Professional Documents
Culture Documents
মিষ্টিকাহিনী
মিষ্টিকাহিনী
রসগোল্লা
পরিচ্ছেদসমূহ
১মিষ্টির প্রকারভেদ
২ভারতীয় উপমহাদেশের মিষ্টির ইতিহাস
৩বাংলাদেশের বিখ্যাত মিষ্টি
৪ভারতের প্রসিদ্ধ মিষ্টি
৫মিষ্টি নির্মাতা, মিষ্টির দোকান
৬মিষ্টি খেতে বারণ
৭ছবি ঘর
৮আরও দেখুন
৯তথ্যসূত্র
মিষ্টির প্রকারভেদ[সম্পাদনা]
পাত্র ভর্তি রসমালাই। চাঁদপাড়া বাজার থেকে ১ কিমি দূরে চাঁদপাড়া-পাল্লা রোডের পাশে একটি ছোট মিষ্টির দোকানে। দুধ, দুধের সর, ছানা ও
ময়দা দিয়ে তৈরি হয় এই রসমালাই
কালোজাম
বাংলার মিষ্টিকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন সুকু মার সেন। প্রথম ভাগে আছে একক উপাদানে তৈরি মিষ্টি। এ ধরনের
মিষ্টিতে গুড় বা চিনির সাথে আর কিছু মিশ্রিত থাকে না। যেমনঃ গুড় বা চিনির নাড়ু ও
চাকতি, পাটালি, বাতাসা, খাজা, ছাঁচ ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরনের মিষ্টিকে আরো দু' রকমে ভাগ করা চলে। গুড় বা
চিনির সাথে দুগ্ধজাত কোন উপকরণ ছাড়া অন্য দ্রব্য সহযোগে তৈরিকৃ ত মিষ্টান্ন।
যেমনঃ নারকেল, তিল এসবের নাড়ু , চিঁ ড়া, মুড়ি, খৈ-এর মোয়া ইত্যাদি। দুগ্ধজাত দ্রব্যযোগে তৈরি নানান ধরনের মিষ্টি
রসিক ও মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির সুপরিচিত। চিনির সাথে ছানার সংযোগে তৈরি হয় সন্দেশ ও মণ্ডা। আবার এই ছানা
রসে মাখিয়ে তৈরি হয় রসগোল্লা, দুধে ডোবালে রসমালাই। বেসনের ছোট ছোট দানা ঘিয়ে ভেজে তৈরি হয় বুন্দিয়া, যা
দেখতে ছোট বিন্দুর মতো। কড়া পাকে প্রস্তুতকৃ ত বুন্দিয়াই মতিচু র লাড্ডু র কাঁচামাল।[১]
কয়েকপ্রকারের মিষ্টি
রসগোল্লা
রাজভোগ
কালোজাম
চমচম
রসমালাই
প্রাণহরা
সন্দেশ
ছানামুখী
মণ্ডা
বুরিদান
মতিচু র লাড্ডু
আমিট্টি বা আমৃতি
মালাইকারী
কাঁচাগোল্লা
প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাজ্যই ছিল ধর্মীয় কারণে। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে তৈরি ঘি,
দধি, মাখন ইত্যাদি ছিল দেবখাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃ ষ্ণের। এ জন্য দুধ থেকে
রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃ ত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে,
ছানা ছিল অখাদ্য।
এ সম্পর্কে সুকু মার সেন তার কলিকাতার কাহিনী বইয়ে লিখেছেন, "ক্ষীর-মাখন-ঘি-দই—এগুলো কাঁচা দুধের
স্বাভাবিক পরিণাম, কৃ ত্রিম অথবা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোটিই দুধের বিকৃ তি নয়। ‘ছানা’ কিন্তু ফোটানো দুধের কৃ ত্রিম
বিকৃ তি। বাঙালি অন্য দ্রব্য সংযোগ করে দুধ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, যাতে সারবস্তু ও জলীয় অংশ পৃথক হয়ে যায়।
এভাবে দুধ ছিন্নভিন্ন করা হয় বলেই এর নাম হয়েছিল বাংলায় ‘ছেনা’, এখন বলা হয় ‘ছানা’। সংস্কৃ ত ভাষায়
ছানার কোনো রকম উল্লেখ নেই। অন্য ভাষাতেও ছিল না। আগে অজ্ঞাত ছিল বলেই শাস্ত্রসম্মত দেবপূজায় ছানা
দেওয়ার বিধান নেই।"
সন্দেশ ছানা আবিষ্কারের আগে ছিল। আগের দিনে সন্দেশ তৈরি করা হতো বেসন, নারকেল ও মুগের ডালের সঙ্গে
চিনির সংযোগে। এ ছাড়া শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ বলা
হতো। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালির ইতিহাস বইয়ে বাঙালির মিষ্টিজাতীয় যে খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন, তাতে
সংগত কারণেই ছানার কোনো মিষ্টির উল্লেখ নেই। দুধ থেকে তৈরি মিষ্টির মধ্যে আছে দই, পায়েস ও ক্ষীরের কথা।
সন্দেশের উল্লেখ আছে, তবে সেই সন্দেশ ছানার নয়। তিনি বলেছেন, ‘কোজাগর পূর্ণিমা রাত্রে আত্মীয়-বান্ধবদের
চিপিটক বা চিঁ ড়া এবং নারিকেলের প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশ পরিতৃ প্ত করিতে হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র
কাটিত পাশা খেলায়।’
চিনির সঙ্গে ছানার রসায়নে আধুনিক সন্দেশ ও রসগোল্লার উদ্ভাবন অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে। এই আধুনিক
সন্দেশ রসগোল্লার আবিষ্কর্তা হুগলির হালুইকররা। পরে তারা কলকতায় এসে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একে
জগদ্বিখ্যাত করে তোলেন। প্রথম দিকে ছানার সন্দেশকে বলা হতো ‘ফিকে সন্দেশ’। কারণ, এ সন্দেশে আগের
দিনের সন্দেশের চেয়ে মিষ্টি কম। শাস্ত্রসম্মত নয় বলে ছানার সন্দেশ অনেকে খেতে চাইত না। কলকাতার ময়রাদের
সৃষ্টিতে মুগ্ধ শঙ্কর তার বাঙালির খাওয়া দাওয়া বইয়ে কড়াপাক, নরমপাক, কাঁচাগোল্লা, চন্দন সন্দেশসহ হাজার
রকম সন্দেশের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এঁরা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মতো পাইকিরি হারে মিষ্টি শাস্ত্রে নোবেল
জয়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।’ তিনি জানিয়েছেন, সন্দেশ এত বৈচিত্র্যময় যে শীতকালের সন্দেশ আর গ্রীষ্মের
সন্দেশে তো পার্থক্য আছেই, এমনকি সেপ্টেম্বর আর অক্টোবরের সন্দেশও নাকি এক রকম নয়।
রসগোল্লার নাম আদিতে ছিল গোপাল গোল্লা। রসের রসিক বাঙালি চিনির সিরায় ডোবানো বিশুদ্ধ ছানার গোল্লাকে
নাম দিয়েছে রসগোল্লা। পরে ছানা ও চিনির রসায়নে নানা আকৃ তি ও স্বাদে নানা নামে মিষ্টির সম্ভার হয়ে উঠেছে
বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে আছে লেডিকেনি, চমচম, পানিতোয়া, কালোজাম, আমৃতি, রসমালাই—হরেক রকম।
রসগোল্লার মতোই গোলাকার লাল রঙের লেডিকেনি নামে মিষ্টিটি তৈরি হয়েছিল ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল
লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রীর সম্মানে। লোকমুখে এর চলতি নাম লেডিকেনি। আর রসগোল্লার সর্বশেষ নিরীক্ষাধর্মী
সংস্করণ হলো স্পঞ্জ রসগোল্লা। এটি এখন উভয় বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। ছানার মিষ্টি এপার-ওপার উভয় বাংলায়
বিপুল জনপ্রিয় হলেও বঙ্গের বাইরে, বিশেষত ভারতের অন্যত্র এখনো ছানার মিষ্টি তেমন তৈরি হয় না। বহির্বঙ্গের
মিষ্টি প্যাড়া, মেওয়ার শুকনো মিষ্টি। এ কারণেই দিল্লির মসনদ এখনো লাড্ডু র দখলে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ মিষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জ ন করেছেন সেখানকার ময়রারা।
তাদের নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে সেসব মিষ্টি। এর মধ্যে আছে,
টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম,
নাটোরের কাঁচাগোল্লা,
কু মিল্লার রসমালাই,
বিক্রমপুর ও কলাপাড়ার রসগোল্লা,
বগুড়ার দই (মূলত শেরপুর) ও গৌরনদীর দই,
যশোরের খেজুরগুড়ের সন্দেশ,
শাহজাদপুরের রাঘবসাই, পানতোয়া
মুক্তাগাছার মন্ডা
খুলনা ও মুন্সিগঞ্জের আমৃতি
কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি
বগুড়ার দই
নওগাঁর প্যারা সন্দেশ
ময়মনসিংহের আমিরতি,মালাইকারী এবং চালের জিলাপি
যশোরের জামতলার মিষ্টি
যশোরের খেজুরের নোলন গুড়ের প্যারা সন্দেশ
যশোরের খেজুর রসের ভিজা পিঠা
মাদারীপুরের রসগোল্লাতো
রাজশাহীর তিলের খাজা
সিরাজদিখানের পাতক্ষীরা
রাজবাড়ির শংকরের ক্ষীরের চমচম
নওগাঁর রসমালাই
পাবনার প্যারাডাইসের প্যারা সন্দেশ
