Download as pdf or txt
Download as pdf or txt
You are on page 1of 26

অর্পণ

শাইখ নাসির আল-ফাহাদ-সহ বিশ্বের সমস্ত মাজলুম


ও মাসজুন আলিমদের প্রতি। আল্লাহ তাআলা তাঁদের
মুক্তিকে তরান্বিত করুন; তাওহিদের ওপর অবিচল
রাখুন।
লেখক

শাইখ নাসির আল-ফাহাদ

শারিহ (ব্যাখ্যাকার)

শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল

অনুবাদ ও সম্পাদনা :

ইশতিয়াক আহমাদ তুষার ও ইহসান টীম


শাইখ নাসির আল-ফাহাদ

নাম, বংশপরিচয় ও বাসস্থান:

তাঁর পুর�ো নাম আবু মুসআব নাসির বিন হামাদ বিন হুমাইয়িন বিন হামাদ বিন
ফাহাদ। আরবের প্রখ্যাত আল-আসা’ইদা আর-রাওয়াকিয়া গ�োত্রে তাঁর জন্ম।
তাঁর বংশধারা বনু সাদ বিন বাকরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে; এটা সেই গ�োত্র,
যে গ�োত্রে রাসুলুল্লাহ ‫ ﷺ‬দুধপান করেছিলেন এবং শৈশব কাটিয়েছিলেন।
(রাসুলুল্লাহ ‫ﷺ‬-এর দুধমা হালিমা সাদিয়া  এই গ�োত্রেরই নারী ছিলেন।)
বর্তমানে গ�োত্রটি উতাইবাহ নামে পরিচিত। শাইখ নাসির বিন হামাদের মায়ের
নাম নুরা আল-গাজি। তিনি আবার জন্মসূত্রে আল-বাদারিন আদ-দাওয়াসির
গ�োত্রের নারী। শাইখ নাসিরের পারিবারিক বাসস্থান ছিল�ো আস-সুয়াইর
এলাকায়; এটি ‘আজ-জুলফি’ নামক গ্রামের এক অংশ। তবে তাঁর বাবা শাইখ
হামাদ বিন হুমাইয়িন শাইখ আল্লামা মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম -এর সাথে কাজ
করার লক্ষ্যে স্বপরিবারে রিয়াদে চলে যান এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত দীর্ঘ আঠার�োটি
বছর তাঁর কাছেই অতিবাহিত করেন।

জন্ম, জীবনের কিছু অংশ ও শিক্ষাগত য�োগ্যতা:

শাইখ নাসির ১৩৮৮ হিজরির শাওয়াল মাসে রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন


এবং সেখানেই বেড়ে উঠেন। মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি কিং সাউদ
ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শুরু করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং ক�োর্সের তৃতীয় বর্ষ চলাকালীন তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে দিয়ে

7 ইস্তিগফার

‘দি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সাউদ’-এ শরিয়া বিভাগে
পড়াশ�োনা শুরু করেন।
তিনি মাত্র তিন মাসে কুরআন মাজিদ হিফজ করেন। যে মুসহাফ (কুরআনের
কপি) থেকে তিনি হিফজ করেছিলেন, তার প্রথম পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছিলেন,
‘আল্লাহ তাআলার তাওফিক ও মহিমায় কুরআন মাজিদ হিফজ পুর�োপুরি সম্পন্ন
হল�ো; ১৪১২ হিজরির ২৯শে জিলকদ র�োববার আসরের পর হিফজ সমাপ্ত
হল�ো; যা একই বছরের রমজান মাসের প্রথম দিন শুরু হয়েছিল। সকল প্রশংসা
আল্লাহ তাআলার, যাঁর মহিমায় সকল ভাল�ো কাজ সম্পন্ন হয়।’
শরিয়া কলেজে তিনি যেসব শাইখের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে
অন্যতম ছিলেন,
শাইখ আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি, শাইখ জায়িদ ইবনে ফাইয়্যাজ ও শাইখ
আহমাদ মা’বাদ আল-আজহারি প্রমুখ।
১৪১২ হিজরিতে তিনি সবার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে কলেজ
থেকে পাশ করেন। তাঁকে শরিয়া অনুষদ ও উসুলুদ্দীন অনুষদের পক্ষ থেকে
পড়ালেখা চালিয়ে যেতে অনুর�োধ করা হয়। তিনি উসুলুদ্দীন তথা “Principles
of the Religion; Department of Creed and Contemporary Sects”
(​‫ )أصول ادلين – قسم العقيدة والمذاهب المعارصة‬-কে বেছে নেন। উচ্চতর
শিক্ষার পর তাঁকে থাইল্যান্ডে উস্তাদ হিসেবে নিয়�োগ দেওয়া হয়। তিনি সেখানে
এক জাহমির সাথে বাহাস করেন, জয়ী হন এবং শ্রোতাদের কাছে প্রশংসার পাত্র
হয়ে উঠেন। তাঁকে মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির আকিদা ডিপার্টমেন্টের ডীন
নিযুক্ত করা হয়।
এসময় তিনি ইলম অন্বেষণে ব্যস্ত সময় কাটান— বইপত্র জ�োগার, পড়াশ�োনা
এবং গবেষণায় তাঁর সময় কাটে। তিনি সবসময় পড়াশ�োনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
তাঁর ছেলে মুসআব বলেন, আমি তাঁকে ঘরে বই ছাড়া দেখিনি। তিনি গাড়িতে
ওঠার সময় বই নিয়ে উঠতেন এবং ট্রাফিক জ্যামের সময় বই পড়তেন। আমি যদি
বলি তিনি দিনে ১৫ ঘন্টা পড়াশ�োনায় কাটাতেন, তবে এটাও তাঁর ওপর পুর�োপুরি
ইনসাফ হবে না। (কেননা, তিনি এরচেও বেশি সময় পড়াশ�োনায় কাটাতেন।)

ইস্তিগফার 8
আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি ইলমে আর�ো অগ্রসর হলেন এবং শরিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে
অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেন, যার মধ্যে রয়েছে আকিদা ও এর সাথে সংযুক্ত
বিষয়াবলি, হাদিস, রিজালশাস্ত্র, চার মাজহাবের ফিকহ, ফিকহের উসুল এবং
ইলমুল ফারাইজ (উত্তরাধিকার)।
বিভিন্ন বিষয়ে ফত�োয়া এবং নুসুস থেকে হুকুম নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তিনি তীক্ষ্ণ
বুদ্ধিমত্তা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় দিতেন।
তিনি ইতিহাস এবং বিভিন্ন গ�োত্রের বংশধারা ও বংশপরিচয় বৃত্তান্তের ব্যাপারেও
গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। শাইখ ওয়ালিদ আস-সিনানি —যিনি এক্ষেত্রে
তার জ্ঞানের কারণে ছিলেন অদ্বিতীয় ও বিখ্যাত— তাঁকে একবার এ বিষয়ে
কিছু প্রশ্ন করে হলে তিনি বললেন, ‘আসাআদিকে জিজ্ঞেস কর�ো।’ (আসাআদি
বলতে আসা’ইদা গ�োত্র ব�োঝান�ো হয়েছে অর্থাৎ, শায়খ নাসির আল ফাহাদকে
জিজ্ঞেস কর�ো।)
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সাউদ ইউনিভার্সিটির আকিদার কিছু প্রফেসর আমাকে
(শাইখের ছেলে মুসআবকে) জানিয়েছেন, “ত�োমার পিতা মাস্টার্সে আমাদের
সহপাঠী ছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি। মুখস্থ ও
ব�োঝার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে। তাঁর কঠ�োরতা ছাড়া তাঁকে নিয়ে সমাল�োচনা
করার মত�ো কিছুই নেই”। আর একথা সত্য। যখন কার�ো সাথে বিতর্ক করেন,
তখন তিনি রেগে যান। কিন্তু যখনই তার মেজাজ ঠান্ডা হয়, সাথে সাথে তিনি তার
প্রতিপক্ষের কাছে মাফ চেয়ে নেন।
আমার কাছে এই খবর প�ৌঁছায় যে, আকিদা ডিপার্টমেন্টের একজন উস্তাদ একদিন
তার ছাত্রদের বলছিলেন, ‘এই ডিপার্টমেন্টে একজন মানুষ ছিল, যে অনেক ভুল
ধারণা প�োষণ করত। কার�ো সাহস ছিল না, তার মুখ�োমুখি হয়ে তার ভুল ধারণার
ম�োকাবিলা করার, একমাত্র নাসির আল ফাহাদ ছাড়া।’
হিজরি ১৪১৫ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে ‘আল-হাইর’ জেলখানায়
বন্দি করে রাখা হয়। তিনি সাড়ে তিন বছর বন্দি ছিলেন। ১৪১৮ হিজরিতে তাঁকে
ছাড়া হয়। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ইন্টারনেট জগতে সক্রিয় হন, কিন্তু পরে
সময়ের অভাবে তিনি তা থেকে সরে আসেন।

