Professional Documents
Culture Documents
Rescue Asd
Rescue Asd
Zea Mays L একই গাছে পুরুষ ফু ল ও স্ত্রী ফু ল জন্মে । পুরুষ ফু ল একটি মঞ্জুরী
দন্ডে বিন্যস্ত হয়ে গাছের মাথায় বের হয় ।ধান ও গমের তু লনায় ভু ট্টার পুষ্টিমান বেশী। এতে প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে প্রয়োজনীয় এ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন
অধিক পরিমানে আছে। এছাড়া হলদে রংয়ের ভু ট্টা দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন “এ” থাকে। ভু ট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভু ট্টার গাছ ও সবুজ পাতা
উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছ। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টন
ভু ট্টা দানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভু ট্টার জমি দ্রুত বাড়ছে।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি ভু ট্টা চাষের জন্য উপযোগী। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।
জাত পরিচিতিঃ ভু ট্টার জাত সংগ্রহ ও বাছাই করনের মাধ্যমে বিএআরআই আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতে বহুমুখী ব্যবহারের
উপযোগী ভু ট্টা জাতের চাষের সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল।
ভু ট্টার জাতঃ
বর্ণালীঃ বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃ ক উদ্ভাবিত বর্ণালী জাতটি ১৯৮৬ সালে অনুমোদিত হয়। স্থানীয় জাতসমূহের চেয়ে বর্ণালী জাতের গাছের উচ্চতা বেশী। এ জাতের মোচা আকারে
বেশ বড় এবং আগার দিক কিছুটা সরু। মোচার অগ্রভাগ পযন- শক্তভাবে খোসাদ্বারা আবৃত থাকে। বর্ণালীর দানা সোনালী হলদে রংয়ের এবং দানা আকারে বেশ বড়। হাজার দানার ওজন ২৪৫-
৩২০ গ্রাম। এ জাতটি রবি মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০০ দিনে পাকে। ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৫.৫-৬.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৪.০-৪.৫ টন হয়। বর্ণালী জাতে
বেশী পরিমানে ক্যারোটিন আছে বলে এর দানা হাঁস-মুরগির খাদ্য তৈরির একটি উত্তম উপকরণ।
শুভ্রাঃ শুভ্রা নামে ভু ট্টার উচ্চ ফলনশীল এ জাতটি ১৯৮৬ সালে অনুমোদন করা হয়। স্থানীয় জাতের চেয়ে শুভ্রা জাতের গাছের উচ্চতা বেশী। শুভ্রার দানা আকারে বড় এবং সম্পূর্ণ মোচা দানায়
ভর্তি থাকে। হাজার দানার ওজন ৩১০-৩৩০ গ্রাম। এ জাতটির গাছের উপরের অংশের পাতা নিচের অংশের পাতার চেয়ে আকারে ছোট এবং অপেক্ষাকৃ ত সরু। জাতটি রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪৫
দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিনে পাকে। পরিপক্ক অবস্থায় মোচা সংগ্রহ করলে প্রতি হেক্টরে ৫০-৫৩ হাজার মোচা পাওয়া যায়। ফলন প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ৪.০-৫.৫ টন এবং খরিফ
মৌসুমে ৩.৫-৪.৫ টন হয়। দানার রং সাদা বলে গমের আটার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করা যায়।
খইভু ট্টাঃ খইভু ট্টা জাত খই এর জন্য ১৯৮৬ সালে জাত হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। গাছ মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন, মোচার উপরের পাতা অপেক্ষাকৃ ত সরু এবং দানা আকারে ছোট। হাজার দানার
ওজন ১৪০-১৫০ গ্রাম। খইভু ট্টা রবি মৌসুমে ১২৫-১৩০ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯০-১০০ দিনে পাকে। ফলন হেক্টরে রবি মৌসুমে ৩.৫-৪.০ টন এবং খরিফ মৌসুমে ২.৫-৩.৫ টন হয়। খইভু ট্টার
দানা থেকে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ খই পাওয়া যায়। খই আকারে বেশ বড় ও সুস্বাদু।
মোহরঃ ভু ট্টার মোহর জাত ১৯৯০ সালে উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। মোহর জাতের গাছ অন্যান্য জাতের গাছের চেয়ে বেশ উঁচু , ফলে খড়ের পরিমান বেশী হয়। এ জাতের
মোচা পাকার পরেও পাতা বেশ সবুজ থাকে বলে পাতা উৎকৃ ষ্ট গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মোহর জাতের কান্ড শক্ত হওয়ায় বাতাসে সহজে হেলে পড়ে না। মোচা মোটা,লম্বা এবং সম্পূর্ণ
মোচা দানায় পূর্ণ থাকে। দানা উজ্জ্বল হলুদ এবং আকারে বড়। হাজার দানার ওজন ১৮০-৩০০ গ্রাম। মোহর জাতটি দানা এবং গো-খাদ্য উভয় উদ্দেশ্যে চাষ করা যেতে পারে। জাতটি রবি মৌসুমে
১৩৫-১৪৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিনে পাকে। ফলন হেক্টরপ্রতি রবি মৌসুমে ৫.০-৫.৫ টন এবং খরিফ মৌসুমে ৩.৫-৪.৫ টন হয়।
বারি ভু ট্টা-৫: নাইজেরিয়া থেকে ১৯৮৮ সালে সংগৃহিত ১০ টি ইনব্রেড সারি থেকে ৫টি বাছায় করা হয়। পরবর্তীতে ১টি অগ্রবর্তী কম্পোজিটের সংগে সংকরায়ণের মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবিত হয়
এবং ১৯৯৭ সালে অনুমোদন করা হয়। জাতটি বাংলাদেশে ভু ট্টা চাষ উপযোগী এলাকায় চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত বলে প্রমানিত হয়েছে। গাছ সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির মোচা বেশ লম্বা ও
মোটা এবং সম্পূর্ণভাবে খোসাদ্বারা আবৃত। এ জাতের দানার রং হলুদ এবং হাজার দানার ওজন ২৯০-৩১০ গ্রাম। এ জাতের জীবনকাল ১৩৫-১৫৫ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ৬.০-৬.৫
টন এবং খরিফ মৌসুমে ৩.৫-৪.০ টন হয়।
বারি ভু ট্টা-৬: সংগৃহিত কম্পোজিট জাতসমূহের মধ্য থেকে বাছই করে বারি ভু ট্টা-৬ জাতটি উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৯৮ সালে অনুমোদন করা হয়। রবি মৌসুমে এ জাতের জীবনকাল ১৪৫-১৫০
দিন এবং খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন। এ জাতের মোচা খোসাদ্বারা ভালভাবে আবৃত থাকে। মোচা মাঝারি আকারের।হাজার দানার ওজন ৩১৫-৩২৫ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি ফলন রবি মৌসুমে ৬.৫-৭.০
টন এবং খরিফ মৌসুমে ৫.০-৫.৫ টন পাওয়া যায়।
বারি হাইব্রিড ভু ট্টা-১: থাইল্যান্ড হতে সংগৃহিত ইনব্রেড থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে বারি হাইব্রিড ভু ট্টা-১ জাতটি উদ্ভাবিত হয়। বর্ত মানে জাতটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। জাতটি বাংলাদেশের
আবহাওয়ায় উৎপাদনের উপযোগী। জীবনকাল রবি মৌসুমে ১৩৫-১৪৫ দিন ও খরিফ মৌসুমে ৯৫-১০৫ দিন। জাতটির দানা বেশ বড়, রং হলুদ। মোচার অগ্রভাগ ভরাট। এ জাতের গাছের উচ্চতা
১৯০-২১০ সেমি। হাজার দানার ওজন ৫৭০-৫৮০ গ্রাম। জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ৮.০-৮.৫ টন।
চাষের মৌসুম:
ভু ট্টা বীজ সারা বছরই বপন করা যায়৷ তবে বাংলাদেশে সাধারণত ৩টি মৌসুমে বীজ বপন করা হয়৷ যেমন
ক) রবি ভু ট্টা : নভেম্বর - ডিসেম্বর
খ) গ্রীষ্ম ভু ট্টা : মার্চ - এপ্রিল (খরিফ-১)
গ) বর্ষা ভু ট্টা : জুলাই-আগস্ট (খরিফ-২)
উপযুক্ত জলবায়ু:
গ্রীষ্মকালীন অর্থাৎ উষ্ণ আবহাওয়ায় (২০০ সে. হতে ২৭০ সে. তাপমাত্রায়) ভু ট্টা ভালো জন্মে৷ তবে ঠাণ্ডা পরিবেশেও জন্মাবার উপযোগী ভু ট্টার জাত রয়েছে৷ বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫ হতে ৪০ ইঞ্চি
অর্থাৎ ৬৩৫-১০১৫ মিলিমিটার ভু ট্টা চাষের উপযোগী, তবে ১৫০-২০০ ইঞ্চি অর্থাৎ ৩৮১-৫০৮ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত অঞ্চলেও ইহা জন্মিতে পারে৷ অন্যদিকে রাশিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে বার্ষিক ২৪৫
মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেও ভু ট্টার আবাদ হয়৷ সমুদ্র সমতল হতে ১২০০০ ফু ট অর্থাৎ ৪০৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু পরিবেশেও ভু ট্টা জন্মাতে পারে৷
মাটির ধরন:
ভু ট্টা চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি ভালো৷ তবে শীতকালে চাষ করতে হলে কোনও কোনও মাঝারি নিচু জমিতেই এর চাষ করা যায়৷ পাহাড়ের ঢাল, উপত্যকা, পাদভূ মিসহ ঈষৎ ক্ষারীয়
জমিতেও ভু ট্টা চাষ করা যায়৷
ভু ট্টা চাষের জন্য দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ মাটি ভালো৷ মাটির অম্লমান ৬.৫ থেকে ৭.৫ উত্তম৷ সঙ্কর জাতের ভু ট্টা চাষ করে অধিক ফলন পেতে হলে জমি উর্বরতা-সম্পন্ন হওয়া দরকার৷
বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় ভু ট্টা চাষ করা যায়৷ তবে নিম্নলিখিত মাটি-যুক্ত এলাকাসমূহ এ কাজের জন্য ভাল৷
• দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি৷
• সেচ সুবিধা থাকলে অন্যান্য মাটি৷
• চর ও হাওড় এলাকার উঁচু পর্যায়ের মাটি যা অক্টোবর মাসে শুকিয়ে যায়৷
চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চল : বাংলাদেশের সকল স্থানেই ভু ট্টার চাষ করা যায়৷
জমি তৈরি পদ্ধতি:
জমিতে ৫ থেকে ৬টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভু ট্টার জমি তৈরি করতে হয়৷ মাটির ঢেলা গুঁড়া করে মাটি ঝু রঝু রে করে মই দিয়ে জমি সমতল করতে হয়৷ জমিতে প্রয়োগ জৈব সার ইউরিয়ার
অংশবিশেষ টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও দস্তা সার জমির শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হয়৷ জমির আগাছা মাটির সাথে এমনভাবে মিশিয়ে দিতে হয় যাতে পঁচে গিয়ে সারে
পরিণত হয়৷ বড় আকারের আবর্জ না বেছে বাইরে ফেলে দিতে হয়৷ জমির জো অবস্থায় গভীরভাবে চাষ দিতে হয়৷
বীজ বপন পূর্বে করণীয়
বীজ শোধন:
বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ বা ৩ গ্রাম খিরাম দিয়ে শোধন করে নিলে রোগের আক্রমণ কম হয়৷ বীজ শোধনের জন্য একটা ঢাকনাওয়ালা কাঁচের, প্লাস্টিকের বা
টিনের পাত্র ব্যবহার করতে হবে৷ প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ (০.৪%) পাত্রের মধ্যে নিয়ে এমনভাবে ঝাঁকাতে হবে যাতে বীজের সঙ্গে ঔষধ ভালোভাবে মিশে যায়৷ শোধিত বীজ
একটি বদ্ধ পাত্রে রাখতে হবে যাতে বাতাস ঢু কতে না পারে৷
বীজ বপন
ভু ট্টা বীজ সারিতে বুনতে হয়৷ সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার৷ বীজের হার প্রতি শতকে ৮০ গ্রাম৷
গোখাদ্য হিসেবে চাষ করতে হলে বীজের পরিমাণ প্রতি শতকে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম দিতে হয়৷ বীজ রোপণের প্রতিটিতে দুটি করে বীজ দিতে হয়৷ ৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার গভীরে রোপণ করতে হয়৷
বীজ হার : ১২০ গ্রাম/শতক
সার ব্যবস্থাপনা
ভু ট্টার পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি৷ এজন্য অধিক ফলন পেতে হলে ভু ট্টা জমিতে সুষম সার দিতে হয়৷ ভু ট্টা জমির প্রয়োজনীয় সার নিচে দেওয়া হলো৷ এছাড়া প্রতি শতক জমিতে সারের পরিমাণ ও
নিচে উল্লেখ করা হলো-
সার পরিমাণ (কেজি/শতক)
রবি খরিফ
ইউরিয়া ১৩০০ গ্রাম ১০০০ গ্রাম
টিএসপি ঌ০০ গ্রাম ৭০০ গ্রাম
এমপি ৮০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০০ গ্রাম ৬০০ গ্রাম
জিংক সালফেট ৭০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম
বৃক এসিড ২০ গ্রাম ২০ গ্রাম
গোবর ২০ কেজি ২০কেজি
সার ব্যবস্থাপনাঃ ভু ট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমান নিচে দেওয়া হলোঃ
পরিমান/হেক্টর/ কেজি
কম্পোজি কম্পোজি
হাইব্রিড
সারের নাম ট ট
রবি
রবি খরিফ
জিংকসালফে
১০-১৫ ৭-১২ ১০-১৫
ট
আগাছা ব্যবস্থাপনা
ভু ট্টা ফসল বহু ধরনের আগাছা দ্বারা আক্রান্ত হয়৷ উচ্চ ফলন পেতে হলে ভু ট্টার জমি আগাছা-মুক্ত রাখতে হয়৷ ইতোপূর্বে ধান ও গম ফসলে অনেক আগাছার বিবরণ দেওয়া হয়েছে৷ এসব আগাছা
দ্বারা ভু ট্টা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ এছাড়াও ভু ট্টা জমিতে অনেক আগাছা জন্মাতে পারে৷ এখানে আরও কয়েকটি আগাছার বিবরণ দেওয়া হলো৷
বথুয়া
বথুয়া একটি উল্লেখযোগ্য রবি আগাছা৷ শীতকালে সবজির জমিতেই বেশি দেখা যায়৷ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জমিতে বথুয়ার আবির্ভাব ঘটে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বীজ আসে এবং
মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার : বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি : বথুয়া বীজের অঙ্কু রোদগম ক্ষমতা সহজে বিনষ্ট হয় না৷ হাতে তোলা, নিড়ানি, কোদলানো ও লাঙল চাষ দিয়ে সহজেই বথুয়া আগাছা দমন করা যায়৷
বন ডাটা
এটি উঁচু জমিতে বেশি জন্মে৷ ভু ট্টা ক্ষেতে এই আগাছার প্রকোপ খুব একটা কম নয়৷
দমন:
বন ডাটা ও কাঁটানটে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নিম্নরূপ হতে পারে:
• যেসব জমি এই আগাছা দ্বারা আক্রান্ত হয় সেসব জমিতে আগাছ বীজের অঙ্কু রোদগম তরান্বিত করার জন্য কয়েকবার রবি ঋতু তে চাষ দেয়া প্রয়োজন এবং আগাছা বীজ অঙ্কু রিত হওয়ার পর
পুনরায় চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়৷
• হাতে তোলা৷
• ফু ল ও ফল উৎপাদনের পূর্বে নিড়ানি৷
• শস্য পর্যায় অবলম্বন৷
কাঁটানটে
বাড়ির আশপাশে, রাস্তা ও জমিতে এই আগাছার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি৷ চারা অবস্থায় নিড়ানি দিয়ে তু লে নিলে এই আগাছা তেমন ছড়াতে পারে না৷ বীজ পরিপক্ব হওয়ার পর কয়েক মাস সুপ্ত
থেকে শীতের শুরুতে পুনরায় বীজ অঙ্কু রিত হয়৷
প্রধানত মার্চ -এপ্রিল মাসে এতে ফু ল দেখা যায় ও জুন থেকে জুলাই মাসে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: জমি চাষ, কোদলানো, নিড়ানি৷
নটে শাক
গ্রীষ্মের প্রারম্ভে এই আগাছা জন্মাতে দেখা যায়৷ বর্ষাকালে ফু ল আসে এবং বীজ পরিপক্বতা লাভ করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে সাধারণত খরিফ শস্যের মাঠে অনেক জন্মাতে দেখা যায়৷
দমন পদ্ধতি: কাঁটানটের মতো এটা এতো বিঘ্ন সৃষ্টি করে না, কারণ একে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
বন বেগুন
এ আগাছা মাঠ, পতিত জমি, বাড়ির আঙিনা ইত্যাদিতে প্রচু র পরিমাণে জন্মাতে দেখা যায়৷ বসন্তকালে বীজ অঙ্কু রিত হয়ে অক্টোবর মাসের মধ্যে পুনরায় পরিপক্ব বীজ উৎপাদন করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: কোদলানো ও হাতে তোলা পদ্ধতিতে এই আগাছা দমন করা সহজ৷
প্রেম কাঁটা
প্রায় সারা বছরেই জন্মাতে দেখা যায়৷ মধ্য-উঁচু ও উঁচু জমি, বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশে অসংখ্য প্রেমকাটা গাছ জন্মায়৷ ফু ল উৎপাদন ও বীজ পরিপক্ব হওয়ার প্রধান সময়সীমা এপ্রিল থেকে
আগস্ট৷
বংশ বিস্তার: বীজ ও লতানো কাণ্ড বা গোড়ার মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে৷
দমন পদ্ধতি: কোদলানো, গভীর লাঙল চাষ ও আগাছানাশক দিয়ে দমন করা যায়৷
ঘাঘড়া
প্রায় সব স্থানেই বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে এই আগাছা বেশি দেখা যায়৷ মধ্যম উঁচু জমি থেকে শুরু করে নিচু জমিতেই জন্মায়৷ এপ্রিল থেকে মে মাসে বীজ শীতের প্রারম্ভে পুনরায় অঙ্কু রিত হয়ে গাছ
উৎপাদন করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের সাহায্যে বংশবিস্তার করে৷ পশুর দেহ, লেজ ইত্যাদিতে আটকে থেকে এই বীজ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
দমন পদ্ধতি: জমি চাষ, কোদলানো ও হাতে তোলা৷
শিয়াল কাঁটা
ইক্ষু ও ভু ট্টার সাথে জন্মাতে দেখা যায়৷ শীতের প্রারম্ভে এদের চারা জন্মাতে দেখা যায়৷ বসন্তে এই গাছে ফু ল ফু টে এবং বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: কোদলানো ও আগাছানাশক দিয়ে দমন করা যায়৷
গালিচা আগাছা
পতিত আঙিনা, বেলে মাটি, রাস্তাপার্শ্বে, শাকসবজির জমি ইত্যাদিতে প্রচু র কার্পেট আগাছা জন্মে৷ বাংলাদেশে রবি ঋতু তে এই আগাছা বেশি জন্মাতে দেখা যায়৷ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বীজ
অঙ্কু রিত হয়৷ মার্চ -এপ্রিল মাসে বীজে ফু ল আসতে শুরু করে এবং মে-জুন মাসে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: হাতে তোলা, নিড়ানি ও কোদলানো পদ্ধতির সাহায্যে দমন করা যায়৷ শস্য জমিতে এই আগাছা জন্মালে ভালোভাবে লাঙল চাষ ও মই (ফু ল ও বীজ উৎপাদনের পূর্বে) এগুলো দমনের
জন্য যথেষ্ট কার্যকর হয়৷
কাশ
সারা বছরই এ আগাছা জন্মাতে দেখা যায়৷ উলু আগাছার অনুরূপ, চাষ জমির চারপাশে বেশি জন্ম৷
বংশ বিস্তার: মূল কন্দের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে৷ কাশ গাছে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ফু ল আসে৷ চর অঞ্চলে খুব বেশি দেখা যায়৷
দমন পদ্ধতি: গভীর চাষ ও কোদলানোর মাধ্যমে কাশ দমন করা যায়৷
বন সরিষা
পতিত জায়গা, দানাশস্য, জমি, রবিশস্য ইত্যাদিতে প্রচু র বন সরিষা জন্মাতে দেখা যায়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই আগাছার প্রকোপ কিছুটা বেশি৷ শীতকালে বীজ অঙ্কু রিত হয়ে মে-জুন মাস
পর্যন্ত গাছ দেখা যায়৷ এপ্রিল মাস থেকে বীজ পরিপক্ব হতে শুরু করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷ প্রতি ফলে অসংখ্য বীজ থাকে৷
দমন পদ্ধতি: হাতে তোলা, নিড়ানো, কোদলানো ইত্যাদির মাধ্যমে বন সরিষা আগাছা দমন করা যায়৷ তবে এসব যাবতীয় পদ্ধতি অবশ্যই ফু ল ফোটা বা বীজ পরিপক্ব হওয়ার পূর্বে সম্পাদন করতে হয়৷
বন মসুর
এটি একটি রবি আগাছা৷ সাধারণত ডাল ও শীতকালীন সবজির জমিতে জন্মাতে দেখা যায়৷ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই আগাছার বীজগুলো অঙ্কু রিত হতে দেখা যায়৷ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে
ফু ল ধরে৷ এপ্রিল-মে মাসে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: সময় মতো নিড়ানি দিয়ে এ আগাছা সহজেই দমন করা যায়৷
চাপড়া
রবি ও খরিফ উভয় ঋতু তেই এই আগাছা পর্যাপ্ত পরিমাণে জন্মায়৷ এছাড়া রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ ও বাড়ির পতিত আঙিনায় প্রচু র চাপড়া জন্মায়৷
ফু ল উৎপাদন ও বীজ পরিপক্বতার প্রধান সময় মে থেকে জুলাই৷ অন্যান্য সময়েও গাছে ফু ল থাকতে পারে তবে তার পরিমাণ কম৷
বংশ বিস্তার: সাধারণ বীজের সাহায্যে বংশবিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: দমনের জন্য গাছ ফু ল বা ফল উৎপাদনের পূর্বে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে বা হাতে টেনে তু লতে হয়৷ এজন্য নিড়ানি, কোদলানো ও লাঙল চাষ যথেষ্ট উপকারি৷ আগাছানাশক
প্রয়োগের মাধ্যমেও সহজেই চাপড়া আগাছা দমন করা যায়৷ রবি ঋতু তে সবজির জমিতে নিড়ানি দেয়ার সময় চাপড়ার ছোট ছোট চারাগাছ ভালো করে তু লে নিলে পরবর্তী মৌসুমে এর আক্রমণ
অনেক কমে যায়৷
ঘৃত-কাঞ্চন বা নুনিয়া
শীতকালীন ও উঁচু জমির অন্যান্য শস্যের জন্য ঘৃত-কাঞ্চন একটি গুরুত্বপূর্ণ আগাছা৷ বাংলাদেশে অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে বীজ অঙ্কু রিত হতে শুরু করে মে-জুন পর্যন্ত জন্মাতে দেখা যায়৷
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকেই বীজ পরিপক্ব হতে শুরু করে৷ চারাগাছের বৃদ্ধি হার খুবই বেশি৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: এ আগাছ দমনের জন্য লাঙল চাষ, নিড়ানি ও কোদলানো খুবই উপযুক্ত৷ ফু ল ফোটা বা বীজ পরিপক্ব হওয়ার পূর্বে এই আগাছা দূরীভূ ত করতে পারলে পরবর্তী বছরে এর প্রকোপ
অনেকটা কমে যায়৷
পোকার আক্রমণ ও দমন
আশিয়ান মাজরা পোকা
পোকার বর্ণনা :
স্ত্রী পোকা হলুদ থেকে হালকা বাদামি, পাখার বিস্তার হয় ২৭ সেন্টিমিটার পুরুষ পোকা গাঢ় বাদামি রংয়ের, উপরের দিকে চোখা৷
ক্ষতির ধরন:
ভু ট্টা রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পর এই পোকার আক্রমণ হয়৷ ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে প্রথমে পাতার কলা বা টিস্যু খায়৷ এরপর এরা গাছের কাণ্ড অথবা মোচা ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়৷ এরা
ভু ট্টার কাণ্ড এবং পুষ্পমঞ্জুরি বা মোচাতে সুড়ঙ্গ তৈরি করে৷ এতে গাছের বৃদ্ধি ও মোচা উৎপাদন ব্যাহত হয়৷ যখন এরা কেন্দ্রীয় পাতার গোড়া কিংবা মোচার গোড়া কেটে দেয় তখন গাছটি মারা যায়৷
দমন ব্যবস্থা:
• এ পোকার আক্রমণ হলে জমিতে প্লাবিত সেচ দেওয়া৷
• ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা৷
• ভু ট্টার ক্ষেত হতে আগাছা ও চারিপাশ হতে বিকল্প পোষক উচ্ছেদ করা৷
• প্যারাথিয়ন, নগস, ফেনিট্রোথিয়ন কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা৷
ভু ট্টার মাজরা পোকা
পোকার বর্ণনা:
পূর্ণবয়স্ক মথ হলদে ধূসর, মধ্যম আকৃ তির৷
ক্ষতির ধরন:
এ পোকা ধানের মাজরা পোকার মতো ভু ট্টা গাছের কাণ্ড ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে ও কেন্দ্রীয় পাতার গোড়া হতে কলা বা টিস্যু খায় ফলে মধ্যের পাতাটি শুকিয়ে যায়, যাকে মরা ডিগ লক্ষণ
বলে৷ এছাড়া এরা ভু ট্টার মোচা ছিদ্র করে ভেতরের অংশ ও খায়৷
দমন ব্যবস্থা:
• এ পোকার আক্রমণ হলে জমিতে প্লাবিত সেচ দেওয়া৷
• ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা৷
• ভু ট্টার ক্ষেত হতে আগাছা ও চারিপাশ হতে বিকল্প পোষক উচ্ছেদ করা৷
• প্যারাথিয়ন, নগস, ফেনিট্রোথিয়ন কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা৷
আমেরিকান বোলওয়ার্ম
ক্ষতির ধরন :
এই পোকার কীড়াগুলো ভু ট্টার দুধ পাকা ধাপে ভু ট্টার মোচা ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখানে খায়৷ ভু ট্টার আক্রমণে এই পোকার একমাত্র বৈশিষ্ট্য হলো এরা মোচার সামনের অংশে
আক্রমণ করে বা ছিদ্র করে৷
দমন ব্যবস্থা:
• আগাম ভু ট্টার চাষ করা৷
• অবিরত ভু ট্টার চাষ না করে শস্য পর্যায় অবলম্বন করা৷ তবে শস্য পর্যায়ে উল্লেখিত বিকল্প পোষক অন্তর্ভু ক্ত করা যাবে না৷
• যেহেতু মুককীট অবস্থায় মাটিতে শীতকাল কাটায় তাই ফসল কর্ত নের পর জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখতে হবে৷ এতে মুককীট রোদে মারা যাবে অথবা পাখি খেয়ে ফেলবে৷
