Download as pdf or txt
Download as pdf or txt
You are on page 1of 26

কৃতজ্ঞতা

আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে চাই সেই মানুষগুলোর প্রতি যারা আমাকে এই গবেষণা কাজে
সহায়তা করেছেন। যারা অনেক ধৈর্যের সাথে আমার সাথে কথা বলেছেন এবং আমাকে তাদের
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দিয়েছেন। যারা অকপটে তাদের বর্ত মান এবং অতীত অবস্থা সম্পর্কে আমাকে
একটি সম্যক ধারণা দিয়েছেন যা আমার গবেষণা কাজকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।
আমি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা সহকারী অধ্যাপক আসমা আক্তার আঁ খির পরামর্শ, অনুপ্রেরণা ও
যথাযথ দিকনির্দে শনা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করছি। যার মাধ্যমে আমি গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয় শিখতে পেরেছি। পুরো গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করতে যারা বিভিন্ন পর্যায়ে অবদান
রেখেছেন তা ঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

1
সারসংক্ষেপ

আর্থ- সামাজিক বলতে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ ও সামাজিক জীবনের মধ্যে সম্পর্ক কে বুঝানো হয়।
আর অন্যদিকে সংকট হলো কঠিন বিপদ বা সমস্যা। গ্রাম, শহর বা নগরের এক গুরুত্বপূর্ণ
চালিকাশক্তি হলো রিকশাচালকরা। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে বাদ দিয়ে সমাজ বা দেশের উন্নয়ন
ঘটানো সম্ভব নয়। তাই আমাদের উচিত রিকশাচালকদের আর্থ-সামাজিক জীবনের সংকট ও
অনিশ্চয়তাগুলোর বর্ত মান চিত্র তু লে ধরা এবং তাদেরকে সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় আনতে
সহায়তা করা।রিকশাশ্রমিকদের অনেকেই তাদের অধিকার সম্পর্কে সজাগ নন। তাদের অধিকারের
বিষয়টি নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। তাদের আয় হয়তো এখন বেড়েছে। কিন্তু তারা অধিকারহীন।
তাদের অধিকারের কথা সরকারি নানা পর্যায়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

2
সূচিপত্রঃ পৃষ্ঠা নং
প্রথম অধ্যায়ঃ গবেষণা প্রস্তাবনা
১.১। ভূ মিকা.....................................
১.২। গবেষণার উদ্দেশ্য......................
১.৩। গবেষণার যৌক্তিকতা ও তাৎপর্য..
১.৪। গবেষণার সীমাবদ্ধতা........................
১.৫। উপসংহার.........................................
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ সাহিত্য পর্যালোচনা
২.১। ভূ মিকা............................................
২.২। সাহিত্য পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা.....
২.৩। উপসংহার........................................
তৃ তীয় অধ্যায়ঃ তাত্ত্বিক কাঠামো
৩.১। ভূ মিকা..............................................
৩.২। তাত্ত্বিক কাঠামো..................................
৩.৩। উপসংহার..........................................
চতু র্থ অধ্যায়ঃ গবেষণা এলাকা
৪.১। গবেষণা এলাকার বর্ণনা......................
৪.২। তথ্যের উৎস................…....................
৪.৩। সমগ্রক ও নমুনা.....…..........................
পঞ্চম অধ্যায়ঃ গবেষণা পদ্ধতি
৫.১। ভূ মিকা........…....................................
৫.২। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি.................................
৫.৩। সাক্ষাৎকার পদ্ধতি...............................
৫.৪। নমুনায়ন পদ্ধতি...................................
ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ তথ্য বিশ্লেষণ ও গবেষণার ফলাফল
৬.১। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি.......................
৬.২। তথ্য বিশ্লেষণ.......................................

3
সারণি ১.১...........................................
সারণি ১.২......…..................................
সারণি ১.৩..…......................................
সারণি ১.৪...........................................
সারণি ১.৫…........................................
৬.৩। ফলাফল প্রাপ্তি.............................
সপ্তম অধ্যায়ঃ উপসংহার ও সুপারিশমালা
অষ্টম অধ্যায়ঃ তথ্যপঞ্জি........................
নবম অধ্যায়ঃ পরিশিষ্ট..........................
দশম অধ্যায়ঃ চিত্র সংযুক্তি...................