9 
ইস্তিগফার
দিনদিন তাঁর দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। কিন্তু তিনি সবাইকে সময় দিতে
পারছিলেন না। তাই তিনি তাঁর বাসায় শনি ও মঙ্গলবার মাগরিব ও ইশার মাঝে
একটি হালাকার আয়�োজন করলেন। এই হালাকায় হাদিস ও রেওয়ায়াত নিয়ে
আল�োচনা হত। দিনদিন এসব হালাকায় মানুষের অংশগ্রহণ এতই বাড়তে লাগল
যে, রুমের চারপাশ ভর্তি হয়ে যেত। এমনকি সরাসরি শাইখের সামনে রুমের
মাঝখানেও সারি করে মানুষ বসত, হাঁটাচলার ক�োন�ো জায়গা থাকত না।
যখন আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিমকে অ্যামেরিকার আফগানিস্তানের যুদ্ধের
মাধ্যমে পরীক্ষা করলেন, শাইখ নাসির মুমিনদেরকে তাদের ভাইদের সহায়তায়
এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করলেন এবং কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে
সতর্ক করে দিলেন। তিনি হকের ওপর অটল থাকলেন এবং স�ৌদির তাগুত
সরকার তার গ্রেফতারি পর�োয়ানা জারি করল। ১৪২৪ হিজরিতে তিনি পুনরায়
গ্রেফতার হলেন।
আর তখন থেকে আজ এই মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জেলখানায় বন্দি জীবনযাপন
করছেন। এমনকি ৬ বছর আগ থেকে তাঁকে পরিবারের সাথে দেখা করা কিংবা
কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
আল্লাহ তাআলা জেলখানায় শাইখের ওপর তাঁর রহমত ঢেলে দিয়েছেন এবং
শাইখের জ্ঞান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। শাইখ নাসির বন্দিদশায় ৯টি
হাদিসগ্রন্থ (কুতুবে সিত্তাহ অর্থাৎ, সহিহুল বুখারি, সহিহু মুসলিম, সুনানুন
নাসায়ি, সুনানু আবি দাউদ, জামিউত তিরমিজি ও সুনানু ইবনি মাজাহ এবং
মুসনাদু আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক ও সুনানুদ দারিমি)-সহ আর�ো অনেক গুরুত্বপূর্ণ
কিতাব ও মতন মুখস্থ করেছেন। তিনি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়ার
‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ ছয়বার পড়েছেন এবং তিনি ৮৫টি পুস্তিকা লিখেছেন।
তিনি ইবনু তাইমিয়ার ‘উসুলুল ফিকহ ও উসুলুত তাফসির’ গ্রন্থটি আটশ�ো’র
বেশি লাইনের কবিতা আকারে লিখেছেন।
সম্প্রতি জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়া এক ভাই বলেছেন, কিছু কারারক্ষী শাইখের
ব্যাপারে বলত, “এই একগুঁয়ে ল�োকটার (শাইখ নাসির) কী হয়েছে যে, সে মাত্র
৪ ঘন্টা ঘুমায় এবং বাকি সারাটা দিন হয় বই পড়ে, না হয় সালাত আদায় করে!!”

ইস্তিগফার 10
সূচিপত্র

ইস্তিগফার : শাইখ নাসির আল-ফাহাদ


ভুমিকা । ২১
প্রথম কারণ । 24
দ্বিতীয় কারণ । 27
তৃতীয় কারণ । 30
চতুর্থ কারণ । 31
পঞ্চম কারণ । 33
ষষ্ঠ কারণ । 36
সপ্তম কারণ । 39
উপসংহার । 40

শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের দারস


প্রথম দারস । 44
দ্বিতীয় দারস । 54
তৃতীয় দারস । 69
চতুর্থ দারস । 81
পঞ্চম দারস । 94
ষষ্ঠ দারস । 103
সপ্তম দারস । 115
অষ্টম দারস । 128
কুরআন-সুন্নাহর আল�োকে ইস্তিগফার । ১৫৯
ভূমিকা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য এবং দুরুদ ও সালাম রাসুলুল্লাহ ‫ ﷺ‬এর
উপর।

সহিহুল বুখারিতে আবু হুরাইরা  থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
ً‫ني َم َّرة‬ ْ
َ َ ‫أك‬
َ ‫ث مِن َسبْع‬ َ ُ ُ َ َ َّ ُ ْ َ ْ َ َ ّ َّ
ِ ِ َ‫وب إلْهِ يف ايل‬
‫وم‬ ‫إن لستغفِر الل وأت‬ ِ ِ‫والل‬
“আল্লাহর শপথ, আমি প্রতিদিন ৭০ বারেরও অধিক আল্লাহর নিকট তাওবা ও
ইস্তিগফার করি।”[1]
আল-আগাররুল মুজানি  থেকে সহিহু মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
ّ ّ
ِ ‫ فإن أتوب إىل اهللِ وأستغفره يف‬،‫ واستغفروه‬،ِ‫ توبوا إىل اهلل‬:‫يا أيها انلاس‬
‫لك يو ٍم‬ ُ ُ ُ ُ
َ
ّ ‫مئة‬
‫مر ٍة‬

“হে ল�োকসকল! ত�োমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর�ো। এবং তাঁর কাছে
ইস্তিগফার কর�ো। আমি প্রতিদিন আল্লাহ তাআলার কাছে ১০০ বার তাওবা-
ইস্তিগফার করি।”[2]
[1] সহিহুল বুখারি : ৬৩০৭
[2] সহিহু মুসলিম : ২৭০২, আস-সিলসিলাতুস সাহিহাহ : ১৪৫২