• এ পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা তার জন্য মাঝে মাঝে ভু ট্টার ক্ষেত পরিদর্শন করা উচিত৷ বিশেষত দুধ পাকা ধাপে৷ আক্রমণ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
• আলোর ফাঁদ পেতে বয়স্ক মথ ধরে ধ্বংস করা৷
• দুটি রাসুন ভালোভাবে পিষে তার সাথে দুচামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে তাতে ৪ লিটার গরম পানি মিশাতে হবে এবং তীব্রভাবে নাড়তে হবে৷ তারপর সুপারির মতো ছোট এক টু করা সাবান তাতে
গালাতে হবে৷ এই মিশ্রণ ভু ট্টার মোচাতে স্প্রে করতে হবে৷
• কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হলে বাইড্রিন ৮৫ তরল হেক্টর প্রতি ৮০০ মিলিমিটার অথবা লিবাসিড ৫০ তরল বা সুমিথিয়ন ৫০ তরল হেক্টর প্রতি ১.১২ লিটার প্রয়োজনীয় পানি সাথে
মিশিয়ে ভু ট্টার মোচাতে স্প্রে করতে হবে৷
কাটু ই পোকা
ক্ষতির ধরন:
কাটু ই পোকা-এর আক্রমণে বীজ থেকে ভু ট্টার চারা গজানোর পরপরই মাটির কাছাকাছি বা মাটির একটু নিচ থেকে চারার গোড়া কেটে দেয়৷ ফলে জমিতে ভু ট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায় এবং ফলন
ও কমে যায়৷
দমন ব্যবস্থা:
এ পোকা দমনের জন্য বপনের সময় বীজহার বৃদ্ধি করতে হবে এবং ডারসবান ২০ ইসি বা পাইরিফস ২০ ইসি ৫ মিলিমিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সারিতে লাগানো চারাগুলোর গোড়ায় মাটিতে
২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত করে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে৷ এতে হেক্টরপ্রতি ৫ লিটার কীটনাশক প্রয়োজন হবে৷
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
ভু ট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ দমনঃ বীজ পচা এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে সাধারণত ক্ষেতে ভু ট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়। নানা প্রকার বীজ ও মাটি বাহিত ছত্রাক যেমন পিথিয়াম,
রাইজোকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি বীজ বপন, চারা ঝলসানো, রোগ ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে। জমিতে রসের পরিমান বেশী হলে এবং মাটির তাপমাত্রা কম থাকলে
বপনকৃ ত বীজের চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে। ফলে এ সময়ে ছত্রকের আক্রমনের মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রতিকার
১. সুস্থ্য, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভু ট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধী বর্ণালী ও মোহর জাত ব্যবহার করতে হবে।
২. উত্তমরূপে জমি তৈরী করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় (১৩সে. এর বেশী) বপন করতে হবে।
৩. থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভু ট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
ভু ট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমনঃ হেলমিনথোসপরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোসপরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয় এ রোগ সৃষ্টি করে। প্রথম ছত্রাকটি দ্বারা আমাদের দেশে ভু ট্টার পাতা ঝলসানো
রোগ বেশী হতে দেখা যায়। হেলমিনথোসপরিয়াম টারসকাম দ্বারা আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে।
রোগের প্রকোপ বেশী হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়। এ রোগের জীবানু গাছের আক্রান্ত অংশে অনেক দিন বেঁচে থাকে জীবাণুর বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের সাহায্যে অনেক
দূর পর্যন্ত সুস্থ্য গাছে ছড়াতে পারে। বাতাসের আদ্রতা বেশী হলে এবং ১৮-২৭ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় এ রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।
প্রতিকারঃ
১. রোগ প্রতিরোধী জাতের (মোহর) চাষ করতে হবে।
২. আক্রান্ত ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ভু ট্টা উঠানোর পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভু ট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমনঃ মোচা ও দানা পচা রোগ ভু ট্টার ফলন, বীজের গুনাগুন ও খাদ্যমান কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি
প্রভৃ তি এ রোগ ঘটায়। আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা পুষ্ট হয় না, কুঁ চকে অথবা ফেটে যায়। অনেক সময় মোচাতে বিভিন্ন দানার মাঝে বা উপরে ছত্রাকের উপস্থিতি খালি চোখেই
দেখা যায়। ভু ট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত বেশী থাকলে এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। পোকা বা পাখির আক্রমনে বা কান্ড পচা রোগে গাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ ব্যাপকতা
লাভ করে। এ রোগের জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। একই জমিতে বার বার ভু ট্টার চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
১. এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে একই জমিতে বার বার ভু ট্টা চাষ করা ঠিক নয়।
২. জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমন রোধ করতে হবে।
৩. ভু ট্টা পেকে গেলে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হবে।
৪. কাটার পর ভু ট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভু ট্টার কান্ড পচা রোগ দমনঃ বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক যথা ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি-এর কারণে এ রোগ ঘটে থাকে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গাছের কান্ড পচে যায় এবং গাছ
মাটিতে ভেঙ্গে পড়ে। আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশী এবং পটাশের পরিমাণ কম হলে ছত্রাক জনিত কান্ড পচা রোগ বেশী হয়।
প্রতিকারঃ
১. ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
২. সুষম হারে সার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
৩. ভু ট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. শিকড় ও কান্ড আক্রমকারী পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
৫. আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ দানার জন্য ভু ট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চক্চক্ খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো
দাগ দেখা যাবে। ভু ট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভু ট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।
ভু ট্টার মোচা থেকে দানা সংগ্রহ :
ভু ট্টা মোচা থেকে দানা সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ হস্তচালিত ও শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র দিয়ে মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে হয়৷ বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্ষু দ্র চাষীদের উপযোগী করে
হস্তচালিত ভু ট্টা মাড়াই যন্ত্র আবিষ্কার করেছে৷ এই যন্ত্র কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের যেকোনো শাখা অফিস থেকে ক্রয় করা যাবে৷
ছবি: শক্তিচালিত ভু ট্টা মাড়াই যন্ত্র্র ছবি: হস্তচালিত ভু ট্টা মাড়াই যন্ত্র্র
ছবি সূত্র : কৃ ষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
বীজ সংরক্ষণ:
মোচা সংগ্রহের সময় বীজে সাধারণত রবি ফসলের বেলায় ২৬% থেকে ২৮% এবং খরিফ ফসলের ক্ষেত্রে ২৮% থেকে ৩৫% আদ্রতা থাকে৷ এজন্য বীজ সংরক্ষণের আগে এমনভাবে শুকাতে হয়
যেন আদ্রতা ১২% এর বেশি না থাকে৷
শুকানোর পর দাঁত দিয়ে চাপ দিলে “কট” শব্দ করে ভেঙে গেলে বুঝতে হয় দানা ভালোভাবে শুকিয়েছে৷ তারপর বায়ুরোধন পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়৷ উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করলে ১০
মাস পর্যন্ত অঙ্কু রোদগম ক্ষমতা শতকরা ৮৬ ভাগের বেশি থাকে৷
নিচে বর্ণিত উন্নত পদ্ধতিতে অর্থাৎ বায়ুরোধক পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়।
টিনের পাত্র:
এমএস শিট দিয়ে পাত্র তৈরি করা যায়৷ মুখ বন্ধ করার ঢাকনা এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তার চারিদিকে সিলিং 'পদার্থ' মিশ্রিত কাদা মাটি দিয়ে বাতাস চলাচল বন্ধ করা যায়৷ ঢাকনায় ২.৫ সে.মি.
মাপের এক টু করো কাঁচ বসানো থাকে৷ এজন্য ঢাকনা না খুলেও ভেতরের বীজের অবস্থা দেখা যায়৷ এই পাত্রের ধারণক্ষমতা ৫ কেজি এবং তৈরি খরচ ৪০ টাকার মতো৷
মাটির পাত্র:
বিশেষভাবে তৈরি এ মাটির পাত্রের ভেতরে ০.০৫ মিলিমিটার পুরু পলিথিন ব্যাগ জড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এই পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ভু ট্টা বীজ রেখে মুখ তাপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ মাটির পাত্রের
মুখ এমনভাবে তৈরি যে সিলিং পদার্থ দিয়ে আটকিয়ে বায়ু চলাচল রোধ করা যায়৷ পাত্রের মুখের ঢাকনায় ২.৫ সে.মি. মাপের এক টু করা কাচ বসানো থাকে যেন ঢাকনা না খুলে ভেতরের বীজ দেখা
যায়৷ পাত্রের ধারণক্ষমতা ৭ কেজি এবং মোট তৈরি খরচ ১০ টাকার মতো৷
রজনীগন্ধা চাষ
পরিচিতি
রজনীগন্ধার সুবাস সব মানুষের মনে প্রশান্তি আনে। বিশেষ করে রাতের বেলা এর আবেদনময়ী ঘ্রান সকলকে পাগল করে তোলে। রজনীগন্ধা একটি মনোরম ও সুগন্ধী ফু ল। রঙ ও সুগন্ধীর জন্য
রজনীগন্ধা ফু ল সবার কাছেই প্রিয়। রাতে এ ফু ল সুগন্ধ ছড়ায় বলে একে রজনীগন্ধা বলে। এর ইংরেজি নাম Tube rose ও বৈজ্ঞানিক নাম Polianthes tuberosa. সাধারণত রজনীগন্ধা হচ্ছে বর্ষা
মৌসুমের একটি ফু ল। আমাদের দেশের যশোর, সাভার, নরসিংদী প্রভৃ তি এলাকায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে রজনীগন্ধা ফু ল চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।পরিবারঃ Amaryllidaceae
@ব্যবহার@
সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং কাট ফ্লাওয়ার হিসাবে ফু লদানী সাজাবার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এফু লের নির্যাস হতে সুগন্ধিও তৈরী হয়ে থাকে। বাজারে ডাটাসহ ও কু চা ফু লের
কদর সমান।
জাত
ফু লের পাঁপড়ির সারি অনুযায়ী রজনীগন্ধা দুই বা তিন ভাগে বিভক্ত, যেমন- সিঙ্গেল, সেমি-ডবল ও ডবল। যে সব জাতের ফু লের পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে সে সব জাতগুলি সিঙ্গেল শ্রেনীভু ক্ত,
যে সব জাতের ফু লের পাঁপড়ি দুই বা তিন সারিতে থাকে সে জাতগুলিকে সেমি-ডবল এবং তিন-এর অধিক পাঁপড়ির সারি থাকলে সে জাতগুলিকে ডবল শ্রেনীর অর্ন্তভু ক্ত করা যায়।
আবহাওয়া
উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য আর্দ্র আবহাওয়া এবং গড় তাপমাত্রা ২০০ থেকে ৩০০ সে. হওয়া দরকার। পর্যাপ্ত সূর্যোলোকসহ উপকূ লীয় এলাকা ও বর্ষাকাল উৎপাদনের উপযুক্ত সময় । শীতকালে
রজনীগন্ধা ফু লের উৎপাদন কমে যায়। তবে সেমি ডবল ও ডবল জাত শীতকালেও ফু ল দিতে থাকে।
বাজার সম্ভাবনা
আমাদের দেশে সারাবছরই রজনীগন্ধা ফু লের চাহিদা থাকে। কাটা ফু ল হিসেবে রজনীগন্ধার ব্যবহার হয়ে থাকে। ঘরে সাজিয়ে রাখলে এ ফু লের মিষ্টি গন্ধ ঘরকে ভরিয়ে দেয়। তাই সৌখিন মানুষেরা ঘর
সাজানোর জন্য এই ফু ল ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া বিয়ে, গায়ে হলুদ, বিভিন্ন সভা, সমাবেশে, অনুষ্ঠানের স্থান ফু ল দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। তাই ফু লের চাহিদা প্রায় সারাবছরই থাকে। আমাদের
দেশের প্রায় সব জেলা শহরে ফু লের দোকান দেখা যায়। এসব ফু লের দোকানে ফু ল সরবরাহ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া রজনীগন্ধা ফু ল চাষ করে দেশীয় বাজারে বিক্রয়ের পাশাপাশি ফু ল বিদেশেও
রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। রজনীগন্ধা ফু ল বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
* চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
জলবায়ু মাটির প্রকৃ তি
মার্চ থেকে এপ্রিল মাস রজনীগন্ধার চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত সময়। প্রায় সব রকম মাটিতে রজনীগন্ধার চাষ করা যেতে পারে। তবে জৈব পদার্থ
সমৃদ্ধ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি এ ফু ল চাষের জন্য ভালো। মাটির
পিএইচ ৬.৫-৭.৫ হওয়া উচিত।
জাত
আমাদের দেশে দুই ধরণের রজনীগন্ধার জাত দেখা যায়। যেমন: সিংগেল ও ডাবল জাত। সুগন্ধ ও ফু লের সংখ্যা বেশি তাই সিংগেল জাতের চাহিদা বেশি। ডাবল ফু লের পাপড়ি অনেক কিন্তু ফু লের
সংখ্যা কম। এতে গন্ধ নেই বললেই চলে।
বংশবিস্তার
কন্দ দিয়ে রজনীগন্ধার বংশবিস্তার করা হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফু ল ফোটা শেষ হলে মাটির নিচ থেকে রজনীগন্ধার কন্দ তু লে নিতে হবে। এরপর রোপণের জন্য বড় মাপের কন্দ বাছাই করে বেশ
কয়েক দিন ছায়াতে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে।
জমি নির্বাচন
জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটি। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি, পানি বের করে দেওয়ার সুব্যবস্থা যুক্ত মাটি। ছায়াহীন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। পানি সেচ ব্যবস্থা আছে এমন এবং জমির ঢ়ঐ মান ৬.৫
থেকে ৭.৫ আছে এমন জমি।
• পেয়ারা গাছ ছোট থেকে মাঝারি (২.৩-১০ মিঃ) আকারের হয়ে থাকে৷
• শিকড় মাটির বেশি গভীরে প্রবেশ করে না৷
• পাতা উপবৃত্তাকার, লম্বাটে কান্ডে দুটি পাতা পরস্পর বিপরীতমুখীভাবে অবস্থান করে৷
• পাতার মধ্যশিরা থেকে দুপাশে সমান্তরালভাবে সুস্পষ্ট পার্শ্ব শিরা বিস্তৃ ত হয়৷
• কাণ্ড বেশ মসৃণ ও পাতলা বাকলবিশিষ্ট৷
• পাতার অক্ষ থেকে পুষ্পমুকু ল এককভাবে বের হয় অথবা একটি সাইম পুষ্পমঞ্জুরীতে ২-৩টি ফল একত্রে উৎপন্ন হয়৷ কান্ড বেশ মসৃণ ও পাতলা বাকলবিশিষ্ট৷
• পাতার অক্ষ থেকে পুষ্পমুকু ল এককভাবে বের হয় অথবা একটি সাইম পুষ্পমঞ্জরীতে ২-৩টি ফল একত্রে উৎপন্ন হয়৷ উৎপাদন মৌসুমে ২৫-৪৫ দিন ধরে ফু ল ফোটে৷
• ফু ল উভলিঙ্গী এবং বায়ুপ্রবাহ ও কীটপতঙ্গ দ্বারা পরাগায়ন সম্পন্ন হয়৷
• •পেয়ারা একটি একক সরস শ্রেণীর বেরী জাতীয় ফল৷
• ফলত্বক ও পুষ্পাক্ষ বেশ রসাল থাকে৷ ডাঁসা অবস্থায় নাশপাতি আকারের হয়ে থাকে৷
• কাঁচা অবস্থায় ফল সবুজ থাকে কিন্তু পাকতে শুরু হলে হালকা বা হলুদাভ রং ধারণ করে৷
পেয়ারা পরিণত হলে কাঁচা ও পাকা উভয় খাওয়া যায়৷ তবে পেয়ারা উৎপাদনকারী দেশসমূহে সাধারণত একে পাকা খাওয়া হয়৷ টাটকা অবস্থায় পরিপক্ব ফল থেকে সালাদ তৈরি করা যায়৷
প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পেয়ারা থেকে সুস্বাদু জেলী, শরবত, পাউডার, আচার, আইসক্রীম প্রভৃ তি তৈরি করা যায়৷ পেয়ারার অনেক ঔষুধিগুণ রয়েছে৷ শিকড়, গাছের বাকল, পাতা ও অপরিপক্ব
ফল কলেরা, আমাশয় ও অনান্য পেটের পীড়া নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ ক্ষত বা ঘাঁতে থেতালানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়৷ কোন কোন জায়গায় পেয়ারার পাতা ডায়রিয়ার
ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ পেয়ারা পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়৷
অন্যান্য জাতের পেয়ারার মতোই মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে থাই পেয়ারা-৭ এর চারা রোপণ করতে হয়। এ পেয়ারা চাষের জন্য নিকাশযুক্ত বেলে দো-আঁশ মাটিই উত্তম। এ পেয়ারার
বংশবৃদ্ধির জন্য বীজ থেকে চারা বা গুটি কলম ব্যবহার করা উচিত।
চারা উৎপাদনঃ
• বীজ ও অঙ্গজ প্রজনন উভয় পদ্ধতিতেই পেয়ারার চারা তৈরি করা যায়৷
• বীজ থেকে জন্মানো গাছে মাতৃ গাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না এবং ফল ধরতে দেরি হয়৷
• গুটিকলম, জোড়কলম, কুঁ ড়ি সংযোজন ও ছেদকলম (শাখা ও মূল কাটিং) এর সাহায্যে সহজেই পেয়ারার চারা তৈরি করা যায়৷
• বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হলে ফল থেকে বীজ ছাড়ানোর পর পরই তা বীজতলায় বুনতে হবে৷
• পলিথিনের ব্যাগে চারা উত্পাদন পদ্ধতি আজকাল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ বীজের অঙ্কু রোদগম হতে প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ সময় লাগে৷ তবে বীজকে ২/৩ দিন পানিতে সিক্ত করে নিলে
অঙ্কু রোদ্গমের সময় সপ্তাখানেক কমে যায়৷
চারা রোপণঃ
• বর্ষাকাল চারা রোপণের উপযুক্ত সময়৷ তবে অতিরিক্ত বর্ষার সময় চারা রোপণ করা উচিত নয়৷
• চারা রোপণের পর গাছের গোড়ার মাটি একটু উঁচু করে দিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে৷
• রোপণের পর খুঁটির সাহায্যে গাছকে খাড়া করে বেঁধে দিতে হবে ও গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গাছকে ঘিরে রাখতে হবে৷
• চারা রোপণের মাস কয়েক পর গাছপ্রতি আরও ১০০ গ্রাম করে উপরোক্ত তিনটি সার প্রয়োগ করতে হবে৷
উপযুক্ত জলবায়ু:
পেয়ারা একটি উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুর ফল। উষ্ণ ও অউষ্ণ মণ্ডলের সর্বত্রই পেয়ারা চাষ করা যায়। পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৩-২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড৷ ১৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত
পেয়ারা চাষের জন্য ভাল।
উপযুক্ত পরিবেশ:
আমাদের দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের ফলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলমূলের মধ্যে পেয়ারা অন্যতম। পেয়ারা হচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কম বেশি
পেয়ারা জন্মে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কু মিল্লা, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি প্রভৃ তি এলাকায় এর চাষ হয়ে থাকে। বিভিন্ন জাতের
দেশী পেয়ারা চাষের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নত জাতের পেয়ারার চাষও এখন দেশের অনেক জায়গায় হচ্ছে।
চাষের মৌসুম:
পেয়ারার চারা সাধারণত মধ্য জ্যৈষ্ঠ্য থেকে মধ্য আশ্বিন (জুন-সেপ্টেম্বর) মাসে রোপণ করা হয়।
মাটির ধরন:
প্রায় সব ধরনের মাটিতে পেয়ারার চাষ করা যায়, তবে সুনিষ্কাশিত ও যথেষ্ট জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ভারী মাটিতে বেশ ভাল হয়। ভাল ফলনের জন্য মাটিতে সবসময় স্যাঁতসেঁতে থাকা দরকার। অর্থাৎ
মাটিতে পর্যাপ্ত রস থাকা দরকার৷ মাটির পিএইচ ৪.৫-৮.২ হলে ভাল হয়৷ পেয়ারা গাছ খরা ও লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে৷পেয়ারা গাছের আকার আকৃ তি, কাঠামো ও গুণগত মানের ফলধারণের
জন্য গাছে বিশেষ কতগুলো ব্যবস্থাপনা করা যায়। এ ব্যবস্থাপনাগুলোর মধ্যে অঙ্গ ছাঁটাই, ডাল নুয়ে দেয়া, ফু ল ছিড়ে দেয়া, ফল পাতলাকরণ, ফল ঢেকে দেয়া এসব পদ্ধতি।
১. ডাল ছাঁটাইঃ
পেয়ারা সংগ্রহের পর ভাঙা, রোগাক্রান্ত ও মরা শাখা-প্রশাখা ছাঁটাই করে ফেলতে হবে। তাতে গাছে আবার নতু ন নতু ন কুঁ ড়ি জন্মাবে।
২. ফল পাতলাকরণঃ
কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা-২ জাতের গাছ প্রতিবছর প্রচু র সংখ্যক ফল দিয়ে থাকে। ফল পাতলা না করলে গাছ ভেঙ্গে যায়। তাই মার্বেল আকৃ তি হলেই কমপক্ষে ৫০ ভাগ ফল ছাঁটাই করতে
হবে। এতে ফলের আকার আকর্ষণীয় হয়।
৩. ডাল নুয়ে দেয়াঃ
পেয়ারা গাছের খাড়া ডালে সাধারণত ফু ল ও ফল খুবই কম ধরে। তাই খাড়া ডালগুলোকে যদি ওজন বা টানার সাহায্যে নুয়ে দিলে প্রচু র পরিমাণ নতু ন শাখা গজায় । নতু ন ডালপালায়
গুণগতমানের ফলধারণ ও ফলন বৃদ্ধি পায়।
৪. ফ্রু ট ব্যাগিং বা ফল ঢেকে দেয়া:
পেয়ার ছোট অবস্থাতেই ব্যাগিং করলে রোগ, পোকামাকড়, পাখি, বাদুর, কাঠবিড়ালি এসব থেকে সহজেই রক্ষা করা যায়। ব্যাগিং করা ফর অপেক্ষাকৃ ত বড় আকারের এবং আর্ক ষণীয় রঙের হয়।
ব্যাগিং বাদামী কাগজ বা ছোট ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে করা যেতে পারে। ব্যাগিং করলে সূর্যেও আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে প্রতিহত হয় বিধায় কোষ বিভাজন বেশি হয় এবং ফল আকারে বড় হয়।
ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই প্রতি লিটার পানির সাথে ০.৫ মিলি হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে সমস্ত ফল ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আমাদের দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরণের ফলের চাষ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলমূলের মধ্যে পেয়ারা অন্যতম। পেয়ারা হচ্ছে একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। পেয়ারার ইংরেজি নাম Guava ও
বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Pisidium guajava.। বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কম বেশি পেয়ারা জন্মে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বরিশাল, ফিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, কু মিল্লা,
মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি প্রভৃ তি এলাকায় এর চাষ হয়ে থাকে। বিভিন্ন জাতের দেশী পেয়ারা চাষের পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভাবিত বিভিন্ন উন্নত জাতের
পেয়ারার চাষও এখন দেশের অনেক জায়গায় হচ্ছে।
পুষ্টিমান
পেয়ারায় প্রচু র ভিটামিন ‘সি’ আছে।
ঔষধিগুণ
শেকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে ভালো কাজ করে। ক্ষত বা ঘাঁতে থেঁতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
