Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 4

গাউর আর গয়াল কি একই প্রাণী ?

অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসে আবার অনেকে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথেই বলেন গাউর আর গয়াল আসলে একই প্রাণী।
কিন্তু না গাউর (Bos gaurus) আর গয়াল (Bos frontalis) একটি প্রজাতি নয়।গয়ালের উৎপত্তি নিয়ে অনেক
প্রকৃ তিবিদ,বিজ্ঞানী,গবেষকদের মধ্যে মতভেদ ছিল।যদিও গয়ালের আলাদা বৈজ্ঞানিক নাম আছে।কিন্তু অনেকের মতে গাউর
আর পোষা দেশি গরুর মিশ্রণ হল গয়াল।বর্ত মানে পার্বত্য চট্রগ্রামের সীমান্ত অঞ্চলে কয়েকটি বুনো গয়াল (Gayal)
থাকতেও পারে।যেহেতু কিছ ু গাউর(Gaur/Indian Gaur) এখনো টিকে আছে সেহেতু গয়ালের থাকারও সম্ভাবনাও
রয়েছে।গয়ালের উৎপত্তি হওয়ার ক্ষেত্রে দুইটি ধারণা করা যেতে পারে।প্রাচীনকালে দেশি পোষা গরু বনে গিয়ে গাউরদের সাথে
মিশে যায় বা গাউরের সাথে প্রজনন করে গয়াল জাতটির উৎপত্তি হয় অথবা প্রাচীনকালে বুনো গাউর ধরে পোষ
মানিয়ে বা বন্দী করে দেশি গরুর সাথে প্রজননের মাধ্যমে গয়াল সংকর জাতটির উৎপত্তি হয়।আর সেই পোষা
গয়ালদের কিছু বনে গিয়ে একদম বুনো হয়ে যায় আর একটি বুনো গয়ালের প্রজন্ম সৃষ্টি হয়।আমার মতে এমনটা
ঘটার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।কেননা , ব্রিটিশ আমলেও ঢাকা থেকে পোষা হাতিরা ঢাকার আসেপাশের বনে
গিয়ে বুনো হাতিদের সাথে মিশে সম্পূর্ণ বুনো হয়ে যেতো।যার কারণে একটি সময় ঢাকায় বন ু ো হাতির সংখ্যা অনেক বেড়ে
যায়।হয়তোবা প্রাচীনকালেও পোষা গয়ালদের পাল বনের ভিতর তাদের জাত ভাই গাউর আর
বনগরুদের দেখে তাদের সাথে বনে বাস করা শুরু করেছিলো।আর এভাবে গয়ালের একটি গ্রুপ পোষা থেকে সম্পূর্ণ
বুনো হয়ে যায়।আবার অনেকের মতে গাউরের পোষা সংস্করণই হল গয়াল।
এখন দেখা যাক গাউর আর গয়ালের মাঝে তফাৎ কি? গাউর আর গয়ালের মাঝে ভালোই পার্থক্য রয়েছে।
গাউর গয়ালের তু লনায় আকারে বড়।গয়ালের গায়ের রং কালো থেকে গাঢ় বাদামি।আর গাউরের শরীর কালচে লোমে ঢাকা।
গাউরের দুই শিঙের মাঝে উঁচু ঢিবির মতো আছে।যা গয়ালের নেই।আর গাউরের শিঙ গয়ালের তু লনায় ছোট ও
ওপরের দিকে ভেতরমুখী বাঁকানো।আর গয়ালের শিঙ দুইপাশে বাঁকানো।শিঙের গোড়া ভালোই মোটা।গাউরের
হাঁটুর কাছে ময়লাটে সাদা লোম আছে।যা গয়ালের মধ্যে অনুপস্থিত।তবে গাউর আর গয়ালের মধ্যে
মিল হল দুইজনের পিঠেই গরুর মতো কোন কু জ নেই বরং পাহাড়ের মতো ছড়ানো ঢিবি রয়েছে।দাঁড়ানো অবস্থায়
গয়ালের উচ্চতা ৫.৫-৬.৬ ফিট।আর গাউর উচ্ছতায় ৭ ফিট পর্যন্ত হতে পারে।পূর্ণবয়স পরু ু ষ গয়াল ওজনে ৭০০-৯০০
কেজি পর্যন্ত হয়।আর পরু ু ষ গাউর ১০০০ কেজি ছাড়িয়ে যায়।এমনকি ১৫০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।বনে গয়াল সাধারণত বন ু ো
হাতিদের সহবাসী।হাতির পালের পিছু পিছু এরা বিচরণ করে।হাতিরা চলতি পথে ডাল ভাঙ্গে,ছোট গাছ
উপড়ে ফেলে আর গয়ালরা সেগুলোর পাতা,ফল খায়।আর গাউররা ছোট ছোট দলে বাস করে।দিনেরবেলা খবু একটা বের
হয় না।এদের খাবারের তালিকায় প্রায় সব ধরনের গাছের পাতা,ফল,ফু ল,শাক রয়েছে।পরু ু ষ গাউররা কিছটাু
ছন্ন ছাড়া ভাবে জীবন -যাপন করে।প্রজনন ঋতুতে স্ত্রী গাউরদের পালের কাছে আসে।গাউরদের পাল বয়স্ক স্ত্রী গাউর
নেতৃ ত্ব দেয়।
ইদানীং কোরবানির সময় হাটে গয়াল দেখা যায়।অনেকে খামারে ও বাড়িতেও গয়াল পালন করেন।এসব গয়ালের অধিকাংশ
দেখা যায় বাদামি,সাদা রঙের মিশ্রণের।এগুলো সম্ভবত গয়ালের সাথে আবার গরুর সংকরের বংশধর।সেই বন ু ো গয়ালদের নয়
কোন ভাবেই।হলে গায়ের রঙের এতো পার্থক্য থাকতো না।অর্থাৎ গয়ালের উৎপত্তি নিয়ে একটি ধোঁয়াশা রয়েই
গেল।তবে যেহেতু গাউরের সাথে এদের এতো পার্থক্য ও তাদের আলাদা বৈজ্ঞানিক নামও রয়েছে তাই বলা যায়
গাউর গয়ালের পূর্বপুরুষ হলে হতেও পারে কিন্তু গাউর আর গয়াল একই প্রাণী না।দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
(আমাদের পেজের লেখাগুলো অনেক সময় ব্যয় করে রিসার্চে র পর লেখা হয়।অনেক দিন ধরে দেখছি কয়েকজন পেজের
লেখাগুলো নিজের নামে বিভিন্ন গ্রুপে ও প্রোফাইলে পোস্ট করছেন।দয়া করে কেও নিজের প্রোফাইলে বা গ্রুপে
নিজের নামে চালিয়ে দিবেন না।ধন্যবাদ।)
Photo : Collected
পোষা বনগরু