21 ভু মিকা

তিরমিজি ও আবু দাউদে গ্রহণয�োগ্য সনদে ইবনু উমার  থেকে বর্ণিত আছে,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়তেন :
َ ُ ّ َ ‫ك‬ َ َّ َّ ْ ُ ّ
ُ ‫الغ‬
‫فور‬ ‫أنت اتلواب‬ ‫رب اغ ِف ْر يل وتب يلع إن‬
ِ
“হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা কর�ো ও আমার তাওবা কবুল কর�ো, নিশ্চয় তুমি
অতিশয় তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু।”
এবং আমরা গণনা করতে পারতাম, তিনি বৈঠক শেষ হওয়ার পূর্বে ১০০ বার
পড়তেন।”[3]
এ সম্পর্কে অর্থাৎ ইস্তিগফারের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু কিতাবে দলিল রয়েছে।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ,
যার আগের ও পরের সমস্ত ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, যিনি সাইয়িদুল
মুরসালিন তিনি এভাবে[4] ইস্তিগফার[5] করতেন। তিনি তাঁর উম্মতকেও
ইস্তিগফারের আদেশ করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় একজন বান্দার জন্য
ইস্তিগফার করা কত জরুরি। একজন মুসলিমের দৈনন্দিন আমলের তালিকায়
নিয়মিত ইস্তিগফার থাকা উচিত। এতে অবহেলা করা উচিত নয়, বরং এর পরিমাণ
যত বৃদ্ধি করা যায় ততই উত্তম। ইনশাআল্লাহ, এটা অন্তরের র�োগ, শাহওয়াত
এবং সংশয়বাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হবে। সাধারণ মানুষ এমনকি
কিছু সংখ্যক আহলুল খাইর[6] কিছু নির্দিষ্ট পাপের জন্য ইস্তিগফারকে সীমাবদ্ধ
করেছেন, এমন নয় যে, ওই পাপগুল�ো ছাড়া অন্য পাপকে তারা অবমূল্যায়ন
করেন। বরং হয়ত�ো তারা ওই পাপগুল�ো সম্পর্কে অবগত নন, অথবা তাদের
ইলমের ঘাটতি ছিল অথবা ওই পাপসমূহ সম্পর্কে তারা উদাসীন ছিলেন। একজন

[3] তিরমিজি : ৩৪৩৪, আবু দাউদ : ১৫১৬


[4] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন সালাত আদায় করতেন; তখন দাঁড়িয়ে থাকতে
থাকতে তাঁর পা মুবারক ফুলে যেত। একজন সাহাবি তাঁকে বললেন, “আল্লাহ তাআলা আপনার
আগের পরের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস
করলেন, “আমি কি আল্লাহ তাআলার শ�োকরগুজার বান্দা হব�ো না?” [ সহিহুল বুখারি : ৪৮৩৬]
[5] আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
[6] নেককার বান্দা।

ইস্তিগফার 22
মানুষ যদি তাঁর র�োগ সম্পর্কে অবগত না হয়, তাহলে সে সঠিকভাবে প্রতিষেধক[7]
ব্যবহার করতে পারে না। এমনকি ঔষধের অপব্যবহারের কারণে তাঁর মৃত্যুও
হতে পারে।
এজন্য “ইস্তিগফারের কারণ” শির�োনামের এই রিসালাহটি আমি রচনা করেছি,
যাতে একজন বান্দা বুঝতে পারে, সে ইবাদত[8] ও তাকওয়ার[9] যে স্তরেই
প�ৌঁছাক না কেন, তার গ�োটা জীবনের সকল পরিস্থিতিতেই ইস্তিগফারের প্রয়�োজন
রয়েছে। আমি দুআ করি, এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সম্মানিত সত্তার
কাছে কবুল হ�োক এবং মুসলিমরা যেন এর দ্বারা উপকৃত হন।

[7] অন্তরের যে র�োগগুল�ো চিহ্নিত করার দরকার, সেগুল�োর প্রতিষেধক হল�ো ইস্তিগফার।
[8] আল্লাহর আনুগত্য।
[9] আল্লাহ তাআলার ভয়।

23 
ভু মিকা
প্রথম কারণ
মানুষের ফিতরাতগত ত্রুটি

ক�োন সৃষ্টির পক্ষেই আল্লাহ তাআলার শান ও মর্যাদা অনুযায়ী তাঁর শুকরিয়া
আদায় করা এবং তাঁর ইবাদত করা সম্ভব নয়। এমনকি যদি তাঁর মর্যাদা অনুযায়ী
ইবাদত কেউ করতেও পারে (যদিও এটি পারতপক্ষে সম্ভব নয়) সেটিও আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনুগ্রহের কারণেই সম্ভব। আর এভাবে যদি ক�োন বান্দা
সারাজীবনও আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে, তবুও আল্লাহ তাআলার হক আদায়
হবে না। তারপরেও আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার অল্প ইবাদতেই খুশি থাকেন—
যে পরিমাণ ইবাদত বান্দার উপর বেশি ভারীও নয় এবং যা করতে বেশি সময়ও
লাগে না।
আবু হুরাইরা  থেকে সহিহাইনে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “ত�োমাদের ক�োন ব্যক্তিকে তার নেক আমল জান্নাতে প্রবেশ
করাতে পারবে না। ল�োকজন প্রশ্ন করল�ো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও নয়?
তিনি বলেন, আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাঁর করুণা ও দয়া
দিয়ে আবৃত না করেন।”[10]
আল্লাহ তাআলা বান্দার কাছে অমুখাপেক্ষি, অপরদিকে বান্দা আল্লাহ তাআলার
নিকট অসহায় ও মুখাপেক্ষি। এরপরেও আল্লাহ তাআলা বান্দার উপর তাঁর
সীমাহীন করুণা বর্ষণ করেন। সহিহু মুসলিমে আবু জর  থেকে বর্ণিত,

[10] সহিহুল বুখারি : ৫৬৭৩

ইস্তিগফার 24
রাসুল ‫ ﷺ‬বলেছেন :

ِ‫بالس ّي ِ َئة‬ ُ ‫ش أَ ْمثال ِها َوأَز‬


َ ‫ َو َمن‬،‫يد‬
َّ ‫جاء‬ ُ ْ ‫باحل َس َنةِ فَلَ ُه َع‬
َ ‫جاء‬َ ‫ َمن‬:‫الل َع َّز َو َج َّل‬ ُ
ُ َّ ‫يقول‬
ِ
ََ ً ‫ت منه ذ‬
‫ َو َمن تق َّر َب‬،‫ِراع‬ ً ْ ‫ َو َمن َت َق َّر َب م ِّن ش‬،‫زاؤهُ َس ّي َئ ٌة مِثْلُها أَ ْو أَ ْغفِ ُر‬
ُ ْ‫ِبا َت َق َّرب‬ ُ َ َ
‫فج‬
ِ ِ
ُ َ َ ََ ً َ َ ْ َ ُ َُْ َ ْ َ َ ََ ً ُ ْ َّ َ َ ً ّ
ِ ‫ ومن لقِي ِن بق‬،‫تان يم ِش أتيته هرولة‬
‫راب‬ ِ ‫ ومن أ‬،‫م ِِن ذِراع تقربت منه باع‬
ً‫يت ُه بمثْل ِها َم ْغف َرة‬ُ ‫ لَق‬،‫شيئا‬
ً ‫يئ ًة ال ي ُ ْش ُك يب‬ َ ‫األر ِض َخط‬ ْ
ِ ِ ِ ِ ِ
‘আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা বলেন, যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে তার
জন্য রয়েছে অনুরূপ ১০গুণ সাওয়াব ; এমনকি আমি তা বাড়িয়ে দেব।
আর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তার জন্য রয়েছে অনুরূপ একটি মন্দ
প্রতিদান অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব (যদি সে অনুতপ্ত হয়ে আমার
কাছে ক্ষমা চায় ও ভবিষ্যতে অন্যায় কাজ না করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে)
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক বিঘত (আধা হাত) এগিয়ে
আসবে আমি তার (কল্যাণে) প্রতি এক হাত এগিয়ে আসব।
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার
(কল্যাণে) প্রতি এক বাহু (দুই বাহু সমান) এগিয়ে আসব।
আর যে ব্যক্তি আমার (আনুগত্যের) দিকে হেঁটে আসবে; আমি তার (কল্যাণের)
দিকে দ�ৌড়ে যাব।
আর যদি কেউ আমার সঙ্গে শিরক না করে (আমার সঙ্গে শরিক বা অংশীদার
সাব্যস্ত না করে) পৃথিবীসম গুনাহ (পাপ) নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়
(আমার কাছে ক্ষমা চায় ও তাওবা করে) তবে আমিও তার সামনে অনুরূপ
বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হব।’[11]
মানুষ তাঁর জীবনের সমস্ত অংশ ইবাদাতে[12] কাটায় না। আবার দুনিয়ার হায়াত
আখিরাতের হায়াতের তুলনায় চ�োখের পলকের মত�ো স্বল্প। এই অল্প হায়াতে
বান্দা যে ইবাদত করবে তার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ  জান্নাতে এমন নিয়ামত
[11] সহিহু মুসলিম : ২৬৮৭
[12] “ইবাদাহ” শব্দের বহুবচন।