পাবনার শ্যামলের দই
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পানিতোয়া
কু ষ্টিয়ায় মহিষের দুধের দই
মেহেরপুরের সাবিত্রী নামে একটা মিষ্টান্ন
কু ষ্টিয়ার তিলের খাজা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী।
মানিকপুর—চকরিয়ার মহিষের দই
ইকবালের সন্দেশ(দেওয়ান বাজার)
বোম্বাইয়াওয়ালার ক্ষীর(এনায়েত বাজার)
মহাস্থানের কটকটি
গাইবান্ধার রসমঞ্জরী
কু ষ্টিয়ার স্পেশাল চমচম
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আভিনিউ এর পূর্ণিমার জিলাপী
গুলশান এর সমরখন্দ এর রেশমী জিলাপী
দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর এর রসগোল্লা।
মহেশখালীর মোষের দই
রাজশাহীর রসকদম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জের আদি চমচম
শিবগঞ্জের (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) চমচম, প্যারা সন্দেশ।
কিশোরগঞ্জের তালরসের পিঠা ( চিনির শিরায় ভেজানো)
লক্ষ্মীপুরের রামগতির মহিষের দই।
ফেনীর খন্ডলের মিষ্টি।
রসগোল্লা
কলকাতার স্পঞ্জ রসগোল্লা
কৃ ষ্ণনগরের সরপুরিয়া
কৃ ষ্ণনগরের সরভাজা
বর্ধমানের মিহিদানা
বর্ধমানের সীতাভোগ
শক্তিগড়ের ল্যাংচা (পূর্ব বর্ধমান জেলা)
কলকাতার সন্দেশ
নবদ্বীপের লাল দই
চন্দননগরের জলভরা সন্দেশ
রাণাঘাটের পান্তুয়া
জয়নগরের মোয়া
কলকাতার লাড্ডু
কলকাতার কাজু বরফি
গঙ্গারামপুরের ক্ষীরদই
এলাকাভিত্তিক মিষ্টির প্রসিদ্ধি ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও অনেক মিষ্টিশিল্পী খ্যাতিমান হয়েছেন বিশেষ কোনো মিষ্টি
তৈরির জন্য। এ ছাড়া ঢাকার পুরোনো খ্যাতিমান মিষ্টির দোকানের মধ্যে আছে,
মিতালি সুইটস
অমৃত
যাদব দাস
ভীম নাগ (বউবাজার)
কেসি দাস
নিউ আশীর্বাদ সুইটস
ভিআইপি সুইটস (চিংড়িহাটা)
বলরাম-রাধারমন
সেন মহাশয়
মিঠাই
সুরেশ সুইটস (ঢাকু রিয়া)
নারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার
(গড়িয়া)
গাঙ্গুরাম
তিন চারটে ভাগ হয়ে গিয়েছে দোকান৷ গাঙ্গুরামস, গাঙ্গুরাম অ্যান্ড সন্স, গাঙ্গুরাম অ্যান্ড গ্র্যান্ড সন্স৷ * বাঞ্ছারাম
মিষ্টিকাহিনী
লিখেছেন: নীরব মাহমুদ বিভাগ:
রসনা বিষয়ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১১ ট্যাগসমূহ:মিষ্টি পড়েছে: ৮৮১ জন
আচ্ছা, যদি মিষ্টি খেতে মিষ্টি না হয়ে অন্য কোন স্বাদের হতো, সেক্ষেত্রে মিষ্টির নাম হতো কি? মিষ্টি একাধারে
যেমন একটি স্বাদের নাম, ঠিক তেমনি মিষ্টি একটি বিশেষ মিষ্টান্ন জাতীয় খাদ্য প্রকার। চা’য়ে চিনি দিলে বলা
হয় মিষ্টি চা। চিনি দিয়ে তৈরী বিস্কিটকে বলা হয় মিষ্টি বিস্কিট। শরবতে লবনের পরিবর্তে চিনি দিলে বলা হয়
মিষ্টি শরবত। তাই যদি হয়, তাহলে বলুন তো, মিষ্টিতে চিনি দিলে সেটাকে কি বলা হবে? মিষ্টি চিনি? মিষ্টি
নিয়ে যতোসব মিষ্টি মিষ্টি কথা না বাড়িয়ে, চলুন শুনি কিছু মিষ্টিকাহিনী।
মিষ্টি হলো চিনির বা গুড়ের রসে ভেজানো ময়দার গোলা কিংবা দুধ- চিনি মিশিয়ে তৈরি বিভিন্ন আকৃ তির
ছানার/ময়দার টু করো করা খাবার। বাঙ্গালির খাওয়া-দাওয়ায় মিষ্টি একটি অতি জনপ্রিয় উপকরণ।
বাঙ্গালির কোন উপলক্ষ-অনুষ্ঠানই মিষ্টি ছাড়া পূর্ণতা পায় না। মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে।
বাংলাদেশে মিষ্টিকে আশ্রয় করে গড়ে ঊঠেছে অসংখ্য নামী-দামী মিষ্টির দোকান, কারখানা। সেই
আদিযুগের লাড্ডু থেকে শুরু করে সন্দেশ, কালোজাম পেরিয়ে আজ মিষ্টির প্রকারভেদ শিল্পের পর্যায়ে চলে
গেছে। বিভিন্ন রকমের মিষ্টি , স্বাদ ও আকারে এমনকি নামকরণের ভিন্নতা নিয়ে স্বতন্ত্র সত্ত্বায় জনপ্রিয়।
মিষ্টির প্রকারভেদ
বাংলার মিষ্টিকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন সুকু মার সেন। প্রথম ভাগে আছে একক উপাদানে তৈরি মিষ্টি। এ
ধরণের মিষ্টিতে গুড় বা চিনির সাথে আর কিছু মিশ্রিত থাকে না। যেমনঃ গুড় বা চিনির নাড়ু ও চাকতি,
পাটালি, বাতাসা, খাজা, ছাঁচ ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরণের মিষ্টিকে আরো দু’ রকমে ভাগ করা চলে। গুড় বা
চিনির সাথে দুগ্ধজাত কোন উপকরণ ছাড়া অন্য দ্রব্য সহযোগে তৈরিকৃ ত মিষ্টান্ন। যেমনঃ নারকেল, তিল
এসবের নাড়ু , চিঁ ড়া, মুড়ি, খৈ-এর মোয়া ইত্যাদি। দুগ্ধজাত দ্রব্যযোগে তৈরি নানান ধরণের মিষ্টি রসিক ও
মিষ্টিপ্রিয় বাঙ্গালির সুপরিচিত। চিনির সাথে ছানার সংযোগে তৈরি হয় সন্দেশ ও মন্ডা। আবার এই ছানা
রসে মাখিয়ে তৈরি হয় রসগোল্লা, দুধে ডোবালে রসমালাই। বেসনের ছোট ছোট দানা ঘিয়ে ভেজে তৈরি হয়
বুন্দিয়া, যা দেখতে ছোট বিন্দুর মতো। কড়া পাকে প্রস্তুতকৃ ত বুন্দিয়াই মতিচু র, লাড্ডু র কাঁচামাল।
কয়েকপ্রকারের মিষ্টি
১। রসগোল্লা
সাদা রঙের এক প্রকার ছানার মিষ্টি। স্পঞ্জ রসগোল্লা, রসগোল্লা সদৃশ রসে ডোবা রসালো মিষ্টি। যা ষ্পঞ্জের
মতো নরম। রসগোল্লা খেতে ভালো। যতদূর জানা যায় ভারতের উড়িষ্যায় প্রথম রসগোল্লা তৈরী হয়ে ছিল।
প্রাচীন রথযাত্রা উৎসবে এ’র ব্যবহারের কথা জানা যায়। ক্রমান্বয়ে এই রসগোল্লা জনপ্রিয় হয়ে ,পাশের
রাজ্য-গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, সুপাদেয় এই রসগো্ল্লা, কোলকাতায় উল্লেখযোগ্য ভাবে জনপ্রিয়তা
লাভ করে।
২। রাজভোগ
৩। কালোজাম
কালোজাম বা গুলাব জামুন (হিন্দি: गल
ु ाब जामनु , উর্দু: )گالب جامنদক্ষিণ এশিয়ার, বাংলাদেশ, ভারত,
পাকিস্তান, নেপাল এর একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। কালচে-লাল রঙের মিষ্টি; যা ময়দার গোলায় চিনি, ছানা
ও মাওয়া মিশিয়ে ঘিয়ে ভেজে সিরায় জ্বাল দিয়ে বানানো হয়। এই মিষ্টি মূল প্রক্রিয়ায় রয়েছে তেলে ভাজা
ও সিরাপের মাঝে ভিজিয়ে রাখা। কালোজাম তৈরির উপকরণের মাঝে রয়েছে গুঁড়ো দুধ, তরল দুধ,
বেকিং পাউডার, মাওয়া, তেল, পানি, এলাচ গুঁড়ো, কেশার, চিনি। কালোজাম এসেছে একরকম
আরবিও মিষ্টি নাম “লৌকোমাদেস” (Loukoumades) থেকে, এই মিষ্টি মোঘল-আমলে খুব জনপ্রিয়
ছিল। মাঝে মাঝে সিরাপ ব্যবহার করা হত। এই মিষ্টির কদর সূদুর তু র্কি পর্যন্ত চলে গিয়েছে।
৪। চম্চম
৫। রসমালাই
ছোট ছোট আকারের রসগোল্লাকে চিনির সিরায় ভিজিয়ে তার উপর জ্বাল-দেওয়া ঘন মিষ্টি দুধ ঢেলে
রসমালাই বানানো হয়। বাংলাদেশের কু মিল্লার রসমালাই বিখ্যাত।
৬। প্রাণহারা
প্রাণহারা সন্দেশের গোলায় গোলাপ জল মিশিয়ে মাওয়ার প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা একধরণের মিষ্টি।
৭। সন্দেশ
সন্দেশ দুধের ছানা দিয়ে তৈরি একধরণের উপাদেয় মিষ্টান্ন। ছানার সাথে চিনি বা গুড় মিশিয়ে ছাঁচে ফেলে
সন্দেশ প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। খাদ্য উপাদানের দিক থেকে এটি একটি পুষ্টিকর খাবার। বাঙালির উৎসব
আয়োজনে এই নকশাদার উপাদেয় খাবারটির ব্যবহার অনেক প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। বিভিন্ন
এলাকার মিষ্টি তৈরির কারিগরেরা এই সন্দেশ তৈরির ব্যাপারটাকে একটা শৈল্পিক ব্যাপারে পরিণত করে
ফে লে ছে। বাংলা দে শের না টো র জেলার সন্দে শ (যা কাঁচাগোল্লা নামেই বিশেষভাবে পরিচিত) জনপ্রিয়
একটি মিষ্টান্ন।
৮। ছানামুখী
ছানামুখী একধরনের মিষ্টান্ন যা বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় পাওয়া যায়। এটি ছানার তৈরি চারকোণা