পেয়ারা পাতা চিবালে দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
বাজার সম্ভাবনা
পেয়ারা একটি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন ফল। ফলটি সুস্বাদু এবং এতে প্রচু র ভিটামিন-সি আছে। ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি পেয়ারা দিয়ে জেলি, জ্যাম ও জুস তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই
আমাদের দেশে এই ফলের প্রচু র চাহিদা আছে। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে।
পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
জাত
বাংলাদেশে চাষকৃ ত পেয়ারার জাতের মধ্যে স্বরূপকাঠি, কঞ্চন নগর ও মুকু ন্দপুরী উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃ ক উদ্ভাবিত দু’টি উন্নত জাত হলো কাজী পেয়ারা ও বারি
পেয়ারা-২।
কাজী পেয়ারা
৩. বীজ লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। এ জাতটি বছরে ২ বার ফল দেয়।
৪. ১ম বার মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্চ -এপ্রিল) মাসে ফু ল আসে। যা মধ্য আষাঢ় থেকে মধ্য ভাদ্র (জুলাই-আগস্ট) মাসে পাকে। ২য় বার মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসে ফু ল
আসে এবং মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাসে পাকে।
৫. ফলের আকার বেশ বড়। ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম।
বারি পেয়ারা-২
জমি তৈরি
১. উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি পেয়ারা চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি এজন্য নির্বাচন করতে হবে।
১. সমতল ভূ মিতে বর্গাকার ও ষড়ভূ জি এবং পাহাড়ি ভূ মিতে কন্টু র পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ করা যায়।
সার প্রয়োগ
কৃ ষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পেয়ারা গাছে যতটু কু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার
ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু
পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জ না পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জ না,
ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জ না পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সেচ
১. মাটিতে প্রয়োজনীয় রসের অভাব দেখা দিলে বা খরার সময় ২-৩ বার পানি সেচ দিতে হবে।
২. অন্যদিকে অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতা দেখা দিলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগবালাই
১. পেয়ারা গাছের পাতা, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফল এ্যানথ্রাকনোজ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রথমে পেয়ারা গাছে ছোট ছোট বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে পেয়ারা
গাছে ক্ষত সৃষ্টি করে। আক্রান্ত ফল পরিপক্ক হলে অনেক সময় ফেটে যায়। তাছাড়া এ রোগে আক্রান্ত ফলের শাঁস শক্ত হয়ে যায়। গাছের পরিত্যক্ত শাখা-প্রশাখা, ফল এবং পাতায় এ রোগের জীবাণু
বেঁচে থাকে। বাতাস ও বৃষ্টির মাধ্যমে পেয়ারার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ ছড়ায়।
২. ডাইবেক রোগে গাছের কচি ডাল আগা থেকে শুকিয়ে মরে যেতে থাকে।
৩. সাদা মাছি পোকা পাতার নিচের দিকে আক্রমণ করে রস চু ষে খায়। এর ফলে পাতায় সুটিমোল্ড ছত্রাক জন্মে এবং পাতা ঝরে যায়।
৪. স্ত্রী মাছি পোকা ফলের খোসার ওপর ডিম পাড়ে। এর ডিম ফু টে কীড়া বের হয়ে ফল ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে এবং ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।
প্রতিকার এ সব রোগ দমনের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃ ষি কর্মকর্তা
অথবা উপজেলা কৃ ষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
১. ডাল ছাঁটাই : পেয়ারা সংগ্রহের পর ভাঙা, রোগাক্রান্ত ও মরা শাখা-প্রশাখা ছাঁটাই করে ফেলতে হবে। তাতে গাছে আবার নতু ন নতু ন কুঁ ড়ি জন্মাবে।
২. ফল পাতলাকরণ : কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা-২ জাতের গাছ প্রতিবছর প্রচু র সংখ্যক ফল দিয়ে থাকে। ফল পাতলা না করলে গাছ ভেঙ্গে যায়। তাই মার্বেল আকৃ তি হলেই কমপক্ষে ৫০ ভাগ
ফল ছাঁটাই করতে হবে। এতে ফলের আকার আকর্ষণীয় হয়।
ফল সংগ্রহ
প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১০০০ থেকে ২০০০টি পেয়ারা পাওয়া যায়।
মূলধন
এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেয়ারা চাষের জন্য প্রায় ৬০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
পেয়ারা চাষ করার আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পেয়ারা চাষ সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন
পর্যায়ে কৃ ষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃ ষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃ ষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে।
এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃ ষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
পেয়ারা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে পেয়ারা জন্মে। তাই বাণিজ্যিক ভিওিতে পেয়ারা চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন
বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
পেঁপে একটি অতিপরিচিত সুসাধু ফল। পেঁপে গাছ লম্বা বোটাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। পেঁপে গাছ লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাত
ফু ট হয়। প্রায় কমবেশি সারা বছরেই ফু ল ও ফল হয়। পেঁপের কাচাঁ ফল দেখতে সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের। পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল । কাঁচা পেঁপেতে প্রচু র পরিমাণে পেপেইন নামক
হজমকারী দ্রব্য থাকে। যা অজীর্ণ, কৃ মি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে। এটি পথ্য হিসেবে ও ব্যবহার হয়। কাঁচা পাকা দু ভাবেই পেঁপে খাওয়া যায়, তরে কাঁচা
অবস্থায় সব্জি এবং পাকলে ফল।
মাটি নির্বাচন:
বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বিভিন্ন রকম আর মাটির গুনাগুণও আলেদা। তবে ভালো পেঁপে চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী।
আইল নির্বাচন:
দৈঘ্য ২২ মিটার, প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার হওয়া দরকার। উঁচু , চওড়া আইল পেঁপে চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। মাদা থেকে মাদার দূরত্ব ২ মিটার রাখতে হবে এবং মাদার আয়তন ৩০×৩০×৩০
সেন্টিমিটার। উঁচু জায়গার আকার ৪৫×৪৫×৪৫ সেন্টিমিটার ।
খুঁটি দেয়া:
বেশি ফল ধরলে বা ঝড়ের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে হলে শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে দিয়ে গাছের কান্ডের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ :
চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফু ল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাসের মধ্যেই সবজি হিসেবে পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। পেঁপে অল্প সময়ে ফল দেয় এবং প্রায় সারা বছরে পেঁপে গাছে ফল ধরে, এজন্য
অনেক দিন ধরে সময় অপেক্ষা করে বসে থাকতে হয় না। পেঁপে কাঁচা ও পাকাতেই দুই খাওয়া যায় বলে বাজারে পেঁপে অনেক চাহিদা। এজন্য পেঁপে চাষ করে অনেক লাভবান হয়া যায়।
পাহাড়ে হাইব্রিড পেঁপে চাষ : বেকার যুবক থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি ওয়াগ্গার নিপুণ
কোনো প্রকার সাহায্য ছাড়াই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে নিজেকে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তু লে অবশেষে সোনার হরিণ নামক চাকু রির খোজেঁ সরকারি-বেসরকারি
দপ্তরগুলোতে ধরনা দিয়েও একটি চাকু রি যোগাতে পারেননি। কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও নেই দেশের তথাকথিত এক্সক্লু সিভ যোগ্যতা যাকে প্রাকৃ তিক ভাষায় উপাধি দেওয়া হয়েছে সেকেন্ড
গড হিসেবে। তারপরও হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে নিজের চাচা’র ডকু মেন্টারি জায়গার কাগজপত্র দিয়ে শহরের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে মাত্র ৮০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে রাস্থার পাশে একটি
পাহাড়ি নীচু জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন হাইব্রিড জাতীয় পেঁপের আবাদ।
উপরের তথ্যগুলো একজন শিক্ষিত পাহাড়ি বেকার যুবকের। রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গায় বসবাসরত এই যুবকের নাম নিপুন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে এই
পাহাড়ি যুবক এক লক্ষ বিশ টাকা মূলধন খাটিঁয়ে বর্ত মানে তার মূলধন দাড়িয়েছে প্রায় পাচঁ লাখ টাকায়। নিপুন পেঁপে চাষ করে এখন আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি রীতিমত স্বাবলম্বী একজন
ব্যবসায়ী। সে প্রায় ১একর পতিত জমিতে পেপেসহ বিভিন্ন রকমের বাগান করেছে। নিপুনের এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে এলাকার বেশ কয়েকজন বেকার যুবক এখন হাইব্রিড জাতীয় পেঁপে চাষের
দিকে ঝুঁকছে।
পেঁপে চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্ত নের বিষয়ে নিপনের সাথে আলাপকালে সে জানায়, কৃ ষি ডিপ্লোমা শেষ করে দুই বছর আগে কাপ্তাইয়ের ওয়া¹ায় পাহাড়ের পতিত জমিতে দুইশ চারা দিয়ে
পরীক্ষামুলকভাবে পেঁপে চাষ শুরু করে নিপন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা। প্রথমবারেই পেপে চাষ করে সফলতা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় নিপন আরো বেশী পরিমান পতিত জমি নিয়ে সেখানে
পেপেসহ অন্যান্য ফলজ বাগানের পরিকল্পনা করছে বলে জানান। শুধু পেপে চাষ করে নিপন তঞ্চঙ্গ্যা আয় করেছেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা । পতিত জমিতে পেপেসহ বিভিন্ন ফলফলাদির চাষে
নিপনের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই তার এই পদ্ধতিতে পেপেসহ অন্যান্য ফসলের চাষে উদ্ভু দ্ধ হচ্ছে। কাপ্তাইয়ে কৃ ষকদের মাঝে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেঁপে চাষ। পেপে চাষের খরচ
অনুযায়ী বেশী লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ী এলাকায় এখন বেড়েছে পেঁপে চাষ।
এলাকার অনেক কৃ ষক জানান, নিপনের সফলতা দেখে এলাকার তারা অনেকেই শুরু করে দিয়েছেন পেঁপে চাষ। পাহাড়ী ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে পেঁপে চাষ করছেন তারা।
কাপ্তাই উপজেলা কৃ ষি সম্প্রসারন বিভাগের কৃ ষি কর্মকর্তা সুষ্মিতা চাকমা জানান, পেপে চাষে লাভজনক হওয়ায় কাপ্তাই এলাকায় পেঁপে চাষ বাড়ছে। এবছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে পেপে চাষ
হয়েছে। পেপেসহ বিভিন্ন ফলজ চাষে কৃ ষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগীতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃ ষিকর্মকর্তা সুষ্মিতা চাকমা। শুধু পেপে নয়। কৃ ষি পরামর্শ এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ
দিয়ে পাহাড়ের মাটিতে যেকোন ফসল চাষাবাদ করা হলে পাহাড়ে ভাল ফলন ফলানো সম্ভব। পাহাড়ের হাজার হাজার একর পরিত্যক্ত জমি কৃ ষি উৎপাদনে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের সহায়তা
কামনা করেছেন পাহাড়ের কৃ ষকেরা।
আমাদের দেশে প্রায় সারাবছরই পেঁপে পাওয়া যায়। ফল এবং সবজি হিসেবে পেঁপে খুবই জনপ্রিয়। কাঁচা পেঁপে সবজি ও সালাদ হিসেবে খাওয়া হয় এবং পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খাওয়া হয়। তাই
কমবেশি সবার কাছে সব সময় এর চাহিদা থাকে। পেঁপে চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন
বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। পেঁপে বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
জাত
স্থানীয় পেঁপে ও শাহী পেঁপে বর্ত মানে আমাদের দেশে চাষ করা হয়।
চারা তৈরি
২. পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৩. ১৫ X ১০ সে.মি. আকারের ব্যাগে সমান পরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে।
৪. তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে একটি এবং পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে।
৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।
সার প্রয়োগ
কৃ ষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে যতটু কু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার
ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু
পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জ না পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জ না,
ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জ না পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
রোগবালাই
পেঁপের ঢলে পড়া রোগে প্রচু র গাছ মারা যায়। তাছাড়া এ রোগের জীবাণুর আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পচা রোগও হয়ে থাকে। পিথিয়াম এ্যাফানিডারমাটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। অনেক সময় জিংকের অভাবে মোজাইকের মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রতিকার
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃ ষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃ ষি অফিসে
পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
৪. ফু ল থেকে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁ ড়ে ফেলতে হবে।
৫. গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙ্গে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।
৬. দুই সারির মাঝখানে নালার মাধ্যমে পানি নিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
ফল সংগ্রহ
ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।
সাধারণত এক বছরের মাথায় পেঁপে গাছে ফল ধরে। একটি গাছে বছরে ২০ থেকে ৫০টি ফল ধরে সেই হিসেবে এক বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ৭৭০০ থেকে ১৬৭৫০টি পেঁপে ধরে।
বিকল্প হিসেবে (প্রতি গাছে)টিএসপি=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=২৩ টাকা)ইউরিয়া=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=১৫ টাকা)এমপি=৬৫ গ্রাম (১ কেজি=২৮ টাকা)জিপসাম=৩৪ গ্রাম (১ কেজি=১২ টাকা)বোরাক্স=৪
গ্রাম (১ কেজি=১৫০ টাকা)জিংক সালফেট=২.৪ গ্রাম (১ কেজি=৮০ টাকা) ৫০
কীটনাশক প্রয়োজন অনুসারে জৈব বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিজস্ব/দোকান
মাটির জৈব গুণাগুণ রক্ষা ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ বাড়তে পারে।
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, অক্টোবর ২০০৯
মূলধন
এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁপে চাষের জন্য প্রায় ৮০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)-এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
পেঁপে চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে পেঁপে চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃ ষি
কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃ ষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কৃ ষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে কৃ ষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
পেঁপে একটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে পেঁপে জন্মে। তাই বাণিজ্যিক ভিওিতে পেঁপে চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি
করে বাড়তি আয় করা সমভব।
পেঁপে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর ফল। কাঁচা পেঁপে উপকারী সবজি। আর পাকা পেঁপে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। কাঁচা পেঁপেতে ‘পেপাইন’ নামক এক প্রকার জারক রস আছে, যা হজমশক্তি
বাড়ায় এবং লিভারকে সতেজ করে। পাকা পেঁপেতে প্রচু র ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদি ফলগুলোর মধ্যে পেঁপের চাষ অত্যন্ত
লাভজনক। পেঁপের জন্য পৃথক কোনো বাগান না করেও পুকু র পাড়ে, পথের পাশে ও বাড়ির আশপাশের সামান্য ফাঁকা জমিতেও এর চাষ করে স্বল্পসময়ে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হওয়া
যায়।
উপযোগী জমি ও মাটি : পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উঁচু দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
জাত নির্বাচন : শাহী পেঁপে, রাঁচি, ওয়াশিংটন, হানিডিউ, ব্লুস্টেম, কাকদাম, সেলো প্রভৃ তি।
জমি ও মাদা তৈরি : উপযুক্ত জমি নির্বাচন করে সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কয়েক পশলা বৃষ্টি হওয়ার পর ‘জো’ এলে জমিতে দু-তিনটি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে
হবে। তারপর বর্গাকার, আয়তকার বা ষড়ভোজী যেকোনো রোপণ পদ্ধতি অনুসরণ করে জাত ভেদে ২.৫ মিটার দূরত্বে সারি করে সারিতে দুই মিটার পর পর ৬০ী৬০ী৬০ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত
খনন করতে হবে।
সার প্রয়োগ : চারা রোপণের আগে প্রতি গর্তে ১০ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম খৈল, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে সারগুলো গর্তে র মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে
গর্ত ভরাট করতে হবে। মাদায় সার প্রয়োগের পর পানি দিয়ে মাদা ভিজিয়ে ১০-১৫ দিন রাখার পর চারা রোপণ করা উত্তম। এ সময়ের মধ্যে খৈল পচে যায়।
চারা রোপণ : আশ্বিন মাসে পেঁপে চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। এ সময়ে রোপণ করা পেঁপের গাছ লম্বা হয় না। এ কারণে ঝড়ে পেঁপে গাছ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই পেঁপে গাছে খুঁটি
দেয়ার ব্যবস্থা না করলেও হয়। আশ্বিনে রোপণ করা পেঁপে গাছ পরবর্তী চার মাস শীতের কারণে বৃদ্ধি পায় না। এ সময়ে গাছের পাতাও ঝরে যায়। শীতের শেষে ফাল্গুন মাসের শুরুতে কিছুটা উষ্ণ
আবহাওয়ায় সার ও পানি সেচ দিলে ওই সময়ে পেঁপে গাছ ছোট থাকলেও গাছের বয়স বেড়ে যাওয়ায় ছোট গাছেই ফু ল আসে এবং ফল ধরে। সাধারণত ৪০-৫০ দিন বয়সের ১০ সেন্টিমিটার লম্বা
চারা রোপণ করা ভালো। চারার বয়স এর চেয়ে বেশি বা কম হলে রোপণের পর মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। প্রতি গর্তে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে তিন-ছয় সে.মি. গভীরে কোনাকু নি ত্রিকোণভাবে তিনটি
করে পেঁপে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, বীজতলায় চারার গোড়া যতটু কু মাটির নিচে ছিল, ঠিক ততটু কু পর্যন্ত গভীরে যেন চারা রোপণ করা হয়। রোপণের সময়
চারার নিচের দিকের ২:১টি বড় বড় পাতা কেটে দেয়া ভালো। এতে চারা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। রোপণের পর চারার চার পাশের মাটি হাত দিয়ে আলতোভাবে চেপে দিতে হবে এবং চারার
গোড়ার পানি সেচ দিয়ে গর্তে র মাটি ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া চারা গাছে ছায়া দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। চারা রোপণের আগে পলিব্যাগ থেকে চারা বের করার সময় একটি ব্লেড দিয়ে
পলিব্যাগের একদিক চিরে দিতে হবে। এরপর চারার মাটির বলটি যেন ভেঙে না যায় বা চারার শিকড়ের কোনোরকম ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে চারাটি গর্তে র ভরাট করা মাটিতে হাত দিয়ে
চারার মাটির বলের আকারের চেয়ে একটু বড় গর্ত করে সে গর্তে স্থাপন করতে হবে। চারার গোড়া পলিব্যাগে যতটু কু বাইরে ছিল ঠিক ততটু কু ই বাইরে বা উপরে রেখে রোপণ করতে হবে। কখনোই
চারার গোড়া বেশি গভীরে পুতে দেয়া বা চারার গোড়ায় অতিরিক্ত মাটি দেয়া উচিত নয়। এতে চারা গোড়াপচা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ সময়ে চারার গোড়ায় প্রথম ১ থেকে ২ দিন কোনো পানি
সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে পাতার ওপরে হালকা করে হাত দিয়ে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত গাছ অপসারণ : পেঁপেগাছে যখন ফু ল আসে তখন প্রতি গর্তে লাগানো তিনটি গাছের মধ্যে একটি স্ত্রী বা উভয়লিঙ্গ গাছ রেখে বাকি দুটি গাছ তু লে ফেলতে হবে। তবে পরাগায়নের
সুবিধার জন্য প্রতি ১০টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখা উচিত।
আগাছা পরিষ্কার : জমির আগাছা পরিষ্কার করে ছোট অবস্থায় গাছের গোড়ায় মাটি তু লে দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার ও নিড়ানি দেয়ার সময় ল রাখতে হবে যেন, গাছের শিকড় কেটে না যায়।
পানি সেচ : খরার সময় পানি সেচ দিলে পেঁপের ফলন বৃদ্ধি পায়। শীতকালে ১০-১২ দিন পর এবং গ্রীষ্মকালে ছয়-আট দিন পর পর পানি সেচ দেয়া দরকার। দুই সারির মাঝখানে নালা করে এমনভাবে
সেচ দেয়া উচিত, যাতে শিকড় পর্যন্ত পানি পৌঁছে। কিন্তু গোড়া যেন পানিতে ডু বে না যায়। গাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। তাই সব সময়ই সেচ দেয়ার পর সুষ্ঠু ভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা
রাখতে হবে।
সাথি ফসল: পেঁপের বাগানে পেঁপে গাছের গোড়া সব সময় পরিষ্কার রাখা দরকার। শীতের সময়টু কু তে পেঁপে বাগানে সাথী ফসল হিসেবে লাল শাক, পালং শাক, ধনে শাক, লেটু স, বেগুন, মরিচ চাষ