25 প্রথম কারণ
উপসংহার

আমার মুসলিম ভাই, আপনি যদি এ কারণগুল�ো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন এবং
নিজেকে যাচাই করেন, তবে আপনি অনুধাবন করতে পারবেন সর্বাবস্থায় তাওবা
এবং ইস্তিগফার করা আপনার জন্য কী পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই কারণে তাঁর উম্মতকে ইস্তিগফারের নির্দেশ দিয়েছেন।
১। উম্মতের প্রতি তাঁর সীমাহীন দয়া এবং ২। উম্মতের জন্য ইস্তিগফারের
প্রয়�োজনীয়তা। সুতরাং আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুযায়ী, আপনাদের উপর
আবশ্যক, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখান�ো দুআর (কাসিহাতুজ
জুনুব)[46] মাধ্যমে ইস্তিগফারের পরিমাণ বাড়ান�ো এবং নিয়মিত ইস্তিগফার করার
উপর ইস্তিকামাত ধরে রাখা। যেমন:
ُ‫ورسه‬
َّ ‫وآخرهُ وعالنيته‬ َ َّ ُ َّ ُ ُ َّ ُ َّ ُ َ َّ
َّ ‫الل‬
َ ‫وأو ُل‬ ،‫ وجله‬،‫ دقه‬،‫هم اغفِر يل ذنيب كه‬

“হে আল্লাহ, আমার সকল প্রকার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। কম এবং বেশি, প্রথম
এবং শেষ, প্রকাশ্য ও গ�োপনীয়।”[47]
এই দুআ আবু হুরাইরা  থেকে সহিহু মুসলিমে বর্ণিত আছে।
ْ َّ َْ َ َ َْ ََ َ َ َ ْ ْ َّ ُ َّ
 ‫ت أعل ُم بِهِ م ِِّن الل ُه َّم اغفِ ْر‬ ‫ِإَوس ِاف ِف أ ْم ِري وما أن‬
َ ْ ‫يئت َو َج ْهل‬
ِ ِ ‫اللهم اغفِر ِل خ ِط‬

[46] গুনাহ মার্জনাকারী


[47] সহিহু মুসলিম : 483

ইস্তিগফার 40
ُ ‫اغفِ ْر ل َما قَ َّد ْم‬ ْ َّ ُ َّ ْ َ َ ُّ ُ َ َ َ
‫ت َو َما‬ ِ ‫ج ّدِي َوه ْز ِل َوخ َطئِي َوع ْمدِي َوك ذل ِك عِندِي اللهم‬ ِ ‫ِل‬
ّ َ ْ َ ْ
َ ْ ‫ت ال ُم َق ّد ُِم َوأن‬ َ َ َ
َ ْ ‫ت أ ْعل ُم بهِ م ِّن أن‬ َ
َ ْ ‫ت َو َما أن‬ َ َ
ُ ْ‫ت َو َما أ ْعلن‬ ُ ‫س ْر‬ َ ُ ‫أَ َّخ ْر‬
‫ت ال ُمؤخ ُِر‬ َ ْ ‫ت َو َما أ‬
ِ ِ
ٌ ‫ش ٍء قَد‬ ْ َ ‫ك‬ ُّ ََ َ ََْ
‫ِير‬ ِ ‫وأنت ع‬
“হে আল্লাহ! আপনি আমার পাপ, আমার অজ্ঞতা ও আমার কাজের সীমালঙ্ঘনকে
মার্জনা করে দিন। আপনি এ বিষয়ে আমার চেয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত। হে আল্লাহ!
আমাকে মাফ করে দিন আমার আন্তরিকতাপূর্ণ ও রসিকতামূলক অপরাধ এবং
আমার ইচ্ছাকৃত ও ভুলক্রমে সব রকমের অপরাধগুল�ো (যা আমি করেছি)।
হে আল্লাহ! মাফ করে দিন যা আমি আগে করে ফেলেছি এবং যা আমি পরে
করব�ো, যা আমি গ�োপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি। আর আপনি আমার
চাইতে আমার সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনিই একমাত্র অগ্রবর্তী এবং আপনিই
একমাত্র পরবর্তী। আপনি সব বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।”[48]
দুআটি আবু মুসা  থেকে সহিহুল বুখারিতে বর্ণিত আছে। এছাড়াও অনুরূপ
অন্যান্য দুআ রয়েছে।
আমি আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করি, তিনি যেন আমাদের গুনাহ মাফ করে
দেন, আমাদের পাপ মুছে দেন এবং আমাদেরকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয়
দেন এবং আমাদের উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করেন এবং তিনি আমাদেরকে
ইসলামের উপর মৃত্যু দেন। রাসুল ‫ﷺ‬, তাঁর পরিবারবর্গ এবং সাহাবায়ে কিরামের
উপর আল্লাহ তাআলার রহমত বর্ষিত হ�োক।

[48] সহিহুল বুখারি : 6399, সহিহু মুসলিম : ২৭১৯

41 সপ্তম কারণ
ইমাম ইবনু তাইমিয়া  বলেন, রিয়া “‫ ”إياك نعبد‬এর মর্ম পূর্ণ করে না। একজন
কীভাবে বলে, “আমি শুধু আপনারই ইবাদত করি” যখন সে ল�োক দেখান�ো
আমল করছে! রিয়া “‫ ”إياك نعبد‬এর মর্ম পূর্ণ করে না। কেননা রিয়াকারী তার
ইবাদতের একটা অংশ বা সম্পূর্ণই মানুষকে দেখান�োর জন্য করে।
ইমাম ইবনু তাইমিয়া  আর�ো বলেন, উজবে আক্রান্ত ব্যক্তি “‫”اياك نستعني‬
অর্থাৎ “আমি একমাত্র ত�োমারই সাহায্য চাই” এই আয়াতের মর্ম পূর্ণ করতে
পারে না। কারণ আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে পূর্ণ সাহায্য লাভের পরিবর্তে সে
আত্মগ�ৌরবের মাধ্যমে নিজেকেও সেখানে (সাহায্যকারী হিসেবে) যুক্ত করে।
ইবনু হাজম  বলেন :