4
প্রথম অধ্যায়
গবেষণা প্রস্তাবনা
১.১। ভূ মিকা
আমার গবেষণার বিষয় হলো " চট্টগ্রামের রিকশাচালকদের আর্থ- সামাজিক জীবনের সংকট,
অনিশ্চয়তা এবং সরকারি সুযোগ সুবিধার উপর একটি সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা"। মাঝে মাঝে জীবন
জুড়ে যে বাহনটি বড় আপন মনে হয়, সেটির নাম রিকশা। ত্রিচক্রের এক রঙ বেরঙের যান। ব্যস্ত
নাগরিক জীবনের এক অপরিহার্য বাহন। বাংলাদেশের রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলি সবখানেই
এই বাহনটি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা "রিকশার নগর" নামে বেশ পরিচিত। রিকশার
ইতিহাস বেশ পুরনো ইতিহাস। বাংলাদেশসহ চীন,জাপান, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া,
ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে রিকশার বেশ পরিচিত আছে। বাংলা ভাষায় আমরা যে রিকশা বলি, এই রিকশা
শব্দটি এসেছে জাপানি "জিনরিকিশা" শব্দ থেকে। চীনা ভাষায় "জিন" শব্দের অর্থ মানুষ, "রিকি"
শব্দের অর্থ শক্তি এবং "শা" শব্দটির অর্থ বাহন। অর্থাৎ একত্রিত অর্থ দা ঁড়ায় মানুষের শক্তিতে চলা
বাহন। দেশভেদে এই রিকশার আকার ও গঠনগত ভিন্নতা রয়েছে। যেমন-
১। চীনে সানলুঞ্চে,
২। কম্বোডিয়ায় সীক্লো,
৩। মালয়েশিয়ায় বেকা এবং
৪। ফ্রান্সে স্লাইকো ইত্যাদি নামে পরিচিত।
আবার ইউরোপের অনেক দেশে পেডিক্যাব নামেও পরিচিত। সুপ্রাচীন কাল থেকে সর্বপ্রথম জাপানে
রিকশার অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেগুলো ছিলো দুই দিকে দুই চাকা আর সামনে চাকার বদলে একজন
মানুষ ঠেলে নিয়ে যেত। এগুলোকে হাতেটানা রিকশা বলা হতো। রিকশার শুরু ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৯
সালের মাঝামাঝি সময়ে পালকির বিকল্প হিসেবে এর উত্থান। জোনাথন স্কোবি নামক একজন মার্কি ন
নাগরিক ১৮৬৯ সালে রিকশা উদ্ভাবন করেন। ১৯০০ সালে কলকাতায় এর ব্যবহার শুরু হলেও
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯১৯ বা ১৯২০ সালের দিকে মিয়ানমার হয়েই রিকশার আগমন ঘটে। ঢাকায়
রিকশা কিন্তু রেঙ্গুন থেকে আসে নি। এসেছিলো কলকাতা থেকে। নারায়ণগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের
পাট ব্যবসায়ীদের কল্যাণে। আমরা জানি রিকশাচালক হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি অর্থের
প্রয়োজনে রিকশা চালায়। সাধারণত তার নিজের কোনো রিকশা থাকে না, সে ভাড়া করে রিকশা
চালায় বিনিময়ে মালিককে তার প্রতিদিন ১২০-২৭০ টাকা প্রদান করতে হয় কিন্তু দিনপ্রতি তার
উপার্জন ৪০০-৬০০ টাকা বা তারচেয়ে কিছু টা কম বা বেশি। সে বস্তিতে বসবাস করে এবং তার জীবন
দুঃখ -কষ্টে পরিপূর্ণ । খুবই কম মানুষ আছে এই শহরে যারা রিকশায় চড়তে পছন্দ করে না।
"রিকশায় চড়ার একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে।
মাথা সামান্য উঁচু করলেই আকাশ দেখতে পাওয়া যায়। "
---হুমায়ূন আহমেদ