করা যেতে পারে। তবে টমেটো, বেগুন ও কপি জাতীয় সবজি চাষ না করাই ভাল। কারণ এসব সবজিতে জাব পোকার আক্রমণ বেশি হয় বলে পেঁপে গাছও জাব পোকার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
ফল সংগ্রহ: শীতের আগে রোপণ করা পেঁপে গাছে সাধারণত ৪ থেকে ৫ মাসে ফু ল ধরে এবং ৬ থেকে ৭ মাসে কাঁচা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। প্রথম দিকে গাছে প্রচু র পেঁপে ধরে। এগুলোর মধ্য থেকে
কিছু কিছু পেঁপে ফল ছাঁটাই করতে হবে অর্থাত্ ফল সংগ্রহ করে পাতলা করতে হবে। তাহলে অন্য পেঁপেগুলো যখন পরিপক্ব হয়, তখন বড় আকারের হয়। আর রোপণের ১০ থেকে ১১ মাস পর
পরিপক্ব পেঁপে ফল সংগ্রহ করা যায়।
heterophyllus. আকারের দিক থেকে কাঁঠাল সবচেয়ে বড় ফল। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কাঁঠালের চাষ হয়। তবে ঢাকার উঁচু অঞ্চল, সাভার, ভালুকা, ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়, বৃহত্তর সিলেট
জেলার পাহাড়ি এলাকা, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপন্ন হয়।
জাত পরিচিতি: কাঁঠালের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে তিন ধরণের কাঁঠাল চাষ হয়-খাজা, আদারসা ও গালা।
চারা তৈরি: সাধারণত কাঁঠালের বীজ থেকেই চারা তৈরি করা হয়। ভাল পাকা কাঁঠাল থেকে পুষ্ট বড় বীজ বের করে ছাই মাকিয়ে ২/৩ দিন ছায়ায় শুকিয়ে বীজতলায় বপন করলে ২০-২৫ দিনে চারা
গজাবে। জ্জ মাসের চারা সতর্ক তার সাথে তু লে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। এছাড়া গুটি কলম, ডাল কলম, চোখ কলম, চারা কলম এর মাধ্যমেও চারা তৈরি করা যায়।
চারা রোপণ: ষড়ভূ জী পদ্ধতিতে সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত চারা বা কলম মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণ মাসে রোপণ করতে হয়। গাছ ও লাইনের দূরত্ব ১২ মিটার করে রাখা দরকার।
উপযুক্ত জমি ও মাটি: পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু ও মাঝারি সুনিষ্কাষিত উর্বর জমি কাঁঠালের জন্য উপযোগি।
সার ব্যবস্থাপনা: রোপণের সময় প্রতি গর্তে গোবর ৩৫ কেজি, টিএসপি সার ২১০ গ্রাম, এমওপি সার ২১০ গ্রাম সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি গাছের জন্র সারের
পরিমান বৃদ্ধি করা দরকার।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা/ কলমের তাড়াতাড়ি বাড়বাড়তি হওয়ার জন্য পরিমিত ও সময় মতো সেচ প্রদান করা দরকার।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা: কাঁঠাল পচা রোগ: এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয। এ রোগের আক্রমণে কচ ফলের গায়ে বাদমি রঙের দাগের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত আক্রান্ত ফল গাছ থেকে
ঝড়ে পড়ে।
প্রতিকার: গাছের নিচে ঝড়ে পড়া পাতা ও ফল পুড়ে ফেলতে হয়। ফলিকু র ছত্রাকনাশক ০.০৫% হারে পানিতে মিশিয়ে গাছে ফু ল আসার পর থেকে ১৫ দিন পর পর ৩ বার সেপ্র করা দরকার।
মুচিঝরা রোগ: ছত্রাকের আক্রমণের কারনে ছোট অবস্থাতেই কালো হয়ে ঝড়ে পড়ে।
প্রতিকার: ডাইথেন এম ৪৫ অথবা রিডোমিল এম জেড ৭৫, প্রতিলিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম করে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।
ফসল তোলা: ফল পাকতে ১২০-১৫০ দিন সময় লাগে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ- আষাঢ় মাসে কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়।
এগ্রোবাংলা ডটকম
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। জার্মপ্লাজম ভেদে গাছে কাঁঠালের সংখ্যা, আকার-আকৃ তি এবং ফলনে তারতম্য হয়ে থাকে। আবার আবহাওয়া, পরিবেশ ও পরিচর্যার কারণেও ফলনে পার্থক্য
হতে দেখা যায়। কাঁঠালের ফলন বৃদ্ধিতে সঠিক পরিচর্যা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কিছু পরিচর্যার মাধ্যমে এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় ও আকার-আকৃ তি উন্নত করা যায়।
মৌসুমের পর কাঁঠাল গাছের অঙ্গ ছাটাই:কাঁঠাল গাছে ফল সাধারণত এর কাণ্ড এবং শাখা-প্রশাখা থেকে উত্পন্ন ফু টস্টকে ধরে। কর্তি ত বোঁটার বা ডালের গিঁটের মত উঁচু জায়গা হতে ফু টস্টক বের
হয়। ফু টস্টক যত বেশি হবে কাঁঠালও তত বেশি হবে। এ জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কাণ্ডে ঝু লে থাকা কাঁঠালের বোঁটার অবশিষ্টাংশ ও ছোট ডাল-পালা ছেটে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ:মাটির গুণাগুণের উপর ভিত্তি করে বছরে দু’বার সার প্রয়োগ করা উচিত্। প্রথম কিস্তি মে মাসে এবং দ্বিতীয় কিস্তি অক্টোবর মাসে প্রয়োগ করতে হবে। বয়স্ক গাছের গোড়া থেকে কমপক্ষে
তিন ফু ট দূর দিয়ে রিঙ পদ্ধতিতে কাঁঠাল গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের পর এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত ৩০ কেজি গোবর, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৪০০ গ্রাম টিএসপি, ৩৫০ গ্রাম এমপি এবং
৮০ গ্রাম জিপসাম; চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত ৪০ কেজি গোবর, ১৫ বছরের উর্ধ্বে ৬০ কেজি গোবর, ১২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৬০০ গ্রাম টিএসপি, ১২৫০ গ্রাম এমপি ও ৩০০ গ্রাম জিপসাম প্রয়োগ
করতে হবে। চারা রোপণের পর তিন বছর পর্যন্ত মোট ইউরিয়া এবং পটাশ সারকে ছয় ভাগে ভাগ করে দু’মাস পর পর প্রয়োগ করলে গাছের দ্রুত অঙ্গজ বৃদ্ধি হয়ে থাকে।
অঙ্গ ছাঁটাইকরণ:
বর্ষা শেষে ভাদ্র আশ্বিন মাসে গাছের গোড়া ও মোটা ডাল হতে গজানো কচি ডালপালা এবং ফলের বোঁটার অবশিষ্টাংশ প্রতি বছর কেটে বা ছেটে দিতে হবে। এই সময় রুগ্ন ও শুকনো ডালপালা
কেটে ফেলতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন:কাঁঠাল গাছের জন্য সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১৫ দিন অন্তর অন্তর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের গোড়া থেকে তিন/চার ফু ট জায়গা
বাদ দিয়ে চারদিকে থালার আকৃ তি করে সেখানে সেচ দিতে হবে। কাঁঠাল গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই গাছের গোড়ায় যাতে পানি না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
রোগ-বালাই ও ব্যবস্থাপনা:রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য অতিরিক্ত ডালপালা ছাটাই করে কাঁঠাল গাছের সঠিক আকার দিতে হবে। সময়মত প্রুনিং এবং ট্রেনিং করতে হবে। প্রুনিং এবং ট্রেনিং এ
ধারালো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। ভাঙা ডালপালা করাত দিয়ে সুন্দর করে কেটে প্রুনিং পেস্ট লাগিয়ে দিতে হবে।
কাঁঠালের গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ হলো ফলপচা রোগ। এতে কচি ফলের গায়ে বাদামী রঙয়ের দাগের মত হয়ে ফলের পচন হয় এবং ঝরে পড়ে। এ রোগ দমনের জন্য পুরুষ ও স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী বের
হওয়ার সময় থেকে ১০দিন পর পর দুই/তিন বার ম্যাকু প্র্যাক্স বা কু প্রাভিট অথবা সমগোত্রীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে দু’ গ্রাম হারে অথবা ইন্ডোফিল এম-৪৫/ডায়থেন এম ৪৫ অথবা
সমগোত্রীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কাঁঠালের কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে গাছের গুড়িতে গর্ত হয়ে থাকে। এর প্রতিকারের জন্য সুচালো লোহার শলাকা গর্তে র ভেতর ঢু কিয়ে খুঁচিয়ে পোকার কীড়া মারতে হবে। গর্তে র মুখ
পরিস্কার করে এর মধ্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ঢু কিয়ে গর্তে র মুখ কাদা মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। ফু ল আসার সময় সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি অথবা সমগোত্রীয় কীটনাশক প্রতি লিটার
পানিতে ২ মি.লি হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর দুই/তিন বার স্প্রে করতে হবে।
কাঁঠালের ব্যাগিং:কাঁঠালকে ব্যাগিং করেও ফল ছিদ্রকারী পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। এ জন্য কাঁঠালের পুষ্পমঞ্জরী ফলে পরিণত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০ দিন পর
যখন পাঁচ/ছয় ইঞ্চি প্রশস্ত এবং আট/নয় ইঞ্চি লম্বা হয় সে সময়টাতে কাঁঠালকে ব্যাগের মধ্যে ঢু কিয়ে বোঁটার কাছে ব্যাগের খোলা মুখ সুতা দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং তা ফল সংগ্রহ পর্যন্ত রাখতে হবে।
এ জন্য ট্রান্সপারেন্ট পলিথিন ব্যাগ, কালো পলিথিন ব্যাগ এবং সিমেন্টের ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। কালো পলিথিনের ভেতর দিয়ে আলো প্রবেশ করতে পারে না বলে এতে কাঁঠালের রঙ আকর্ষণীয়
হলুদ হয়ে থাকে। ব্যাগিং-এর পূর্বে ফলকে নিরোগ এবং পোকার আক্রমণমুক্ত রাখার জন্য ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
চাহিদার পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তায় কাঁঠাল গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা পালন করে। মৌসুমে এর প্রচু র সরবরাহ থাকায় অন্যান্য ফলের চেয়ে দাম কম, তাই ধনী-গরিব সবাই নিতে পারে এর স্বাদ।
কাঁঠাল বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। বছরের পর বছর এর গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে কাঁঠাল সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। বর্ত মানে বাংলাদেশ, ভারত,
বার্মা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ চীন, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা প্রভৃ তি দেশে কাঁঠালের চাষাবাদ হচ্ছে। উত্পাদনে বাংলাদেশের গাজীপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, মাওনা, সাভার, ভালুকা,
নরসিংদী, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, যশোর ও রংপুর অন্যতম। সামগ্রিক ফলের বিবেচনায় কাঁঠালের অবস্থান আবাদকৃ ত জমির পরিমাণের দিক থেকে তৃ তীয় এবং উত্পাদনের
পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৮ সালের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশে কাঁঠালের বাগান আকারে আবাদি জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৯শ’ ৬৮ হেক্টর এবং বাগান ও
বাগানের বাইরে মোট উত্পাদন ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। বাগান আকারে কাঁঠালের চাষ বেশি না হলেও বসত বাড়ির আঙিনায়, রেল লাইন ও রাস্তার ধার দিয়ে, ক্ষেতের আইলে তথা
অব্যবহূত স্থানে বাংলাদেশের সব জায়গায়ই কাঁঠালের চাষ হয়। তবে দিন দিন কাঁঠালের উত্পাদন অঞ্চল কমে যাচ্ছে।
কাঁঠালের মোট ওজনের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ মানুষের খাদ্য। পাঁচ কেজি ওজনের একটা কাঁঠালে আধা কেজি বীজ এবং আড়াই কেজি পাল্প হয়। এতে গড়ে ১০০ কোষ পাওয়া যায়। একটা
কোষের গড় ওজন প্রায় ২৫ গ্রাম। একজন মানুষ চার পাঁচ কোষ খেয়ে সহজেই দৈনিক ফলের চাহিদা (৮৫ গ্রাম) মেটাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম কাঁঠালের পাল্প থেকে ৭.২ মলিগ্রাম
ভিটামিন সি, ১৮.১% চিনি, ৭.০৭% প্রোটিন এবং ৫৭০ আন্তর্জাতিক একক মাত্রার ক্যারোটিন এবং ৯৪ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। এর উচ্চমাত্রার ক্যারোটিন যা পরবর্তীতে শরীরে ভিটামিন
এ তে পরিবর্তি ত হয়ে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। কাঁঠাল পাকার পর কোষের প্রকৃ তির উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। অতি নরম কাঁঠালকে রসা কাঁঠাল বলে। এর পাল্প সহজেই
গলে যায়, রসালো প্রকৃ তির এবং বেশ মিষ্টি। এর টিএসএস ২০ থেকে ৩০% হয়। নরম ও শক্তের মাঝামাঝি পাল্পসমৃদ্ধ কাঁঠালকে আদরসা কাঁঠাল বলে। এর টিএসএস ১৮ থেকে ২৪% হয় এবং খুব
মিষ্টি। যে কাঁঠালের পাল্প শক্ত তাকে খাজা কাঁঠাল বলে। এর টিএসএস সাধারণত ১৪ থেকে ২০% হয়। মাঝারি ধরনের মিষ্টতা থাকে এ কাঁঠালে।
কাঁঠাল শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। পাকা কাঁঠালের কোষ মানুষ সরাসরি খায়। আবার প্রক্রিয়াজাতকরণ করে যেমন, চিপস, ক্যান্ডি, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি তৈরি করেও খাওয়া যায়। কাঁচা
কাঁঠাল সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এর বীজ উত্কৃ ষ্টমানের তরকারী। একে ভেজেও খাওয়া যায়। কাঁঠালের উপরিভাগ এবং অন্যান্য অংশ পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। এর পাতা ছাগলের খাবার
হিসেবে সমাদৃত। যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুরের অনেক জায়গায় কাঁঠাল পাতার বাজার আছে। কাঁঠাল একবার ভেঙে খাওয়া শুরু করলে তা প্রায় দুই দিন খাওয়া যায়। আগের দিন বিকাল থেকে
পরের দিন রাত পর্যন্ত ভালভাবেই খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কাঁঠালটি বোটার দিক থেকে খোসা ছাড়িয়ে একদিক থেকে ভাঙতে হবে। প্রয়োজন না হলে পুরোটা খোসা ছাড়ানোর দরকার নেই। আদরসা
ধরনের কাঁঠাল সহজে নষ্ট হয় না। রসা ধরনের কাঁঠাল অতিরিক্ত নরম বিধায় তা সংরক্ষণের জন্য উপযোগী কম। খাজা কাঁঠালের বাল্ব থেকে বীজ ছাড়িয়ে পলিথিন ব্যাগে ডিপফ্রিজে রেখে দিলে
কয়েকমাস ভাল থাকে। চিনির দ্রবনে কাঁঠালের কোষ সারা বছরই রাখা যায়। কাঁঠালের বীজও অনেক দিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। এজন্য মাটির পাত্রে বালুর মধ্যে বীজ রাখতে হবে। বীজের
উপরের ছাল ছাড়িয়ে কাপড়ে ঘষা দিয়ে ঈষদোষ্ণ গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ডু বিয়ে তা ডিপফ্রিজে কয়েক মাস সংরক্ষণ করা যায়।
পৃথিবীর বৃহত্তম ফলসমূহের মধ্যে কাঁঠাল একটি। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এদেশে উৎপাদনের দিক থেকে কলার পরই কাঁঠালের স্থান। বাংলাদেশে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ
হয় এবং এর উৎপাদন ২৬০ হাজার টনের কিছু উপরে।
• কাঁঠাল গাছ মাঝারি আকারের, প্রায় ৮-১০ মিটার লম্বা হয়।
• প্রধান মূল ও পার্শ্বমূল সাধারণত উপরের মাটির ২ মিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
• পাতা গাঢ় সবুজ, উপবৃত্তাকার, সরল ও একান্তরভাবে সাজানো।
• রোপণের ৭-৮ বছর পর সাধারণত ফু ল আসে।
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। অনন্য স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিতে ভরপুর এ ফল সবার প্রিয়। কাঁঠাল আকার, আকৃ তি ও ওজনে সবচেয়ে বড় ফল। গ্রীষ্মম-লীয় ফল কাঁঠালের জন্ম বাংলাদেশ ও
ভারতে। পুরাতত্ত্ব গবেষকদের মতে ভারত উপমহাদেশে ৩-৬ হাজার বছর আগে কাঁঠাল চাষ শুরু হয়। ধারণা করা হয় সুদুর অতীতে নাবিক ও পর্যটকগণ কাঁঠাল বীজ এদিক সেদিক ছড়িয়ে দেন।
ইংরেজ পর্যটক ক্যাপ্টেন ব্লিগ ভারত উপমহাদেশ হতে কাঁঠাল পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যান। বাংলাদেশে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। দেশের সর্বত্রই কমবেশি কাঁঠাল জন্মে।
তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদী, দিনাজপুর, রংপুর, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রচু র জন্মে। ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড় ও ভালুকা,
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়, গাজীপুর জেলার ভাওয়াল গড় ও খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে প্রচু র কাঁঠাল হয়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, আফ্রিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়ার
উত্তরাংশ, ভারতের বিহার, আসাম ও পশ্চিম বঙ্গ এবং শ্রীলঙ্কায় কাঁঠাল উৎপন্ন হয়।
জাত ও গুণাগুণ : কাঁঠালের উন্নত জাত হল বারি কাঁঠাল-১, বারি কাঁঠাল-২ ও বাউ কাঁঠাল-১। ফলের ওজন সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম হতে ৭০-৮০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়। কোষের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ
আনুসারে কাঁঠাল তিন প্রকার। খাজা, গালা ও রসা। খাজা কাঁঠালের রং সবুজ, কাটা মসৃণ, কোষ বড়, আঁশ নরম, বীজ ছোট ও মিষ্টি কম হয়। এ জাত শেষ মৌসুমে পাকে। এটা সকলের প্রিয়।
গালা কাঁঠাল লাল রঙের, কোষ মাঝারি আকারের, রস বেশি মিষ্টি ও বীজ আকারে বড়। এর কাটা মসৃণ হয় না আঁশ শক্ত হওয়ায় রস আলাদা করা যায়। এ জাতের ফলন সাধারণত আগাম হয়।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের রুদ্রাক্ষী জাতের ফল গোলাকার, কাটা কম, মসৃণ ও কম মিষ্টি হয়। সিঙ্গাপুরের সিঙ্গাপুরি জাতের ফল খুব ভাল মানের, আকারে বড় ও রোপণের আড়াই বছরের মধ্যে
ফলন হয়। উভয় জাতই এদেশে চাষ হচ্ছে।
চাষাবাদ ও সংরক্ষণ : উষ্ণ, আর্দ্র আবহাওয়া কাঁঠাল চাষের জন্য সহায়ক। এঁটেল-দোআঁশ, দো-আঁশ ও এটেল মাটিতে কাঁঠালের ফলন ভাল হয়। উঁচু জমি খুব উপযোগী। পানি জমে থাকে এমন
জমি কাঁঠাল চাষে সহায়ক নয়। মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের লাল মাটি, পার্বত্য চট্টগ্রামের কাঁকরময় মাটি, অল্প ক্ষার ও অম্ল মাটিতে এ গাছের ফলন ভালো হয়।
চাষাবাদ : বীজ, শাখা, জোড় ও চোখ কলম হতে চারা হয়। তাজা বীজ হতে ভালমানের চারা হয়। এজন্য বীজ শুকানোর আগেই রোপণ করা উচিত। অগ্রহায়ন হতে চৈত্র মাস পর্যন্ত কাঁঠালের ফু ল
ধরে। জ্যৈষ্ঠ মাস হতে ফল বাত্তি (পরিপূর্ণ) হতে শুরু হয়। সাধারণত তিন মাসের মধ্যে ফল বাত্তি হয়। সবজির জন্য ফল সংগ্রহ করা হয় চৈত্র হতে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। পাকা ফল জ্যৈষ্ঠ মাসের
মাঝামাঝি হতে শ্রাবণ মাসের শেষ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। একটি কাঁঠাল গাছ ১০-১৬ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ লক্ষ টন ফল উৎপন্ন হয়।
বড় বাজার : গাজীপুরের মাওনা, কাপাসিয়া, বরমি, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও খাগড়াছড়ির রামগড় কাঁঠালের বড় বাজার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।
এসব বাজার হতে প্রত্যহ প্রচু র কাঁঠাল বেচাকেনা ও দেশের সর্বত্র চালান হয়। এসব বাজারকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
ফল পাকানো ও সংরক্ষণ : অন্যান্য ফলের তু লনায় কাঁঠাল সহজে পঁচে না। তাই বাত্তি (পরিপক্ক) ফল গাছে পাকার আগেই সংগ্রহ করা সম্ভব। বাত্তি ফল বস্তায় ভরে রোদে রাখলে দ্রুত পাকে।
এছাড়া ফলের বোঁটায় সামান্য লবণ, তুঁ ত ও চু ন দিয়ে গরম শিক বা বাঁশের শলাকা ঢু কালে দ্রুত পাকে। তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে পাকতে সময় কম লাগে। তাপমাত্রা ১১-১২ ডিগ্রি
সেলসিয়াস ও ৮৫-৯০ শতাংশ আর্দ্রতায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ফল সংরক্ষণ করা সম্ভব। কাঁঠাল সাধারণত হিমাগারে রাখা হয় না।
খাদ্য, পুষ্টি ও ঔষধি গুণ : খাদ্যমান হিসেবে কাঁঠাল অতি উত্তম। এতে রয়েছে ৩৩% খাদ্য ও ৬৭% গোখাদ্য। কোয়ার ওজন ৪৫-১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। একটি কোয়ার ৭৫ ভাগ খাবার উপযোগী ও ২৫
ভাগ বীজ। মরটন ১৯৮৯ সালে ও সোয়েপদজো ১৯৯১ সালে কাঁঠালের ঔষধি গুণ বর্ণনা করেন। কাঁঠালের ফল, বীজ, শিকর, পাতা ও আঠা অপরিসীম ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ। কাঁঠালের বিভিন্ন
অংশের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বর্ণনা করা হল।
ফল : কাঁঠাল ফলে চীনে পুষ্টিকর টনিক হিসেবে গণ্য করা হয়। মাদক সমস্যা হতে পরিত্রাণের জন্য এ টনিক ব্যবহৃত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯৫ প্রকার ক্যালরি আছে। ফল হজমকারক ও
ল্যাক্সাটিভ সমৃদ্ধ। এতে আছে প্রচু র ভিটামিন এ, বি, বি কমপ্লেক্স ও সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লৌহ। এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ ও উপকারিতার জন্য কাঁঠাল দেহের সেলের জন্য খুব
উপকারী। কাঁচা ফল আদর্শ সবজি। রান্নার আগে কাঁচা ফল কেটে গরম পানিতে ৫-৭ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে আঠা দূর হয়। পহেলা বৈশাখে কচি ফলের সবজি গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত খাবার। বৌদ্ধ
পূর্ণিমায় কাঁচা কাঁঠালের সবজি জনপ্রিয় খাবার। আলু ও ডালের সাথে কাঁচা ফলের সবজি অতি উত্তম তরকারি। পাকা ফল দুধসহ মুড়ি, চিড়া, ভাত ও রুটির সাথে খাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে
পান্তাভাত দিয়ে কাঁঠাল খাওয়ার প্রচলন আবহমান কাল ধরে প্রচলিত। দুধসহ ফল সিদ্ধ করে ছেকে নিলে মজাদার খাবার তৈরি হয়।
পাতা: কাঁঠালের পোড়া পাতার ছাইয়ের সাথে ভু ট্টা ও নারিকেলের খোসা একত্রে পুড়িয়ে নারিকেল তেলের সাথে মিশাতে হবে। এ মিশ্রণ ঘা বা ক্ষতস্থানে লাগালে শুকিয়ে যায়, গ্যাস্ট্রিক ও আলসার
ভাল হয়। পাতা গবাদি পশুর উত্তম খাবার ও কোরবানির পশুর জন্য আদর্শ খাবার হিসেবে বিবেচিত।
আঠা : কাঁঠালের আঠা ও ভিনেগারের মিশ্রণ গলাফোলা ও সাপের কাঁমড়ের ক্ষত সারায়।
শিকড়: শিকরের নির্যাস দিয়ে জ্বর, কলেরা, চর্মরোগ ও হাঁপানির ওষুধ প্রস্তুত হয়।
বীজ : বীজে জ্যাকলিন নামক এক প্রকার প্রোটিন আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বীজ গরম করে ক্ষতস্থানে লাগালে উপকার হয়। বীজ এফরোডিয়াসিক রোগে কার্যকর। কাঁঠালের শাঁস ও
বীজ চীনে বলবর্ধক হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়া বীজে আছে ক্যালরি, শর্ক রা, ও আমিষ। কোষ ও বীজ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ সমৃদ্ধ। বীজে প্রচু র শর্ক রা থাকলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
