Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 5

সু ন্নাহ বু ঝার মূ লনীতি

লেখক
ড. সোলাইমান বিন সালেহ আস সিনইয়ান
১ম মূ লনীতি
 আল্লাহ এবং রাসূ ল সা. এর বাণী যথাসাধ্য তাদের উদ্দেশ্য অনু যায়ী বু ঝা জরুরী।
এখানে অনেকগুলো বিষয় লক্ষণীয়-
১. বিষয় পদ্ধতি – আল্লাহ এবং রাসূ ল সা. তাদের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে দিয়েছেন। যেমন-

ِ ‫َو َما َأرْ َس ْلنَا ِمن َّرسُو ٍل ِإاَّل ِبلِ َس‬


‫ان قَ ْو ِم ِه لِيُبَي َِّن لَهُ ْم‬
“আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার
বোঝাতে পারে।” [সূ রা ইবরাহীম : ৪]
আল্লাহ এবং রাসূ ল সা. এর বাণী কেন সু স্পষ্ট হবে না? অথচ আমরা জ্ঞান, শক্তি এবং ইচ্ছা সবই
সেখান থেকে পাই।
আল্লাহ তা’আলা কুরআনের নামকরণ করেছেন ‘মু বীন’ বলে। আর এই কুরআনের আয়াতগুলো
সু স্পষ্ট এবং অন্যান্য বিষয়কে স্পষ্ট করে। কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি হয়তো তার অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোকে
প্রকাশ করে, আর না হয় রাসূ ল সা. তা স্পষ্ট করেন।
শাইখু ল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, রাসূ ল সা. সাহাবায়ে কিরামের জন্য কুরআনের
বাণীকে ঠিক এমনভাবেই স্পষ্ট করেছেন যেভাবে কুরআন বর্ণনা করেছে তাদের জন্য। যেমন আল্লাহ
তা’আলা বলেন,
ِ َّ‫لِتُبَي َِّن لِلن‬
‫اس َما نُ ِّز َل ِإلَ ْي ِه ْم‬
“যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃ ত করেন।” [সূ রা নহল : ৪৪] এই আয়াত সব
কিছু কে অন্তর্ভ ক্ত করেছে।
আব্দু র রহমান আস সু লামী রহ. বলেন, সাহাবায়ে কিরাম যখন কুরআন পড়তেন, যেমন উসমান,
আব্দু ল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহুম আজমাঈনসহ অন্যান্যরা। তখন তারা ১০টি আয়াত তিলাওয়াত
শিখলে এই দশ আয়াতের ইলম, আমল, বিধি-বিধান ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূ র্ণ জ্ঞানার্জ ন না করে
সামনে অগ্রসর হতেন না। এই জন্য তারা বলেন, আমরা কুরআন শিখতাম ইলম ও আমলসহ। এ
জন্যই একটি সূ রা শিখতে আমাদের দীর্ঘদিন লেগে যেত।
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কোন মানু ষ যখন সূ রা বাক্বারা বা সূ রা আল ইমরান
পড়তেন তখন মনে হতো এটা আমাদের চোখের সামনে। (অর্থাৎ এই সূলা
বক্তব , ফজিলত, শিক্ষা, বিধান ইত্যা দি ) অথবা আমাদের চক্ষু শীতল হয়ে
যেত।
ইবনে ওমর রাদি য়া ল্লা হু আনহু র সূরা বাক্বা রা হিফজ করতে সময় লে গে
ছিলো অনেক বছর । কোন কোন বর্ণানায় আছে আট বছর লেগেছিল।
আল্লাহ তা’আলা নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন কু রআনকে সুস্পষ্ট করে
বুঝি য়ে দে য়া র । যেমন আল্লাহ বলেন,
‫ُث َّم ِإنَّ َع َل ْي َنا َب َيا َن ُه‬
“এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব।” [সূ রা কিয়ামা : ১৯] অর্থাৎ কুরআনের উদ্দেশ্য বু ঝিয়ে দেয়া।
এরপর আল্লাহ আরো বলেন,
ُ‫فَِإ َذا قَ َرْأنَاهُ فَاتَّبِ ْع قُرْ آنَه‬- ُ‫ِإ َّن َعلَ ْينَا َج ْم َعهُ َوقُرْ آنَه‬
“এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমারই দায়িত্ব। অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের
অনু সরণ করুন। ” [সূ রা কিয়ামা : ১৭-১৮]
আর আল্লাহ রাসূ ল সা. কে এর ওয়াদা দিয়েছিলেন যে, কুরআন হিফজ এবং অর্থের সংরক্ষণ তিনি
নিজে করবেন। সু তরাং এই আয়াতকে সামনে রেখেই রাসূ ল সা. উম্মাতকে অহির শব্দ এবং এর অর্থ
শিখিয়েছেন।
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন, কুরআনের যে সব ফরজের উল্লেখ রয়েছে তার বিবরণ নিন্মোক্ত উপায়ে
হয়ে থাকে।
ক. এমন কিছু ফরজের উল্লেখ রয়েছে যার সম্পূ র্ণ বিবরণ কুরআনের মধ্যেই বর্ণনা করা হয়েছে। এটা
বু ঝার জন্য অন্য কিছু র মু খাপেক্ষি হওয়ার প্রয়োজন নেই।
খ. আবার এমন কিছু আবশ্যকিয় বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে রাসূ ল সা. এর আনু গত্য
করা ফরজ করা হয়েছে। অতপর রাসূ ল সা. আল্লাহর পক্ষ থেকে সেগুলোর বিবরণ দিয়েছেন। কিভাবে
ফরজ করা হয়েছে, কার উপর ফরজ করা হয়েছে, কখন তার ফরজিয়্যাত দূর হবে, কখন সেটা
পু ণরায় আবার সাবিত হবে এবং ওয়াজিব হবে ইত্যাদি।
তার মধ্যে আবার এমন কিছু বিষয় আছে, যা রাসূ ল সা. হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন, এবং তা
বু ঝার জন্য কুরআনের প্রয়োজন হয় না। অথচ সে বিষয়গুলোর বিবরণ সবই কুরআনে রয়েছে।
এরপর হলো সু ন্নাহ/হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট করণ :
এর মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো এমনিতেই স্পষ্ট। তার মধ্য থেকে একটি হলো- রাসূ ল সা.
সাহাবায়ে কিরামের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কিছু বিষয় সু স্পষ্ট করেছেন, যা রাসূ লের কথা থেকে বু ঝতেন
না। যেমন-রাসূ ল সা. বললেন ( ‫ون‬ َ ‫ ) َس َب َق ْال ُم َفرِّ ُد‬সাহাবা য়ে কিরাম (  ‫َس َب َق‬
َ ‫ ) ْال ُم َفرِّ ُد‬কি তা বুঝলে ন না । তখন সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন ‫ون‬
‫ون‬ َ ‫ُم َفرِّ ُد‬
কি? রাসূল সা. বললে ন , ‫ات‬ َّ ‫ُون هَّللا َ َك ِثيرً ا َو‬
ُ ‫الذاك َِر‬ َّ “অধিক
َ ‫الذا ِكر‬
জিকিরকারী ও অধিক জিকিরকারিনী।” [মুসলিম : ২৬৭৬]
অনুরূপভাবে একটি হাদিস অপর হাদিসকে স্পষ্ট করে। সত ু রাং এক হাদিস
কিভাবে অপর হাদিসকে স্পষ্ট করে তা নি ন্মে পেশ করা হলো -
আল্লাহ কর্তৃ ক কু রআন সুন্নাহর স্পষ্ট করার অর্থ হলো- এমন ওলামায়ে কিরাম
প্রস্তুত করা, যারা কু রআন-সুন্না হকে স্পষ্ট করবে প্র য়ো জন অনুপাতে । আল্লাহ
তা’আলা বলেন,
‫اس َواَل َت ْك ُتمُو َن ُه‬ َ ‫ِين ُأو ُتوا ْال ِك َت‬
ِ ‫اب َل ُت َب ِّي ُن َّن ُه لِل َّن‬ َ ‫َوِإ ْذ َأ َخ َذ هَّللا ُ مِي َث‬
َ ‫اق الَّذ‬
আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানু ষের নিকট বর্ণনা
করবে এবং গোপন করবে না। [সূ রা আল ইমরান : ১৮৭]

দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো-


আল্লাহ ও রাসূল সা. এর উদ্দেশ্য সম্পর্কি ত জ্ঞানার্জ ন করা আমাদের পক্ষে
সম্ভব। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যেগুলো আল্লাহ নিজ থেকে খাছ
করেছেন। যেমন-কতিপয় ওলামায়ে কিরামের মতে বিভিন্ন সূরার শুরুতে যে
হুরুফে মুকাত্তয়াত রয়েছে তা।
এই জন্য আল্লাহ মুশরিকদেরকে তিরস্কার করে বলেন,
‫ِين ُأو ُتوا ْالع ِْل َم َم َاذا َقا َل آ ِن ًفا‬
َ ‫ِك َقالُوا لِلَّذ‬ َ ‫ْك َح َّت ٰى ِإ َذا َخ َرجُوا ِمنْ عِ ند‬ َ ‫َو ِم ْنهُم مَّن َيسْ َت ِم ُع ِإ َلي‬
‫وب ِه ْم َوا َّت َبعُوا َأهْ َوا َء ُه ْم‬
ِ ُ‫ِين َط َب َع هَّللا ُ َع َل ٰى قُل‬ َ ‫ۚ ُأو ٰ َل‬
َ ‫ِئك الَّذ‬
“তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে
যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি কি বললেন ? এদের অন্তরে আল্লাহ
মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খু শীর অনু সরণ করে।” [সূ রা মু হাম্মাদ :
১৬]

You might also like