5
১.২। গবেষণার উদ্দেশ্য
" চট্টগামে রিকশাচালকদের আর্থ-সামাজিক জীবনের সংকট, অনিশ্চয়তা এবং সরকারি সুযোগ
সুবিধার উপর একটি সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা।"- এই গবেষণাটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে তিনটি ভাগে ভাগ
করা হয়েছে।
ক) বয়স্কদের রিকশা চালানোর মতো কঠিন কাজে নিযুক্ত হওয়ার যথোপযুক্ত কারণ জানা।
খ) রিকশাচালকদের পারিবারিক ও মানসিক বিপর্যয় সম্পর্কে জানা।
গ) রিকশাচালকদের জন্য সরকার হতে প্রাপ্ত সহায়তার আওতায় আনার কার্যকরী উপায় উদ্ভাবন
করা।

১.৩। গবেষণার যৌক্তিকতা ও তাৎপর্য


পেশা হচ্ছে কোন ব্যক্তির নির্দি ষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ পরবর্তী জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী বা
অন্য কোনো বৃত্তিবিশেষ। পৃথিবীতে ছোট বড় নানান ধরনের পেশা রশেছে। কোনো পেশা কোনো
অংশেই কম নয়। সমাজে চলতে গেলে আমাদেরকে কোনো না কোনো প্রয়োজনে প্রায় সকল ধরনের
পেশার মানুষের উপর নির্ভ রশীল হতে হয়। সেই হিসেবে আমাদেরকে রিকশাচালকদেরও শরণাপন্ন হতে
হয়। কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখি নি তারা কতটা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। তাদেরকে প্রতিনিয়ত
বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অলস পরিশ্রমবিমুখ বাঙালির একেবারেই প্রিয় বাহন এই রিকশা।
যেখানে অবলীলায় হেঁ টে যাওয়া যায় সেখানেও "এই রিকশা চলো" বলে বাঙালি সাহেব রিকশায় চেপে
একটা মহা আনন্দ পান। একজন রিকশা চালায় আর তার কাঁধে চড়ে যান দুজন বা তারও বেশি। এই
মানুষগুলোর ব্যথা কেউ বোঝে না। তাই সমাজের বা দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের তাদের সহায়তার
জন্য এগিয়ে আসা উচিত। যেমন-
১। বিনা পয়সায় চিকিৎসার আওতায় আনা,
২। তাদের ছেলে মেয়েদের বিনা পয়সায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করা,
৩।সামান্য পরিমাণে হলেও তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং সর্বোপরি সার্বিক সহযোগিতা করে
তাদের পাশে থাকা সকলের মানবিক দায়িত্ব।

6
১.৪। গবেষণার সীমাবদ্ধতা
মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেকটা ভিন্ন । এই গবেষণা কার্য সম্পাদন করতে গিয়ে
বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারনে সীমিত তথ্য সংগ্রহ করতে
হয়েছে এবং করোনাকালীন পরিস্থিতি হওয়ার দরুন তথ্যদাতাদের কাছ থেকে দূরত্ব অবলম্বন করে
তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। যার ফলে কথা বুঝতে কিছু টা সমস্যা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময়
নিয়ে গবেষিত জনগোষ্ঠীকে পর্যবেক্ষণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দা ঁড়ায়। তাছাড়াও অনেক তথ্যদাতা
ঠিকমতো তাদের তথ্য দিতে চাইতো না এবং তারা সময় দিয়ে কথা বলতে চাইতো না ফলে কিছু ক্ষেত্রে
অস্পষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছিলো। গবেষককে সরকারের প্রতিনিধি মনে করে অনেকে সরকারের
বিভিন্ন সমালোচনা করে গবেষকের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে থাকেন।তথ্যদাতাকে প্রায়ই
স্মৃতিশক্তির ওপর নির্ভ র করে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা গিয়েছে যা সঠিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে
একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা। এইক্ষেত্রে কৌশলে তাদের সাথে বেশি সময় নিয়ে কথা বলতে হয়েছে যার
কারণে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করে থাকেন। জরিপ কাজে পেশা নির্ধারণের বিষয়টিও একটি বড়
রকমের সমস্যা, তারা তাদের পিতার একাধিক পেশা থাকার দরুন সঠিকভাবে পেশার নাম বলতে
পারেন না।