উত্তম পথ্য। শুকনা বীজ তরকারি, সবজি ও ভর্তা খুব মজাদার খাবার। বীজ ভাজা মুড়িসহ গুড় দিয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে। শুকনা বীজের ময়দার তৈরি রুটি খুব মজাদার। বীজ শুকিয়ে দীর্ঘদিন
সংরক্ষণ করে সবজি খাওয়া সম্ভব।
পুষ্টির অভাব পূরণ: পুষ্টির অভাবা মেটাতে কাঁঠাল বিশেষ কার্যকর। দেশের অনেক নারী ও শিশু ফি বছর ভিটামিন ও খনিজের অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্বাস্থ্যের
জন্য প্রতিদিন জনপ্রতি ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। এ হিসেবে দেশের লোকসংখ্যা হিসেবে বছরে ৮০ লক্ষ টন ফল দরকার। অথচ ফলের উৎপাদন ১৫ লক্ষ টন যা চাহিদার তু লনায় অপ্রতু ল।
তাই পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল অনন্য ভূ মিকা রাখতে পারে।
পুষ্টিকর গোখাদ্য : এছাড়া কচি পাতা, কচি ডাল, ছোবড়া, মোচা, ভু তি ইত্যাদি উৎকৃ ষ্ট গোখাদ্য। বিশেষ করে দুধেল গাভীকে এসব নিয়মিত খাওয়ালে গাভীর পুষ্টির পাশাপাশি দুধ বাড়ে।
পোকার আক্রমণ হতে সবজির সুরক্ষা : ফলের ভেতরের গোলাকার মোচা কু মড়া ও লাউয়ের মাচায় ব্যবহার করলে ফল ছিদ্রকারী মথ জাতীয় পোকার আক্রমন হতে এসব সবজি রক্ষা পায়।
অর্থকরী সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়াজাত : কাঁঠাল গাছের রযেছে নানামুখী অর্থকরী সম্ভাবনা। বিশ্বের সবচেয়ে উযন্নতমানের ও সেরা কাঁঠাল হয় এদেশে। এর ফল, বীজ, কোয়া, ফলের বহিরাংশ, কাঠ, পাতা
সবই কাজে লাগে। কাঁঠাল গাছের বিশেষত্ব হল কোন অংশই ফেলনা নয়, বরং নানাভাবে উপকারী।
কাঠের ব্যবহার: হলুদ রঙের জন্য কাঁঠাল কাঠ আসবাবপত্র, ঘরের দরজা, জানালা তৈরির জন্য খুব সমাদৃত। এর আসবাবপত্র খুব দামি ও টেকসই। আসবাবপত্র তৈরিকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের
কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গাছের ডালপালা ও পাতা উত্তম জ্বালানী।
সহায়ক ফসল চাষ: কাঁঠাল গাছের ছায়া খুব নিবিড় ও শান্ত প্রকৃ তির। এজন্য এ গাছের নিচে আনারস, আদা, মিষ্টি আলু, হলুদ, কচু ইত্যাদি চাষ সম্ভব। এতে কম শ্রমে এসব ফসল হতেও ভাল আয়
করা যায়।
চাষের সমস্যা : অর্থকরী সম্ভাবনা সত্ত্বেও কাঁঠাল চাষের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা বিদ্যমান। ফলের উন্নয়ন, প্রক্রিয়াজাত বিপণন ও গবেষণার তেমন উদ্যোগ নেই। বিপণন সমস্যায় অনেক ফল বিনষ্ট
হয়। এজন্য ফলের অপচয় হওয়ায় চাষি ন্যায্য মূল্য পায় না। উঁচু জমিতে এ গাছ ভাল জন্মে। তবে পানি সেচের সমস্যা আছে অনেক ক্ষেত্রে। ঘনঘন বন্যার কারণে গাছের ক্ষতি হয়। বিশেষ করে
১৯৮৮ সালের ভয়াবহ ও পরবর্তী বন্যায় অনেক ভাল জাতের গাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কাঠের প্রয়োজনে প্রতি বছর পুরাতন গাছ কাটা হয়। নতু ন করে গাছ রোপণের উদ্যাগ ও তৎপরতা নেই।
এসব কারণে অনেক ভাল ও উন্নত জাত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আম, লিচু , আনারস ও কলার মত কাঁঠালের পরিকল্পিত বাগান নেই। সাধারণত রাস্তা ও বসতবাড়ির পাশেপাশে ও পতিত
জমিতে কাঁঠাল গাছ রোপণ করা হয়।
গবেষণা : অন্যান্য ফলের মত কাঁঠালের উন্নত জাত নেই। ভাল জাত উন্নয়নে তেমন গবেষণাও নেই। কাঁঠাল নিয়ে গবেষণা ও গবেষকের সংখ্যাও কম। চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ভাল ও
পুরাতন জাত সংরক্ষণ করে সেগুলো রোপণ করা জরুরি। তা না হলে উন্নত জাত চিরতরে হারিয়ে যাবে। কাঁঠালের উন্নয়ন, গবেষণা ও চাষিদের প্রশিক্ষণের জন্য কাঁঠাল গবেষণা ইস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা
করা প্রয়োজন। পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও অর্থকরীভাবে সম্ভবনাময় কাঁঠালের উন্নয়নে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রক্রিয়াজাত : ফলকে প্রক্রিয়াজাত করেও বাড়তি আয় করা সম্ভব। ভারত ও থাইল্যান্ডে কাঁঠাল ফল হতে জ্যাম, জেলি, জুস তৈরি ও কেীটাজাত করা হয়। শ্রীলংকায় কাঁঠাল ফল ও বীজ হতে
নানাজতের খাবার প্রস্তুত করা হয়। শ্রীলংকা হতে আটা, ময়দা, নুডু ল্ষ, সালাদ, আইসক্রিম, কৌটাজাত শুকনা (ডিহাইড্রেড পাকা ফল) ফল ও উন্নত মানের কাঠ ইউরোপে রফতানি হয়। এগুলো
রফতানি করে প্রচু র বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে শ্রীলংকা। ব্রাজিলে শুকনা কাঁঠালের চিপস তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। ভিয়েতনামে ফল হতে এক প্রকার মিষ্টি স্বাদের সূপ প্রস্তুত করা হয়।
বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ কাঁঠাল হতে বিস্কু ট ও ক্যান্ডি প্রস্তুত করেছে। ক্যানিং পদ্ধতিতে তাজা ফল প্রক্রিয়াজাত করলে ফু ড ভ্যালু সমৃদ্ধ ও অনেক দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এর
ফলে দীর্ঘদিন এ ফল খাওয়া সম্ভব ও বিদেশে রফতানির সুযোগ তৈরি হবে। এতে চাষিও ন্যায্যমূল্য পাবে। পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশে প্রচু র উৎপাদন স্বত্বেও কাঁঠাল হতে বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুত ও
রফতানির তেমন উদ্যোগ নেই। সামান্য পরিমাণে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাস্ট্রে রফতানি হয়। কাঁঠালের জনপ্রিয়তা বাড়াতে বাজারজাত সম্প্রসারণ করা জরুরি। তাজা ফল প্রক্রিয়াজাত করে
অন্যান্য দেশের মত জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, জুস, সূপ, বিস্কু ট, ময়দা, আটা, নুডু লস, আইসক্রিম ইত্যাদি তৈরির জন্য মধুপুর, ভালুকা, মাওনা, রামগড়, শ্রীমঙ্গল এলাকায় শিল্প স্থাপন করতে হবে। শিল্প
করা সম্ভব হলে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিল্পজাত দ্রব্য ও কাঠ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রচু র বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আশা আছে। এজন্য সরকারি ও
বেসরকারি উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন।
নিমের ইংরেজি নাম Neem, বৈজ্ঞানিক বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Azadirachta indica A.Juss., পরিবার Meliaceae। নিমকে নিম্ব, ভেপা, তামার আরও আরও অনেক নামে ডাকা হয়। নিম আমাদের
এক বিশেষ উপকারী বন্ধু বৃক্ষ। নিমের জনপ্রিয়তা সে অনাদিকাল থেকে চলে আসছে। নিমের পাতা থেকে বাকল, শিকড় থেকে ফু ল, ফল থেকে বীজ সবগুলোই আবশ্যকীয়ভাবে কাজে লাগে।
নিমের গুণ অতু লনীয়। নিম অনেক দ্রুতবর্ধনশীল গাছ। নিম বহুবর্ষজীবী মাঝারি ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ। পরিপক্ব বয়সে ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। তবে শুকনো জায়গায় পত্রঝরা
বৃক্ষের মতো আচরণ করে। গাছ সাধারণত গোড়ার ব্যাসার্ধ ৬০-৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গাছ বা মোটা ডালের বাকলের রঙ গাঢ় ও অমসৃণ হলেও অপেক্ষাকৃ ত কচি ডালের রঙ খয়েরি। গাছের
বাকল অপেক্ষকৃ ত মোটা। ডালের চারদিকে ওপর নিচে করে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার লম্বা যৌগিকপত্র জন্মে। প্রতিটি পাতায় ১০ থেকে ১৭টি করে কিনারা খাঁজকাটা পত্রক থাকে। প্রতিটি পত্রক ৬
থেকে ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতায় জোড় এবং বিজোড় সংখ্যক পত্রক উভয়ই থাকতে পারে। সারা বছর পাতা গজায়। তবে বসন্তে পাতা ঝরাকালে বেশির ভাগ পাতা ঝরে যায়। ৪৫০
থেকে ১১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নিমগাছের জন্য উত্তম। তবে যেখানে বৃষ্টি কম সেখানেও নিম খুব ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় যার প্রমাণ সৌদি আরবের পবিত্র নগরীর আরাফাতের ময়দান। নিম খরা
সহনশীল। নিম ফল পাখির প্রিয় খাদ্য। বর্ষায় নিম ফল পাকলে শালিকসহ আরও অনেক পাখি এসে নিম গাছে ভিড় জমায়। নিম হিন্দুদের পবিত্র বৃক্ষ। দেবতার মূর্তি তৈরির কাজে নিম গাছের
ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
নিমের বহুবিধ গুণের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। নিম একটি অভূ তপূর্ব ঔষধি গাছ। প্রাণী ও উদ্ভিদকূ লের জন্য এত উপকারী গাছ অদ্যাবধি আবিষ্কত হয়নি। এজন্য বলা হয় নিম পৃথিবীর
সবচেয়ে দামি বৃক্ষ। নিমের এ গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে ‘একু শ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে। খ্রিস্টের জন্মের ৫ হাজার বছর পূর্ব থেকেই ভারত উপমহাদেশে
নিমের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। নিমের গুণাগুণ সম্পর্কে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ধারণা থাকলেও নিম নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয়েছে হাল আমলে। ভারত উপমহাদেশে নিম নিয়ে
গবেষণা শুরু হয় ১৯৪২ সালে। পশ্চিমা বিশ্বে গবেষণা শুরু হয়েছে আরও অনেক পরে। মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্রে নিম নিয়ে গবেষণা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। বর্ত মান সময়ে মানুষের মধ্যে নিম নিয়ে ব্যাপক
আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নিমের ব্যবহার, এর চাষাবাদ নিয়ে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
নিম বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা গেলেও উত্তরাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। বলা হয় এর আদি নিবাস বাংলাদেশ, ভারত আর মিয়ানমারে। এ গাছটি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান
সৌদি আরবে জন্মে। বর্ত মানে এ উপমহাদেশেসহ উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলীয় সবদেশেই নিমগাছের বিভিন্ন প্রজাতি ছড়িয়ে আছে। সৌদি আরবের আরাফাত ময়দানে বাংলাদেশের নিম গাছের হাজার
লাখো সংখ্যা আমাদের গর্বিত করে। কেননা এত দূরে বাংলাদেশের নিম সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে জানান দেয় বাংলার ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক হয়ে। বলা হয় কেউ যদি নিমতলে বিশ্রাম নেয় কিংবা শুয়ে
ঘুমায় তাহলে তার বিমার কমে যায় সুস্থ থাকে মনেপ্রাণে শরীরে অধিকতর স্বস্তি আসে। এজন্য ঘরের আশপাশে দু-চারটি নিমের গাছ লাগিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয়।
নিম বা ইন্ডিয়ান লাইলাক (Indian Lilec) প্রাপ্ত বয়স্ক হতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। এটি হচ্ছে সাধারণ নিম। এছাড়া আরও ২ প্রকার নিম আছে যা হচ্ছে মহানিম বা ঘোড়ানিম যার উদ্ভিদতাত্ত্বিক
নাম Melia sempervirens এটি সাধারণ নিমের মতো বহু গুণে গুণান্বিত নয়। অপরটি হলো মিঠো নিম, এটি তেমন তেতো নয়, এর উদ্ভিদতান্তিবত নাম হচ্ছে Azadirachta Siamensis এটি
আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চল মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায় এবং সবজি হিসেবেও এর বহুল ব্যবহার প্রচলিত।
নিম গাছ কেন লাগাব? কেননা- নিম একটি পবিত্র বৃক্ষ ও আমাদের দেশীয় গাছ; পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত মনীষীদের জীবনের সাথে নিম জড়িত; নিম পরিবেশ রক্ষা, দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থান
সৃষ্টিতে ব্যাপক অবদান রাখে; নিম থেকে উৎপাদিত হয় প্রাকৃ তিক প্রসাধনী, ওষুধ, জৈবসার ও কীটবিতাড়ক উপাদান; নিম স্বাস্থ্য রক্ষাকারী, রূপচর্চা, কৃ ষিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়; নিমকাঠ ঘূণে
ধরে না, নিমের আসবাবপত্র ব্যবহারে ত্বকের ক্যান্সার হয় না; নিম পানি স্তর ধরে রাখে শীতল ছায়া দেয় ও ভাইরাসরোধী; উপকারিতা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে ঘোষণা করেছে ‘একু শ
শতকের বৃক্ষ’ হিসেবে; নিম শিল্প বিপ্লবের ফলে উদ্ভূ ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে; নিম ঝড়-ঝাঞ্ঝা ও ঝড় থেকে আমাদের রক্ষা করে এবং নদীভাঙন ঠেকায়; নিমের সব অংশই ব্যবহারযোগ্য ও উপকারী; নিম
মাটির লবণাক্ততা রোধ করে এবং অম্ল ও ক্ষারের সমতা ফেরায়; নিম গাছ বাতাস শীতল রাখে এবং অন্যান্য গাছের তু লনায় নিম গাছের নিচে তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি কম থাকে; নিমপাতা গুঁড়া
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী; নিমগাছ দ্রুতবর্ধনশীল এবং কাঠ খুব দামি; নিম যে কোনো মাটিতে জন্মে ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে; নিম পরিবেশেবান্ধব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অদ্বিতীয় ১০ বছর
বয়সের দুটি নিম গাছের পাতা ও বীজ বিক্রি করে ৫ জনের পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ সম্ভব; নিম ফু লের মধু অন্যান্য ফু লের মধুর তু লনায় অধিক পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন; নিম মাটির
ক্ষয় ও মরুময়তা রোধ করে; কৃ ষি বনায়ন বা কৃ ষি জমির আইলে নিম গাছ লাগালে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়; নিম থেকে তৈরি ওষুধ, প্রসাধনী, জৈবসার ও কীট বিতাড়ক হিসেবে সারা
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত; নিমের পাতা, ছাল-বাকল, বীজ ও কাঠসহ সব অংশই রফতানিযোগ্য; নিমগাছ গরু ছাগলে খায় না এবং বাঁচে ৪০০ বছরের অধিক; নিমের জৈবকীট বিতাড়ক ও সার, উপকারী
কোনো কীট পতঙ্গ বা ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতি করে না; নিমের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো যায়; নিম পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান বৃক্ষ।
রাসায়নিক উপাদান : নিমের ছাল, ফু ল, ফল, বীজে ও তেলে বিভিন্ন ধরনের তিক্ত উপাদান যেমন: স্যাপোনিন, এলকালয়েড নিমবিডিন, নিম্বন, নিম্বিনিন, নিম্বডল, ট্রাইটারপেনয়েড, সালনিন,
এজাডিরাকটিন, জৈব এসিড, মেলিয়ানোন, নিম্বোলাইড, কু য়ারসেটিন ও গ্লাইকোসাইড, ট্যানিন, মারগোসিন, এজমডারিন এসব থাকে। যা হরেক রকমের কাজে লাগে।
বীজ সংগ্রহ ও চারা উত্তোলন এবং বপন রোপণ : সাধারণত আামদের দেশে বর্ষার শুরুতে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তবে এর আগে বা পরেও বীজ সংগ্রহ করা যায়। নিমের
বীজ খুব বেশি বড়ও না আবার ছোটও না। প্রতি কেজি বীজে মোট বীজের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫০০ থেকে ১৮০০টি। গাছ থেকে অথবা গাছের নিচ থেকে সরাসরি বীজ সংগ্রহ করতে হয়। এপ্রিল-মে
মাসে পরিপক্ব নিম গাছে অসংখ্য ছোট ছোট সুগন্ধি সাদা ফু ল দেখা যায়। জুন-জুলাই মাসে হলুদ রঙের ডিম্বাকৃ তি পরিপক্ব ফল পাওয়া যায়, ফল ১২ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। প্রতিটি ফলেই
একটি করে বীজ থাকে। ফলের ত্বক ছড়িয়ে ছায়ায় শুকিয়ে ৩ সপ্তাহের মধ্যে পাত্রের মাটিতে বপন করতে হয়। ৩০ জুন থেকে বীজ বপন শুরু করা যায়। বীজ বপনের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চারা
গজায়। বীজ অংকু রোদগমের হার শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। নার্সারি বেডে, পলিথিনে বা সরাসরি জমিতে বীজ লাগানো যায়। ঠাণ্ডা আর কু সুম গরম পানিতে বীজ ভিজিয়ে অঙ্কু রোদগম ক্ষমতা
বাড়ানো যায়। ১ বছরের চারা লাগানো ভালো। চারা লাগানোর আগে কাণ্ড মূল প্রয়োজনমতো ছাঁটাই করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বরের দিকে চারা লাগানো ভালো। ৪৫ সেন্টিমিটার
চওড়া ও প্রশস্ত গর্তে ২৫-৩০ কেজি জৈবসার, ৫০ গ্রাম টিএসপি ৫০ গ্রাম এমওপি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে চারা রোপণ করতে হয়। চারা লাগানোর পর অবশ্যই নিয়মিত ও পরিমিত পানি
দিতে হবে চারা টিকানোর জন্য। গোড়ার মাটি উঁচু করে খাঁচা দিয়ে বেড়া ঘেরা দিতে হবে মানুষের সমান লম্বা না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ যত্ন করতে হবে। আগাছা যেন না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সাধারণত নিমগাছ খোলামেলা জায়গায় বেশি দেখা যায়। রাস্তার আশপাশে, সমতল ভূ মিতে ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় সব ধরনের মাটিতে নিমগাছ জন্মে। তবে বেলে, দো-আঁশ মাটিতে ভালো
হয়। নিমগাছে মার্চ থেকে মে মাসে ফু ল ফোটে। নিম ফল জুন থেকে আগস্ট মাসে পাকলে তখন বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করার ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে ব্যাগে বা মাটির পাত্রে বীজ বপন
করতে হয়। বপন দেরি হলে গজানোর হার কমে যায়। নিম চারার বয়স ১ বছর হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। যে জমিতে লাগানো হবে তা আগাছাবিহীন ও পরিচ্ছন্ন হতে হবে। তবে বর্ষাকালে
নিমের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। গাছের গোড়ায় যাতে পনি না জমে সেজন্য গোড়া উঁচু করে দিতে হবে। আর পশু মানুষের আক্রমণে যেন চারা নষ্ট না হয় সেজন্য রোপণের পরপরই বেড়া ঘেরা
দিতে হবে। নিমের স্কেল পোকা আর ছত্রাক মারাত্মক ক্ষতি করে। সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি : পাতা সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পাতার আর্দ্রতা কমে কিছুটা গাঢ় বর্ণ ধারণ করলে প্যাকেটজাত করতে হয়। পাতার প্যাকেট অবশ্যই
সঠিক শনাক্তকরণ ব্যবহারবিধিসহ বাজারজাত করতে হবে। জুন আগস্টের দিকে নিম ফল পরিপক্ব হয়। বীজ পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। তবে মাটিতে না পড়ার জন্য ঘন জাল দিয়ে গাছকে
বেঁধে দিলে সবগুলো বীজই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এ অবস্থায় বীজকে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আর্দ্রতা শতকরা ২ ভাগ থাকতে হবে। বীজ শুকানোর পর বায়ুরোধী করে প্যাকেট করে
সংগ্রহ করতে হবে। নিমের ছাল কেটে টু করো টু করো করে নিতে হবে। এরপর ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা শূন্য করে বায়ুরোধী করে সংরক্ষণ করতে হবে।
ঔষধি গুণাগুণ : উপমহাদেশের সুপরিচিত নাম নিম বসন্ত ও বায়ু শোধনকারী হিসেবে দুনিয়া সেরা। পূর্ব আফ্রিকায় এ গাছ মৌরোবিইনি নামে পরিচিত। কেননা এ গাছ দিয়ে অনেক রোগের উপশম হয়।
রক্ত পরিষ্কারক, জীবাণুনাশক, চর্মরোগ, ব্রন, কৃ মি ও ক্ষত আরও কত ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ দেয়। শরীরে জ্বলাপোড়া, এলার্জি ও মুখের দুর্গন্ধনাশক। দাঁতের রক্তপড়া বন্ধ করে এবং দাঁতের মাঢ়ি সবল
করে। তাছাড়া জন্ডিস প্রশমক। নিম দিয়ে অন্তত ৫০টি রোগ সারানো যায় বলে শতাব্দীর ইতিহাস সাক্ষী দেয়। কিছু উল্লেখযোগ্য রোগের কথা এমন-
- রক্ত পরিষ্কার ও চর্মরোগ : কাঁচা নিম পাতা ১০ গ্রাম ২ কাপ পানিতে জ্বাল করে ১ (এক) কাপ অবশিষ্ট থাকতে ছেঁ কে নিয়ে প্রয়োজন মতো চিনি মিশিয়ে খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং চর্ম রোগ কমে
যায়। এ নিয়মে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার, নিয়মিত ১ থেকে ২ মাস সেবন করে যেতে হবে;
- কৃ মি নিরসনে ৩ থেকে ৮ গ্রাম নিম ছাল চূ র্ণ সামান্য পরিমাণ সৈন্ধব লবণসহ সকালে খালিপেটে সেবন করে গেলে কৃ মির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়। নিয়মিত ১ সপ্তাহ সেবন করে যেতে হবে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ গ্রাম মাত্রায় সেবন করাতে হবে;
- খোস পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতে নিমপাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭ থেকে ১০ দিন ব্যবহার করলে খোস পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপশম হয়;
- নিমের প্রধান ব্যবহার চর্মরোগে চু লকানি বা খোস-পাঁচড়া হলে নিমের পাতা বা বাকল বেঁটে পরপর ৩/৪ দিন গায়ে মেখে ২ ঘণ্টা পর গোসল করে ফেললে সেরে যায়। বাকল পানিতে সেদ্ধ করে সে
পানি দিয়ে গোসল করলেও একই উপকার পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে গাছের বাকলের চেয়ে শেকড়ের বাকল বেশি উপকারী। এছাড়া নিমপাতা বেঁটে ছোট ছোট বড়ি করে রোদে শুকিয়ে প্রতিদিন
সকালে একটি করে খেলে খোস পাঁচড়া সেরে যায়। নিমপাতা কড়াইতে ভেজে চূ র্ণ করে ভাতের সাথে খেলেও একই উপকার পাওয়া যায়;
- বসন্ত রোগে রোগীকে নিমপাতার বিছানায় শোয়ালে জীবাণুনাশক হিসেবে ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। নিমের এ জীবাণু ধ্বংসকারী গুণের জন্য ফোঁড়া কাটা পোড়ার ক্ষত দাগ, একজিমা,
স্ক্যাবিস, খুসকিসহ বিভিন্ন জটিল চর্মরোগে নিমপাতা বাটা ও ছালের প্রলেপ দিলে অল্প সময়ে সেরে যায়;
- শ্বাসকষ্ট এবং দুর্বলতায় নিম ফু ল উপকারী। এছাড়া বাতজ্বরে নিমতেল ব্যবহার সারা পৃথিবীতেই স্বীকৃ ত। নিম বীজের গুঁড়াও নিমতেলের মতো কার্যকরী, তবে বীজের গুঁড়া পানি ও অন্য তেলের
সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়;
- বর্ষাকালে আলমারিতে রাখা কাপড় চোপড় বাজে গন্ধ হয়। এছাড়া এসব কাপড় চোপড় অনেক সময় পোকায় কেটে নষ্ট করে। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আলমারির এক কোণে কিছু শুকনো
নিমপাতা ঝু লিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়;
- ফসলে পোকামাকড় দমনে নিম এখন বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য ভূ মিকা পালন করছে। শুকনো নিমপাতা ধান চালের গোলায় বা ডাল, গমের পাত্রে রাখলে এসব খাদ্যশস্য পোকার আক্রমণ থেকে
রক্ষা পায়। নিমপাতা বেটে ১:১০ অনুপাতে পানিতে মিশিয়ে পোকা আক্রান্ত ক্ষেতে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়; বীজ সংরক্ষণে নিমপাতা অব্যর্থ মহৌষধ;