‫إن العجب من أعظم اذلنوب وأحمقها لألعمال‬

উজব সবচেয়ে বড় গুনাহের একটি এবং সবচেয়ে বড় আমল ধ্বংসকারী।
নিজেকে উজব এবং রিয়া থেকে মুক্ত করা শুরুতে কঠিন হতে পারে। তবে আপনি
যদি মুজাহাদা চালিয়ে যান এবং খাহেশাতকে প্রতিহত করতে পারেন তাহলে
সহজ হয়ে যাবে।
আপনি হয়ত�ো এমন ব্যক্তিকে দেখবেন, যার আমল উজবে আক্রান্ত ব্যক্তির
আমলের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। কিন্তু ঐ ব্যক্তি তার অল্প ইবাদতের জন্য
আফস�োস করে এবং আল্লাহর কাছে বিনয়ী হয়। সে তার অতীত বা ত্রুটিগুলির
জন্য ক্রমাগত অনুশ�োচনা করে এবং তার ভুলগুল�ো সংশ�োধনের চেষ্টা করে এবং
সে আরও নেকি অর্জন করার জন্য আগ্রহ ও ভাল�োবাসা দেখায়। তার এমন
ধারণা তাকে আল্লাহ তাআলার নিকট উচ্চ মর্যাদা দান করে, সেই ব্যক্তির চেয়ে,
যার আমল অনেক বেশি কিন্তু সে উজবে আক্রান্ত।
আমল এবং ইবাদতে অনুশ�োচনা এবং ত্রুটি অনুভব করা একটি রহমত। যা
একজন মুমিনের সর্বদা প্রয়োজন এবং যদি সে এটা অনুভব করতে পারে, তবে
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

87 চতু র্থ দার


যদি ক�োন দাঈ, আবিদ বা কুরআন তিলাওয়াতকারী বা মুজাহিদের হৃদয়ে
অহংকার, উজব এবং রিয়া প্রবেশ করে, তবে এটি তার কঠ�োর পরিশ্রমকে শেষ
করে দিবে। উজব এবং রিয়ার ফলাফল ধ্বংস ছাড়া কিছুই না। চূড়ান্ত সাফল্য হল
আল্লাহ তাআলা আপনার দায়িত্ব নিজের কাছে ছেড়ে দেন না। উজব এর মাধ্যমে
আপনি মূলত আপনার দায়িত্ব আল্লাহর কাছ থেকে নিজের কাছে নিতে চাচ্ছেন।
আল্লাহ কাউকে ত্যাগ করা তার জন্য চূড়ান্ত বিপর্যয়। আর আপনি চ�োখের
পলকের চেয়েও কম সময়ের জন্য চাইবেন না আল্লাহ  আপনাকে নিজের
কাছে ছেড়ে দিক। উজবের মাধ্যমে আপনি নিজেকে নিজের কাছে সমর্পিত করতে
চাচ্ছেন। আল্লাহর রাসুল ‫ ﷺ‬এর থেকে পানাহ চেয়েছেন।
َ ‫طرفة عني وأصل ِْح يل شأين لكَّه ال‬
َ ْ َ َ َّ
َّ ‫الل‬
‫إهل‬ ٍ ‫كلين إىل نفيس‬ِ ‫هم رمحتك أرجو فال ت‬
َ ‫ّإل‬
‫أنت‬

“হে আল্লাহ, আমি ত�োমার করুণা চাই। আমাকে আমার নিজের কাছে ছেড়ে
দিয়�ো না, এক মুহূর্তের জন্যও না। আমার সবকিছু সংশ�োধন করে দাও। তুমিই
একমাত্র ইলাহ।”[70]
আল্লাহ যখন কার�ো কল্যান চান, তিনি তাঁর জন্য বিনয় ও নম্রতার দরজা খুলে
দেন। তখন সে আল্লাহ তাআলার উপর পূর্ণ তাওয়াককুল করে আল্লাহর দিকে
প্রত্যাবর্তন করে, নিজেকে অসহায় মনে করে এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য
লাভের জন্য মরিয়া থাকে, চাই সে যতই ইবাদাত করুক।
যদি আপনার ক�োন আমলে উজব প্রবেশ করে তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি
কি এই আমল বা এর সমপরিমাণ আমলের উপর মৃত্যুবরণ করতে পারব?
আপনি একবার চিন্তা করে সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করলেই আপনি উজব
থেকে মুক্ত হতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।
আমরা আরও দূরে সরে যাওয়ার আগে, আমি কেবল রিয়া সম্পর্কে আরও একটি
বিষয় উল্লেখ করতে চাই, কারণ এটি আমল বাতিলের সাথে সম্পর্কিত।
[70] সহিহু ইবনি হিব্বান : ৯৭০, আল-আদাবুল মুফরাদ : ৭০১

ইস্তিগফার 88
কেউ যদি রিয়া-সহ ইবাদত শুরু করে, তাতে সাওয়াব বাতিল হয়ে যায়। যদি কেউ
ইখলাসের সাথে ইবাদাত শুরু করে কিন্তু তাতে রিয়া তৈরি হয় তাহলে সেটা ভিন্ন
ব্যাপার। ইবাদতের দুই অবস্থার ফলাফল ভিন্ন হবে।
একটি উদাহরণ শুনুন, তাহলে আপনি এটি ভাল�ো বুঝতে পারবেন। তারাবিহ;
আপনি আন্তরিকভাবে দুই রাকাত তারাবিহের নামাজ পড়তে গেলেন এবং প্রথম
দুই রাকাতের পরে কাউকে হেঁটে যেতে দেখলেন এবং এরপর দেখান�োর উদ্দেশ্যে
পরের দুই রাকাত শুরু করলেন।
প্রথম দুই রাকাত কবুল হয়, দ্বিতীয় দুই বাতিল হয়ে যায়। কারণ উভয়টির নিয়ত
ভিন্ন। যেমন কেউ দান বাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে দশ ডলার দিল, কেউ তাকে
দেখেনি। তিনি কাউকে হাঁটতে দেখলেন এবং তিনি আরও দশ ডলার দান
করলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় প্রথমটি কবুল হবে, দ্বিতীয়টি নয়।
কেন? কারণ এগুল�ো আলাদা ইবাদত। তিনি যা (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য)
করেছেন, তার জন্য তিনি পুরষ্কার পেয়েছেন এবং তিনি যা ল�োক দেখান�োর জন্য
করেছেন তার জন্য তিনি পুরষ্কার পাননি।
যদি ইবাদতটি একটি পরিপূর্ণ ইবাদত হিসেবে শুরু করা হয় এবং ইখলাসের
সাথে ইবাদত শুরু করার পরে রিয়া প্রবেশ করে, অর্থাৎ যখন সে ইবাদত শুরু
করেছিল তখন তার ইখলাস ছিল, তারপর সে রিয়ায় আক্রান্ত হয়; অর্থাৎ সে
আমলটি বন্ধও করেনি আবার রিয়াকে প্রতিহতও করেনি, তাহলে তার পুর�ো
সালাত বাতিল হয়ে যাবে, যদিও সে ইবাদতটি ইখলাসের সাথে শুরু করেছিল�ো।
কারণ প্রথম অংশটি শেষের সাথে সম্পর্কিত।
যদি সে (ল�োক দেখান�ো) ধারণাটি পরিহার করে, এবং রিয়াকে মেনে না নেয়,
রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এটিকে ঘৃণা করে, রিয়া ও প্রদর্শনের ল�োভকে
প্রতিহত করতে পারে, এই কাজটি যদি অপছন্দ করে, তাহলে আল্লাহ তার
সালাত কবুল করবেন।
এবং যদি সে সত্যিই ইবাদতের ব্যাপারে আন্তরিক হয়, তবে রিয়া সম্পর্কে তার
মনে আসা চিন্তাকে প্রতিহত করার জন্য নেকিও পেতে পারে।