১.৫।উপসংহার
প্রতিটি গবেষণার ক্ষেত্রেই গবেষণার যৌক্তিকতা বা গুরুত্বের দিকটি বিবেচনা করা হয়। কারণ মানুষের
সময়, শ্রম ও অর্থের সদ্ব্যবহার করাই সবার কাম্য। কাজেই এমন কোনো বিষয় নিয়ে গবেষণা করা
উচিত নয় যার সামাজিক বা একাডেমিক গুরুত্ব নেই। একটি গবেষণা সামাজিক সমস্যা সমাধানে বা
সামাজিক উন্নয়নে কতটা ভূ মিকা পালন করবে, জ্ঞানের বিকাশে গবেষণাটি কতটু কু সহায়ক ভূ মিকা
পালন করবে, কোনো গবেষণার যৌক্তিকতা বিচারে এসব প্রশ্নের উত্তর খুবই প্রাসঙ্গিক।

7
দ্বিতীয় অধ্যায়
সাহিত্য পর্যালোচনা
২.১। ভূ মিকা
সাহিত্য পর্যালোচনা যে কোনো গবেষণা প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গবেষণার প্রতিটি পদক্ষেপে
এটি মূল্যবান অবদান রাখে। যে কোনো গবেষণা শুরুর পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই বিষয়ের উপর বিদ্যমান
সাহিত্যসমূহ পর্যালোচনা করা। প্রস্তাবিত এই গবেষণাকে আরও সূক্ষ্ম করার জন্য আমরা প্রাসঙ্গিক
বিষয়ে পরিচালিত পূর্ববর্তী কিছু গবেষণা, নিবন্ধ, জার্নাল পর্যালোচনা করেছি।
ক)বিবিসি নিউজে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় রিকশাচালক নিয়ে প্রকাশিত জার্নালে বলা হয়েছে, অন্তত
১৫ থেকে ২২ ভাগ রিকশাচালক এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে চান। তারা গ্রামাঞ্চলে
গিয়ে অন্য একটা পেশায় যুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন। (মুন্নি আক্তার, বিবিসি বাংলা ঢাকা, ২৭জুন,
২০১৯)
খ)অন্য একটি অনলাইন প্রবন্ধে, কোভিড-১৯ মহামারীতে বাংলাদেশের রিকশাচালকদের মানসিক
স্বাস্থ্যের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। (ফারিয়া আহমেদ এবং রিদওয়ান ইসলাম সিফাত,
৩০নভেম্বর,২০২০)
গ)জে,ওয়ারেন (৭ এপ্রিল, ২০২১) ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রেসে, সিঙ্গাপুরের রিকশাচালক এবং
সামাজিক সংগঠন, ১৮৮০-১৯৪০, নামক একটি অনলাইন জার্নাল প্রকাশ করেন।

২.২। সাহিত্য পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা


সাহিত্য পর্যালোচনার মূল উদ্দেশ্য থাকে গবেষকের নির্দি ষ্ট বিষয়টিতে যে যথেষ্ট জ্ঞান আছে সেটি
একটি বিশেষ শ্রেণির পাঠকের কাছে পরিষ্কার করা। পরবর্তী সময়ে, গবেষণা প্রতিবেদন লেখার সময়
এটি বিদ্যমান জ্ঞানের সাথে গবেষণার ফলাফলের সমন্বয় ঘটিয়ে পূর্ববর্তী গবেষণাসমূহ সমর্থন বা
বিরোধিতা করতে সাহায্য করে। এটি গবেষণার মূল বিষয়বস্তু বা সমস্যাকে স্পষ্ট করতে সাহায্য করে।
গবেষক নির্ধারিত বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহিত্য পর্যালোচনার সাহায্য নিতে পারেন।
অন্যদের গবেষণা থেকে শিখতে ও নতু ন ধারণায় উদ্দীপ্ত হতে সাহিত্য পর্যালোচনার ভূ মিকা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ । সর্বোপরি এটি গবেষণার ফলাফলকে প্রাসঙ্গিক করে তু লতে সাহায্য করে।