ক্ষু দ্রাকার এবং শক্ত, এর উপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপযুক্ত থাকে।
৯। মণ্ডা
মণ্ডা, গোল-চ্যাপ্টা আকৃ তির বাঙালি মিষ্টান্ন। দেখতে অনেকটা পেঁড়ার মত। “মিঠাই-মণ্ডা” একটি বহুল
প্রচলিত শব্দবন্ধ। কড়া পাকের, সাধারণতঃ চিনি মেশানো ক্ষীরের গরম নরম অবস্থায় গোল তাল পাকানো
মণ্ডকে পরিষ্কার শক্ত কোন তলের উপর বিছানো কাপড়ের উপর হাতদিয়ে ছুঁ ড়ে আছাড় মেরে সাধারণতঃ
চ্যাপ্টা করার কাজটি করা হয়। পরে ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায় ও তখন কাপড় থেকে খুলে নেওয়া হয়। তাই
যেদিকটা নীচে (কাপড়ে লেগে) থাকে সেটা পুরো সমতল হয়, আর অন্য দিকটা একটু উত্তল আর কিনারা
একটু ফাটা ফাটা হয়। ক্ষীরের রঙের উপর নির্ভ র করে মণ্ডা সাদা বা ঈষৎ হাল্কা খয়েরি রঙের হয়। (সম্ভবতঃ
চিনিকে বেশী গরম করলে পুড়ে বা ক্যারামেলাইজ হয়ে খয়েরী বং ধরে)। মণ্ডা সাধারণতঃ কাগজে মুড়ে
বিক্রি করা হয়।
হরির লুঠ ইত্যাদি বাঙালি হিন্দু ধর্মীয় লোকাচারে মণ্ডা বহুল ব্যবহৃত হয়। ময়মনসিংহ শহরের অদূরবর্তী
মুক্তাগাছা নামক স্থানটি সবোর্ত্ত ম মণ্ডা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ।
১০। মকড়ম
ডিমের সাদা অংশকে ফেটিয়ে চিনি মিশিয়ে জমাট বাঁধিয়ে মকড়ম নামের মিষ্টি প্রস্তুত করা হয়। এই মিষ্টি
মুখে দিলে গলে যায়।
১১। আমিট্টি বা আমৃতি
ভারতবর্ষে মিষ্টি
ভারতবর্ষে র সবচে য়ে প্রা চীন মিষ্টি মতিচূ রের লাড্ডু । বয়স প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি। আধুনিক
সন্দেশ-রসগোল্লার বয়স মাত্র দুই-আড়াই’শ বছর। বাঙালিরা ছানা তৈরি করতে শীখেছে পর্তু গিজদের
থেকে। তাদের কাছ থেকে বাঙালি ময়রারা ছানা ও পনির তৈরির কৌশল শেখে। ভাস্কো দা গামা কালিকট
বন্দরে এসেছিলেন ১৪৯৮ সালে, ভারত ত্যাগ করেন ১৫০৩ সালে । উপমহাদেশে ছানা তৈরির
শিক্ষাবিস্তার অনেক পরের ঘটনা।
প্রথম দিকে ছানা ও ছানার মিষ্টি একরকম পরিত্যাজ্যই ছিল ধর্মীয় কারনে। বৈদিক যুগে দুধ ও দুধ থেকে
তৈরি ঘি, দধি, মাখন ইত্যাদি ছিল দেবখাদ্য। বিশেষ করে ননি ও মাখন অত্যন্ত প্রিয় ছিল শ্রীকৃ ষ্ণের। এ জন্য
দুধ থেকে রূপান্তরিত ওই সব খাদ্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হতো।
কিন্তু ছানা তৈরি হয় দুধ বিকৃ ত করে, এ জন্য মনুর বিধানমতে, ছানা ছিল অখাদ্য।
এ সম্পর্কে সুকু মার সেন তাঁর কলিকাতার কাহিনী বইয়ে লিখেছেন, “ক্ষীর-মাখন-ঘি-দই—এগুলো কাঁচা
দুধের স্বাভাবিক পরিণাম, কৃ ত্রিম অথবা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনোটিই দুধের বিকৃ তি নয়। ‘ছানা’ কিন্তু
ফোটানো দুধের কৃ ত্রিম বিকৃ তি।
বাঙালি অন্য দ্রব্য সংযোগ করে দুধ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে, যাতে সারবস্তু ও জলীয় অংশ পৃথক হয়ে যায়।
এভাবে দুধ ছিন্নভিন্ন করা হয় বলেই এর নাম হয়েছিল বাংলায় ‘ছেনা’, এখন বলা হয় ‘ছানা’। সংস্কৃ ত
ভাষায় ছানার কো নো রকম উল্লে খ নেই। অন্য ভাষাতেও ছিল না। আগে অজ্ঞাত ছিল বলেই
শাস্ত্রসম্মত দেবপূজায় ছানা দেওয়ার বিধান নেই।”
সন্দেশ ছানা আবিষ্কারের আগে ছিল। আগের দিনে সন্দেশ তৈরি করা হতো বেসন, নারকেল ও মুগের
ডালের সঙ্গে চিনির সংযোগে। এ ছাড়া শুধু চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের চাকতিকেও অনেক সময় সন্দেশ
বলা হতো। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালীর ইতিহাস বইয়ে বাঙালির মিষ্টিজাতীয় যে খাদ্যের বিবরণ দিয়েছেন,
তাতে সংগত কারণেই ছানার কোনো মিষ্টির উল্লেখ নেই। দুধ থেকে তৈরি মিষ্টির মধ্যে আছে দই, পায়েস ও
ক্ষীরের কথা। সন্দেশের উল্লেখ আছে, তবে সেই সন্দেশ ছানার নয়। তিনি বলেছেন, ‘কোজাগর পূর্ণিমা
রাত্রে আত্মীয়-বান্ধবদের চিপিটক বা চিঁ ড়া এবং নারিকেলের প্রস্তুত নানা প্রকারের সন্দেশ পরিতৃ প্ত করিতে
হইত এবং সমস্ত রাত বিনিদ্র কাটিত পাশা খেলায়।’
চিনির সঙ্গে ছানার রসায়নে আধুনিক সন্দেশ ও রসগোল্লার উদ্ভাবন অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে।
এই আধুনিক সন্দেশ রসগোল্লার আবিষ্কর্তা হুগলির হালুইকররা। পরে তারা কলকতায় এসে বহু পরীক্ষা-
নিরীক্ষা করে একে জগদ্বিখ্যাত করে তোলেন। প্রথম দিকে ছানার সন্দেশকে বলা হতো ‘ফিকে সন্দেশ’।
কারণ, এ সন্দেশে আগের দিনের সন্দেশের চেয়ে মিষ্টি কম। শাস্ত্রসম্মত নয় বলে ছানার সন্দেশ অনেকে
খেতে চাইত না। কলকাতার ময়রাদের সৃষ্টিতে মুগ্ধ শংকর (একজন বিখ্যাত লেখক) তাঁর বাঙালির খাওয়া
দাওয়া বইয়ে কড়াপাক, নরমপাক, কাঁচাগোল্লা, চন্দন সন্দেশসহ হাজার রকম সন্দেশের কথা উল্লেখ করে
বলেছেন, ‘এঁরা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মতো পাইকিরি হারে মিষ্টি শাস্ত্রে নোবেল জয়ী হওয়ার যোগ্যতা
রাখেন।’ তিনি জানিয়েছেন, সন্দেশ এত বৈচিত্র্যময় যে শীতকালের সন্দেশ আর গ্রীষ্মের সন্দেশে তো
পার্থক্য আছেই, এমনকি সেপ্টেম্বর আর অক্টোবরের সন্দেশও নাকি এক রকম নয়।
রসগোল্লার নাম আদিতে ছিল গোপাল গোল্লা। রসের রসিক বাঙালি চিনির সিরায় ডোবানো বিশুদ্ধ ছানার
গোল্লাকে নাম দিয়েছে রসগোল্লা। পরে ছানা ও চিনির রসায়নে নানা আকৃ তি ও স্বাদে নানা নামে মিষ্টির
সম্ভার হয়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে আছে লেডিকেনি, চমচম, পানিতোয়া, কালোজাম, আমৃতি,
রসমালাই—হরেক রকম। রসগোল্লার মতোই গোলাকার লাল রঙের লেডিকেনি নামে মিষ্টিটি তৈরি
হয়েছিল ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিংয়ের স্ত্রীর সম্মানে। লোকমুখে এর চলতি নাম
লেডিকেনি। আর রসগোল্লার সর্বশেষ নিরীক্ষাধর্মী সংস্করণ হলো স্পঞ্জ রসগোল্লা। এর উদ্ভাবক কলকাতার
বাগবাজারের নবীন ময়রা। এটি এখন উভয় বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। ছানার মিষ্টি এপার-ওপার উভয়
বাংলায় বিপুল জনপ্রিয় হলেও বঙ্গের বাইরে, বিশেষত ভারতের অন্যত্র এখনো ছানার মিষ্টি তেমন তৈরি হয়
না। বহির্বঙ্গের মিষ্টি প্যাড়া, মেওয়ার শুকনো মিষ্টি। এ কারণেই দিল্লির মসনদ এখনো লাড্ডু র দখলে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ মিষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জ ন করেছেন সেখানকার
ময়রারা। তাঁদের নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় ঐতিহ্যবাহী হয়ে উঠেছে সেসব মিষ্টি। এর মধ্যে আছেঃ-
ইত্যাদি।
এলাকাভিত্তিক মিষ্টির প্রসিদ্ধি ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও অনেক মিষ্টিশিল্পী খ্যাতিমান হয়েছেন বিশেষ
কোনো মিষ্টি তৈরির জন্য। এ ছাড়া ঢাকার পুরোনো খ্যাতিমান মিষ্টির দোকানের মধ্যে আছেঃ-
১। আলাউদ্দিন সুইটস
২। মরণ চাঁদ।
৩। অধুনা
৪। বনফু ল
৫। মুসলিম সুইটস
৬। রস,
৭। আম্বালাসহ
৮। প্রমিনেন্ট
৯।
বিভিন্ন নামের মিষ্টির দোকান আছে। প্রায় একশ রকমের মিষ্টির সম্ভার বাঙালির রসনা তৃ প্তির জন্য
উপস্থাপন করে আসছেন মিষ্টিশিল্পীরা।
আসুন,
আমরা বেশি বেশি মিষ্টি খাই। নিজের রসনাকে মিষ্টি করে তু লি। তাহলে হয়তো কোন একসময় আমরা
মিথ্যা বলতে ভু লে যাবো!! কারণ, মিথ্যা ভীষণ অম্ল-তিতকু টে!!!
