রহণে সহায়ককারী যে অসংখ্য ছোটো ছোটো গুটিকা থাকে তাদের স্বাদকোরক বলে । আমাদের জিহ্বায় প্রায়
10,000 স্বাদকোরক থাকে । স্বাদ কোরকের মধ্যে স্বাদগ্রাহী কোষ এবং ধারক কোষ থাকে । জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টি [sweet] এবং
পশ্চাদভাগে তিক্ত বা তেতো [bitter] স্বাদ-গ্রাহক থাকে, অগ্রভাগের কিছু ওপরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা নোনতা [salty] এবং
দু’পাশে অম্ল [sour] স্বাদ-গ্রাহক স্থান অবস্থিত ।• কাজ [Functions of tongue]:- জিহ্বার বিশেষ কাজগুলি হল: (১) স্বাদ গ্রহণ, (২)
কথা বলা, (৩) খাদ্য চর্বণ এবং (৪) খাদ্য গলাধঃকরণে সহায়তা করা ।
জিহ্বায় কীভাবে স্বাদ গৃহীত হয় ? জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টি, পশ্চাদভাগে তিক্ত, অগ্রভাগের কিছু ওপরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা
নোনতা এবং দু’পাশে অম্ল স্বাদ-গ্রাহক স্থান অবস্থিত । কোনও খাদ্যবস্তু যখন নির্দি ষ্ট স্বাদকোরকের সংস্পর্শে আসে তখন স্বাদকোরকগুলি
উদ্দীপিত হয় । ওই উদ্দীপনা স্বাদ কোরক থেকে নির্দি ষ্ট স্নায়ুপথে [গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল স্নায়ু] মস্তিষ্কের স্বাদ কেন্দ্রে পৌঁছয় । ফলে আমরা
স্বাদটি অনুভব করি ।
লালারসের সঙ্গে খাবারের মিশ্রণ → জিভের বিভিন্ন স্বাদকোরকের সঙ্গে লালারসে সিক্ত খাবারের সংস্পর্শ → স্বাদগ্রাহক কোষগুলিতে
উদ্দীপনার সৃষ্টি → গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল স্নায়ুপথে উদ্দীপনার মস্তিষ্কের স্বাদ-কেন্দ্রে পৌঁছয় → বিভিন্ন স্বাদের অনুভব ।
► ত্বক বা চর্ম [Skin]:- সংজ্ঞা:- যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি
অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে । কাজ:- ত্বকের সাহায্যে আমরা স্পর্শ অনুভব করি, তাই ত্বককে স্পর্শেন্দ্রিয় [organ
of touch] বলে । স্পর্শ ছাড়াও চাপ, তাপ, ঠান্ডা, ব্যথা ইত্যাদি অনুভূ তিগুলিও ত্বকের সাহায্যে অনুভব করা যায় । ত্বকে উদ্দীপনা
গ্রহণের জন্য অসংখ্য রিসেপ্টর [receptor] বা গ্রাহক থাকে, বিভিন্ন সময়ে এরা চাপ-গ্রাহক, তাপ-গ্রাহক, স্পর্শ-গ্রাহক, বেদনা-গ্রাহক
প্রভৃ তি হিসেবে কাজ করে । তাছাড়া স্পর্শের মাধ্যমে ত্বক বিভিন্ন বস্তু সনাক্তকরণে সাহায্য করে ।
নাসিকা বা নাক [Nose]:- নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় । কাজ:- নাসা-গহ্বরের ছাদে অবস্থিত ঘ্রাণ-ঝিল্লি [Olfactory
epithelium] ঘ্রাণগ্রাহক হিসেবে কাজ করে । ঘ্রাণ ঝিল্লিতে অবস্থিত বাইপোলার স্নায়ু কোষ বা অলফ্যাক্টরি কোষ ঘ্রাণ গ্রাহক হিসেবে
কাজ করে । ঘ্রাণ [Smell]:- বহিরাগত কোনো রকম গন্ধ গ্যাসীয় মাধ্যমে নাসা-গহ্বরে প্রবেশ করলে নাসিকার অলফ্যাক্টরি অংশ থেকে
নিঃসৃত গ্রন্থিরসে দ্রবীভূ ত হয়ে বাইপোলার স্নায়ুকোষগুলিকে উত্তেজিত করে । এই উদ্দীপনা তখন অলফ্যাক্টরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ঘ্রাণ
কেন্দ্রে প্রেরিত হয়, ফলে আমরা গন্ধটিকে অনুভব করতে পারি ।
• সংজ্ঞা :- যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল: (ক)