২.৩। উপসংহার
যেহেতু কোনো গবেষণার মূল উদ্দেশ্যই থাকে প্রচলিত জ্ঞানের ওপর ভর করে নতু ন জ্ঞান তৈরি করা,
তাই প্রচলিত জ্ঞান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা পালন করে। এই প্রচলিত জ্ঞানের একটি প্রধান উৎস
হলো প্রাসঙ্গিক সাহিত্য। প্রাচীনকাল থেকেই মানবজাতির সব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও দর্শন সংরক্ষণ করা
হয়েছে লেখনীর মাধ্যমে। প্রচলিত এসব জ্ঞান গবেষককে কোনো সমস্যার বিভিন্ন দিকসমূহ নিয়ে
ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে সাহিত্য পর্যালোচনা একটি দিকনির্দে শক
হিসেবে কাজ করে।

8
তৃ তীয় অধ্যায়
তাত্ত্বিক কাঠামো
৩.১। ভূ মিকা
সমাজ গবেষকরা যে কোনো সামাজিক প্রপঞ্চের বিশ্লেষণ করতে গেলে সে সামাজিক প্রপঞ্চ বা
বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি তত্ত্ব ব্যবহার করেন। এ তত্ত্ব ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অতীতে
একই বিষয়ে সমাজ গবেষকরা যে সব তত্ত্ব উদ্ভাবন ও ব্যবহার করেছেন তার একটি মূল্যায়ন করে তা
থেকে গবেষকের গবেষণাধীন সমস্যাটি বিশ্লেষণের জন্য যে তত্ত্বটি অধিক কার্যকর মনে হয় তা তিনি
গ্রহণ করেন। তত্ত্বের সাথে গবেষণার সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। বস্তুত তত্ত্ব ছাড়া যেমন গবেষণা করা প্রায়
অসম্ভব, তেমনি গবেষণা ছাড়াও তত্ত্ব সৃষ্টি করা যায় না। তথ্য সংগ্রহের কাঠামো নির্ধারণে তত্ত্ব
প্রয়োজনীয় নির্দে শনা দান করে। তত্ত্ব সামাজিক গবেষণার ফলাফলকে সামান্যীকরণের মাধ্যমে সবার
কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

৩.২।তাত্ত্বিক কাঠামো
রিকশাচালকদের সামাজিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তাদের সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ার জন্য
যে উপাদানটি কাজ করছে তা মার্ক সীয় শ্রেণি এবং শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
তিনি শ্রেণি চিহ্নিত করতে গিয়ে বলেন, তারা শ্রম সংগঠনে তাদের ভূ মিকা যেমন তারা উৎপাদনের
কাজে নিয়োজিত থাকে, নাকি তদারকি করে নাকি তাদেরকে পরিচালনা করে। মানব সমাজের ইতিহাস
শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস। স্বাধীন মানুষ এবং দাস, সম্রান্ত শ্রেণি এবং নিম্নশ্রেণিভু ক্ত মানুষ, গিল্ড-প্রভূ
এবং দিনমজুর, এককথায় শোষক এবং শোষিত একে অপরের মুখোমুখি হয়। রিকশাচালকদের ক্ষেত্রে
দেখা যায় এইখানে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য লেগে আছে অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বটি প্রযোজ্য।
ডু র্খেইম শ্রমবিভাজন তত্ত্বের যান্ত্রিক সংহতিতে যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি হতে খুব কমই পৃথক
থাকে অর্থাৎ সকলেই একইরকম আচার-ব্যবহার ও চিন্তা চেতনা এবং মূল্যবোধের অধিকারী হয়ে
থাকে। সে কারণে এ সংহতিকে একটি যন্ত্রের সাথে তু লনা করা হয়েছে যেখানে একটি যন্ত্রের প্রতিটি
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ নিজ নিজ কাজ করে যন্ত্রটি সচল রাখে। যন্ত্রের একটি অংশ অন্যটির ওপর এত
বেশি নির্ভ রশীল যে একটি বিকল হলে পুরো যন্ত্রটি বিকল হয়ে যায়। আর যন্ত্রটি যখন সচল থাকে
তখন এর সকল অংশই সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ রিকশাচালকরা হলেন দিনমজুর তাই তাদের উপার্জনের
উপর পুরো পরিবার নির্ভ রশীল থাকে। যেদিন তার উপার্জন যেমন সেদিন তার পরিবারের অবস্থাও
তেমন। উপার্জন ভালো হলে তার কপালে ভালো খাবার জোটে।