তথ্যসূচী ঃ-
১। প্রথম-আলো২। উইকিপিডিয়া
৩। ইন্টারনেটের সুবিপুল রিসোর্সসেস
বাংলার কোথায় কোন মিষ্টি বিখ্যাত (The famous sweets of West Bengal)
by A.K Mondal on Monday, August 13, 2018 in তথ্য-বাংলা (Information)
বাঙালির খাদ্য তালিকা মিষ্টান্ন ছাড়া ভাবা যায় না। বাঙালির উৎসব অনুষ্ঠান, অতিথি আপ্যায়ন, রসনা পরিতৃ প্তি
কোন কিছুই মিষ্টি ছাড়া সম্পূর্ণ হয়না।
বাংলার মিষ্টি বৈচিত্র্যময়। এক এক জায়গা এক এক মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। স্থানবিশেষে বাংলার মিষ্টি বিশ্বজয়
করেছে। বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, জয়নগরের মোয়া ও কলকাতার রসগোল্লা ইতিমধ্যে জি.আই ট্যাগ অর্জ ন
করেছে। আজ এখানে দেখে নিন পশ্চিম বঙ্গের কোন জেলা বা শহর কোন বিশেষ মিষ্টির জন্য বিখ্যাত ও
কি তার বৈশিষ্ট্য।
(১) রসগোল্লা - বাগবাজার , কলকাতা
রসগোল্লা অর্থাৎ রসের গোল্লা। দুধের ছানা দিয়ে তৈরি সাদা রঙের এক ধরনের রসের মিষ্টি। রসগোল্লার
নাম শুনলেই মুখে জল আসে।রসগোল্লা সাধারণত চিনির রস দিয়েই তৈরি হয়। তবে শীতকালে খাজুর গুড় দিয়ে
তৈরী রসগোল্লা বেশ জনপ্রিয়। রসগোল্লা বাংলার সবথেকে জনপ্রিয় মিষ্টি।
রসগোল্লা
রসগোল্লার আদি জন্মস্থান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন রসগোল্লার জন্মস্থান বাংলাদেশের বরিশাল,
আবার কেউ বলেন রসগোল্লার জন্ম উড়িষ্যায়, যাইহোক ২০১৭ সালের ১৪ ই নভেম্বর পশ্চিম বাংলা রসগোল্লার জি.
আই স্বীকৃ তি পায়।
কলকাতার বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস ১৮৮৬ সালে প্রথম নরম তু লতু লে স্পঞ্জ রসগোল্লার সৃষ্টি করেন।
তাকে রসগোল্লার কলম্বাস বলা হয়। পরবর্তীতে নবীন চন্দ্র দাসের পুত্র ভ্যাকু য়াম প্যাকেজিং সৃষ্টির মাধ্যমে
রসগোল্লাকে দেশের বাইরে জনপ্রিয় করে তোলেন। আজও বাগবাজারের রসগোল্লা জগৎ বিখ্যাত।
(২) পান্তুয়া - রানাঘাট , নদীয়া
রসগোল্লার মত পান্তুয়াও বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। নদীয়া জেলার রানাঘাট পান্তুয়া মিষ্টির জন্য বিখ্যাত,
এছাড়াও কালনা, কাটোয়াতেও ভাল পান্তুয়া পাওয়া যায়। পান্তুয়া সাধারণত ছানা,চিনি ও ঘি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়।
রানাঘাটের জগু ময়রা (যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিক) কে পান্তুয়ার জনক বলে মনে করা হয়। জগু ময়রার নামে দোকান
এখনও পর্যন্ত রয়েছে রানাঘাটে। তার পরবর্তী বংশধররা পান্তুয়ার ঐতিহ্য কে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তবে পান্তুয়াকে
বিখ্যাত করে তোলেন প্রভাত প্রামানিক, হরিদাস পালের মত ময়রারা।
রানাঘাটের পান্তুয়া
রানাঘাটের সব মিষ্টির দোকানে পান্তুয়া পাওয়া গেলেও প্রামাণিকদের বড়দা,মেজদা,ছোটদা এই দোকানগুলির পান্তুয়া
বিখ্যাত। রানাঘাটের পান্তুয়ার বাইরেটা শক্ত ভিতরটা নরম, একটু বেশিই খোয়া ক্ষীর ব্যবহার করা হয়। স্বাদটা নির্ভ র
করে ভাজার টেকনিকের উপর। তাই বাংলার সব জায়গাতেই পান্তুয়া পাওয়া গেলেও রানাঘাটের এই পান্তুয়ার স্বাদ
অন্য কোনও জায়গার পান্তুয়ার মধ্যে পাওয়া যায় না।
(৩) ল্যাংচা - শক্তিগড় , বর্ধমান , তারাপীঠ, বীরভূ ম।
ল্যাংচা এক ধরনের কালচে বাদামী রঙের লম্বাটে রসের মিষ্টি। বর্ধমানের শক্তিগড়ের ল্যাংচা সুবিখ্যাত। ময়দা,
ছানা, খোয়া ক্ষীর ও চিনি দিয়ে ল্যাংচা তৈরী করা হয়।
ল্যাংচা মিষ্টি
বর্ধমানের মহারাজা কোন এক ময়রাকে বলেন যে তিনি এক নতু ন ধরণের ভাজা মিষ্টি খেতে চান। তখন ঐ কারিগর
তাড়াতাড়ি এক নতু ন ধরনের মিষ্টি প্রস্তুত করেন। নতু ন মিষ্টিটি খেতে খুবই সুস্বাদু হয়। এই ভাবে ল্যাংচার জন্ম
হয়। ঐ নতু ন মিষ্টির করিগর ল্যাঙরা ছিলেন বলে মিষ্টির নাম হয় ল্যাংচা।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা
পরে ঐ মিষ্টির কারিগরকে মহারাজা শক্তিগড়ে জমি দেন মিষ্টির দোকান করার জন্য। তারপর থেকেই শক্তিগড়ের
ল্যাংচার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
আলাউদ্দিন হুশেন শাহর রাজত্বকালে গৌর মালদার রামকেলীতে এসেছিলেন মহাপ্রভু চৈতন্যদেব। বিশ্রাম
নিয়েছিলেন এক কদম গাছের নিচে, তখন গাছটি কদম ফু লে ভর্তি ছিল। এখানে তিনি রূপ সনাতন কে দীক্ষা
দেন। শোনা যায় এই ঘটনা কে স্মরনীয় করে রাখতে মালদার করিগড়েরা তৈরী করে রসকদম্ব বা রসকদম।
মানকরের কদমা
কদমা বাংলার একটি শুকনো মিষ্টি বিশেষ। বাংলায় অনেক পুরনো মিষ্টির মধ্যে কদমা, বাতাসা, নকু লদানা
অন্যতম। বাংলায় অতিথি আপ্যায়নে কদমা অনেক পুরনো রীতি। যদিও এখন আর এই মিষ্টির আগের
কৌলীন্যতা নেই। তবে পূজার কাজে এখনও বহুল ব্যবহার আছে। বিশেষত কালী পূজায় কদমার ব্যবহার বেশি।
দেখতে অনেকটা কদমফু ল আকারের এবং ভিতরটা ফাঁপা। উপর ও নিচ খানিক কমলালেবুর মতো চাপা।
ধবধবে সাদার প্রধানত তৈরি করা হয়। প্রয়োজন ভেদে এর আকারও বিভিন্ন। মূলত চিনি দিয়ে তৈরি হয় এই মিষ্টি।
মোয়া - জয়নগর , দক্ষিণ ২৪ পরঘনা।
জয়নগরের মোয়া
জয়নগরের মোয়া হল কনকচূ ড় ধানের খই, খেজুর গুড় ও গাওয়া ঘিয়ের তৈরী একটি অতি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগর শহর এই মিষ্টান্নটির জন্য খুব বিখ্যাত ।
জয়নগর শহরের পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ওরফে বুঁচকিবাবু এবং নিত্যগোপাল সরকারকে জয়নগরের মোয়ার বাণিজ্যিক
বিপণনের পথিকৃ ৎ বলে ধরা হয়।
জয়নগরের মোয়ার প্রধান উপাদান কনকচূ ড় ধানের খই, নলেন গুড় ও গাওয়া ঘি। এছাড়াও ক্ষীর, পেস্তা,
কাজুবাদাম, কিসমিস ও পোস্ত ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কু লপি, কাকদ্বীপ ও নামখানা
অঞ্চলের প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে কনকচূ ড় ধানের চাষ হয়। নলেন গুড়ের উৎস খেজুর গাছ। শীতকালে খেজুর
গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন শিউলিরা। সব চেয়ে উকৃ
ৎমানের
ষ্ট রস পাওয়া যায় জিরেন কাঠ অর্থাৎ যে খেজুর
গাছকে কয়েকদিন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে এমন গাছ থেকে। জিরেন কাঠ থেকে রস সংগ্রহ করে তিন দিন রাখা হয়।
তারপর সেই রস ঢিমে আঁচে জ্বাল দিয়ে তৈরী হয় নলেন গুড়।
সরপুরিয় সরভাজা - কৃ ষ্ণনগর , নদীয়া।
কৃ ষ্ণনগরের সরভাজা
সরভাজা হল কৃ ষ্ণনগরের একটি বিখ্যাত মিষ্টি। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সুনাম বাংলা তথা ভারতীয়
উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় যেমন ভোগ, আমিষ খাওয়া রেওয়াজ, তেমনই জগদ্ধাত্রী
পুজো মানেই হরেক রকম মিষ্টি আর কৃ ষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোতে সরভাজা চাহিদা অন্য সময়ের থেকে বেশি
থাকে।
সরভাজা তৈরি করতে প্রয়োজন হয় ময়দা, দুধের সর, চিনি (গুঁড়ো করা), দুধ, বেকিং পাউডার, ঘি এবং মেওয়া।
কৃ ষ্ণনগরের সরপুরিয়া
সরপুরিয়া বাংলার এক জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। কৃ ষ্ণনগরের সরপুরিয়া বিখ্যাত।
খাঁটি দুধ জ্বাল দিলে তাতে ঘন সর পড়ে। বারে বারে জ্বাল দিয়ে তার থেকে সর তু লে একের পরে এক স্তরে সেই
সরকে রাখা হয়। তার পর সেই মোটা সরকে ঘিয়ে ভাজা হয়। তার উপর আলমন্ড, খোয়া ক্ষীর ও এলাচ ছড়িয়ে
তার উপর আর এক স্তর ভাজা সর রাখা হয়। তারপর তাকে চিনি মেশানো দুধে রাখা হয়।
লালদই - নবদ্বীপ , নদীয়া।
নবদ্বীপের লাল দই বা ক্ষীর দই বা চাক্কু দই বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। দই বা দধি মিষ্টান্ন পরিবারের কু লীন
সদস্য। দই সাধারনত সাদা হলেও লাল দই একটি স্বতন্ত্র উপাদেয় মিষ্টান্ন।
নদিয়ার নবদ্বীপের লাল দই খুবই জনপ্রিয়। ১৯৩০ সালের দিকে নবদ্বীপের জনৈক কালিপদ মোদক, মতান্তরে কালী
ঘোষ, এই দই প্রথম প্রস্তুত করেন। ১৫০ বছরেরও প্রাচীন পাঁচু র মিষ্টির দোকান “ লক্ষ্মী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার”
অন্যতম বিখ্যাত লাল দইয়ের দোকান। দই তৈরি করার পর দশদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
সাদা বোঁদে
কামারপুকু রের সাদা বোঁদে পশ্চিমবঙ্গের স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। ঠাকু র শ্রীরামকৃ ষ্ণ পরমহংসদেবের অত্যন্ত
প্রিয় ছিল এই মিষ্টান্ন। প্রচলিত বোঁদের সাথে এই বোঁদের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
কামারপুকু রের সাদা বোঁদের প্রধান উপাদান হল রমা কলাইয়ের বেসন এবং আতপ চালের গুঁড়ো। তার সাথে
লাগে গাওয়া ঘি বা বনস্পতি ঘি ও চিনির রস। রমা কলাই বা রম্ভা কলাই বলতে বরবটির বীজকে
বোঝানো হয়। সেই জন্য রমা কলাইয়ের বেসনকে বরবটির বেসনও বলা হয়। অতীতে কামারপুকু রের
স্থানীয় চাষীরাই বরবটি চাষ করে পাকা বরবটির বীজের জোগান দিতেন। সেই বরবটির বীজ অর্থাৎ রমা
কলাইকে প্রথমে জলে ধুয়ে তারপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া হত। এর পর সেই শুকনো কলাইকে পিষে বেসন তৈরি
করা হত। বর্ত মানে কামারপুকু রের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা কলকাতার বড়বাজার থেকে রমা কলাইয়ের বেসন আনয়ন
করেন। আতপ চালের ক্ষেত্রে মেশিনে গুঁড়ো করা আতপ চালের থেকে ঢেঁ কিতে গুঁড়ো করা আতপ চাল শ্রেয়
কারণ তাতে স্বাদ বেশী হয়। অতীতে সাদা বোঁদে ভাজা হত গাওয়া ঘিতে। কিন্তু খরচে পোষাতে না পেরে
অধিকাংশ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বনস্পতি ঘি বা ডালডা ব্যবহার করেন। কোন কৃ ত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয় না।
কাজু বরফী - কাঁথী , পূর্ব মেদনীপুর।
কাজু বরফী
মুগের জিলিপি --কেশপুর ও ডেবরা , পশ্চিম মেদিনীপুর।
কেশপুরের মুগের জিলিপী
মুগের জিলিপি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে এক জনপ্রিয় মিষ্টি। সাধারণ জিলিপি তৈরিতে যে উপাদান ব্যবহার
করা হয় তার পরিবর্তে এই জিলিপিতে মুগের ব্যবহার মিষ্টিতে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে। মুগডাল উপাদানের জন্য
এই মিষ্টি সাধারণ জিলিপি থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি মিষ্টিতে পরিণত হয়েছে। মুগের জিলিপির প্রধান উপকরণ
মুগ ডাল, ঘি ও চিনি।
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল অঞ্চল বা কেশপুর ও ডেবরা অঞ্চল, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার
পাঁশকু ড়া অঞ্চল, ও হুগলী জেলার চন্দননগরের মুগের জিলিপি বিখ্যাত।
বাবরসা --- ক্ষীরপাই , পশ্চিম মেদিনীপুর।
ক্ষীরপাই এর বাবরসা
বাবরসা বা বাবরশা হল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার (বর্ত মানে ঝাড়গ্রাম জেলা) ক্ষীরপাই এলাকার একটি
মিষ্টি। এই মিষ্টির উপত্তি
ৎস্থান হল ক্ষীরপাই।
মূলত ময়দা, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয় বাবরসা। তবে এখন এই মাগ্যিগণ্ডার বাজারে ঘিয়ের বদলে ডালডাতেই ভাজা
হয় এই মিষ্টি। ছাঁচে ফেলে ভেজে রাখা হয়। এর পর খাওয়ার সময় তাতে রস ঢেলে পরিবেশন করা হয়। আগে
অবশ্য মধুতে ডু বিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল।
জানা যায়, ১৭৪০-১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় বর্গিরা ক্ষীরপাই শহর একাধিক বার আক্রমণ করে। বর্গিদের
আক্রমণ থেকে বাঁচতে এলাকা ছাড়তে শুরু করেন বাসিন্দারা। সেই সময় এডওয়ার্ড বাবরশ নামে এক সাহেব
বর্গিদের হঠিয়ে দেন। স্বস্তি ফেরে শহরে। এই ঘটনার পর কৃ তজ্ঞতাস্বরূপ স্থানীয় এক মিষ্টি ব্যবসায়ী ‘ বাবরসা’ নামে
একটি খাবার তৈরি করে এডওয়ার্ড কে উপহার দেন। সেই থেকেই শহরের মানুষের পছন্দের মিষ্টির তালিকায় স্থান
করে নিয়েছে বাবরসা।
মালাই
রসমালাই ---রামপুরহাট , বীরভূ ম।
রসমালাই বঙ্গ তথা পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টান্ন খাদ্য। এটি দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় একটি মিষ্টান। ছোট ছোট আকারের
রসগোল্লাকে চিনির সেরায় ভিজিয়ে তার উপর জ্বাল-দেওয়া ঘন মিষ্টি দুধ ঢেলে রসমালাই বানানো হয়। বাংলাই
রসমালাইয়ের উপত্তি
ৎস্থ ল। দাবী করা হয় ১৯৩০ সালে এটি রসগোল্লার থেকে উন্নত করে রসমালাই নামকরণ
করে, বাঙালি ময়রা কৃ ষ্ণ চন্দ্র দাস প্রথম রসমালাই তৈরি করেন। কিন্তু এই দাবীর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই বা এই
দাবীটি যাচাই করা অসম্ভব।
রায়গঞ্জের ছানার পায়েস
১৯ ছানার পায়েস--- রায়গঞ্জ , দক্ষিন দিনাচপুর।
বেলাকোবার চমচম
বেলাকোবার চমচম পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের
মধ্যে এক অতি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। বেলাকোবার চমচম এক বিশেষ ধরনের মিষ্টি। এটি সাধারণ চমচম
থেকে আলাদা। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির বেলাকোবা নামক স্থানে এই বিশেষ প্রকৃ তির চমচম প্রথম তৈরি হয়
বলেই এই মিষ্টি বেলাকোবার চমচম নামে প্রসিদ্ধ। এটি ছানার তৈরি একপ্রকার মিষ্টি জাতীয় খাবার।