বনগরু বান্টেং (Bos banteng) বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৫৫ থেকে ৬৫ বছর আগে। অনেকেই জানেন,
এদেশের আরেক প্রজাতির বনগরু অর্থাৎ গাউর (Bos gaurus) হারিয়ে গেছে। এক সময় উত্তরের শালবন থেকে
টেকনাফ পর্যন্ত চিরসবুজ বনে এরা বিচরণ করত। জানা যায়, সর্বশেষ গাউরটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার
বাহিনীর হাতে মারা পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গাউর বিলপ্তু হয়নি, এরা এখনও টিকে আছে বান্দরবানের গহিনে সাঙ্গু-
মাতামুহুরি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। তবে সংখ্যায় এরা নগণ্য এবং মহাবিপন্ন তালিকায়। বর্তমানে পাহাড়ে যে প্রজাতিকে
অনেকে বনগরু বলে আসলে সেটা হল গয়াল। অনেকে এদেরকে গাউরের পোষা সংস্করণ বলে থাকেন; তবে
অন্যরা তা মানতে নারাজ। কারণ গাউরকে পোষ মানানো যায় না। গয়াল বনগরুর একটি প্রজাতি কি-না এ নিয়ে
বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকে এদেরকে প্রাকৃতিক প্রজাতি মনে করলেও অন্যরা মনে করেন না। কারণ প্রজাতি
হিসেবে গয়ালের বর্ণনা পাওয়া যায় পোষাগুলো থেকে। অনেকেই মনে করেন এরা কোনো বিলুপ্ত
প্রজাতির বনগরুর পোষা বংশধর বা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের পোষা গরু ও গাউরের সংমিশ্রণে সৃষ্ট
সংকর গরু। ভারতে এরা মিথুন নামে পরিচিত। ওখানে পুরোপুরি বুনো, আধা-বুনো ও পোষা মিথুন রয়েছে। যারা
প্রজাতি হিসেবে গণ্য করেন তারা গয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম ইড়ং ভৎড়হঃধষরং বলে উল্লেখ করেছেন।