৩.৩। উপসংহার
সমাজ গবেষণা এবং তত্ত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে একদিকে
যেমন তত্ত্ব সৃষ্টি করা হয়, তেমনি তত্ত্বও নিত্য নতু ন সমাজ গবেষণায় উৎসাহিত করে। বাস্তব
পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অনেক সময় তত্ত্বের সংশোধনীও আনা হয়। এ প্রক্রিয়ার ফলে তত্ত্ব এবং গবেষণা
পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। আর এতে করে তত্ত্বের যথার্থতা, বিশ্বাসযোগ্যতা,
নিশ্চয়তা ও সংগতি বিধানে গবেষণা কার্যকর ভূ মিকা রাখে।

9
চতু র্থ অধ্যায়
গবেষণা এলাকা

৪.১।গবেষণা এলাকার বর্ণনা


বর্ত মান গবেষণায় বাংলাদেশের সকল রিকশাওয়ালাকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কিছু এলাকাকে
গবেষণা এলাকা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জোবরা গ্রামের অন্তর্ভু ক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এলাকা এবং ষোলশহরকে নির্বাচন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত
ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রাম। এইখানে মুসলমান, হিন্দু ও বৌদ্ধ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের
রিকশাচালকের বসবাস। এইখানে বিভিন্ন পেশা ছেড়ে রিকশাচালানোকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার
মতো অসংখ্য মানুষ রয়েছে। ফলে এই গ্রামটি হতে গবেষণা করে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে তা
বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মনে করি।

৪.২। তথ্যের উৎস


বর্ত মানে গবেষণায় মূলত প্রাথমিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে গবেষণার তাত্ত্বিক
কাঠামো নির্মাণ, গবেষণা পদ্ধতির বিন্যাস এবং প্রাথমিক তথ্যের বিশ্লেষণের প্রয়োজনে মাধ্যমিক
উৎসের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থ, জার্নাল, প্রবন্ধ ও পত্রপত্রিকার সাহায্য
নেওয়া হয়েছে।

৪.৩। সমগ্রক ও নমুনা


জোবরা গ্রামটির পূর্ববর্তী বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়, এইখানে ১৮ এবং তদূর্ধ্ব বছর বয়সী মোট
রিকশাচালক প্রায় ১৪০০ জন। এই জনসমষ্টিকে সমগ্রক হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সমগ্রক থেকে সরল
নির্বিচারী পদ্ধতিতে ১০৩জন ব্যক্তিকে নমুনা হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। এদের নিকট থেকে সুনির্দি ষ্ট
প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এখানে এই ১০৩ জন ব্যক্তিই হল গবেষণার নমুনা
আকৃতি।

10
পঞ্চম অধ্যায়
গবেষণা পদ্ধতি
৫.১। ভূ মিকা
কোনো গবেষণার জন্য সমস্যা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গবেষণা পদ্ধতির বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় আনতে
হয় কেননা যে সমস্যাটি চিহ্নিত করা হলো সেটি কোন পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে তা জানা
আবশ্যক। তা ছাড়া যখন কোনো সমস্যার ওপর গবেষণা করা হবে বলে প্রস্তাব লিখতে হয়, তখন মূলত
পদ্ধতির ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং যারা ওই প্রস্তাবটি মূল্যায়ন করেন তারাও মূলত
দেখে থাকেন যে, গবেষক বিষয়টি সম্পর্কে কোনো গবেষণা পরিচালনা করতে পারবেন কিনা। তাই
গবেষণা পদ্ধতি সমস্যা নির্বাচনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আমি এই গবেষণা কার্যে তিনটি
পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তা হলো- পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি, সাক্ষাৎকার পদ্ধতি এবং নমুনায়ন পদ্ধতি।

৫.২। পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি


সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণ হচ্ছে কোনো ঘটনা বা বিষয়কে অবলোকন করা বা দেখা। এ অর্থে প্রতিটি
মানুষই পর্যবেক্ষক। কেননা প্রতিদিনই তারা কোনো না কোনো কিছু দেখে। তথ্য সংগ্রহের জন্য
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি কৌশল যাতে অনুসন্ধানকারী সরাসরি প্রশ্ন না করে তথ্য সংগ্রহ
করেন। কোনো গবেষণাকর্ম শুরু করার জন্য প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হিসেবে এ পদ্ধতি খুব কার্যকর।