বেলাকোবার চমচমের প্রধান উপাদান হল ছানা, ময়দা, চিনির রস ও খোয়া ক্ষীর। পোড়াবাড়ির চমচমের ঘরানার
সাথে বেলাকোবার চমচমের ঘরানার কতকগুলি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পোড়াবাড়ির চমচমের বৈশিষ্ট হলো
কড়াপাক। কিন্তু, বেলাকোবায় চমচমে কড়াপাকের সাথে যুক্ত হয় অধিক পরিমাণে ক্ষীর। পেল্লাই আকারের
গোলাপি চমচমে বরফের কু চির মত ছড়িয়ে দেওয়া হয় ক্ষীরের দানা। লোক মুখে বেলাকোবার চমচম নামে ছড়িয়ে
পড়লো সেই মিষ্টান্ন।
নিখুঁতি (বানানভেদে নিখুতি বা নিকু তি) বাংলার এক অতি জনপ্রিয় মিষ্টি। গঠনগত দিক থেকে নিঁখুতি একটি
পান্তুয়া জাতীয় মিষ্টি। এটি আকৃ তিতে লম্বাটে, খানিকটা ল্যাংচার মত। এর বাইরেটা শক্ত কিন্তু ভেতরটা নরম।
পরিবেশনের সময় নিখুঁতির উপর হালকা গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নিখুঁতির পায়েসও ভীষণ
জনপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিপুরের নিখুঁতি অতি বিখ্যাত। শান্তিপুর ছাড়া কৃ ষ্ণনগর, বাঁকু ড়া ও পুরুলিয়ার নিখুঁতিও
বিখ্যাত। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নদিয়া জেলার পর্যটন উন্নয়নের জন্য শান্তিপুরের নিখুঁতিকে পর্যটনের
অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে তু লে ধরে।
ছাতনার প্যাড়া
জলভরা --- তালশাঁস , চন্দননগর।
চন্দননগরের জলভরা
জলভরা সন্দেশ তালশাঁস আকৃ তির কড়াপাকের এক বিশেষ সন্দেশ। হুগলি জেলার সূর্যকু মার মোদক এর
আবিষ্কর্তা।
এই সন্দেশ বানাবার মূল উপাদান ছানা, চিনি, গোলাপজল ও শীতকালে নলেন গুড়। সূর্য মোদকের দোকানে
গোলাপজল আসে নিয়ম মেনে কনৌজ থেকে। কিছুটা সন্দেশ প্রথমে ছাঁচের মধ্যে দিয়ে আঙু লের চাপে একটা গর্ত
করে নেওয়া হয়। সেই গর্তে গোলাপজল ঢেলে আবার সন্দেশ দিয়ে বাকিটা ঢেকে ছাঁচের মুখ বন্ধ করে দিতে হয়।
এভাবেই জলভরা সন্দেশ তৈরী করা হয়।
ছানার জিলাপি --- অগ্রদ্বীপ(কাটোয়া), বর্ধমান।
ছানার জিলিপি
ছানার জিলাপি বাংলার মিষ্টির মধ্যে অন্যতম। নদিয়ার মুড়াগাছা অঞ্চলে এই মিষ্টান্নটির উত্পত্তি। কবিকঙ্কনের
চন্ডিমঙ্গল ছানার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই ছানার বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে এটি অন্যতম কু লীন মিষ্টান্ন। পান্তুয়া গোত্রের
এই মিষ্টিটি নদিয়ার মুড়াগাছা ছাড়াও মেদিনীপুরের মেচেদা ও পাশকু ড়ার সুনাম আছে। এছাড়াও কলকাতার
ভূ পতি রায় দোকানের ছানার জিলাপি বিখ্যাত ছিল। বর্ত মানে ভূ পতি রায়ের দোকান আর নেই।
ক্ষীরতোয়া ভারতের ত্রিপুরার একটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাদ্য। ছোট ছোট লম্বাটে আকারের রসগোল্লাকে রসে ভিজিয়ে
তার উপর জ্বাল-দেওয়া ঘন ক্ষীরের মধ্যে ঢেলে ক্ষীরতোয়া বানানো হয়। ত্রিপুরার ক্ষীরতোয়ার উপত্তি
ৎস্থ ল।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগরের ক্ষীরতোয়া খুবই বিখ্যাত।
মণ্ডা গোল চ্যাপ্টা আকৃ তির বাঙালি মিষ্টান্ন। দেখতে অনেকটা পেঁড়ার মত। "মিঠাই-মণ্ডা" একটি বহুল প্রচলিত
শব্দবন্ধ। কড়া পাকের সাধারণতঃ চিনি মেশানো ক্ষীরের গরম নরম অবস্থায় গোল তাল পাকানো মণ্ডকে পরিষ্কার
শক্ত কোন তলের উপর বিছানো কাপড়ের উপর হাতদিয়ে ছুঁ ড়ে আছাড় মেরে সাধারণতঃ চ্যাপ্টা করার কাজটি
করা হয়। পরে ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যায় ও তখন কাপড় থেকে খুলে নেওয়া হয়। তাই যেদিকটা নীচে (কাপড়ে
লেগে) থাকে সেটা পুরো সমতল হয়, আর অন্য দিকটা একটু উত্তল আর কিনারা একটু ফাটা ফাটা হয় । ক্ষীরের
রঙের উপর নির্ভ র করে মণ্ডা সাদা বা ঈষৎ হাল্কা খয়েরি রঙের হয়। (সম্ভবত চিনিকে বেশী গরম করলে পুড়ে বা
ক্যারামেলাইজ হয়ে খয়েরী রং ধরে)। মণ্ডা সাধারণতঃ কাগজে মুড়ে বিক্রি করা হয়।
হরির লুঠ ইত্যাদি বাঙালি হিন্দু ধর্মীয় লোকাচারে মণ্ডা বহুল ব্যবহৃত হয়।
ফু লবাড়ির লালমোহন
মোতিচু ড়
লাড্ডু শব্দটি সংস্কৃ ত শব্দ লাড্ডু কা বা লাত্তিকা থেকে এসেছে যার অর্থ ছোট বল। আর হিন্দিতে মতি শব্দের অর্থ
মুক্তা। চু র অর্থ ভাঙ্গা বা চূ র্ন-বিচু র্ন করা। অর্থাৎ মতিচু র মানে মুক্তার ভাঙ্গা গুঁড়া। ছোট ছোট মুক্তা দানার মতো
বুন্দিয়া বানিয়ে সেগুলোকে একসাথে হাতে চেপে তৈরি হয় মতিচু রের লাড্ডু হয়। আর এইজন্যই এমন চমকার
ৎকা র
নামের নামের উপত্তি।
ৎম তিচু রের লাড্ডু ভারত উপমহাদেশের একটি প্রাচীন মিষ্টি। এর বয়স দুই হাজার বছরেরও
বেশি। ধারণা করা হয় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে বিহারে এর উপত্তি
ৎহ য়।
৩৩ দরবেশ - বর্ধমান
দরবেস (লাড্ডু )
দরবেশ বাংলার তথা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এটি মূলত বোঁদে থেকে প্রস্তুত লাড্ডু । এই
লাড্ডু তে লাল, হলুদ ও সাদা এই তিনি রঙের বোঁদে ব্যবহার করা হত । কথিত আছে দরবেশদের আলখাল্লা নানা
রঙের হত এবং যেহেতু এই লাড্ডু ও নানা রঙের বোঁদে দিয়ে প্রস্তুত হত তাই এর নাম রাখা হয় দরবেশ। বর্ত মানে
দরবেশ সধারণত লাল ও হলুদ রঙের বোঁদে দিয়েই তৈরী করা হয়।
গুপো সন্দেশ - গুপ্তীপাড়া , পানিহাটি
গুপো সন্দেশ
গুপো সন্দেশ পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। গুপো সন্দেশের বৈশিষ্ট্য হল যে এটি শুধুমাত্র গরুর দুধের
ছানা থেকেই তৈরী হয়।গুপো সন্দেশ হল মাখা সন্দেশ থেকে প্রস্তুত এবং পাশাপাশি চেপে লাগানো এক জোড়া
গোলাকৃ তি সন্দেশ। গুপো সন্দেশকে বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড মিষ্টি বলে মনে করা হয়।
কথিত আছে যে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়াতেই সন্দেশের জন্ম। এখানেই প্রথম তৈরী হয় সন্দেশের মিশ্রণ যা
মাখা সন্দেশ নামে পরিচিত।পরে সেই মাখা সন্দেশকেই আকার দিয়ে তৈরী হয় গুপো সন্দেশ। গুপো সন্দেশ
কালক্রমে কলকাতার অভিজাতদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। উৎসবে অনুষ্ঠানে কলকাতার অভিজাতরা গুপ্তিপাড়ায়
ছুটতেন গুপো সন্দেশ কিনতে।ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে পানিহাটির গুপো সন্দেশ কলকাতায় খুব জনপ্রিয়
হয়।
এই লাড্ডু টি মানভূ ম তথা পঞ্চকোট রাজ-পরিবারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। এটা অন্য কোথাও মেলে না।
কাশীপুরের হাতে গোনা দু-একটি দোকানে এই মিঠাই তৈরি হয়। এর রেসিপি কাশীপুর এলাকাতে পুরনো দিনের
কয়েকজন শুধু জানেন।
কোলকাতার (পশ্চিমবঙ্গের) সব বিখ্যাত মিষ্টান্নের একটা তালিকা করে দিতে পারবেন কি?
