Professional Documents
Culture Documents
প্রত্নতাত্ত্বিক-ও-ঐতিহাসিক-নিদর্শন-রক্ষা-করার-ব্যাপারে-ইসলামের-অবস্থান-কি
প্রত্নতাত্ত্বিক-ও-ঐতিহাসিক-নিদর্শন-রক্ষা-করার-ব্যাপারে-ইসলামের-অবস্থান-কি
প্রত্নতাত্ত্বিক-ও-ঐতিহাসিক-নিদর্শন-রক্ষা-করার-ব্যাপারে-ইসলামের-অবস্থান-কি
.
১. ইসলাম একটি দাওয়াত, একটি বার্তা। যেই বার্তা রব্বানী (ঐশী), ইনসানী (মানবীয়), আখলাকী
(নৈতিক) আলামী (বৈশ্বিক)। ইসলাম মৌলিকভাবে গড়ার ধর্ম, ভাঙার নয়। ইসলাম প্রত্যেকের
থেকেই উপকার গ্রহণের কথা বলে যতক্ষণ তা ঝুঁকিমুক্ত থাকে এবং এর মাধ্যমে এর চেয়ে বড়
কোনো অনুপকার প্রবেশের সম্ভাবনা না থাকে। এ কারণে ইসলাম পূর্বতন সকল সভ্যতা থেকে
উপকার হাসিলের ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা লাগায় না যতক্ষণ তা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার
সাথে সাংঘর্ষিক না হচ্ছে। হিকমাহ মুমিনের হারানো সম্পত্তি, যেখানেই তা পাওয়া যাক না কেন
মুমিনই এর সবচেয়ে বেশি হকদার।
.
২. ইসলাম পৃথিবী ভ্রমণের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়, কেননা এর মাধ্যমে ইবরাত বা শিক্ষা হাসিল করা
যায়। এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী জাতিদের সম্পর্কে জানা যায়, তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সুন্নাত কীভাবে
প্রযোজ্য হয়েছিলো, মিথ্যাবাদীরা কীভাবে ধ্বংস হয়েছিলো সে সম্পর্কে জানা যায়। এই পৃথিবী
ভ্রমণের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও অন্যতম। পূর্বতন জাতিদের অবশিষ্ট নিদর্শন যেন আমাদেরকে
ইতিহাসের পাতার মাধ্যমে নয় বরং নিজ চোখের মত করে তাদের ব্যাপারে জ্ঞান দান করে।
.
৩. ইসলাম ঐতিহাসিক দীন, ইতিহাসাশ্রিত ধর্ম। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যতটা ইতিহাস সচেতন
ছিলো তার চাইতে মুসলিমরা -সেই প্রথম থেকেই- অনেক বেশি ইতিহাস সচেতন ছিলো এবং
আছে। আর ইতিহাসসংক্রান্ত তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছাড়া ইতিহাস সম্বন্ধে জ্ঞান পাকাপোক্ত ও নির্ভ রযোগ্য হয় না, বিশেষ করে
পুরাতন যমানা সম্পর্কে তথ্যাদির ক্ষেত্রে -যেই তথ্যাদি রক্ষা করার ক্ষেত্রে খুব একটা যত্ন নেওয়া
হয়নি কিংবা তাকে ঐতিহাসিক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করার মত সূক্ষ্মতা ও যোগ্যতা নেই- বিকৃ তির
সম্ভাবনা খুব বেশি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এক্ষেত্রে স্থানান্তরিত তথ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তি দেয়। এ কারণে
ইতিহাসের সংরক্ষণ ও নির্ভ রযোগ্যতার দিক থেকে প্রত্নতত্ত্ব ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন জরুরী।
.
এসব দিক বিবেচনা করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষার ব্যাপারে মৌলিকভাবে কোনো সমস্যা নেই,
ইনশাআল্লাহ। তবে লোকজন পূজা-উপাসনা করে এমনসব মন্দির, উপাসনালয় কিংবা মূর্তি যাকে
প্রত্নতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেসকল ক্ষেত্র ভিন্ন। কারণ ইসলামী
রাষ্ট্রে এইসব উপাসনালয়ের বিধান ভিন্ন। এসকল উপাসনালয় আর সাধারণ ঐতিহাসিক নিদর্শন
যেমনঃ ইমারত, মহল, শিলালিপি, প্রাচীন ও নিষ্ক্রিয় বিহার, ধ্বংসপ্রায় মঠ ইত্যাদি এককথা নয়।
.
তবে এক্ষেত্রে মাসলাহাতের বিবেচনা করাও দরকার। কেননা এসব নিদর্শন রক্ষা করা ইসলামের
মৌলিক উদ্দেশ্য বা ইসলামী রাষ্ট্রের মূল এজেন্ডার মধ্যে অন্তর্ভু ক্ত নয়। এ কারণে এ ধরণের
কার্যাবলী নিঃসন্দেহে প্রাথমিক স্তরের বা মুখ্য দায়িত্ব নয় বরং এগুলো তু লনামূলক গৌণ। এজন্য
দীনি, দুনিয়াবী অন্যান্য বিষয়াদির মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসকল নিদর্শনকে সংরক্ষণ করা
উচিত। এসব দিক ঠিক থাকলে ফিতনা সৃষ্টির (এগুলোকে পবিত্র মনে করা বা এগুলোর ইবাদাতের
দিকে ঠেলে দেওয়ার) দাবী বা আশঙ্কায় এগুলোকে ধ্বংস করা উচিত নয়, তবে নিশ্চিতভাবে ফিতনা
সৃষ্টি হলে তখনকার কথা ভিন্ন, তবে সেক্ষেত্রে ভেঙেই সমস্যা দূর করতে হবে এমন নয়,
অন্যান্যভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেও সেটা সম্ভব, তবে একান্ত নিরুপায় হলে ভাঙতে হবে।
আল্লাহু আ’লাম।
.
শায়খ আল্লামা ড. ইউসুফ কারযাবীর ফতোয়া (ফাতাওয়া মুআছিরা, ৪/৬১৫-৬১৭) অবলম্বনে
লিখিত, মূল ফতোয়ার সাথে কিছু মৌলিক পয়েন্ট যুক্ত করা হয়েছে।