বহিঃকর্ণ, (খ) মধ্য কর্ণ এবং (গ) অন্তঃকর্ণ ।
(ক) বহিঃকর্ণের গঠন:- মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা:- [i] কর্ণছত্র, [ii] কর্ণকু হর এবং [iii] কর্ণপটহ ।
[i] কর্ণছত্র:- কর্ণছত্র দুটি মাথার দু’পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক পেশি ও তরুণাস্থি দিয়ে গঠিত ।
[ii] কর্ণকু হর:- কর্ণছত্রের কেন্দ্র থেকে শুরু করে কর্ণপটহ পর্যন্ত বিস্তৃ ত ঈষৎ বাঁকা নালি বিশেষ ।
(খ) মধ্য কর্ণের গঠন:- এটি ছোটো ও বায়ুপূর্ণ প্রকোষ্ঠ । মধ্যকর্ণের এই প্রকোষ্ঠে মেলিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস নামে তিনটি ছোট হাড়
শিকলের মতো থাকে । মধ্যকর্ণ ইউস্টেচিয়ান নালীর সাহায্যে গলবিলের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।
• কাজ:- বহিঃকর্ণ থেকে গৃহীত শব্দ মধ্যকর্ণের তিনটি অস্থির মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে ।
(গ) অন্তঃকর্ণের গঠন:- অন্তঃকর্ণ প্রধানত ককলিয়া এবং ভেস্টিব্যুলার যন্ত্র নিয়ে গঠিত ।
• ককলিয়া:- এটি শামুকের খোলাকের মতো পেঁচানো নালি বিশেষ । ককলিয়ার মধ্যে শ্রুতিগ্রাহক যন্ত্র বা কটি যন্ত্র অবস্থিত ।
• ভেস্টিব্যুলার যন্ত্র:- এটি প্রধানত তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালি এবং একটি অটোলিথ যন্ত্র নিয়ে গঠিত ।
• কাজ:- অন্তঃকর্ণের ককলিয়ার ভিতরের শ্রুতিগ্রাহক যন্ত্র শব্দের-উদ্দীপনা গ্রহণ করে অডিটরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রে প্রেরণ
করে, ফলে শব্দটি আমরা শুনতে পাই । অর্ধবৃত্তাকার নালী এবং অটোলিথ যন্ত্র প্রাণীদেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
কর্ণপটহ থেকে অন্তঃকর্ণে শব্দতরঙ্গ সঞ্চারণ : কর্ণপটহ থেকে শব্দতরঙ্গ মধ্যকর্ণে অবস্থিত মেলিয়াস, ইনকাস এবং স্টেপিস নামে তিনটি
\অস্থির মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে সঞ্চালিত হয় । বহিরাগত শব্দতরঙ্গ কর্ণছত্রের দ্বারা সংগৃহীত হয়ে বহিঃকর্ণ নালির মাধ্যমে বাহিত হয়ে
কর্ণপটহে ধাক্কা মারে এবং কর্ণপটহে কম্পন সৃষ্টি করে । কর্ণপটহ থেকে এই কম্পন মধ্যকর্ণের অস্থিত্রয়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের ককলিয়ায়
প্রবেশ করে । ককলিয়া মধ্যস্থ শ্রুতি গ্রাহক বা কটি যন্ত্র সেই শব্দতরঙ্গ গ্রহণ করে অডিটর স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রে প্রেরণ করে
। ফলে শব্দটি আমরা শুনতে পাই ।
বায়ুতে শব্দ তরঙ্গ → কর্ণকু হর → কর্ণপটহ → মধ্যকর্ণের অস্থি → শ্রুতিগ্রাহক বা কটি যন্ত্র → অডিটরি স্নায়ু → মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্র →
শ্রবণ ।
• সংজ্ঞা:- যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীরা পরিবেশ থেকে আলোকজাত উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং বহির্জ গতের দৃশ্য দেখতে পায়, তাকে
চোখ বলে ।
চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় । আমাদের চোখ দুটি মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে অবস্থিত । প্রতিটি চোখ একটি
অক্ষিগোলক, একজোড়া অক্ষিপল্লব এবং একটি অশ্রুগ্রন্থি নিয়ে গঠিত ।