উত্তর দিন
অনুসরণ
·
4
অনু রোধ
1 টি উত্তর
কৌশিক রায়
, কলকাতা এ/তে থাকেন
22 অক্টোবর, 2019 আপডেট হয়েছে ·
Salma Jahangir
, কলকাতা এ/তে থাকেন (1964-বর্ত মান),
Pradip Sinha
, কলকাতা এ/তে থাকেন (2007-বর্ত মান),
জয়ন্ত সাহা
, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত এ/তে থাকেন (1993-বর্ত মান),
Barsha Rana
, কলকাতা এ থেকেছেন (1992-2015) এবং
Partha Moulik
, কলকাতা এ/তে থাকেন (1976-বর্ত মান) আপভোট করেছেন
১) রসগোল্লা- বাগবাজার, কলকাতা
রসগোল্লা সাদা রঙের এক প্রকার ছানার মিষ্টি। এটি চিনি বা গুড় দিয়ে তৈরি হয়। সবার কাছেই রসগোল্লা একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। ছানা (তার মধ্যে
অনেক সময় সু জির পু র দেওয়া হয়) পাকিয়ে গরম রসে ডু বিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়। রসগোল্লা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার বিরোধ বহু দিনের।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রসগোল্লার জিআই ট্যাগ লাভ করে। ফলে রসগোল্লার উৎপত্তি যে বাংলায় তা প্রতিষ্ঠা পায়।
বর্ধমানের সীতাভোগ বাংলার এক সু প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। এটা অনেকটা বাসমতী চালের ভাতের মত দেখতে হয়।
বর্ধমানের মিহিদানা বাংলার আর এক সু প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন হিসেবে স্বীকৃত। মিহিদানার পেটেন্ট আইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গ
সরকারকে প্রদান করা হয়েছে।
ল্যাংচা এক রকমের রসের মিষ্টি। এর রঙ হয় কালচে বাদামী। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিগড়ের ল্যাংচা বিখ্যাত। এর প্রধান উপকরণ ময়দা, ছানা, খোয়া,
চিনি।
কদমা বাংলার একটি শুকনো মিষ্টি বিশেষ। বাংলায় অনেক পু রনো মিষ্টির মধ্যে কদমা, বাতাসা, নকুলদানা অন্যতম। বাংলায় অতিথি আপ্যায়নে
কদমা অনেক পু রনো রীতি। যদিও এখন আর এই মিষ্টির আগের কৌলীন্যতা নেই। তবে পূ জার কাজে এখনও বহুল ব্যবহার আছে। বিশেষত কালী
পূ জায় কদমার ব্যবহার বেশি।
সরভাজা কৃষ্ণনগরের একটি বিখ্যাত মিষ্টি। দুধের সর ও ঘি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির সু নাম বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
দুর্গাপু জো, কালীপু জোয় যেমন ভোগ, আমিষ খাওয়া রেওয়াজ, তেমনই জগদ্ধাত্রী পু জো মানেই হরেক রকম মিষ্টি আর কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী
পু জোতে সরভাজা চাহিদা অন্য সময়ের থেকে বেশি থাকে।
কৃষ্ণনগরের সরপু রিয়া বিখ্যাত ও জনপ্রিয় এক মিষ্টান্ন। খাঁটি দুধ জ্বাল দিলে তাতে ঘন সর পড়ে। বারে বারে জ্বাল দিয়ে তার থেকে সর তুলে
একের পরে এক স্তরে সেই সরকে রাখা হয়। তার পর সেই মোটা সরকে ঘিয়ে ভাজা হয়। তার উপর আলমন্ড, খোয়া ক্ষীর ও এলাচ ছড়িয়ে তার
উপর আর এক স্তর ভাজা সর রাখা হয়। তারপর তাকে চিনি মেশানো দুধে রাখা হয়।
৭) লালদই- নবদ্বীপ, নদীয়া
লাল দই বা ক্ষীর দই বা চাক্কু দই বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। দই বা দধি মিষ্টান্ন পরিবারের কুলীন সদস্য। দই সাধারনত সাদা হলেও লাল দই
একটি স্বতন্ত্র উপাদেয় মিষ্টান্ন। ১৯৩০ সালের দিকে নবদ্বীপের জনৈক কালিপদ মোদক, মতান্তরে কালী ঘোষ, এই দই প্রথম প্রস্তুত করেন।
১৫০ বছরেরও প্রাচীন পাঁচুর মিষ্টির দোকান 'লক্ষ্মী নারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার' অন্যতম বিখ্যাত লাল দইয়ের দোকান। দই তৈরি করার পর দশদিন
পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
৮) রসকদম্ব- মালদহ
রসকদম্ব বা রসকদম বাংলার এক বিখ্যাত মিষ্টি। রসকদম্বের ভেতরে থাকে ছোট একটি রসগোল্লা আর তার উপর থাকে ক্ষীরের পু রু স্তর। তারও
উপরে থাকে চিনি মাখানো পোস্ত দানা। এতে রসকদম্বকে অবিকল কদম ফুলের মত দেখতে লাগে। এটি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ঐতিহ্যবাহী
মিষ্টি। রসকদম্বের মূ ল উপাদান ছানা, ক্ষীর, চিনি ও পোস্ত। প্রথমে ছানা দিয়ে মাঝারি থেকে ছোট আকারের রসগোল্লা তৈরী করা হয়। তারপর
দানাদার তৈরী করার মত করে রসগোল্লা থেকে বাড়তি রস ঝেড়ে ফেলা হয়। এই রসগোল্লায় লাল রঙ দেওয়া হয় ও ভ্যানিলা এসেন্স যোগ করা
হয়। তারপর রসগোল্লাকে গুঁড়ো খোয়া ক্ষীরের আস্তরণে ঢেকে ফেলা হয়। সব শেষে মাঝারি রকমের ভাজা পোস্তর একটি প্রলেপ দিয়ে
মিষ্টিটাকে কদম ফুলের মত দেখতে করা হয়। ফ্রিজে না রাখলেও এই মিষ্টি সাত দিন পর্যন্ত টাটকা থাকে। পোস্তর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক
মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক পোস্তর পরিবর্তে চিনির দানা ব্যবহার করেন। কেউ কেউ পোস্তর পরিবর্তে ক্ষীরের গুঁড়ো ব্যবহার করেন।
মোরব্বা হলো খু ব ঘন চিনির রসে ডোবানো একপ্রকার মিষ্টান্ন যা সাধারণত কোনো সবজিকে বিশেষভাবে জারিত করে প্রস্তুত হয়। যেমন: পেপের
মোরব্বা, কুমড়োর মোরব্বা, পটলের মোরব্বা, শতমূ লীর মোরব্বা ইত্যাদি।
লালবাগের ছানাবড়া বাংলার মিষ্টির মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত। মু র্শিদাবাদ জেলার লালবাগ শহরে এই মিষ্টির আবির্ভ াব। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর
আগে এই মিষ্টি আবিষ্কার হয় বলে মনে করা হয়। লালবাগের এক মিষ্টির দোকানের মালিক ছিলেন নিমাই মণ্ডল। তার হাত ধরেই ছানাবড়ার পথ
চলা শুরু। তাঁর দোকান থেকেই নবাবের প্রাসাদে নিয়মিত ছানাবড়া সরবরাহ করা হতো। রুপোর থালায় এক মণ বা দেড় মণ সাইজের পেল্লায়
ছানাবড়া সাজিয়ে নবাবরা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতেন এবং এতে অতিথিদের চোখ নাকি ছানাবড়া-ই হয়ে যেত। সেই থেকেই চোখ ছানাবড়া
কথাটার উদ্ভব। আগে এই মিষ্টিটি মু র্শিদাবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও খাগড়ার সোনাপট্টি এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী পটল সাহা বা পটল ওস্তাদের
হাত ধরেই ছানাবড়া মু র্শিদাবাদের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কাশিমবাজারের রাজা শ্রী মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী ছিলেন ছানাবড়ার পৃ ষ্ঠপোষক।
কামারপু কুরের সাদা বোঁদে পশ্চিমবঙ্গের স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অত্যন্ত প্রিয় ছিল এই মিষ্টান্ন। প্রচলিত
বোঁদের সাথে এই বোঁদের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কামারপু কুরের সাদা বোঁদের প্রধান উপাদান রমা কলাইয়ের বেসন ও আতপ চালের গুঁড়ো।
তার সাথে লাগে গাওয়া ঘি বা বনস্পতি ও চিনির রস। রমা কলাই বা রম্ভা কলাই বলতে বরবটির বীজকে বোঝানো হয়। সেই জন্য রমা কলাইয়ের
বেসনকে বরবটির বেসনও বলে। অতীতে কামারপু কুরের স্থানীয় চাষীরাই বরবটি চাষ করে পাকা বরবটির বীজের জোগান দিতেন। সেই বরবটির
বীজ অর্থাৎ রমা কলাইকে প্রথমে জলে ধু য়ে তারপর রোদে শুকিয়ে নেওয়া হত। এর পর সেই শুকনো কলাইকে পিষে বেসন তৈরি করা হত।
বর্ত মানে কামারপু কুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা কলকাতার বড়বাজার থেকে রমা কলাইয়ের বেসন আনান। আতপ চালের ক্ষেত্রে মেশিনে গুঁড়ো করা
আতপ চালের থেকে ঢেঁ কিতে গুঁড়ো করা আতপ চাল শ্রেয় কারণ, তাতে স্বাদ বেশী হয়। অতীতে সাদা বোঁদে ভাজা হত গাওয়া ঘিতে। কিন্তু
খরচে পোষাতে না পেরে অধিকাংশ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বনস্পতি ঘি বা ডালডা ব্যবহার করেন। কোন কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয় না।
মু গের জিলিপি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে এক জনপ্রিয় মিষ্টি। সাধারণ জিলিপি তৈরিতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয় তার পরিবর্তে এই
জিলিপিতে মু গের ব্যবহার মিষ্টিতে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। মু গডাল উপাদানের জন্য এই মিষ্টি সাধারণ জিলিপি থেকে সম্পূ র্ণ পৃ থক একটি
মিষ্টিতে পরিণত হয়েছে। মু গের জিলিপির প্রধান উপকরণ মু গ ডাল, ঘি ও চিনি।
মূ লত ময়দা, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয় বাবরসা। তবে এখন এই মাগ্যিগণ্ডার বাজারে ঘিয়ের বদলে ডালডাতেই ভাজা হয় এই মিষ্টি। ছাঁচে ফেলে
ভেজে রাখা হয়। এর পর খাওয়ার সময় তাতে রস ঢেলে পরিবেশন করা হয়। আগে অবশ্য মধু তে ডু বিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। জানা যায়,
১৭৪০-১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় বর্গিরা একাধিকবার ক্ষীরপাই শহর আক্রমণ করে। বর্গিদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এলাকা ছাড়তে