89 চতু র্থ দার


এখন যদি ইবাদত শেষ করার পর রিয়া প্রবেশ করে, তাহলে তাতে সাওয়াবের
কমতি হবে না। কারণ ইবাদাত সঠিকভাবে শেষ করার পর রিয়া প্রবেশ করেছে।
ইবনু রজব হাম্বলি  জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম গ্রন্থে বলেছেন, যদি কেউ
একটি নেক আমল করে, এরপর তাঁর মনে সে আমল সম্পর্কে সন্তুষ্টি আসে এবং
সে তার উপর আল্লাহর অনুগ্রহে খুশি হয়, এতে তার ক্ষতি হয় না।
লেখক এরপর বলেন, ইবাদতের পর ইস্তিগফার করার বিধান দেওয়া হয়েছে
এজন্য যে, ইস্তিগফারের দ্বারা ইবাদতের ত্রুটি-বিচ্যুতি যেন পূরণ হয়ে যায়। তিনি
সুনির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়েছেন যেখানে ইবাদাতের পর ইস্তিগফারের বিধান রয়েছে।
তার মধ্য থেকে কিছু আমি ভূমিকাস্বরূপ উল্লেখ করছি।
যেমন :
™ নামাজের পর ইস্তিগফার

সহিহু মুসলিমে সাওবান  বলেছেন,


َ ُ َ ‫اللهم‬
َّ ُ ً
‫ ومنك‬،‫السالم‬ ‫أنت‬ :‫ ث َّم قال‬،‫استغفر ثالثا‬
َ ِ‫اكن إذا انرصف من صالتِه‬
ُ
‫واإلكرام‬
ُ
‫ت ياذا اجلالل‬ َ ‫تبار ْك‬ ُ
َ ،‫السالم‬

রাসুলুল্লাহ ‫ ﷺ‬তাঁর সালাত শেষ হলে তিনবার ইস্তিগফার করতেন। এরপর


বলতেন,
ُ
‫واإلكرام‬
ُ َ ‫تبار ْك‬
‫ت ياذا اجلالل‬ ُ
َ ،‫السالم‬ َ ُ
‫ ومنك‬،‫السالم‬ َ ‫اللهم‬
‫أنت‬ َّ

“হে আল্লাহ! তুমি শান্তি (সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র) এবং ত�োমার নিকট
থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমাময়, মহানুভব!”[71]

[71] সহিহ আল-জামি ; ৪৬৮৮

ইস্তিগফার 90
™ ইফাদ ও হজের পর

কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করে ইফাদ কী?


ইফাদ হজের দশম দিন, যখন হাজিগণ হজের সর্বশেষ কাজগুল�ো শেষ
করেন। মহান আল্লাহ  এ সম্পর্কে বলেন :
ُ َ َ ّٰ َّ َ ّٰ ْ ْ َ ُ َّ َ َ َ ُ ْ َ ْ ْ ُ ْ َ َّ ُ
‫الل غف ْو ٌر َّرحِيْ ٌم‬ ‫اس َتغفِ ُروا الل ۗ ا ِن‬‫ثم افِيضوا مِن حيث افاض انلاس و‬

অতঃপর ত�োমরা প্রত্যাবর্তন কর�ো, যেখান থেকে মানুষেরা প্রত্যাবর্তন করে


এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[72]
লেখক বলেছেন, রাসুল ‫ ﷺ‬হজ ও উমরা থেকে ফিরে ইস্তিগফার করতেন।

™ জিহাদের পর ইস্তিগফার

আমি আরেকটি রেওয়ায়েতের কথা বলব, যেখানে জিহাদের পরেও


ইস্তিগফারের কথা বলা আছে। সহিহু মুসলিমে আবদুল্লাহ বিন উমর -এর
বর্ণনা :
ُّ‫ك‬ َ ُ ََُْ َْ ُ َ َ َََ
ّ َ ‫ أو‬،‫الغ ْزو‬ َ َّ َ َّ
‫ب‬ِ ‫ أوِ العمرة ِ؛ يبدأ في‬،‫احل ِج‬ ِ ِ ‫أن َرسول اللِ ﷺ اكن إذا قفل مِن‬
ُ ْ ُ َ َ ُ َ ْ ُ َّ ّ َ َ ُ َّ ُ َ َ
،‫احل ْم ُد‬
َ ‫ وهل‬،‫ك‬ ‫ هل المل‬،‫شيك هل‬ ِ ‫ وحده ال‬،‫ ال إل إل الل‬:‫ ثم يقول‬،‫ِرار‬ ٍ ‫ثالث م‬
َ َ َ َ َ ٌ ‫ك يش ٍء قَد‬ ُّ
،‫ ل َِر ّبِنا حام ُِدون‬،‫ اعب ِ ُدون سا ِج ُدون‬،‫ آي ِ ُبون تائ ِ ُبون‬،‫ِير‬ ِ ‫وهو ىلع‬
ْ ‫زاب‬
ُ‫وح َده‬ َ ُ َ ْ َ َ َ َ ُ َ ْ ُ َّ َ َ َ
ْ ‫وه َز َم‬
َ ‫األح‬ ،‫ ونص عبده‬،‫صدق الل وعده‬
রাসুলুল্লাহ ‫ ﷺ‬যখন ক�োন�ো যুদ্ধ বা অভিযান থেকে বা হজ ও উমরা থেকে
ফিরে বলতেন… “সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ব্যতীত ক�োন ইলাহ নেই। তিনি
এক, তাঁর ক�োন শরিক নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। সব বিষয়ে
তিনিই সর্বশক্তিমান। আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী,
তাঁরই ইবাদাতকারী। আমরা আমাদের প্রভুর কাছে সিজদাকারী, তাঁরই
[72] সুরা বাকারা : ১৯৯

91 চতু র্থ দার


প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন। তাঁর বান্দাকে
সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাভূত করেছেন।”[73]
রাসুলুল্লাহ ‫ ﷺ‬হজ, উমরা ও জিহাদ থেকে ফিরে ইস্তিগফার করতেন। এ
বিষয়টি চিন্তার দাবি রাখে।

™ কিয়ামুল লাইল ও ইস্তিগফার

কিয়ামুল লাইলের আয়াতটি আল্লাহ  ইস্তিগফারের সাথে সমন্বিত


করেছেন।
َ ْ َ َ ْ َ ْ ُْ َ
ِ‫والمستغفِرِين بِاألسحار‬
“এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।”[74]
অন্য আয়াতে
َ ْ ُ َ َْْ َ
‫حارِ ه ْم ي َ ْس َتغ ِف ُر ْون‬ ‫وبِالس‬

“রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত�ো।”[75]


শাইখ নাসির আল-ফাহাদ বলেন, এখানে কিয়ামুল লাইলের পর ইস্তিগফারের
ব্যাপারে কিছু উলামা মত দিয়েছেন। সুরা মুজ্জাম্মিলের কিয়ামুল লাইলের
উপর দীর্ঘ আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেন,