৫.৩। সাক্ষাৎকার পদ্ধতি


তথ্য সংগ্রহের যে কয়টি পদ্ধতি রয়েছে সাক্ষাৎকার পদ্ধতি তন্মধ্যে অন্যতম। এ পদ্ধতিতে একটি
সাক্ষাৎকারমালা বা প্রশ্নমালা ব্যবহার করে উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সাক্ষাৎকারের
মাধ্যমে কোনো বিষয়ে বা উত্তরদাতার নিজ অবস্থা বা পরিবার সম্পর্কে তথ্য বা মতামত নেওয়া হয়।
এতে সরাসরি উত্তরদাতা গবেষক বা তথ্য সংগ্রহকারীকে দেখার বা ভাব বিনিময়ের সুযোগ পান।

৫.৪। নমুনায়ন পদ্ধতি


কোনো গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের জন্য সমগ্রকের অন্তর্ভু ক্ত প্রতিটি এককই অধ্যয়ন করা হবে নাকি
বাছাইকৃত একক অধ্যয়ন করা হবে এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। সমগ্রক থেকে বাছাইকৃত এককগুলোকে
নমুনা এবং যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নমুনা বাছাই বা নির্বাচন করা হয় তাকে নমুনায়ন বলে। জোবরা গ্রামের
১৪০০ রিকশাওয়ালার মধ্য থেকে ১০৩ জন মানুষকে বাছাই করে তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিটি হলো
নমুনায়ন পদ্ধতি।

11
ষষ্ঠ অধ্যায়
গবেষণার ফলাফল
৬.১। তথ্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি
গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজটি শুরু করতে
হয়। এরপর প্রাপ্ত তথ্যসমূহের বিশ্লেষণ করতে হয়। তবে তথ্য বিশ্লেষণের কাজটিকে অত্যন্ত সহজতর
করার জন্য তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজটি এমনভাবে সম্পাদন করতে হয়, যাতে গবেষক কাঙ্ক্ষিত
তথ্যটি অতি সহজে পেতে পারেন। মূলত তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের এ প্রক্রিয়াটিতে কয়েকটি ধাপ
রয়েছে। যথাঃ
ক) প্রশ্নমালা সম্পাদনা
খ) তথ্যের সংকেতায়ন ও সম্পাদনা
গ) তথ্যের শ্রেণিবদ্ধকরণ
ঘ) সারণিবদ্ধকরণ
ঙ) গাণিতিক অর্থবহতা যাচাই
কিন্তু আমি আমার এই গবেষণায় মূলত তথ্যের শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সারণিবদ্ধকরণ এই দুটি প্রক্রিয়ায়
ফলাফল অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবো।

৬.২।তথ্য বিশ্লেষণ
তথ্য সংগ্রহের পরই প্রশ্ন দেখা দেয় কিভাবে এ তথ্য সহজে বোধগম্য করে উপস্থাপন করা যায়।
ক) তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস
খ) তথ্যের সারণিকরণ
গ) তথ্যের চার্ট তৈরিকরণ
ইত্যাদি পন্থা অবলম্বন করে তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়।

12
সারণি ১.১। তথ্যদাতাদের এলাকাভিত্তিক সারণিঃ
জেলা তথ্যদাতার সংখ্যা শতকরা
চট্টগ্রাম ৬৭জন ৬৫.০৫%
বরিশাল ৯জন ৮.৭৪%
নেত্রকোনা ৬জন ৫.৮৩%
নোয়াখালী ৯জন ৮.৭৪%
লক্ষ্মীপুর ৯জন ৮.৭৪%
ভোলা ৩জন ২.৯১%
মোট ১০৩জন ১০০%
উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১
তথ্যদাতাদের এলাকা নির্ধাণের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি ছিলো চট্টগ্রামের রিকশাচালক
এরপর আছে বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর। নেত্রকোনা ও ভোলার রিকশাচালক সবচেয়ে কম।

সারণি ১.২। তথ্যদাতাদের বয়সভিত্তিক সারণিঃ


বয়স তথ্যদাতার সংখ্যা শতকরা

২০-৩০ ২৩জন ২২.৩৩%


৩১-৫০ ৬০জন ৫৮.২৫%
৫১-৭০ ২০জন ১৯.৪২%
মোট ১০৩জন ১০০%
উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১
উপরোক্ত সারণি থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ৩১থেকে ৫০ বয়সী রিকশাচালকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