শুরু করেন বাসিন্দারা। সেই সময় এডওয়ার্ড বাবরশ নামে এক সাহেব বর্গিদের হঠিয়ে দেন। স্বস্তি ফেরে শহরে। এই ঘটনার পর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ
স্থানীয় এক মিষ্টি ব্যবসায়ী ‘বাবরশা’ নামে একটি খাবার তৈরি করে এডওয়ার্ড কে উপহার দেন। সেই থেকেই শহরের মানুষের পছন্দের মিষ্টির
তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাবরসা।
রসমালাই বাংলার অতি বিখ্যাত মিষ্টান্ন। ছোট ছোট আকারের রসগোল্লাকে চিনির রসে ভিজিয়ে তার ওপর জ্বাল-দেওয়া ঘন মিষ্টি দুধ ঢেলে
রসমালাই বানানো হয়। বাংলাই রসমালাইয়ের উৎপত্তিস্থল। দাবী করা হয়, ১৯৩০ সালে রসগোল্লার থেকেও উন্নততর করে এই মিষ্টির নাম
রসমালাই রাখা হয়। বাঙালি ময়রা কৃষ্ণচন্দ্র দাস প্রথম রসমালাই তৈরি করেন। তবে এই দাবির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ছানাকে ভালো করে বেটে নিতে হবে। এরপর বেটে নেওয়া ছানার সাথে ঘি, ময়দা, সোডা, গুড়, এলাচ গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া হয়।
এরপর মিশ্রণটিকে ভাল করে মেখে হাতের চাপে গোল গোল বল বানিয়ে নিয়ে ডোবা তেলে ভেজে গরম রসে ফেলা হয়। ভাল করে রস ঢু কে
গেলে ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করা হয়।
বেলাকোবার চমচম পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে এক অতি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। বেলাকোবার চমচম এক বিশেষ ধরনের মিষ্টি। এটি
সাধারণ চমচম থেকে আলাদা। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির বেলাকোবা নামক স্থানে এই বিশেষ প্রকৃতির চমচম প্রথম তৈরি হয় বলেই এই মিষ্টি
বেলাকোবার চমচম নামে প্রসিদ্ধ। এটি ছানার তৈরি একপ্রকার মিষ্টি জাতীয় খাবার। বেলাকোবার চমচমের প্রধান উপাদান ছানা, ময়দা, চিনির রস
ও খোয়া ক্ষীর। পোড়াবাড়ির চমচমের ঘরানার সাথে বেলাকোবার চমচমের ঘরানার কতকগুলি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পোড়াবাড়ির চমচমের
বৈশিষ্ট হলো কড়াপাক। কিন্তু, বেলাকোবায় চমচমে কড়াপাকের সাথে যুক্ত হয় অধিক পরিমাণে ক্ষীর। পেল্লাই আকারের গোলাপি চমচমে বরফের
কুচির মত ছড়িয়ে দেওয়া হয় ক্ষীরের দানা।
জলভরা সন্দেশ তালশাঁস আকৃতির কড়াপাকের এক বিশেষ সন্দেশ। হুগলি জেলার সূ র্যকুমার মোদক এই মিষ্টির আবিষ্কর্ত া। এই সন্দেশ বানানোর
মূ ল উপাদান ছানা, চিনি, গোলাপজল ও শীতকালে নলেন গুড়। সূ র্য মোদকের দোকানে গোলাপজল আসে নিয়ম মেনে কনৌজ থেকে। কিছু টা
সন্দেশ প্রথমে ছাঁচের মধ্যে দিয়ে আঙু লের চাপে একটা গর্ত করে নেওয়া হয়। সেই গর্তে গোলাপজল ঢেলে আবার সন্দেশ দিয়ে বাকিটা ঢেকে
ছাঁচের মু খ বন্ধ করে দিতে হয়। এভাবেই জলভরা সন্দেশ তৈরী করা হয়।
ছানার জিলিপি বাংলার মিষ্টির মধ্যে অন্যতম। নদীয়ার মু ড়াগাছা অঞ্চলে এই মিষ্টান্নটির উত্পত্তি। কবিকঙ্কনের 'চন্ডীমঙ্গল'-এ ছানার উল্লেখ পাওয়া
যায়। সেই ছানার বিভিন্ন মিষ্টির মধ্যে এটি অন্যতম কুলীন মিষ্টান্ন। পান্তুয়া গোত্রের এই মিষ্টিটি নদীয়ার মু ড়াগাছা ছাড়াও মেদিনীপু রের মেচেদা ও
পাশকুড়ার পাওয়া যায়। এছাড়াও কলকাতার ভূপতি রায়ের দোকানের ছানার জিলিপি বিখ্যাত ছিল। বর্ত মানে ভূপতি রায়ের দোকান আর নেই।
২৯) কানসাট- মালদহ
মালদহের কানসাট বাংলার আশ্চর্য মিষ্টান্নের অন্যতম। মালদহের আমের পরই জেলার বিখ্যাত নাম হিসাবে কানসাটের নাম আসে। বর্ত মান
বাংলাদেশে এই নামে একটি জনপদও আছে। বাংলাদেশের শিবগঞ্জ জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ সাহা এই মিষ্টির উদ্ভাবক। পরে তার
পু ত্র বিজয় কুমার সাহা মালদায় কানসাটের যাত্রা শুরু করেন।
দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে ওপার বাংলার শিবগঞ্জ জেলায় কানসাট অঞ্চল থেকে দলে দলে মিষ্টি কারিগররা মালদায় চলে আসেন। কানসাটে
প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ সাহার পু ত্র বিজয় কুমার সাহা বাবার শেখানো পথে এপারে এসে বাংলার মালদহে এসে কানসাটের যাত্রা শুরু
করেন। কানসাটের উপাদান ভালো ক্ষীর হলেও ছানার গুণমানের ওপরেও এর স্বাদ নির্ভ র করে। ভাল করে ঠিক ঠাক জাল হলে সেই জালের
উপরে ভাজা ক্ষীর বা খোয়া ক্ষীর ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হয় কানসাট। ঠিক মতন জাল দেওয়ার ওপরই নির্ভ রকরে মিষ্টির ভেতরে কতটা মৌমাছির
চাকের মতো চাক দেখা যাবে। আর জাল দেওয়ার ভাল-মন্দ নির্ভ র করে আঁচের উপর। সাহাদের বিখ্যাত কানসাট এই আঁচের অভিজ্ঞতার
ওপরেই স্বাদ তৈরী করে মন জয় করেছে। তবে পু রনো বা বাসি হলেই এর আসল স্বাদ হারিয়ে যাবে।
মাদারিহাটের কমলাভোগ পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টির মধ্যে অন্যতম। রসগোল্লার থেকে আকারে সামান্য বড় কমলাভোগ নামের কারণ এই মিষ্টিতেও
কমলালেবু ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রচলিত ফল মিশিয়ে বা ফলকেও ছানার সাথে ব্যবহার করে যে সকল মিষ্টি তৈরী করা হয়, তাদের
মধ্যে কমলাভোগের সমাদর আছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে ডু য়ার্স এবং তরাই অঞ্চল থেকে এই মিষ্টির পথ চলা। কলকাতার ভীমচন্দ্র নাগ রস
জাতীয় মিষ্টির মধ্যে কমলাভোগের সু নাম আছে। জি আই ট্যাগের জন্য কমলাভোগের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
'লাড্ডু' শব্দটি সংস্কৃত শব্দ 'লাড্ডুকা' বা 'লাত্তিকা' থেকে এসেছে যার অর্থ 'ছোট বল'। আর হিন্দিতে 'মতি' শব্দের অর্থ 'মু ক্তা'। 'চুর' অর্থ
'ভাঙা' বা 'চূর্ন-বিচুর্ন' করা। অর্থাৎ 'মতিচুর' মানে 'মু ক্তার ভাঙা গুঁড়া'। ছোট ছোট মু ক্তা দানার মতো বু ন্দিয়া বানিয়ে সেগুলোকে একসাথে
হাতে চেপে তৈরি হয় মতিচুরের লাড্ডু। আর এইজন্যই এমন চমৎকার নামের উৎপত্তি। মতিচুরের লাড্ডু ভারত উপমহাদেশের একটি প্রাচীন
মিষ্টি। এর বয়স দু'হাজার বছরেরও বেশি। মনে করা হয়, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে বিহারে এই মিষ্টির উৎপত্তি হয়।
৩২) দরবেশ-বর্ধমান
দরবেশ বাংলার তথা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এটি মূ লত বোঁদে থেকে তৈরি হওয়া লাড্ডু। এই লাড্ডুতে লাল, হলু দ ও
সাদা এই তিন রঙের বোঁদে ব্যবহার করা হত। দরবেশদের আলখাল্লা নানা রঙের হয়ে থাকে। এখন যেহেতু এই লাড্ডুও নানা রঙের বোঁদে দিয়ে
তৈরি হত, তাই এর নাম রাখা হয় দরবেশ। বর্ত মানে দরবেশ সধারণত লাল ও হলু দ রঙের বোঁদে দিয়েই তৈরি করা হয়।
গুপো সন্দেশ পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় মিষ্টি। গুপো সন্দেশের বৈশিষ্ট্য হল যে এটি শুধু মাত্র গরুর দুধের ছানা থেকেই তৈরি হয়। গুপো
সন্দেশ হল মাখা সন্দেশ থেকে প্রস্তুত এবং পাশাপাশি চেপে লাগানো এক জোড়া গোলাকৃতি সন্দেশ। গুপো সন্দেশকে বাংলার প্রথম ব্র্যান্ডেড
মিষ্টি বলে মনে করা হয়।
কথিত আছে, হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়াতেই সন্দেশের জন্ম। এখানেই প্রথম তৈরি হয় সন্দেশের মিশ্রণ, যা মাখা সন্দেশ নামে পরিচিত। পরে সেই
মাখা সন্দেশকেই আকার দিয়ে তৈরি হয় গুপো সন্দেশ। গুপো সন্দেশ কালক্রমে কলকাতার অভিজাতদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। উৎসবে অনু ষ্ঠানে
কলকাতার অভিজাতরা গুপ্তিপাড়ায় ছু টতেন গুপো সন্দেশ কিনতে। ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগে পানিহাটির গুপো সন্দেশ কলকাতায় খু ব
জনপ্রিয় হয়।
কাস্তার লাড্ডু বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। পঞ্চকোট রজ্যের রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেওয়ের পৃ ষ্ঠপোষকতার এই মিষ্টির প্রচলন হয়।
মিষ্টান্নপ্রিয় রাজার রসনা তৃপ্তির কথা ভেবে লাড্ডু বানানো হয়। এই মিঠাই কাশিপু র এবং সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও তেমন পরিচিত নয়।
বিলু প্তপ্রায় এই লাড্ডু দু'চারটি মিষ্টির দোকানে এখনও পাওয়া যায়। পঞ্চকোট রাজবংশের এক সদস্য সোমেশ্বর লাল সিংহ দেও জানান,
"রাজবাড়িতে বিজয়ার মিষ্টিমু খে এই লাড্ডু প্রজাদের বিলি করতেন রাজা। লাড্ডু তৈরির সময় গাওয়া ঘিয়ের গন্ধে এলাকা ম-ম করত।" কাস্তার
মিঠাই এর প্রধান উপকরণ ছানা, ক্ষীর (ক্ষীর), বেসন, ময়দা (বা আটা), এলাচ, জায়ফল, জয়িত্রি, কাজু , কিসমিস।
এই লাড্ডুটি মানভূম তথা পঞ্চকোট রাজ-পরিবারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। এটা অন্য কোথাও মেলে না। কাশীপু রের হাতে গোনা দু'একটি দোকানে
এই মিঠাই তৈরি হয়। এর রেসিপি কাশীপু র এলাকাতে পু রনো দিনের কয়েকজনই শুধু জানেন