- মুখে অরুচি হলে সুজির হালুয়ার সাথে অল্প নিমপাতা গুঁড়া মিশিয়ে কয়েক দিন খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে;
- চাপা অম্লরোগে সকালে খালি পেটে ৪ থেকে ৫ গ্রাম নিমপাতা চূ র্ণ কয়েক দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়;
- কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বাটা চর্মরোগে খুব উপকার দেয়। নিমাপাতা হলুদ গুঁড়া আর গন্ধকচূ র্ণ সরিষা তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে খোস পাঁচড়া কমে যায়। সকালে ২ চামচ নিমপাতার রস ৭
দিন খেলেও খোস পাচড়া সেরে যায়।
- নিমপাতা চূ র্ণ ১ ভাগ, কাঁচা হলুদ শুকিয়ে চূ র্ণ করে ২ ভাগ এবং শুকনো আমলকী চূ র্ণ ৩ ভাগ একসঙ্গে মিশিয়ে তার ১ গ্রাম প্রতিদিন সকালে খেলে এলার্জি সেরে যায় ;
- ঘুষঘুষে জ্বর হলে ২৫০ মিলিগ্রাম নিমপাতা চূ র্ণ এক বা দেড় রতি মকরধ্বজসহ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কমে যায়;
- পিত বিকারে যদি দাঁতের মাঢ়িতে ঘায়ের সৃষ্টি হয় তাহলে নিমের বিচির তেল লাগালে কমে যায়;
- নিমপাতা বেঁটে ফোঁড়ায় প্রলেপ দিলে তা পেকে যায়, পরে শুকিয়ে যায়;
- যকৃ ৎ বা লিভারের ব্যথায় নিমছাল ১ গ্রামের সাথে কাঁচা হলুদ আধা গ্রাম এবং আমলকীর গুঁড়া ১ গ্রাম একসাথে মিশিয়ে খালিপেটে প্রতিদিন সকালে খেলে যকৃ ৎ ও লিভারের ব্যথা সেরে যাবে
অনায়াসে;
- কামলা বা জন্ডিসে বাচ্চাদের জন্য ৫ থেকে ১৫ ফোঁটা বয়স্কদের জন্য ১ চা চামচ রস একটু মধু মিশিয়ে খালিপেটে খেতে হবে প্রতিদিন সকালে। এভাবে ২ সপ্তাহ খেলে জণ্ডিস সেরে যাবে;
- অজীর্ণ রোগে মুখে পানি এলে, ৪ থেকে ৫ গ্রাম নিমের ছাল ১ কাপ গরম জলে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁ কে খালিপেটে খাওয়াতে হবে।
- ডায়াবেটিস রোগে ৫টি গোলমরিচ+১০টি নিমপাতা একত্রে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। তবে খাবার দাবার ও চলাফেরা অবশ্যই শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হবে;
- বেশি পরিমাণে প্রশ্রাব ও সাথে চু লকালে ৩/৪টি নিমপাতা+কাঁচা হলুদ এক টু করো একত্রে বেঁটে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। নিমের শুকনো ছাল আর পাতা পুড়ে ধোঁয়া দিলে মশা দূর হয়;
- মাথার উকু ন কমাতে নিম ফু ল বেটে মাথায় ২/১ বার মাখলে উকু ন মরে যায়;
মাথা ধরায় নিমতেল মাথায় মাখলে মাথা ধরা কমে যায়; নিমের ডাল মেছওয়াক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এতে দন্তরোগ মুখের দুগন্ধ ও ঘা মাঢ়ির অসুখ কমে;
- বলা হয়ে থাকে নিমতেল, বাকল ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ক্যান্সার, টিউমার, স্কিন ক্যান্সারে নিয়মিত ও পরিমিত সেবন করলে ভালো হয়;
- নিয়মিত নিমপাতার নির্যাস খেলে হৃদরোগে উপকার পাওয়া যায়। নিম নির্যাস ব্লাডপ্রেসার ও কোলস্টেরল কমায়। রক্ত পাতলা করে, হার্ট বিট কমায়;
- বর্ত মানে ব্যঞ্জরিত কসমেটিক সামগ্রী তৈরিতে নিমের অধিকতর ব্যবহার নতু ন দিগন্তের দখিনা দুয়ার খুলে দিচ্ছে।
নিমের বাজার : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষিত একু শ শতকের বৃক্ষ এবং বর্ত মান বিশ্বেও সবচেয়ে গুণধর আলোচিত ভেষজ নিম থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন নিম সামগ্রী।
বাজারে নিমের যেসব পণ্য পাওয়া যায়-নিম চা, নিম ক্যাপসুল, নিম ডায়বেটিকস ক্যাপসুল, নিম চু ল রক্ষাকারী ও খুশকিনাশক, নিম জৈবসার, নিম জৈববালাইনাশক, নিম পিওর অয়েল, নিম
হারবাল বিউটি প্যাক, নিম হারবাল ফেসওয়াশ, নিম হারবাল কেশতেল, নিম শ্যাম্পু, নিম হারবাল টু থ পাউডার, নিমটু থ পেস্ট, নিম বেবি সোপ, নিম হারবাল হানি সোপ, বিউটি সোপ, স্কিন কেয়ার
সোপসহ আরও অনেক নিম সামগ্রী।
এক একরের বয়স্ক পরিপক্ব নিম গাছ থেকে বছরে ৬/৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়।
মেহগনি
প্রকার: এটি দ্বিবীজপত্রী গুপ্তবীজী উদ্ভিদ। এটি meliaceae (নিম) গোত্রের অন্তর্গত Swietenia গণের কিছু প্রজাতির সাধারণ নাম। এই প্রজাতিগুলোর ভিতরে তিনটি প্রজাতিকে বিশেষভাবে
মেহগনি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই প্রজাতিগুলো হলো– Swietenia mahagoni (L.) Jacq., Swietenia macrophylla King, and Swietenia humilis Zucc।
প্রপ্তি স্থান: এদের আদি নিবাস উত্তর আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল। বিশেষ করে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জকেই এদের আদি নিবাস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ইউরোপীয় বণিকদের মাধ্যমে
ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছটি ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দক্ষিণে এই গাছগুলো প্রাকৃ তিকভাবে জন্মে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই গাছের চাষ করা হয়।
প্রজাতিভেদে বড় বা ছোট মেহেগনি নামে অভিহিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ Swietenia mahagoni এবং Swietenia macrophylla প্রজাতি দুটির চাষ হয়ে থাকে। এর ভিতরে Swietenia
macrophylla জাতীয় গাছ বেশি দেখা যায়। এদের পাতা বেশ বড় বড় হয়ে থাকে। এই গাছগুলো প্রায় ৫০ ফু ট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে বসন্তকালে (মার্চ মাসে) মেহগনিগাছের পাতা ঝরে যায়। এর কিছুদিন পর নতু ন পাতা গজায়। এই গাছটি মূলত কাঠের জন্য জনসাধারণের কাছে আদৃত। এর কাঠ খুব শক্ত এবং ঘন
আঁশযু্ক্ত। মূলত আসবাবপত্র তৈরি করার জন্য এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ হিসাবে পথের পাশে এই গাছ লাগানো হয়।এই গাছটি মূলত কাঠের জন্য
জনসাধারণের কাছে আদৃত। এর কাঠ খুব শক্ত এবং ঘন আঁশযু্ক্ত। মূলত আসবাবপত্র তৈরি করার জন্য এই গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ হিসাবে পথের পাশে এই গাছ
লাগানো হয়।
ঔষধী গুন/উপকারিতা
* ডায়াবেটিক রোগীরা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেহগনি ফলের বিচির ভেতরের সাদা শাঁস পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। এতে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
* মেহগনি বীজের সাদা অংশ দিয়ে তেল তৈরি হয়। এই তেল ভেষজ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
* ফসল পাখির আক্রমন থেকে বাচাতে মেহগনি গাছের ডাল কলম করে লাগিয়ে চাড়ার মত করে ক্ষতের পাশে লাগালে পাখির আক্রমন থেকে বাচা যায়। এই গাছে পাখি বাসা বানায় না এমনকি
বসেওনা।
এখানে গবেষণালব্ধ ফলাফল হতে মেহগনি ফল থেকে সংগৃহীত নির্যাস ও তেল ভেষজ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার ও প্রয়োগ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
প্রথমত : ২ থেকে ২.৫ কেজি মেহগনি ফল কু চি কু চি করে কেটে থেঁতলিয়ে মাটির চাড়িতে ১০ লিটার পানিতে ভালোভাবে ভেজাতে হবে। ৩ থেকে ৪ দিন পর নির্যাসটি ব্যবহার উপযোগী হয়।
নির্যাসটি কাপড়ে ছেঁ কে অল্প পরিমাণ (৫০ গ্রাম) সাবান গোলা পানি অথবা ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ছেঁ কে নিয়ে ফসলের ৰেতে সেপ্র করতে হবে। ধান ফসলের জন্য মিশ্রণটি উপযোগী। ধান ফসলের শত্র্ব
পোকা (মাজরা, পাতা মোড়ানো, বাদামি গাছ ফড়িং) দমনে নির্যাসটি কার্যকর ভূ মিকা রাখে। এছাড়া সবজিতেও (বাঁধাকপি, ফু লকপি, ওলকপি, টমেটো, শিম, বরবটি) নির্যাসটি ব্যবহার করা যায়।
দ্বিতীয় বার আবার ৫ লিটার পানিতে ভিজিয়ে ৩-৪ দিন পর আর একবার ছিটানো যায়। নির্যাসের উচ্ছিষ্ট অংশ/ছোবড়া ভেষজ জৈব সার হিসেবে ধান ও সবজি বীজতলায় ব্যবহার করলে চারা
উৎপাদনে পোকামাকড় কম হয়।
দ্বিতীয়ত : মেহগনির আধাপাকা ফলের বীচি ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়া করে বা থেঁতলিয়ে তার সাথে ৫০০ গ্রাম ফলের বাকল গুঁড়া বা পাতা নিয়ে ৫ লিটার পানিতে ভালোভাবে একটি
মাটির হাঁড়িতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট আগুনে জ্বাল দিতে হবে। জ্বালানোর সময় ৫ মিনিট পর ৫০ গ্রাম পরিমাণ কাপড় কাঁচা সাবান বা ডিটারজেন্ট, ১০ গ্রাম তুঁ তে ও ৫ গ্রাম পরিমাণ সোহাগা মাটির
হাঁড়ির মিশ্রণের ভেতর দিতে হবে। একটি কাঠের বা বাঁশের কাঠি দিয়ে মিশ্রণটি নাড়তে হবে। এভাবে নির্যাস তৈরি হলে ঠাণ্ডা করে নির্যাস ৫ গুণ পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে ছেঁ কে আক্রান্ত
গাছের পাতায় সেপ্র করতে হবে এভাবে তৈরি নির্যাস ১-২ দিনের মধ্যে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায় ও বেগুন ফসলের পোকা দমনে উপযোগী। জাব পোকা, পাতা ছিদ্রকারী পোকা দমন
এবং ছত্রাক রোগ দমনে বিশেষ উপযোগী। তৃ তীয়ত : ২০০-২৫০ গ্রাম বীজ নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে ১ লিটার পানিতে ৩-৪ দিন ভিজিয়ে রেখে ছেঁ কে নিয়ে আরো ৯ লিটার পানিতে মিশিয়ে নির্যাস তৈরি
করে ১ চামচ জেট পাউডার মিশিয়ে ফসলের ৰেতে সেপ্র করা যায় (মাজরা, পাতা মোড়ানো ও বাদামি গাছ ফড়িং দমনে কার্যকর)।
গুদামজাত শস্যের জন্য : ২০০ গ্রাম মেহগনি ফলের বীচির গুঁড়া ১ মণ দানাজাতীয় শস্যের জন্য ব্যবহার করা যায় (রৌদ্রে ভালোভাবে বীচি শুকিয়ে গুঁড়া করতে হবে)। দানাজাতীয় শস্যের সাথে
ভালোভাবে মিশিয়ে বায়ুশূন্য প্যাকেটে সংরৰণ করতে হবে।
১ কেজি বীজ থেকে খোসা ছাড়িয়ে ৬৫০-৭৫০ গ্রাম সাদা শাঁস বীজ পাওয়া যায়। সাদা শাঁস বীজ ৩১২ কেজি হতে হাতের সাহায্যে ৯০০ মিলি. থেকে ১০০ মিলি. মেহগনি তেল পাওয়া যায়।
এক্সপেলারে ভাঙালে আরো বেশি পরিমাণে তেল পাওয়া যেতে পারে। তেল তৈরির পর অবশিষ্টাংশ খৈল রৌদ্রে ভালোভাবে শুকিয়ে বায়ু শূন্য পলিব্যাগে সংরৰণ করা যেতে পারে। মেহগনি ফল
জানুয়ারি, ফেব্র্বয়ারি মাসে পরিপক্ব হয়। বছরে গাছপ্রতি ৫০-৩০০ বা তার চেয়ে বেশি পরিপক্ব মেহগনি ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফল ১৫০-৬০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। ফলের মধ্যে ৩৫-৭০টি বীজ
থাকে যার রঙ বাদামি। যদি সংরৰণ করতে হয় তবে পরিপক্ব বীজ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে কাঁচা ফল থেকে নির্যাস পেতে হলে মাস থেকে ব্যবহার করা যাবে। মেহগনি ফলের বাকল শুকিয়ে গুঁড়া করে
বায়ুশূন্য পাত্রে সংরৰণ করে অন্য মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে। মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহ করে খোসা ও বীজ ভালোভাবে শুকিয়ে বায়ুশূন্য পাত্রে না সংরৰণ করলে ছত্রাক জমে যাবে। মাঝে মধ্যে
রৌদ্রে শুকানো ভালো। কারণ ফল বীজ ও খোসা বায়ু থেকে আর্দ্রতা সংগ্রহের ৰমতা বেশি।
মেহগনি বীজের সাদা অংশ দিয়ে তেল তৈরি এবং ভেষজ কীটনাশক ও তার ব্যবহার
ধানের শত্র্ব পোকা দমনে ১০ লিটার পানিতে ৩০-৩৫ মিলি. ওষুধ ১ চামচ ডিটারজেন্ট/জেট পাউডার মিশিয়ে ধান ফসলের কু শি ও পাতা ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে। ধান ফসলের জমিতে খৈল
ও পাতার গুঁড়া প্রয়োগ করলে জমিতে উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান সংরৰণ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মাটির ৰতিকারক পোকামাকড় ধ্বংস করে। ফসলের ফলনও বৃদ্ধি হয়। লবণাক্ততা অনেকাংশে
কমে যায়।
আমের হপার বা শোষক পোকা : ১০ লিটার পানিতে ৪০ মিলি. ওষুধ এবং ১ চামচ ডিটারজেন্ট/জেট পাউডার মিশ্রণ করে পাতা, ডাল ও মুকু ল ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। বেগুনের ডগা ও
ফলের মাজরা পোকা, কাঁঠালি পোকা, ঢেঁ ড়সের জ্যাসিড : ১০ লিটার পানিতে ৩০ থেকে ৩৫ মিলি ওষুধ এবং ১ চামচ ডিটারজেন্ট/জেট পাউডার মিশিয়ে ডগা, পাতার ওপরে ও নিচে ভালোভাবে
ভিজিয়ে দিতে হবে।
বাঁশ বহুল ব্যবহূত কয়েক প্রজাতির ফাঁপা কান্ড বিশিষ্ট ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। কাষ্ঠল বৃক্ষের ন্যায় বৈশিষ্ট্য থাকায় অনেক সময় এটিকে Bambusaceae গোত্রের অন্তর্ভু ক্ত করা হয়। বাঁশের বিস্তৃ তি অত্যন্ত
ব্যাপক। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিকট এর গুরুত্ব অপরিসীম, যা গৃহের অবকাঠামো নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝু ড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে ব্যবহূত হয়।
দেশের কোন কোন অঞ্চলে বাঁশের পাতা চালা ঘরের ছাউনিতে এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। উষ্ণমন্ডলীয় এলাকার দেশসমূহে কাগজ তৈরির প্রধান উপাদান হিসেবে বাঁশ ব্যবহূত হয়ে আসছে।
বাঁশঝাড়সমূহ ঝড়ো হাওয়া প্রতিরোধ এবং ভূ মি ক্ষয়রোধ করে। কচি বাঁশের ডগা মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী। এ ধরনের কচি ডগা স্থানীয়ভাবে বাঁশ কোরাল নামে পরিচিত। পার্বত্য
চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বর্ষার মৌসুমে বহুল পরিমাণে এটি খেয়ে থাকে। গৃহস্থালির কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় বিধায় বাঁশকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারুবৃক্ষ (timber) বলা হয়। অধিকাংশ
প্রজাতির বাঁশ বড় আকারের যৌগিক ধরনের উদ্ভিদ। এগুলি অনেক বৎসর যাবৎ অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং কদাচিৎ ফু ল ধারণ করে। বাঁশের ফু ল ধারণের বিষয়টি অনিশ্চিত স্বভাবের,
দীর্ঘদিন পরপর ফু ল আসে। তিন বছর থেকে ১২০ বছরের চক্রে ফু ল আসতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১৫-৬০ বছরের ব্যবধানে বাঁশ ফু ল ধারণ করে। বাঁশের অধিকাংশ প্রজাতিই জমকালো ফু ল
প্রদানের পর মৃত্যুবরণ করে।
বাঁশঝাড়
Melocanna baccifera ব্যতীত বাংলাদেশে উৎপন্ন সকল প্রজাতিই ঘন ঝাড়বিশিষ্ট। বাঁশের পর্বের মধ্যভাগ সুস্পষ্ট ফাঁপা, ব্যবহারিক দিক থেকে বাঁশ বলতে মূলত কান্ডকেই বোঝায়, কারণ সুপুষ্ট
কান্ডগুলিই অধিকাংশ কাজকর্মে ব্যবহূত হয়। রাইজোম থেকে বাঁশের নতু ন কুঁ ড়ি গজায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে। ভূ নিম্নস্থ রাইজোম থেকে কচি কান্ডের কৌণিক ডগা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
তু লনামূলকভাবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে (৩০-৬০ দিন) কচি ডগাগুলি পূর্ণ দৈর্ঘ্যে উপনীত হয়। এরপর গৌণ বৃদ্ধি চলতে থাকে এবং ২-৩ বছরের মধ্যে পরিপক্ক বাঁশে পরিণত হয়। পরিপুষ্ট বাঁশের
রং ধূসর বা হলুদ।
বাংলাদেশের বাঁশের মধ্যে জংলি ও আবাদি প্রকৃ তির ২৬টি প্রজাতি ও একটি ভ্যারাইটি সাতটি গণের অন্তর্ভু ক্ত। বনভূ মি অঞ্চলে বিস্তৃ ত বাঁশের প্রজাতিগুলি Bambusa burmanica, B.
polymorpha, B. nutans, B. tulda, Dendrocalamus hamiltonii, D. longispathus, Melocana baccifera এবং Schizostachyum dullooa। M. baccifera স্ব-প্রজাতির পৃথক ও গভীর
অঞ্চল সৃষ্টি করে। অন্য প্রজাতিগুলি বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট কু ঞ্জে বিভক্ত দেখা যায়। সচরাচর প্রাপ্ত সাধারণ গ্রামীণ বাঁশ হচ্ছে Bambusa balcooa, B. cacharensis, B. comillensis, B.
jaintiana, B. nutans, B. salarkhanii, B. tulda, B. vulgaris এবং Thyrsostachys oliveri। এসব প্রজাতির বাঁশ বীজের এবং অঙ্গজ পদ্ধতির সাহায্যে বংশবৃদ্ধি করে। ফু লবান বাঁশে বীজ
উৎপন্ন হয়। B. balcooa ও B. vulgaris ব্যতীত পরিপুষ্ট বীজ বনে অঙ্কু রিত হয় অথবা নার্সারিতে ব্যবহার করেও চারা তৈরি করা যায়। বাঁশের চারা দেখতে ধান বা গমের চারার মতোই। সাধারণ
শিকড়সমেত কান্ড রোপণের মাধ্যমেই বাঁশ চাষ করা হয়। একটি কান্ডের সর্বনিম্ন অংশসহ রাইজোমই হচ্ছে বাঁশের ‘মুথা’। বর্ষা মৌসুমের আগে এপ্রিল মে মাসে সাধারণত এগুলি সংগ্রহ করা হয়। এই
ধরনের এক একটি ‘মুথা’ তিন বছরের মধ্যেই আহরণযোগ্য সুপুষ্ট বাঁশে পরিণত হয়। গাছের গোড়ায় মাটি ও ধানের তু ষের মিশ্রণ প্রয়োগ করে ভাল উৎপাদন পাওয়া যায়। বাঁশের তেমন কোন
রোগবালাই নেই, তবে B. balcooa এবং B. vulgaris এ আগামরা রোগ দেখা যায়।
অনাবৃত খুঁটি, বেড়া ইত্যাদিতে ব্যবহূত বাঁশে এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই উইপোকা এবং ছত্রাকের আক্রমণ দেখা যায়। বাঁশের কান্ড প্রক্রিয়াজাত করলে ১৫ বছর পর্যন্ত টেকসই হয়। সিসিবি (coper
sulphate, sodium dichromate এবং boric acid ২:২:১ অনুপাতে) দ্রবণ বাংলাদেশের জন্য প্রয়োগযোগ্য একটি পদ্ধতি। বাঁশ দুটি পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা যায়, যেমন কান্ডের কলারস
অপসারণ করে এবং সংরক্ষণযোগ্য দ্রবণের শোধন পদ্ধতিতে।
মুলিবাঁশ সাধারণ বাঁশের ঘনিষ্ঠ একটি প্রজাতি Melocanna baccifera। মুলিবাঁশ বয়স অনুপাতে ১০-২০ মি লম্বা ও ১.৭-৭.৫ সেমি চওড়া হয়ে থাকে। পাতা হালকা সবুজ, লম্বা, বল্লম আকৃ তির।
পত্রাবরণ পুরু। কচি বাঁশ সবুজ, বয়স্ক বাঁশ হলদে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলার জঙ্গলে স্বাভাবিকভাবেই জন্মে। উপকূ লীয় ম্যানগ্রোভ বন ছাড়া বাংলাদেশের সর্বত্রই মুলিবাঁশ
চাষ করা যায়। এই বাঁশ নানা কাজে ব্যবহার্য। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ মুলিবাঁশ দিয়েই ঘর তৈরি করে। নানা ধরনের কু টির শিল্প, এমনকি সস্তা দামের আসবাবপত্র তৈরিতেও মুলিবাঁশ কাজে লাগে। এটি
কাগজ ও মন্ড শিল্প এবং রেওনের কাঁচামাল।বাঁশ অতিপরিচিত খুবই দ্রুত বর্দ্ধ নশীল উদ্ভিদ। সাধারণত: এর কান্ড ১০ ফু ট থেকে ১০০ ফু ট উচ্চতা ও ১ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত মোটা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে প্রায় সব এলাকায় বাঁশের চাষ হয়ে থাকে এবং পাহাড়ি এলাকায় কয়েকটি প্রজাতির বাঁশ প্রাকৃ তিকভাবে জন্মে থাকে।
বাঁশের ব্যবহার
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বাঁশের ব্যবহার হয়ে থাকে। বাড়িঘর নির্মাণ, কৃ ষি ও মাছ ধরার উপকরণ তৈরী, রিক্সা, গরুর গাড়ি ও নৌকার বিভিন্ন উপকরণ তৈরী, খাল-নালা পারাপারের সাঁকো নির্মাণ,
দৈনন্দিন ব্যবহারের বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং সৌখিন দ্রবাদি তৈরীর কাজে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাগজ তৈরীর কাঁচামাল হিসাবে বাঁশের ব্যবহার দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে
বিশেষ অবদান রয়েছে। পরিবেশের উন্নয়ন ও ভূ মীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাঁশ চাষের বিশেষ ভূ মিকা রয়েছে। বাঁশের কাঠ ও কান্ডের গঠন আকৃ তির সৌন্দর্যের কারনে বিভিন্ন মূল্য সংযোগ বিলাশ
দ্রব্যের উপকরণ তৈরীতে ইহার ব্যবহার দিনদিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট ও বামনাকৃ তির বাঁশ প্রজাতি টবে জন্মায়ে ঘরের অভ্যন্তরীন সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বাঁশের কঁ চি কান্ড সুস্বাদু
শব্জি হিসাবে খাওয়া হয়ে থাকে এবং দিন দিন উন্নত বিশ্বের হোটেলে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে বাঁশের বাঁশির কদর
যুগ যুগ ধরেই শিল্পী সমাজে সমাদৃত হয়ে আসছে। বাঁশের বহুবিদ ব্যবহারের ফলে বাঁশ চাষে মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রচলিত ভাবে বাঁশের মুথা দিয়েই বাঁশ ঝাড় তৈরি করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারণত নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে বাঁশের বংশ বৃদ্ধি করা হয়। তার মধ্যে (১) উন্নত প্রদ্ধতিতে বাশেঁর মুথা দিয়ে বংশবিস্তার
(২) বীজ দিয়ে বাঁশের চারা উত্তোলন (৩) কঞ্চি কলম দিয়ে বংশ বিস্তার (৪) এবং টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে বাঁশের চারা উত্তোলন ও বংশবিস্তার উল্লেখ যোগ্য ।
বাঁশের কান্ডের মাটির নিচের অংশ মাটির উপরের অংশ অপেক্ষা মোটা, ঘন ঘন গিট সুপ্ত কুঁ ড়ি ও প্রচু র গুচ্ছমূল উপস্থিত থাকে এমন অংশকে মোথা বলে। মোথায় অবস্থিত সুপ্ত কুঁ ড়ি নতু ন বাঁশের
জন্ম দিয়ে থাকে। সাধারনতঃ এক অথবা দুই বছরের মোথায় উপস্থিত সুপ্ত কুঁ ড়িই বর্ষা মৌসুমে সক্রিয় হয়ে নতু ন বাঁশের জন্ম দিয়ে থাকে।
১. ভাল জাতের বাঁশ নির্বাচন করতে হবে। যেমন- বাইজ্যা, বরাক, ফারুয়া, তল্লা, মাকলা ইত্যাদি।
৪. নির্বাচিত ঝাড়ে বাঁশের কান্ডের গোড়ার মাটি খুঁড়ে অপসারন করতে হবে এবং এ বাঁশের মোথার সাথে অন্য বাঁশের সংযোগ স্থানে করাত বা ধারালো দা / শাবল দিয়ে কেটে পৃথক করতে হবে।
৫. ফেব্রুয়ারী/মার্চ মাসে বাশেঁর মোথার কু ড়ি স্বক্রিয় ও বৃদ্ধি হওয়ার পূর্বেই মোথা সংগ্রহ করতে হবে।
৬. মোথা সংগ্রহের সাথে সাথে পানিতে ভিজিয়ে আদ্র করতে হবে। চটের বস্তা অথবা পলিথিন দিয়ে জড়িয়ে মোথাগুলো নার্সারীতে আনতে হবে।
৭. নার্সারীতে একটি অস্থায়ী মাটির বেড নির্মাণ করতে হবে এবং সংগৃহিত বাঁশের মোথা বেডে লাগাতে হবে। আংশিক ছায়া ও নিয়মিত পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এমন ভাবে পানি দিতে হবে
মোথার উপর অংশ ও বেডে মাটি ভিজে যায়। দিনে ৩/৪ বার পানি দিয়ে মোথা ভিজিয়ে দিতে হবে তবে বৃষ্টির দিনে পানি দেয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে।
৮. বৃষ্টির মৌসুম আসার পূর্বেই মোথার উপরের কান্ডের গিটে অবস্থিত কুঁ ড়িগুলো পরিস্ফু টিত হয়ে শাখা ও পাতা দিবে এবং মাটির নিচে মোথাতে প্রচু র শিকড় গজাবে।
৯. মৌসুমি বৃষ্টি আরম্ভ হলে যত্ন সহকারে মোথাগুলো অস্থায়ী বেড হতে উঠিয়ে নির্বাচিত জমিতে লাগাতে হবে। নার্সারী হতে নির্বাচিত জমি দূরে হলে মুথা গুলো আদ্র রাখার জন্য অস্থায়ী বেড হতে
উঠিয়ে চটের বস্তা বা পলিথিন দিয়ে জড়িয়ে পরিবহন করতে হবে।
আপনার বাঁশঝাড় থেকে কি আশানুরূপ বাঁশ পাচ্ছেন না? আপনি বাঁশঝাড়ের উন্নত ব্যবস্থাপনা করে বাঁশ উৎপাদন বাড়াতে ও অধিক সবল বাঁশ পেতে ইচ্ছুক?