‫واستغفروا اهلل إن اهلل غفور رحيم‬

“আর ত�োমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।”[76]

[73] সহিহুল বুখারি : ৪১১৬, সহিহু মুসলিম : ১৩৪৪


[74] সুরা আলে ইমরান : ১৭
[75] সুরা আজ-জারিয়াত : 18
[76] সুরা মুজ্জাম্মিল : ২০

ইস্তিগফার 92
যখন আপনাকে বলা হবে ‘‫‘ ’إقرأ كتابك‬ত�োমার আমলনামা পড়�ো’—সেই
আমলনামায় আপনি যা করেছেন শুধু তাই-ই লেখা থাকবে না, বরং এমন
বিষয়ও লিখিত থাকবে যা আপনার করা জরুরি ছিল কিন্তু আপনি করেননি।
কেউ কেউ পিতা-মাতার হক আদায় করে না। এই দৃশ্য খুবই বিরল যে, কেউ তার
পিতা-মাতাকে শারীরিক অত্যাচার করবে হত্যা করবে। এটা ঘটতে পারে। সম্প্রতি
আমাদের এলাকায় এমনটা ঘটেছে। ছেলে তার মাকে হত্যা করেছে। যদিও সে
নামধারী মুসলিম ছিল। কিন্তু এটা ত�ো একটা গুনাহ। কেউ যদি তার পিতা-মাতার
সাথে উচ্চস্বরে কথা বলে, সে পিতা-মাতার কাছে ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ
তাকে ক্ষমা করবেন না। এ ধরণের গুনাহ ‘‫ ’المحرمات الظاهرة‬তথা সুস্পষ্ট
হারাম বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত।
আচ্ছা কেউ হয়ত�ো পিতা-মাতার উপর অত্যাচার করল�ো না, তাদের সাথে
উচ্চস্বরে কথা বলল�ো না, এমনকি “উফ” শব্দও করল�ো না, কিন্তু সে তাদের
সাথে দেখা সাক্ষাত করে না, তাদের সেবাও করে না, তবে তার এই আচরণও
একই গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে।
ইবনু মুফলিহ বলেছেন :

‫ أو أحدهما إىل خدمة‬،‫ خدمتهما إذا احتاجا‬:‫ومن حقوقهما‬

মা-বাবার একটি হক হচ্ছে, তাঁদের যেক�োন�ো একজন বা উভয়ের সেবার


প্রয়�োজন হলে সেবা করা।
তাদের সেবা করা ফরজ। এজন্য তাদের সেবা না করাও এরূপ গুনাহের
অন্তর্ভুক্ত। সে হয়ত�ো তাদের মারধর করেনি, উচ্চস্বরে কথা বলেনি, ‘উফ’ শব্দও
করেনি, কিন্তু একই সময়ে সে তাদের সেবা করার দায়িত্বও পালন করেনি। এটাই
“‫ ”الرتوك‬বা পরিত্যাগ করা। আরেক ধাপ এগিয়ে চিন্তা করুন, সে তাদের ‘উফ’
বলে না, সে আসলে তাদের সেবা করে; তবুও তার ইস্তিগফার দরকার এই
কারণে যে, যেভাবে সেবা করার কথা সেভাবে সে সেবা করতে পারছে না।

105 ষষ্ঠ দা
َ ُ َُ َ ْ ََ ً ُ ْ َ ُ َ َ ْ ّ ً ٌَ َْ
‫في ْعتِق ُه‬ ‫تيه‬
ِ ‫يده مملوك فيش‬ِ ‫ إل أن‬،‫والا‬
ِ ‫ال يزِي ول‬

ক�োন সন্তান তার পিতার ঋণ (হক) পরিশ�োধ করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, সে যদি
তার পিতাকে ক্রীতদাস হিসেবে দেখতে পায় এবং তখনই তাকে ক্রয় করে নিয়ে
আজাদ করে দেয় (তাহলে ভিন্ন কথা)।[84]
আপনি যতই মা-বাবার হক আদায় করার চেষ্টা করুন, আপনি মা-বাবার হক
আদায় করতে পারবেন না। হাদিসে যেমন বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা
কার�ো দাস বা বন্দিতে পরিণত হয়।
এই কারণটি ব�োঝার জন্য উদাহরণ হল�ো জীবনসঙ্গীদের অধিকার, সন্তানদের
অধিকার, যাদের অপবাদ দেওয়া হয়েছে তাদের হক, বন্দীদের হক, আলিমদের
হক। কতজন পিতা-মাতা মনে করেন যে, তারা যে সন্তান জন্ম দিয়েছেন সে
সন্তানের তাদের উপর ক�োন হক নেই?
এবং একইভাবে রয়েছে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, মুসলমানদের একে অপরের
প্রতি অধিকার।
ল�োকেরা সাধারণত বান্দার হক সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ বিষয়ে অবহেলা করে, তাই
এটি “‫ ”الرتوك‬এর অধীনে পড়ে এবং এমনকি যদি কেউ এসকল হক আদায়
করার চেষ্টাও করে তারাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, কারণ তারা মানুষ যাদের
ভুল হওয়া স্বাভাবিক।
অন্যদের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত উদাহরণের পাশাপাশি “‫األمر بالمعروف‬
‫ ”وانليه عن المنكر‬তথা ‘সৎ কাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ’-এর
উদাহরণও উল্লেখ করেছেন এবং অন্তর্ভুক্ত করেছেন, সৎ কাজের আদেশ এবং
মন্দ কাজে বাধা দেওয়া যা বর্তমানের মানুষ কার্যত ভুলে গেছে।
মুসান্নাফু ইবনু আবি শাইবা (৩৭৫৭৭) গ্রন্থে আছে, হুজাইফা -কে জিজ্ঞেস
করা হয়েছিল: ‘আপনি কাকে জীবিত থেকেও মৃত মনে করেন?’

[84] সহিহু মুসলিম : ১৫১০

ইস্তিগফার 106
তিনি বলেন, যারা ‘আমর বিল-মারুফ ও নাহি আনিল-মুনকার’ পরিত্যাগ করে-
যারা সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা পরিত্যাগ করে।
তিনি তাদের জীবিত অবস্থায়ও মৃত মনে করতেন।
এ কারণেই একজন সত্যিকারের দাঈ মাটির উপরে থাকার চেয়ে নিচে থাকা
অর্থাৎ কবরকে পছন্দ করেন সেই সময়ে, যখন তিনি আমর বিল-মারুফ ওয়া
নাহি আনিল-মুনকার করতে পারেন না, বা তাকে বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং তিনি
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও এটি করতে আগ্রহী হন।
এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবহেলিত ফরজ যার প্রতিদান দুনিয়া ও
আখিরাতে ফিরে আসে। ক�োন ঘর-বাড়ি, শহর বা দেশে মুসলিহুন ব্যক্তি থাকার
দরুণ সেগুল�ো আল্লাহ তাআলার দয়ায় আল্লাহ তাআলার শাস্তি থেকে বেঁচে যায়।
মুসলিহুন হলেন সেসব ব্যক্তি, যারা নেককার এবং যারা ভাল�ো কাজের আদেশ
দেন ও মন্দ কাজ করতে নিষেধ করেন। যদিও সেখানে অনেক এমন সালিহিন
বা নেক ব্যক্তি থাকেন যারা সৎ কাজের আদেশ করে না আর মন্দ কাজে বাধাও
দেয় না।
َ ُ ْ َ ْ ُ ٰ َ ُ ْ َ ْ ُ َ ُّ َ َ َ َ َ
‫ى بِظل ٍم َوأهل َها ُم ْصل ُِحون‬ ‫وما كن ربك ِلهل ِك القر‬

