Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 2

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে হিমারিয়া নীতি (গাধার নীতি অথবা Donkey's Case) কি?

আদালতে প্রতিদিন যে মোকদ্দমা হয় তার ৫০% সমস্যা হলো ভূ মি সংশ্লিষ্ট জটিলতা। আর এই ভূ মি


জটিলতার বেশীর ভাগ কেসের গভীরে গেলে আমার দেখতে পাই যে বাদি দাবি করছেন যে বিবাদী তার
উত্তরাধিকারের হক থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে। এই মোকদ্দমা আমরা অনেকটাই নিরসন করতে পারি।
যদি আমরা আমাদের ধর্মীয় ফারায়েজ নীতি গুলো ভালোভাবে জানি এবং তা সঠিক ভাবে পালন করি।
তাই আমি আজকে গাধার নীতির সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করবো। আমার এই আলোচনার উদ্দেশ্য হলো
নিজেদের মাঝে কমেন্টে আলোচনা করে নিজেদের ভূ ল সংশোধন করে নেওয়া। তাই আমার শেয়ার করা
কোনো ইনফরমেশনে ভু ল থাকলে তা আমাকে জানাবেন আমি নিজে তা সংশোধন করে নিবো।

উত্তরাধিকার সূত্রে ইসলামী আইন অনুসারে, একজন মৃত ব্যক্তির ভাই/বোনদের উত্তরাধিকারের কিছু
অধিকার দেওয়া হয়। এ ব্যপারে ইসলামী আইনের নীতি রয়েছে যা ‘হিমারিয়া’ বা গাধার মামলা হিসেবে
সুপরিচিত।

শরীয়া আইনে গাধার মামলা কী?

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উ’মর (রাঃ) এর খেলাফতের জমানায় তাঁর কাছে উত্তরাধিকার নিয়ে
একটি সমস্যা উপস্থাপন করা হয়।

মোকাদ্দমাটি নিম্নরুপঃ

“মৃত বেক্তির ২ জন সহোদর ভাই, ২ জন বৈপিত্রেয় ভাইর এর সাথে মাতা ও স্বামী বর্ত মান। স্বামী,
মাতা, বৈপিত্রেয় ভাই সকলেই কুরআনিক অংশীদার এবং সহোদর ভাই অবশিষ্টভোগী।”

ইসলামী উত্তরাধিকার অনুযায়ী হযরত উ’মর (রাঃ) যে বন্টন নীতি দেন তা নিম্নরুপঃ

স্বামীর অংশ ১/২, মাতার অংশ ১/৬, ২ জন বৈপিত্রেয় ভাই এর অংশ ১/৩ অংশ। এদের অংশের
যোগফল (১/২ + ১/৬ + ১/৩) = ১ । সুতরাং ২ জন সহোদর ভাই এর জন্য আর কোন অবশিষ্ট অংশ
থাকে না।

তখন সহোদর ভাইয়েরা খলিফার কাছে আরজি জানান যে, তারা মৃত ব্যক্তির আপন ভাই অথচ তারা
কিছু পাবে না, কিন্তু মৃত ব্যক্তির বৈপিত্রেয় ভাইয়েরা পাবে এটা অযোক্তিক। খলিফা হযরত উ’মর (রাঃ)
বললেন যে, সন্তান-সন্ততি না থাকার জন্য তার স্বামী ১/২, এবং একাধিক ভাই থাকার জন্য মাতা ১/৬
এবং সন্তান-সন্ততি এবং পিতা না থাকায় বৈপিতৃ য় ভাইয়েরা ১/৩ অংশ কুরআনিক অংশ পেয়েছে।
অতঃএব, অবশিষ্ট না থাকায় আপন ভাইয়েরা বঞ্চিত হয়েছে। কাজেই তাদের জন্য কিছু করার নাই।

সহোদর ভায়েরা আবার আরজ করলঃ “হে আমিরুল মুমিনীন, মৃত ব্যক্তির আপন ভাই হওয়ার জন্য যখন
আমরা উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছি, তখন না হয় আমাদের পিতা কোন ‘হিমারিয়া’ অর্থাৎ গাধা হতো
তাহলে কি আমরা বৈপিতৃ ীয় ভাইদের সাথে উত্তরাধিকার পেতে পারি না?

এবার খলিফা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন ১/৩ অংশ সহোদর ভাই এবং বৈপিতৃ ীয় ভাইদের মধ্যে বন্টন
করার নির্দে শ দেন। এ ঘটনা আল হিমারিয়া বা মোকাদ্দমা নামে খ্যাত। উক্ত ঘটনার এ নীতি প্রয়োগ
করে স্বামী ১/২, মাতা ১/৬, ২ বৈপিতৃ ীয় ভাই এবং সহোদর ভাই ১/৩ অংশ (প্রতেক্যে ১/১২ অংশ) প্রদান
করা হয়।

এই নীতিকে বলা হয় ‘হিমারিয়া’ নীতি। বিচার সম্পর্কীয় ন্যয়পরায়নতা ইসলামী আইনে ‘ইসতিহসান’
নামে পরিচিত। এই ইহতিসানের উপর ‘হিমারিয়া’ নীতি প্রতিষ্ঠিত।
তবে, এখানে লক্ষনীয় বিষয় হলো ‘হিমারিয়া’ নীতি কেবল মালিকী ও শাফিঈ মাযহাবের আইনবিদগণ
অনুসরণ করে থাকেন।

পক্ষান্তরে, হানাফী ও হাম্বলির মতো অন্যান্য আইনবিদগণ ‘হিমারিয়া’ নীতিকে প্রত্যাখান করেছেন। কারণ
তাদের অভিমত হলো যে, সহোদর ভায়েরা ‘হিমারিয়া’ এর জন্য আবেদন করার জন্য তারা স্বার্থপর।

শরীয়ত এপ্লিকেশন এক্ট ১৯৩৭ অনুযায়ী এই আইন বাংলাদেশে থাকা অল্প কিছু শাফি এবং মালিকি
মাজাবের মুসলমানদের উপর কার্যকর হলেও তা আমার জানামতে বাংলাদেশে অবস্থানকরী হানাফি
মাজহাব এর মুসলমানদের উপর তা কার্যকর না।

আপনারা যদি এই আলোচনা থেকে উপকৃ ত হয়ে থাকেন তা হলে জানাবেন। আমি ভবিষ্যতে আমার
সীমিত জ্ঞান থেকে আরও কিছু নীতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

You might also like