গয়াল পুরোপুরি বনগরু নয়। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা পাহাড়িদের পোষা গাভীর গর্ভজাত তাই চেহারা অনেকটা গাউরের
মতো হলেও স্বভাবে বেশ শান্ত। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু গয়াল হারিয়ে গিয়ে মানুষের সান্নিধ্যে না থাকায় ও বনের
পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়ায় গাউরের মতো বুনো হয়ে গেছে। এদের বংশধরই রাঙ্গামাটির গভীর অরণ্যে, যেমন-
পাবলাখালী অভয়ারণ্যে এখনও বেঁচে আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে এ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে। বন ু ো গয়াল যদি
বিলুপ্ত না হয়ে থাকে তাহলেও এরা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় গয়াল প্রজনন খামার ও গবেষণা কেন্দ্রে এদেরকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়
গবেষণা করছেন।

বুনো গয়াল গাউরের মতোই শক্তিশালী ও সুন্দর। দূর থেকে দেখলে গাউর বলেই মনে হবে। গয়ালের দেহের গড়ন অনেকটা
গাউরের মতোই; তবে আকার ও ওজন কম। শিং গাউরের চেয়ে কম বাঁকানো। মাথাও তুলামূলকভাবে ছোট। পিঠের
উপরের কুঁ জ ছোট, কাঁধ থেকে পিঠের এক-তৃ তীয়াংশ পর্যন্ত বিস্তৃ ত। গলার চামড়ার ঝুল গাউরের থেকে বেশি থাকায়
বাইসনের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে। এরা তাই চিটাগাং বাইসন নামেও পরিচিত। গায়ের রঙ মোটামুটিভাবে গাউরের
মতোই। বড়গুলো কালচে বা কালচে-বাদামি। বাচ্চাগুলো হালকা বাদামি।

গয়াল বেশ বলিষ্ঠ ও কষ্টসহিষ্ণু হলেও এদের দিয়ে হালচাষ করানো হয় না। পাহাড়িরা এদের ছেড়ে পালন করে। সারাদিন
এরা পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় ও রাতে ঘরে ফেরে। তবে কোনো কোনোটা ৪ থেকে ৫ দিনেও ফেরার নাম নেয় না।
তারপর যখন ঘরে ফেরে তখন এদের মধ্যে কিছুটা বুনো ভাব দেখা যায়। বুনো গয়ালের স্বভাব-চরিত্র
গাউরের মতো বলে এরা মানুষকে ভয় পায় না; বরং আক্রমণ করার জন্য তেড়ে আসে।

গয়াল তৃ ণভোজী প্রাণী। গহিন বনের যেখানে ছোট ছোট ঝোঁপের কচিপাতা ও ডালপালা আছে সে রকম স্থান এদের পছন্দ। বন
ু ো
গয়ালগুলো গাউরের মতো দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের নেতৃ ত্বে থাকে একটি বড় ও শক্তিশালী ষাঁড়। সাধারণত
১০ থেকে ১১ মাস গর্ভ ধারণের পর একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। গাভীর মতো এদের ওলান নেই বলে কখনও দুধ দোহন
করা যায় না। গয়াল ১৫ থেকে ১৬ বছর বাঁচে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, বন্যপ্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্র, গাইনিকোলজি, অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ
হেলথ বিভাগ, বশেমুরকৃ বি, সালনা, গাজীপুর

You might also like