খুব কম খরচে বাঁশঝাড় সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করে আপনি সহজেই অধিক লাভবান হতে পারেন।
বাঁশঝাড় ব্যবস্থাপনা করবেন কেন?
বাঁশঝাড় ব্যবস্থাপনা দ্বারা সুস্থ্-সবল ও পুষ্ট বাঁশ উৎপাদন করে ভাল বাজার মূল্য পাওয়া যায়। পরিচর্যার ফলে ঝাড় থেকে বেশি সংখ্যক বাঁশ পাওয়া সম্ভব। এতে আপনি পারিবারিক চাহিদা
মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করতে পারেন।
সার প্রয়োগ
মাঝারি আকারের ঝাড়ের গোড়ায় প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ১০০-১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, সমপরিমান ফসফেট ও ৫০-৬৫ গ্রাম পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। ঝাড়ের চারিদিকে মাটিতে ১৮ ইঞ্চি
চওড়া ও ২৪ ইঞ্চি গভীর নালা কেটে সেই নালায় সার প্রয়োগের পর নালাটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। সার প্রয়োগের পর বৃষ্টি না হলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
পানি সেচ
খরা মৌসুমে চারা গাছ সুষ্ঠু ভাবে বৃদ্ধি পায় না এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মারাও যায়। তাই প্রথম কয়েক বছর নতু ন ঝাড়ে পরিমিত পানি সেচ দেওয়া প্রয়োজন। এক সপ্তাহে পর পর এক বা দুই কলস
পানি বাঁশের চারার গোড়ায় ঢেলে দিয়ে ছন বা কচু রিপানা দিয়ে ঢেঁ কে দিতে হবে।
পাতলাকরণ
বাঁশের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট জায়গা প্রয়োজন। অতিরিক্ত কঞ্চি বা পচা ও আঘাতপ্রাপ্ত বাঁশ নিয়মিত কাটা উচিত। ঝাড় থেকে বাঁশ এমনভাবে কাটতে হবে যেন একটি থেকে অন্যটি ৬-১০ ইঞ্চি দূরে
থাকে।
বাঁশ আহরণ
বাঁশের কোঁড়ল বের হওয়ার পর ৩ মাসের মধ্যে একটি বাঁশ পূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং এরপর আর বাড়ে না। বর্ষায় যে কোঁড়ল বের হয় তা আশ্বিন-কার্তি ক মাসের মধ্যে পূর্ণ উচ্চতা প্রাপ্ত হয়। ঝাড়ের
ফলন ও স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে একটি বাড়িতে কমপক্ষে তিনটি বাঁশঝাড় লাগাতে হবে। একটি বাঁশ পাকতে তিন বছর সময় লাগে। প্রতি বছরই বাঁশ ঝাড় থেকে পাকা বাঁশ আহরণ করতে হবে।
তাহলে গুনগত দিক দিয়েও ভাল বাঁশ পাওয়া যাবে।
ঝাড় থেকে বাঁশ কাটা ও টেনে বের করার সময় যে সব বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত তা হলোঃ
১. বাঁশে কঞ্চি বেশী থাকলে, গোড়ার দিকের কঞ্চিগুলো আগে কেটে ফেলুন। এতে ঝাড় থেকে কাটা বাঁশ টেনে বের করা সহজ হবে। কাজ শেষে কাটা কঞ্চি ও ডালপালা পরিস্কার করে দিন।
২. কোন নির্দি ষ্ট ঝাড় থেকে বয়স্ক বাঁশের ৩ ভাগের ২ ভাগ বাঁশ কাটু ন। অর্থাৎ একটি ঝাড়ে ১০ টি বয়স্ক বাঁশ থাকলে ৫-৬ টি কাটা যাবে। এমনভাবে বাঁশ সংগ্রহ করুন যেন থেকে যাওয়া বয়স্ক বাঁশ
পুরো ঝাড়ে ছড়িয়ে থেকে ঝাড়টিকে ঝড়-বাদলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
৩. প্রতিটি বাঁশ গোড়া থেকে কাটু ন। মাটির কাছাকাছি গিটের ঠিক উপরে তেরছা করে কেটে বাঁশটিকে গোড়া থেকে আলাদা করুন। এতে বাঁশের অপচয় হয় না। এ ছাড়া ফেলে আসা গোড়ার
অবশিষ্টাংশে বৃষ্টির পানি জমে পোকা-মাকড় বা ছত্রাকের আবাসস্থলে পরিণত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
৪. বাঁশ গজানোর মৌসুমে (জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস) কখনও বাঁশ কাটা উচিত নয়। এতে কাটার সময় সদ্যজাত বাঁশের কোঁড়ল ভেঙে যাওয়ার আশংকা থাকে। কার্তি ক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বাঁশ
কাটার উপযুক্ত সময়। এ সময় বাঁশে সঞ্চিত খাদ্যের অর্থাৎ শর্ক রা জাতীয় পদার্থের পরিমাণ কম থাকে বলে কাটা বাঁশে ঘুনে ধরার সম্ভাবনা কম থাকে।
৫. যে বছর ঝাড়ে ফু ল ও বীজ হয় সে বছর ঝাড়ের বাঁশ কাটা উচিত নয়। বাঁশ ফু ল হলে ঝাড়ের সব বাঁশ মরে যায়। পাকা বীজ থেকে বাঁশের চারা তৈরি করে নতু ন বাঁশ বাগান করা সম্ভব। তাই
বীজ সংগ্রহের পরে বাঁশ কেটে ফেলা যেতে পারে।
@বাঁশের ফল/ বীজ সংগ্রহ@
মূলী বাঁশের ফল/ বীজ সংগ্রহ
মূলী বাঁশ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃ তিক বনজ সম্পদ।
প্রাকৃ তিক নিয়মে মূলী বাঁশে ৪০-৫০ বছর পর পর ফু ল আসে।
মূলী বাঁশের ফু ল ও ফল ধরা ব্যাপক এলাকা জুড়ে ৪-৫ বছর স্থায়ী হয়। ১-২ বছর ব্যাপক হারে ফল হয়।
ব্যাপক হারে ফু ল ও ফল হওয়ার পর মূলী বাঁশের ঝাড় সম্পূর্ণ মরে যায়।
মূলী বাঁশের ফলটিই বীজ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
ফল/ বীজের আকৃ তি
মূলীর ফল/বীজ দেখতে অনেকটা বড় আকারের পিয়াজের মত, উপরের দিক একটু চিকন ও লম্বা।
পরিপক্ক বীজ শক্ত এবং সাধারণত হালকা বাদামি রঙের হয়।
ফু ল আসার বছর সমূহে অক্টেবর-নভেম্বর মাসে মূলী বাঁশে ফু ল আসে। মে-জুন মাসে মূলী বাঁশের ফু ল পরিপক্ক হয়।
ফল পাকলে বাঁশটিকে হালকাভাবে নাড়া দিলে পরিপক্ক ফল মাটিতে পড়বে। ঝরে পড়া পাকা ফল সংগ্রহ করুন।
পরিপক্ক বীজ/ফল এর আয়ুস্কাল মাত্র ১-২ সপ্তাহ। সংগৃহীত ফল/বীজ সরাসরি মাঠে রোপন করুন।
@রোপন পদ্ধতি@
রোপন পদ্ধতি
৪-৫ ফু ট দূরত্বে দাঁ বা কোদাল দিয়ে মাটিতে ৪ x ৬ ইঞ্চি মাপের গর্ত করুন।
ফলটি আড়াআড়িভাবে গর্তে রোপণ করে সামান্য মাটি দিয়ে ঢেকে দিন।
কোথায় রোপন করবেন
পাহাড়ি ঢাল ও উপরিভাগে মূলীর বীজ রোপণ করুন।
বসতবাড়ীর আশে-পাশে একটু উঁচু জায়গায় এবং ছড়ার পাড়ে মূলী বাঁশের বীজ লাগান।
বর্ষার পানিতে ডু বে যায় এমন জায়গায় মূলীর বীজ রোপণ করবেন না।
অনুকূ ল পরিবেশে ৫-১০ দিনের মধ্যে বীজ থেকে চারা গজায়।
@বীজতলার পরিচর্যা@
বীজতলার পরিচর্যা
বীজ রোপনের পর বৃষ্টি না হলে হালকা পানি দেওয়ার ব্যবস্থা নিন।
প্রয়োজনে রোপিত স্থানটি ঘেরার ব্যবস্থা করুন।
@চারার পরিচর্যা@
চারার পরিচর্যা
মাঠে রোপিত বীজ ও কচি চারা ইঁদুর ও সজারু থেকে রক্ষা করুন।
কচি চারাকে গরু-ছাগল থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নিন।
কোন জায়গায় চারা মরে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে পূনরায় চারা রোপণ করুন।
পূর্ণাঙ্গ ঝাড়ে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর বাঁশ ঝাড়ের আগাছা পরিস্কার করুন।
বীজ থেকে গজানো একটি চারা ৪-৫ বছরে একটি পূর্ণাংগ ঝাড়ে পরিণ
@বাঁশের মড়ক দমনব্যবস্থা@
বাঁশের মড়ক দমনব্যবস্থা
আপনার বাঁশের ঝাড়ে কি বাঁশের আগা মরে যাচ্ছে?
এ রোগের জন্য দায়ী এক ধরনের ছত্রাক যা মাটিতে বাস করে।
সাধারণত বরাক বা বড় বাঁশ, মাকলা বাঁশ, তল্লা বাঁশ এবং
বাইজ্যা বাঁশ ঝাড়ে এ রোগ মড়ক আকারে দেখা যায়।
সাধারনভাবে একটি গাছ থেকে আরেকটি নতু ন গাছের জন্ম হওয়ার পদ্ধতিকে গাছের বংশবিস্তার
বলে। অন্য কথায় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ যৌন কোষ বা তার অংগজ কোষ থেকে নতু ন
স্বতন্ত্র গাছ সৃষ্টি করে তাকে বংশবিস্তার বলে। বংশ বিস্তার সাধারনত ২ ধরনের হয়ে থাকে যথা-
১। যৌন বংশবিস্তার
যেহেতু ফল গাছ রোপণের মূল উদ্দেশ্য হলো ভালো, উন্নতমান ও মাতৃ গাছের গুনাগুন সম্পন্ন ফল
পাওয়া। এ কারণে ফল গাছের ক্ষেত্রে যৌন পদ্ধতির তু লনায় অযৌন পদ্ধতির চার, কলম অধিক
গুরুত্বপূর্ন। অযৌন বংশবিস্তার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ক্লেফট গ্রাফটিং বা ফাটল জোড় কলম একটি
অন্যতম পদ্ধতি।
২। আমের জোড় কলম করার উপায়
সংযুক্ত জোড় কলম; সায়ন মাতৃ গাছ হতে না কেটে রুটস্টকের সাথে জোড়া লাগানো হয়ে
থাকে।
বিযুক্ত জোড় কলম; সায়ন মাতৃ গাছ হতে কেটে এনে রুটস্টকের সাথে জোড়া লাগানো হয়ে
থাকে।
সংযুক্ত জোড় কলমের ভিতরে সংস্পর্শ জোড় (Contact grafting) কলমই প্রচলিত আছে। এটি
সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতি। যদিও এই পদ্ধতিতে সফলতার হার বেশি তবু তু লনামূলকভাবে ব্যয়বহুল
ও বেশি পরিশ্রম লাগে বলে বর্ত মানে সাধারণত এই পদ্ধতির চর্চ া করা হয় না। তবে কিছু কিছু
ক্ষেত্রে সংযুক্ত কলম বাঞ্ছনীয়। যেমন, পেয়ারা বা রাম্বুটানের বিযুক্ত জোড় কলমের হার একেবারেই
কম, কাজেই উইল্ট প্রতিরোধী জাতের সংগে কাঙ্ক্ষিত জাতের জোড় কলম করা হয় বেশি সফলতার
পাওয়ার জন্য। সংযুক্ত জোড় কলমের পদ্ধতিগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
সাধারণত ১ বৎসর বয়সের চারা নেওয়া হয়। তবে রুটস্টকের ব্যাস সায়নের মত হওয়া
বাঞ্ছনীয়
রুটস্টক অবশ্যই পলিব্যাগ অথবা মাটির পাত্রে হতে হবে
কাঙ্ক্ষিত মাতৃ গাছের সুস্থ, সবল ও চলতি মৌসুমের ডাল নির্বাচন করতে হবে। সায়ন, রুটস্টকের
ব্যাসের সমান হওয়া ভাল।
v প্রথমে সায়নের হালকা সবুজ ও ধুসরের মিশ্রণ স্থলে এক তৃ তীয়াংশ কাঠসহ ৫-৭ সে. মি. এর মত
বাকল তু লে ফেলতে হবে।
v এর পর রুটস্টকের তেজদীপ্ত (সবুজ ও ধুসরের মিশ্রণ স্থলে) জায়গায় এবং ১-২ তৃ তীয়াংশ কাঠসহ
সায়নের কাটা অংশ সমপরিমাণ বাকল তু লে ফেলতে হবে।
v এর পর রুটস্টক ও সায়নের কর্তি ত অংশ দুটি পরস্পরের সঙ্গে জোড়া লাগাতে হবে।
v দড়ি বা সুতলী দিয়ে জোড়াকৃ ত অংশ এমন করে বাধতে হবে যাতে জোড়ার মাঝে কোন ফাঁক না
থাকে।
v রুটস্টক বা সায়ন জোড়া লাগলে মাতৃ গাছ হতে ধারালো চাকু দিয়ে এক অথবা ২-৩ বারে কেটে
নামিয়ে আনতে হবে।
সংযুক্ত জোড় কলমের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ভিনিয়ার পদ্ধতির কলম প্রচলন আসে। বর্ত মানে প্রায়
শতকরা ৮০ ভাগই আমের কলম ভিনিয়ার পদ্ধতিতে করা হয়। এই পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত জাতের
গাছ থেকে সায়ন কেটে নিয়ে এসে রুটস্টকের সাথে বিশেষ পদ্ধতিতে জোড়া লাগানো হয়।
৩.২.১ সময়ঃ ভিনিয়ারের উপযুক্ত সময় বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ তবে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত করা যাবে।
(ঘ) সায়ন শাখায় কুঁ ড়ি ঠিক ফোটা ফোটা অবস্থায় নিতে হবে।
ছয় থেকে বার মাস বয়সের রুটস্টক উত্তম। রুটস্টক অবশ্যই সতেব, সবল, রোগা ও
পোকামাকড়মুক্ত হতে হবে। ম্যালফরমেশনযুক্ত রুটস্টক কখনও নেওয়া উচিত হবে না।
v যেখানে খয়েরী ও সবুজ রং এর মিশ্রণ ঘটেছে (তবে জোড়ার অংশ মাটির যত নিকটবর্তী হবে
ততই ভাল) নির্দি ষ্ট করতে হবে।
v উক্ত জায়গায় প্রথমে ব্যাসের এক চতু র্থাংশ তেরছা করে ৩-৪ সে.মি. জায়গায় বাকলসহ কাঠ কেটে
উঠাতে হবে।
v পরবর্তীতে উক্ত কর্তি ত অংশের নিচে একটি বিপরীতমুখী কাটা দিতে হবে।
v অনুরুপভাবে সায়নের নিচের অংশে একটি ৩-৪ সে. মি. তেরছা কাটা দিতে হবে এবং এর বিপরীতে
একটি কাটা দিতে হবে।
v সায়নের সমস্ত পাতা একটু বোঁটা রেখে কেটে ফেলতে হবে।
v এখন সায়ন রুটস্টকের উপর এমন ভাবে বসাতে হবে যেন একটি অপরটির উপর মিশে যায়।
v এরপর জোড়া লাগানো অংশ পলিথিন টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে।
v এখন সম্পূর্ণ জোড়া লাগানো অংশ সায়নসহ পলিথিন দিয়ে ঢেকে চিকন দড়ি বা সুতলির সাহায্যে
সহজ গিরা দিয়ে এমনভাবে বেঁধে দিতে হবে যেন প্রয়োজনের সময় সহজে পলিথিন খুলে পলিথিনের
মধ্যে জমা থাকা পানি বের করে দেয়া যায়।
v ৩০-৬০ দিন পর যখন সায়নের অগ্রভাগের পাতা হালকা সবুজাভ হবে তখন পলিথিনের আবরণ
খুলে দিতে হবে এবং যখন সায়ন পুনরায় পাতা দেওয়া শুরু করবে তখন রুটস্টকের উপরের
অংশ কেটে দিতে হবে।
v ৬-৭ মাস পরে জোড়া লাগানো অংশ যখন সম্পূর্ণ লেগে যাবে তখন ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে
পলিথিনের বাঁধন সরিয়ে ফেলতে হবে।
হ্যাঁ সংস্পর্শ ও জোড় কলমের পর এখন ক্লেফট গ্রাফটিং (Cleft Grafting)এর প্রচলন জনপ্রিয়
হচ্ছে।। এই গ্রাফটিং সহজ এবং রুটস্টকের যে কোন বয়সে করা সম্ভব। এ বিষয়ে অজ্ঞতার
কারণে বর্ত মানে নার্সারী পর্যায়ে এর প্রচলন কম। অনেক সময় বাজারে ক্লেফট গ্রাফটিং এর চারা
বাজারে বিক্রয় করতে অসুবিধায় পড়েন কারণ এই গ্রাফটিং এ জোড়া অংশ এমন সুন্দরভাবে
মিলিয়ে যায় যে ক্রেতারা চারাটি কলমের কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবু্ও উত্তম
বংশবিস্তার পদ্ধতি হিসেবে এখন থেকে ক্লেফট গ্রাফটিং এর প্রচলন বাড়ানো জরুরী।
৪.১ সময়ঃ
উপযুক্ত পরিবেশ ও সঠিক বয়সের সায়ন পেলে সার বৎসর ক্লেফট গ্রাফটিং করা যাবে। তবি
উত্তম সময় এপ্রিল-জুন মাস। তবে সেচ ও ছায়ার ব্যবস্থা করা গেলে ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসেও করা
যাবে।
রুটস্টকের বয়স বিশেষ করে আমের ক্ষেত্রে যে কোন বয়সের হতে পারে, তবে ১ বৎসর বয়সের
রুটস্টকে কলম বেশি করা হয়। সায়নের বয়স পরিপুষ্ট হতে হবে। চলতি মৌসুমের ডালের
পাতাগুলো যখন গাঢ় সবুজ হবে, ডালের ডগায় কুঁ ড়ি স্ফীত বা ফোটা ফোটা ভাব হবে এবং রোগ
বালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ মুক্ত হবে, তখন ঐ ডালকে উপযুক্ত সায়ন হিসেবে বিবেচনা করা
যাবে।
v মূল ও কান্ডের সংযোগস্থলের যথাসম্ভব কাছাকাছি কান্ডের সবুজ ও খয়েরী রং এর মিশ্রণ স্থানে
রুটস্টকের মাথা কেটে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাটা জায়গার নিচে যাতে অবশ্যই কিছু পাতা থাকে
সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
v কাটা মাথার মাঝ বরাবর পরে ধারালো চাকু দিয়ে আনুমানিক ৩-৪ সে.মি. পর্যন্ত চিরে দুভাগ
করতে হবে।
v পরিপুষ্ট সায়নের সমস্ত পাতা বোটা রেখে কেটে ফেলতে হবে।
v এরপর সায়নের গোড়ার দিকে, দুই ধার তেরছা করে কাটতে হবে যেন সায়নের গোড়ার দিকটা ৩-
৪ সে.মি. পর্যন্ত ক্রমশ মোটা থেকে পাতলা পাতের মত হয়।
v এখন উভয় পাশে তেরছা করে কাটা গোড়ার এই পাতমত অংশটি রুটস্টকের ফাটলের ভিতর
ঢু কিয়ে মাপমত বসিয়ে দিতে হবে। তারপর পলি টেপ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে।
v এরপর জোড়া লাগানো অংশসহ সম্পূর্ণ সায়নটি পলি কভার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৫। অন্যান্য পদ্ধতিঃ
আসলে স্টোন গ্রাফটিং ক্লেফট পদ্ধতি থেকে তেমন আলাদা কিছু নয়। আমের চারার একেবারে
ছোট অবস্থায় (৭-৩০ দিন বয়সে) অর্থাৎ যখন আটি চারার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে ঐ সময় জোড়া
কলম করাকেই স্টোন গ্রাফটিং বলে। এটি ক্লেফট পদ্ধতিতে ছোট চারার উপর করা হয়।
আমের স্টোন গ্রাফটিং এর ক্ষেত্রে যা মনে রাখতে হবে তা হলো
যেহেতু চারাগুলো খুবই নরম থাকে, তাই পাতলা ধারালো চাকু বা ব্লেড দিয়ে জোড়া
লাগানোর জন্য কাটাকাটির কাজ করতে হবে।
স্টোন গ্রাফটিং এর চারার বৃদ্ধি প্রাথমিক পর্যায়ে কম তবে একেবারেই নিচে অর্থাৎ মাটির
নিকটবর্তীতম জায়গায় করা যায় বিধায় গাছ ঝোপালো হয় ও অফসুট (জোড়া লাগার
নিচের অংশে অনাকাঙ্ক্ষিত কচি ডগা) গজানোর সমস্যা কম হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, রুটস্টক যতই কচি বা নরম হোক না কেন, সায়ন অবশ্যই আগের
বর্ণনা অনুসারে পরিপুষ্ট, সঠিক বয়সের হতে হবে।
v সায়না ও রুটস্টক বয়স ও আকার আকৃ তির দিক থেকে পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। যেন
তারা সহজে মিলে মিশে একাকার হতে পারে।
v রুটস্টক ও সায়নের জোড়া এমনভাবে বাঁধতে হবে যাতে ভিতরে অবশ্যই যেন কোন ফাঁক না থাকে।
৩) জলপাইঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) পরিপূর্ন ও বিকশিত এবং কাংখিত গাছের ডগার শীর্ষ থেকে কচি ১০-১৫ সেমিঃ অংশ কেটে ফেলে দিয়ে নিচের
১৫-১৮ সেমিঃ ডগাটি সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
গ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে
সায়নটির সতেজতা অক্ষু ন্ন থাকে।
৪) পেয়ারাঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৯-১২ মাস হতে হবে। স্টক হিসেবে পলি পেয়ারার চারা ব্যবহার করলে উইল্ট প্রতিরোধী
গাছ তৈরী করা সম্ভব।
খ) পেয়ারা ডালের ডগার কচি অংশে ৪টি ধার/খাজ থাকে। এই ধার বা খাজের ঠিক নিচের গোলাকার অংশটিকে
সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
গ) সায়নটি লম্বায় ১৫-১৮ সেমিঃ হওয়া ভাল।
ঘ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে
সায়নটির সতেজতা অক্ষু ন্ন থাকে।
৫) কামরাংগাঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে।
গ) পরিপূর্ন ও বিকশিত এবং কাংখিত গাছের ডগার শীর্ষ থেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ কেটে ফেলে দিয়ে নিচের
১৫-১৮ সেমিঃ ডগাটি সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) একটি ডগা হতে একাধিক সায়ন সংগ্রহ করা যেতে পারে।
ঙ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে
সায়নটির সতেজতা অক্ষু ন্ন থাকে।
৬) আমলকিঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে ।
গ) পরিপূর্ন ও বিকশিত এবং কাংখিত গাছের ডগার শীর্ষ থেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ কেটে ফেলে দিয়ে নিচের
১৫-১৮ সেমিঃ ডগাটি সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) একটি ডগা হতে একাধিক সায়ন সংগ্রহ করা যেতে পারে।
ঙ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে
সায়নটির সতেজতা অক্ষু ন্ন থাকে।
৭) লেবুঃ
ক) স্টক চারার বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাসার্ধ্য স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে।
গ) লেবু ডালের ডগার কচি অংশে ৪টি ধার/খাজ থাকে। এই ধার বা খাজের ঠিক নিচের গোলাকার অংশটিকে
সায়ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ঘ) সায়নটি লম্বায় ১৫-১৮ সেমিঃ হওয়া ভাল।
ঙ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে
সায়নটির সতেজতা অক্ষু ন্ন থাকে।
৮) কুল বা বরইঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ১.৫-২.০ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে ।
গ) সায়নের রং সবুজ বা সবুজাব হবে। ডগাটির আগাথেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ বাদ দিয়ে নিচের ১৫-১৮
সেমিঃ অংশ সায়ন হিসেবে নিতে হবে।
ঘ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে
সায়নটির সতেজতা অক্ষু ন্ন থাকে।
পদ্ধতি
ক) সাধারনত স্টক গাছের গোড়া হতে ১৫-২০ সেমিঃ উপরে গ্রাফ্টিং করা হয়।