‘আর ত�োমার রব এমন নন যে, তিনি অন্যায়ভাবে জনপদসমূহ ধ্বংস করে


দেবেন, অথচ তার অধিবাসীরা সংশ�োধনকারী।’[85]
কিন্তু যদি এমন সালিহিন অনেক থাকে যারা সৎ কাজে আদেশ দেয় না আর মন্দ
কাজে বাধাও দেয় না, তবে এটা আল্লাহ তাআলার আজাব আসার একটা কারণ।
َ ُ ْ ُ َ ْ َ ُ َ َ َ َ َ َ ُ َ
‫كنوا ل يَت َناه ْون َعن ُّمنك ٍر ف َعلوهُ ۚ لِئ َس َما كنوا َيف َعلون‬

‘তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত�ো না, যা তারা করত�ো। তারা যা
করত�ো, তা কতইনা মন্দ!’[86]
[85] সুরা আল-হুদ : ১১৭
[86] সুরা আল মায়িদা : ৭৯

107 ষষ্ঠ দা
কিছু ল�োক দীর্ঘদিন নাহি আনিল মুনকার করেনি। তাদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও
না তারা হাত দিয়ে বাধা দিয়েছে, না মুখে বাধা দিয়েছে, আর না অন্তরে ঘৃণা
করেছে। এভাবেই গুনাহ তাদের অন্তরে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। ইসলাম
পূর্ব জাহিলিয়াত ‘তাবাররুজাল জাহিলিয়্যাহ’ যে তাবাররুজ থেকেও বর্তমান
তাবাররুজ বেশি জঘন্য, কেন সেটা আজ একটি রীতি হয়ে উঠবে?
ইমাম কুরতুবি  নুহ, ইবরাহিম, মুসা এবং ইসা -এর যুগের ‘তাবাররুজ’-
এর বর্ণনা দিয়েছেন যা রাসুলুল্লাহ ‫ﷺ‬-এর আগে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এখন
আমাদের যুগের তাবাররুজ তাদের যুগের চেয়ে কেবল নিকৃষ্টই নয়, বরং এগুল�ো
প্রকাশ্য, সুপরিচিত এবং রীতিনীতিতে পরিণত হচ্ছে। আর�ো জঘন্য ব্যাপার হচ্ছে,
এগুল�োই এখন গ�োপনে হচ্ছে, আর যারা নির্লজ্জ, আল্লাহকে ভয় করে না,
তারা এর চেয়েও খারাপ কিছু প্রকাশ্যে করছে সেগুল�ো আর�ো নিকৃষ্ট। আশ্চর্যের
ব্যাপার হল�ো, তাদেরকে আমরা দ্বীনদারও মনে করি।
যদি নাহি আনিল মুনকার থাকত�ো তবে কি পরিস্থিতি এই পরিণতিতে প�ৌঁছাত?
আমর বিল-মারুফ ও নাহি আনিল-মুনকার হল�ো, আল্লাহ তাআলার উল্লেখ করা
সর্বপ্রথম বৈশিষ্ট্য যা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করেছে।
َ ُْ َ ْ َ َْ ْ ْ َ َْ ْ ُ َّ ُ َ ْ َ ْ ُ ُ
‫وف َوتن َه ْون َع ِن ال ُمنك ِر َوتؤم ُِنون‬
ِ ‫اس تأ ُم ُرون بِال َمع ُر‬ ِ ‫ت ل َِّلن‬ْ ‫خر َج‬
ِ ‫كنتم خي أم ٍة أ‬
ْ َ َ
َ ُ َ ُ ُ ْ َ َ ُ ْ ُ ُ ُْ ّ ُ ًْ َ َ ْ َّ َ َ َ ْ ُ ْ َ َ َ ْ َ َ َّ
‫ثه ُم الفاسِقون‬ ‫اب لكن خيا لهم ۚ مِنهم المؤمِنون وأك‬ ِ ‫بِاللِ ۗ ولو آمن أهل الكِت‬
‘ত�োমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে।
ত�োমরা ভাল�ো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর
আল্লাহর প্রতি ইমান প�োষণ করবে। আর যদি আহলে কিতাব ইমান আনত,
তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ইমানদার। তাদের
অধিকাংশই ফাসিক।’[87]
প্রকৃতপক্ষে অসৎ কাজে বাধা দেওয়ার ল�োক এখন খুবই কম, মুনকার বা মন্দ
কাজ এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কেউ হয়ত�ো চুরি বা চ�োগলখুরি করতে
[87] সুরা আলে ইমরান: ১১০

ইস্তিগফার 108
পারে না, কিন্তু সে মুসলমানদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে, মিথ্যা বলে বা সামাজিক
য�োগায�োগ মাধ্যমে এমন কিছু প�োস্ট করে যা কার�ো জন্য দেখা বা শ�োনা হারাম;
এসবই ইস্তিগফারের পূর্বের কারণের অধীনে অর্থাৎ স্পষ্ট গুনাহের অধীনে পড়ে।
কিন্তু একই সময়ে সে ছেলে বা মেয়ে, একই হারামকে ব্যক্তিগতভাবে তারা যে
অনলাইন গ্রুপে জড়িত সেখানে দেখতে পায়; অথবা সাধারণত অনলাইনে,
যেখানে এটি (গুনাহ) সাধারণ হয়ে গেছে সেখানে দেখে । যখন তাদের সামনে
এমন মাধ্যমগুল�ো সহজলভ্য হয়ে যায় তখন তারা সেই মুনকারকে বাধা দেয় না।
কার�ো কার�ো একটা ভুল ধারণা আছে এবং হয়ত�ো তারা এটা বুঝতেও পারে না
এবং তারা ভাবে অনলাইন বা সামাজিক য�োগায�োগ মাধ্যম নাহি আনিল মুনকার
থেকে মুক্ত।
হারাম দেখায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে এবং মন্দ কাজে বাধা না দিলে ইমানি শক্তি
ধীরেধীরে নিঃশেষ হতে থাকে। তখন অন্তরের অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, অন্তর
গুনাহকে আর গুনাহ মনে করে না। যা খুব বিপজ্জনক।
আপনি যখন স�োশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুল�োতে লগ ইন করেন, তখন আপনার
এবং আল্লাহর মধ্যে শর্তাবলী এবং অঙ্গীকার রয়েছে যা আপনাকে পূরণ করতে
হবে।
আমরা প্রত্যেক মুসলমানকে উপদেশ দেওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের কাছে অঙ্গীকার করেছি।
কতজন মুনকারের কিছু দেখে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে বা গ�োপনে নাসিহা দেন?
এটা অনলাইনে থাকা ব্যক্তিদের সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমি অনলাইনের
কথা বলছি কারণ সেখানেই এর অভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
তাদের বুঝতে দিন এবং জানতে দিন তাদের গুনাহ সম্পর্কে । তাদের অবস্থা ত�ো
এমন, যেন আল্লাহকে বলছে, “হে আল্লাহ আমার গুনাহ যথেষ্ট নয়, আমি যখন
ত�োমার সামনে বিচারের দিন দাঁড়াব�ো, আমার মিজানের বাম দিকের পাল্লা যেন
আর�ো গুনাহের দ্বারা ভারী হয়।” আল-ইয়াজু বিল্লাহ।

109 ষষ্ঠ দা

You might also like