অক্ষিগোলকের প্রধান অংশগুলি হল : কনজাংটিভা, কর্নিয়া, আইরিশ, লেন্স বা মনি, স্ক্লেরা, কোরয়েড এবং রেটিনা ।
[i] অক্ষিপল্লব [Eyelids]:- চোখ দুটি সঞ্চারশীল একটি ঊর্ধপল্লব ও একটি নিম্নপল্লব দিয়ে ঢাকা থাকে । অক্ষিপল্লবের কিনারায় এক
সারি পল্লব লোম [eye lash] থাকে ।
• কাজ:- বাইরের আঘাত ও ধুলোবালির হাত থেকে চোখ দুটিকে রক্ষা করা হল অক্ষি পল্লবের কাজ ।
[ii] কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা [Conjunctiva]:- এটি অক্ষিগোলকের একবারে বাইরের দিকে অবস্থিত একরকম স্বচ্ছ পাতলা
আবরণ ।
[iii] করনিয়া বা অচ্ছোদপটল [Cornea]:- এটি অক্ষিগোলকের সামনের দিকে অবস্থিত স্বচ্ছ স্তর । কনজাংটিভা করনিয়ার ওপর
থাকে ।
[iv] আইরিশ বা কনীনিকা [Iris]:- এটি করনিয়ার নীচে এবং লেন্স -এর ওপরে অবস্থিত স্তর । এটির কেন্দ্রে অবস্থিত ক্ষু দ্র ছিদ্রটিকে
তারারন্ধ্র বা পিউপিল [pupil] বলে ।
• কাজ:- কনীনিকা তারারন্ধ্রকে ছোটো-বড়ো করে চোখে আলো প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ।
[v] লেনস বা মণি [Lens]:- এটি কনীনিকার পরবর্তী দ্বি-উত্তলাকার স্বচ্ছ অংশ ।
[vi] স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডল [Sclera]:- এটি অক্ষিগোলকের পিছনের 5/6 অংশ জুড়ে অবস্থিত একবারে বাইরের আবরণী । এই
আবরণীটি তন্তুময় ।
• কাজ:- স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের প্রধান কাজ হল চোখের ভেতরকার অংশগুলিকে রক্ষা করা ।
[vii] কোরয়েড বা কৃ ষ্ম মণ্ডল [Choroid]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাতে অবস্থিত স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের পরবর্তী আবরণ । এই
অংশে মেলানিন নামে রঞ্জক থাকায় এই অংশটি কালো রং -এর হয় ।
• কাজ:- কোরয়েড বা কৃ ষ্ম মণ্ডল আলোকের প্রতিফলন রোধ করে এবং রেটিনাকে রক্ষা করে ।
[viii] রেটিনা বা অক্ষিপট [Retina]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত কোরয়েড স্তরের পরবর্তী স্নায়ুস্তর । এই স্তরটি রড
[rod] এবং কোন [cone] নামে দু’রকম স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত ।
• কাজ:- রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় । রড কোষ ও কোন কোষ আলো ও বর্ণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে । রড কোষ মৃদু আলো এবং
কোন কোষ উজ্জ্বল রঙ্গিন আলোয় সংবেদনশীল ।
[ix] অশ্রুগ্রন্থি [Tear Gland]:- প্রতি চোখের অক্ষিকোটরের বহির্ভাগে এবং ঊর্ধঅক্ষিপল্লবের নীচে ছোট্ট বাদামের মতো দেখতে একটি
করে অশ্রুগ্রন্থি থাকে । অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণকে অশ্রু [tear] বলে ।
• কাজ:-
(ক) অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণ নালি পথে বাহিত হয়ে কনজাংটিভার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং চোখকে ভিজে রাখে ।
(খ) অশ্রু চোখের উপরিভাগে ধুলোবালি পড়লে তা ধুয়ে দেয় ।
(গ) এছাড়া অশ্রুতে অবস্থিত সোডিয়াম কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড জীবাণুনাশক পদার্থ হিসেবে কাজ করে ।
চোখের বিভিন্ন অংশের অবস্থান ও কাজ সংক্ষেপে ছকের সাহায্যে দেখানো হল •