খ) খেয়াল রাখতে হবে যেন জোড়া স্থানটির নিচে অবশ্যই যেন কিচু পাতা থাকে।
গ) এবার সিকেচার দিয়ে নিদ্দিষ্ট উচ্চতায় স্টক গাছের মাথাটি সমভাবে কেটে অপসারন করতে হবে।
ঘ) এবার চাকু দিয়ে স্টক গাছের মাথাটি ২-৩ সেমিঃ লম্বালম্বি ভাবে চিরে দিতে হবে এবং সায়নের গোড়ার উভয়
পাশ একই ভাবে ২-৩ সেমিঃ তেরছা কাট দিতে যেন গোঁজ বা তিলকের মত হয়।
ঙ) এবার স্টক গাছের কর্তি ত অংশে সায়নের কর্তি ত অংশ সমান ভাবে প্রবিস্ট করাতে হবে।
চ) অতপর জোড়া লাগানোর যায়গাটি পলিথিন ফিতা দিয়ে পেচিয়ে শক্ত ভাবে বেধে দিতে হবে।
ছ) এবার একটি পলিথিন ক্যাপ বা টু পি দিয়ে সায়নের মাথা হতে জোড়ার নিচ পর্যন্ত ঢেকে বেধে দিতে হবে।
ব্যতিক্রমঃ যেহেতু কাঠলের ২-৩ সপ্তাহের স্টক চারায় গ্রাফটিং করা হয় তাই স্টক চারায় কোন পাতা থাকেনা এবং
কলমটি চাকুর পরিবর্তে ব্লেড দিয়ে করতে হয়।
পরবর্তী পরিচর্যা
ক) কলম করার সময় অতিরিক্ত রোদ থাকলে উপরে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করলে সফলতার হার বেড়ে যায়।
খ) স্টক গাছে অনাকাংথিত কুশি বের হওয়ার পর পরই ভেংগে দিতে হবে।
গ) কলমের বেড/ব্যাগে প্রয়োজনীয় রসের ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ) সায়নের মাথায় কুঁ ড়ি গজানোর সাথে সাথেই পলিথিনের ক্যাপটি খুলে দিতে হবে।
ঙ) জোড়াটি স্থায়ী হয়ে গেলে অথাৎ কলম করার প্রায় তিন মাস পর পলিথিনের ফিতাটি খুলে দিতে হবে।
চ) বেডের/ ব্যাগের আগাছা, রোগ ও পোকা-মাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছ) চারার বাড়-বাড়তি কম হলে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে অথবা ফলিয়ার স্প্রে করতে হবে। প্রতি লিটার
পানিতে ২ গ্রাম হারে ইউরিয়া মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে।
সাধারণত গুটি কলম, শাখা কলম (কাটিং), চোখ কলম (বাডিং) ইত্যাদি উপায়ে গোলাপের চারা প্রস্ত্তত করা
যায়।
ক. গুটিকলমঃযে গাছের চারা তৈরি করা হবে সে গাছের একটি সুস্থ্য সবল ডালের ৩-৫ সেঃমিঃ পরিমাণ ছাল গোল
করে একটি ধারালো ছু রি দিয়ে তু লে দিতে হয়। এরপর দো-আঁশ মাটি ও পচা গোবর সার সমান অংশে মিশিয়ে
সেই ছালতোলা জায়গায় মুঠো করে লাগিয়ে দিতে হয়। মাটিটি পরে পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। এতে মাটির জল
শুকাতে পারে না, তাছাড়া শিকড় বের হলে বাইরে থেকে দেখতে সুবিধা হয়। যদি জল শুকিয়ে যায় তা হলে
ইনজেকশানের সিরিঞ্জ দিয়ে জল ঢু কিয়ে দিতে হয়। ৫-৬ সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় বের হয়। তখন পলিথিনের বাঁধনের
ঠিক নিচে প্রথম দফায় অর্ধেক এবং ২/৩ দিন পর বাকি অর্ধেক আলগা করে কলমটি ২/৩ দিন ছায়ায় রেখে পরে
পলিথিনের বাঁধন খুলে মাটিতে লাগাতে হয়।
খ. শাখা কলমঃশাখা কলম তৈরির জন্য শক্ত ও নিখুত
ঁ শাখা নির্বাচন করতে হয়। প্রায় ২০-২২ সেঃমিঃ লম্বা করে
কলমের ডাল এমনভাবে কাটতে হয় যেন উপরের মাথা সমান ও নীচের মাথা অর্থাৎ সে মাথা মাটিতে পোঁতা হবে
তা তেছরা থাকে। ডালের নীচের কয়েকটি পাতা ও কাঁটা ভেঙ্গে ফেলে জৈব সার মেশানো ঝু রঝু রে মাটিতে পুঁতে
দিয়ে নিয়মিত জলদিতে হয়। ৬/৭ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে কলম তৈরি হয়। সেব বিদেশী গোলাপের কাষ্ঠল অংশ কম
সেগুলোতে প্রায়ই কলম হতে চায় না।
গ. চোখ কলমঃচোখ কলম দ্বারা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বহু সংখ্যক চারা উৎপন্ন করা যায়। এ পদ্ধতিতে জংলী
গোলাপ গাছের শাখা বা কান্ডের সাথে ভাল জাতের গোলাপের কুঁ ড়ি বা চোক লাগিয়ে তৈরি করতে হয়। এ
পদ্ধতিতে দেশী জংলী গোলাপ গাছকে শিকড় গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেননা এদের ফু ল ভাল মানের না
হলেও দেশীয় আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আষাঢ়-শ্রাবন মাসে জংলী গোলাপের ডাল কেটে
কাটিং লাগাতে হয়। আমাদের দেশে কুঁ ড়ি সংযোজন করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে অগ্রহায়ণের প্রথম থেকে মাঘের
মাঝামাঝি পর্যন্ত।
এ পদ্ধতিতে শিকড়-গাছের বর্ধনশীল কান্ডে বা গোড়ার দিকে খুব ছোট ধারালো ছু রি দিয়ে ইংরেজী T অক্ষরের মত
করে শিকড় গাছের কাটা স্থানে এমন করে বসাতে হয় যাতে কুঁ ড়িটি বাইরে থাকে।এভাবে কুঁ ড়িটি স্থাপন করে
পলিথিনের চিকন ফিতা দিয়ে বেঁধে দিতে হয় এবং শিকড় গাছের অংশ কেটে ফেলতে হয়। এভাবে ৩/৪ দিন ছায়ায়
রেখে পরে রোদে দিতে হবে। প্রথম কয়েক দিন এমন ভাবে জল দিতে হবে যাতে কুঁ ড়ির সংযোগ স্থল না ভিজে।
শিকড় গাছের কোন মুকুলযাতে গজাতে বা বাড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি গজায় তাহলে
সেগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হয। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই আসল কুঁ ড়ি থেকে চারা বেরিয়ে আসবে। এটি বেশ কিছু বড় হলে
পলিথিনের বাঁধন সাবধানে খুলে দিতে হয় যাতে গোড়ার অংশ ঠিকমত বা
জমি তৈরীঃজমি বেশি শুকনো থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জো আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জৈব সার মাটির
সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমির pH ঠিক রাখার জন্য চু ন অথবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সার দিতে হবে।
জমিতে গভীর চাষ অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীরতায় জমি চাষ দিতে হবে। পোকা মাকড় মুক্ত রাখতে জমি
চাষের সময় ক্লোরডেন এবং মাটি বাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ব্রোমাইড ক্লোরোপিকরিন (১৬২ কেজি /একর)
প্রয়োগ করতে হবে। শেষ চাষের সময় পরিমাণমত টিএসপি ও এমওপি সার জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ।
রোপণ পদ্ধতিঃদেশীয় গোলাপ ফু ল কাটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে বেড সিস্টেমে লাগিয়ে নির্বাচিত জাতের
সায়ন (যে ডাল দিয়ে কলম করা হয়) সংগ্রহ করে বিভিন্ন কলম (জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি) পদ্ধতিতে চারা
উৎপাদন করা হয়। যে চারাটি উৎপন্ন হলো, তার গোড়ায় মাটির বল তৈরী করে নির্দি ষ্ট জমিতে লাগানো হয়।
চারাটি লাগাতে সাধারণত: ২০ থেকে ৩০ সেমি (৮ থেকে ১২ ইঞ্চি) আয়তনের এবং ২৫ থেকে ৩০ সেমি (১০ থেকে
১২ ইঞ্চি) গর্ত তৈরী করে , তার ভিতর ভালোভাবে বসাতে হয় এবং গর্ত টি মাটি দিয়ে ভালোভাবে আটকাতে হবে।
যে গাছ দ্রুত বাড়ে তার জন্য ২ ফু ট (গাছ থেকে গাছ) এবং ৩ ফু ট (সারি থেকে সারির) দূরত্ব বজায় রাখতে হয়।
কলমের নীচের অংশ হতে কোন ডালপালা হতে দেওয়া যাবেনা।
গাছে গুটি কলম করার পদ্ধতি
গুটি কলমঃ
দাবাকলমের মধ্যে গুটি কলম সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচলিত পদ্ধতি । গুটি কলমকে পটলেয়ারেজ, চাইনিজ লেয়ারেজ,
এয়ার লেয়ারেজ, মারকটেজ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। গুটিকলম নিরক্ষীয় এবং নাতিশীষ্ণ অঞ্চরের গাছের বংশবিস্তারে
বিশেষ করে ফল গাছেরবংশ বিস্তারে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলের বংশবিস্তারে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা
হয় যেমনঃ লিচু , পেয়ারা, কাগজীলেবু, জামরুল,বাতাবী লেবু, ডালিম, করমচা, গোলাপজাম, জলপাই, কামিনী ফু ল, ভেলভেট
ফু ল ইত্যাদি।
সাধারণতঃ ঝোপ জাতীয় ফল গাছ যেগুলো উচু কম হয় এবং পাশ্বে বেশী ছড়ায় এ ধরণের গাছের বংশবিস্তারের
জন্য দাবা কলম উপযোগী।
গুটিকলমের সুবিধাঃ
ক) এটি একটি সহজ পদ্ধতি এবং করতে খুব একটি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না।
খ) অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছের চারা উৎপাদন করা যায়।
গ) কলমের চারায় কম সময়ে ফল ধারণ করে।
ঘ) যে সমস্ত প্রজাতি কাটিং এ সহজে শিকড় গজায় না তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সফলতা বয়ে আনতে পারে।
ক) বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ পদ্ধতি কাটিং অপেক্ষা ব্যয়বহুল এবং এর জন্য বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
খ) এই পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করতে গেলে অধিক সংখ্যক মাতৃ গাছের প্রয়োজন হয়।
সুবিধা অসুবিধা বিবেচনায় এনে যদি এই পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে যদি একজন চাষী একে লাভজনক মনে করেন
তবে তখনই এটিকে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
শাখা গুটিকলম:
শাখার আগ্রভাগের কিছু টা অংশ নিচের দিকে নুইয়ে এর অংশবিশেষ বাকল তু লে ৫-৭ সেঃমিঃ মাটির গভীরে পূতে
ঁ
রাখা হয়। দুই/ তিন সপ্তাহের মধ্যে বাকল তোলা উপরের অংশের গোড়া থেকে অস্থানিক শিকড় গজায় এবং তখন
মাতৃ গাছ থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ন নির্দি ষ্ট জায়গায় রোপণ করতে হয়। যেমনঃ রাস্পবেরী, ব্লাকবেরী।
গুটিকলমের ধাপসমূহঃ
ধাপ ১. নির্বাচিত শাখা যাতে গুটি কলম করা হবে।
ধাপ ২. পাতা অপসারণ করে চক্রাকারে বাকল তু লে ফেলা হয়েছে।
ধাপ ৩. কাটা অংশের চারিদিকে রুটিং মিডিয়াম দিকে ঢেকে দেয়া হয়েছে এবং পানি ধারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধাপ ৪. রুটিং মিডিয়াম সহ ডালকে পাতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়েছে।
ধাপ ৫. মূল গজানো দাবা কলম।
গ) ডালটি পেন্সিলের মত মোটাহতে হবে, গাছের দক্ষিণ পূর্ব দিকের ডাল হলে উত্তম। নির্বাচিত শাখারঅগ্রভাগর ৩০-
৪০ সে:মি: নীচে কয়েকটি পাতা সরিয়ে দুটি পর্ব মধ্যবর্তী অংশথেকে ধারালো ছু রি দিয়ে চক্রাকারে ৪-৫ সে:মি:
পরিমাণ জায়গায় বাকল তু লে ফেলতেহয়। কাটা জায়গার কাঠের উপরের সবুজাভ আবরণটি ছু রির বুক দিয়ে চেঁ ছে
ফেলেদিতে হয। এতে ক্যাম্বিয়াম যোগসুত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ডালের উপরের দিকেরকাটাটি গিটের কাছাকাছি হলে
ভাল হয়। কারন এতে কলমে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায়। এরপরকাটা জায়গাটিকে পুরোপুরি রুটিং মিডিয়া (৫০%
এটেল দোয়াশ মাটি + ৫০% পঁচাগোবর) নারিকেলের ছোবড়ার গুড়া, নারিকেলের ছোবড়া, পাটের আঁশ ইত্যাদি দিয়েঢেকে
দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে শিকড় গজানোর জন্য কাটা উপরের অংশ যেনঅবশ্যই রুটিং মিডিয়া দিয়ে
ঢাকা থাকে। রুটিং মিডিয়া স্থাপনের পর এর চারদিকেস্বচ্ছ পলিথিনের শীট শক্ত করে বেধে দিতে হয যেমন কোন
ভাবেই রুটিং মিডিয়াপিছলে না নেমে যায়। এ ব্যবস্থা রুটিং মিডিয়ায় পানি ধারণ নিশ্চিত করে।
অনেকসময় সহজে শিকড় গজায় না এমন প্রজাতির কলমের ক্ষেত্রে কাটা অংশে রুটিং হরমোন(IBA, NAA, Kinetin
ইত্যাদি) প্রয়োগ করা হয়। বৈশাখ – আষাঢ় মাস গুটি কলমকরার উপযুক্ত সময়। গুটি কলমে শিকড় গজাতে গাছের
প্রকার ভেদে কয়েক সপ্তাহথেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় নেয়। শিকড়ের রং প্রথমে সাদা থাকে, আস্তে আস্তেরং বদলিয়ে
খয়েরী হয়। শিকড়ের রং খয়েরী হলে মাতৃ গাছ থেকে ২ থেকে ৩ দফায় কেটেনিয়ে এসে নার্সারী বেডে রোপণ
করতে হয়। উদাহারণঃ লিচু , কাগজীলেবু, পেয়ার, ডালিম, জামরুল, বতাবীলেবু, জলপাই,গোলাপজাম, করমচা, আম ইত্যাদি।
গোল করে ধারালো ছু রি দিয়ে কেটে ডালটির কেবল বাকল সাবধানে উঠিয়ে ফেলতে হবে৷
* এরপর জৈব সার মিশ্রিত (৩ ভাগ এঁটেল মাটি ও ১ ভাগ পঁচা গোবর বা পাতা পঁচা ) মাটির সাথে পানি
মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে৷ উক্ত পেস্ট দ্বারা কাটা অংশ সমান ভাবে ঢেকে দিতে হবে৷
* ঢেকে দেয়ার পর ২০ সে.মি. লম্বা ও চওড়া পলিথিন দিয়ে মাটি বলটি ঢেকে দিয়ে সুতলি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে ৷
* শিকড় আসতে সময় লাগে ২-৩ মাস ৷ শিকড়ের রঙ খয়েরী বা তামাটে হলে কলম করা ডালটি গুটিসহ কেটে
এনে পলিথিন সরিয়ে দিয়ে ছায়া জায়গায় তৈরি বীজতলায় বা টবে ৪-৫ সপ্তাহ সংরক্ষণ করার পর গাছটি লাগানোর
উপযোগী হয়৷
কাটিং এর সুবিধাঃ
১. অংগজ বংশবিস্তার পদ্ধতি সমূহের মধ্যে এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে সহজে ও কম খরচে অধিক চারা
উৎপাদন করা যায়।
২. জোড় কলমের মত এতে কোন জোড় অসামঞ্জস্যতা হয় না।
৩. এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অনেক চারা উৎপাদন করা যায়।
৪. এতে তেমন খুব একটা কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন হয় না।
৫. মাতৃ গাছের গুণাগুণ অক্ষু ন্ন রেখে নতু ন চারা দ্রুত উৎপন্ন করা যায়।
৬. একটি মাত্র গাছ থেকে অসংখ্য গাছ জন্মানো সম্ভব হয়।
৭. বসত বাড়ীতে হেজ বা বেড়া নির্মাণে ও ফল গাছের বংশবিস্তারে এটি একটি বহুল প্রচলিত ও
জনপ্রিয় পদ্ধতি।
কাটিং এর অসুবিধাঃ
১. উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেক সময় কর্তি ত অংশের মূল গজায় না।
২. অনেক সময় কাটিং মাটি বাহিত বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
৩. কোন কোন সময় শিকড় গজানোর পর মাটির প্রতিকূল অবস্থার কারণে শিকড় নষ্ট হয়ে যায়।
৪. কাটিং থেকে জন্মানো ফল গাছ অতি সহজেই ঝড় বাতাসে উপড়ে যেতে পারে। কারণ এতে কোন
প্রধান মূল তৈরী হয় না।
৫. সব গাছে কাটিং সফল হয় না বা কোন কোন ফল গাছে এর সফলতার হার এত কম যে সেক্ষেত্রে
এ পদ্ধতি অনুমোদন করা যায় না। যেমন- বীজবিহীন এবং এলাচি লেবুতে কাটিং এর সফলতার হার
অনেক বেশি অথচ কাগজি লেবুতে কাটিং সফল হয় না।
শাখা কাটিং
গাছের ডাল থেকে যে কাটিং করা হয় তাকে ডাল কাটিং বলা হয়। ভাল কলম পাওয়ার জন্য ডাল
কর্ত নকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন - শক্ত ডাল কাটিং, আধাশক্ত ডাল কাটিং, কচি ডাল কাটিং
এবং কোমল ডাল কাটিং ।
আপেল, নাশপাতি, রঙ্গন, ডু রান্ডা ইত্যাদি গাছের জন্য কচি ডাল ব্যবহার করা হয়। এ সকল গাছের
ক্ষেত্রে আধা শক্ত ডাল চারা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কচি ডালের ন্যায় ভাল
হয় না।
চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, গাঁদা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি গাছের ক্ষেত্রে ডালের মাথার দিকের কোমল ডাল বা নতু ন
গজানো ডগা কাটিং হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এ সকল গাছের ক্ষেত্রে কচি বা আধাশক্ত ডাল চারা
উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়। তবে তা কোমল ডালের ন্যায় ভালো চারা উৎপাদিত হবে না।
চারা তৈরী
ক) কাটিং এর জন্য তৈরিকৃ ত ডালগুলো উঁচু বীজতলা, টব বা কাঠের ট্রেতে রোপন করা যাবে। বেলে-
দোয়াঁশ মাটির সাথে প্রচু র পরিমান পচা গোবর মিশিয়ে বীজতলা তৈরী, টব বা কাঠের ট্রেতে ভর্তি করে
কাটিং রোপন করতে হবে।
খ) বীজতলার দৈঘ্য ৩ মিটার ও প্রস্থ ১ মিটার হতে হবে এবং বেডটি উত্তর - দক্ষিন দিকে লম্বা লম্বি
হবে।
গ) বীজতলায় ২০ সেমি: পর পর লাইন তৈরী করে প্রতি লাইনে ২০ সেমি: পর পর কাটিং লাগাতে হবে।
কাটিং লাগানোর সময় গচি দিয়ে ছিদ্র করে কাটিং এর তেরছা অংশ মাটিতে বসাতে হবে।
ঘ) কাটিং ৪৫ কৌনিক ডিগ্রীতে উত্তর মুখী করে বেডে বসাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ১টি গিট
সহ এক তৃ তীয়াংশ মাটির ভিতরে প্রবেশ করে।
ঙ) কাটিং বসানোর পর কাটিং এর গোড়ার মাটি ভাল ভাবে চেপে দিতে হবে যেন ভিতরে ফাঁকা না
থাকে।
চ) এবার পানি দিয়ে বেডটি ভাল ভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
ছ) হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে ও মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে।
জ)এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কাটিং হতে কুঁ ড়ি ও শিকড় গজাবে। তিন মাসের মধ্যে গজানো কাটিং
বেড হতে তু লে পটিং করা যাবে, রোপন বা বিক্রয় করা যাবে। কাটিং বেড হতে উঠানোর ৩-৪ ঘন্টা
আগে বীজতলার মাটি পানি দিয়ে ভাল ভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতপরঃ নিড়ানীর সাহায্যে কাটিং
এর গোড়া হতে ৩-৪ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির বলসহ কাটিংটি উঠাতে হবে। সাথে সাথে পটে / পলিব্যাগে
পটিং বা বাগানে রোপন করতে হবে। বিক্রয় করতে হলে কাটিং এর গোড়ার মাটির বলটি নলি সুতা
দিয়ে পেঁচিয়ে হালকা ছায়া যুক্ত স্থানে ১০-১৫ দিন হার্ডে নিং করে বিক্রয় করতে হবে। হার্ডে নিং এর সময়
গাছের প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ১-২ বার হালকা সেচ দিতে হবে।
কাটিং এর উপরের কাটা অংশে ছত্রাক নাশক লাগালে রোদ ও রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নিচের কাটা অংশে হরমোন ( আই,বি,এ = ইনডোল বিউটারিক এসিড, বাজারে বাণিজ্যিক নাম সুরাটেক্স)
ব্যবহার করলে খুব সহজেই শিকড় গজায়।
পাতা কাটিং
কিছু কিছু গাছ আছে যেমনঃ পাথর কুচি, মিষ্টি আলু, লেবু, ফনিমনসা, ইত্যাদির পাতা কাটিং হিসাবে
ব্যবহার করলে সহজে চারা উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতিতে সম্পুর্ণ পাতা বা পাতার বিভিন্ন অংশ,
যেমনঃ পত্রফলক, বোটাসহ পাতা প্রভৃ তি মাতৃ গাছ হতে আলাদা করে নতু ন চারা উৎপাদনকে পাতা
কাটিং কলম বলে। পাতার গোড়া বা অন্যান্য অংশ থেকে শিকড় ও পাতা বা কান্ড জন্মে নতু ন চারা
উৎপন্ন হয়। পত্র কলমের জন্য অধিক আদ্রতার দরকার হয়।
পত্রকুঁ ড়ি কাটিং
কিছু কিছু গাছ আছে যাদের পত্রকুঁ ড়ি কাটিং হিসাবে ব্যবহার করে সহজে চারা উৎপাদন করা যায়। এ
পদ্ধতিতে পাতা, পাতার বোটা, ছোট একটু করা কান্ড ও পত্রাক্ষে অবস্থিত একটি সুপ্ত কুঁ ড়ির সমন্বয়ে
গঠিত হয় পত্রকুঁ ড়ি কলম। যেমন - চা, এলাচি লেবু ইত্যাদি। যেসব গাছের পাতা থেকে শিকড় বাহির
হয় কিন্তু কান্ড বাহির হয় না এমন গাছের জন্য পত্রকুড়ির কাটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শীতের শেষ দিকে
সাধারণতঃ পত্রকুঁ ড়ি কলম করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে এক মৌসুমেই প্রতিটি কুঁ ড়ি হতে একটি নতু ন
চারা উৎপাদন করা যায়।