13
সারণি ১.৩।তথ্যদাতাদের ধর্মভিত্তিক সারণিঃ
ধর্ম তথ্যদাতার সংখ্যা শতকরা

ইসলাম ৬৫জন ৬৩.১১%


হিন্দু ২৪জন ২৩.৩০%
বৌদ্ধ ১৪জন ১৩.৫৯%
মোট ১০৩জন ১০০%
উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১
তথ্যদাতাদের ধর্মভিত্তিক সারণি থেকে দেখতে পাচ্ছি যে, গবেষিত জনগোষ্ঠীদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের
অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক যা শতকরা হিসাবে ৬৩.১১%। অন্যান্য ধর্মের রিকশাচালক তু লনামূলক
ভাবে অনেক কম।

সারণি ১.৪।তথ্যদাতাদের শিক্ষাগত বিন্যাসঃ


শিক্ষাগত যোগ্যতা তথ্যদাতার সংখ্যা শতকরা

নিরক্ষর ৭১জন ৬৮.৯৩%


অক্ষরজ্ঞান- ৩২জন ৩১.০৭%
সম্পন্ন
মোট ১০৩জন ১০০%
উৎসঃ সামাজিক গবেষণা ২০২১
উপরোক্ত সারণি থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রিকশাচালকদের মধ্যে অধিকাংশই নিরক্ষর যা ঔশতকরা
৬৮.৯৩%। মোটামুটি অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন যারা আছে তারাও পড়াশোনা কম থাকার কারণে এবং আর্থিক
সমস্যার জন্য রিকশাচালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

14
সারণি ১.৫। তথ্যদাতাদের মাসিক আয়ের বিন্যাসঃ
মাসিক আয় তথ্যদাতার সংখ্যা শতকরা

৫০০০-৯০০০ ৬৩জন ৬১.১৭%

৯০০০-১৩০০০ ৩০জন ২৯.১৩%

১৩০০০-১৭০০০ ৭জন ৬.৭৯%

১৭০০০-২১০০০ ৩জন ২.৯১%

মোট ১০৩জন ১০০%

উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১


সুতরাং আমরা রিকশাচালকদের মাসিক আয়ের আনুমানিক বিন্যাস থেকে দেখতে পাচ্ছি, সর্বাধিক
সংখ্যক রিকশাচালকদের আয় ৫০০০-৯০০০ এর মধ্যে যা তাদের পারিবারিক সদস্য এবং অন্যান্য ব্যয়
অনুযায়ী অনেক কম।
নিম্নে ধর্মভিত্তিক বিন্যাসের বৃত্তচিত্র দেখানো হলো

উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১


চিত্রঃ ধর্মভিত্তিক বিন্যাসের বৃত্তচিত্র

15
রিকশাচালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দন্ডচিত্রঃ

উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১


চিত্রঃ শিক্ষাগত যোগ্যতার দন্ডচিত্র

রিকশাচালকদের মাসিক আয়ের দন্ডচিত্রঃ

উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১

চিত্রঃ মাসিক আয়ের দন্ডচিত্র

16
তথ্যদাতাদের পূর্ববর্তী পেশার বৃত্তচিত্রঃ

উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১


চিত্রঃ পূর্ববর্তী পেশার বৃত্তচিত্র

তথ্যদাতার পেশার সন্তুষ্টিগত বিন্যাসঃ

উৎসঃ সামাজিক জরিপ ২০২১


চিত্রঃ পেশার সন্তুষ্টিগত বৃত্তচিত্র

17
৬.৩। ফলাফল প্রাপ্তি
আমি আমার গবেষণার এই অধ্যায়টিতে রিকশাচালকদের বিভিন্ন ধরনের তথ্যের বিশ্লেষণ
পরিসংখ্যানিক উপায়ে দেখানোর চেষ্টা করেছি। রিকশাচালকদের এলাকাভিত্তিক বিন্যাস থেকে
দেখেছি, গবেষিত জনগোষ্ঠীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো চট্টগ্রামের রিকশাচালক। অন্যান্য অঞ্চলের
রিকশাচালক তু লনামূলক ভাবে কম। তাদের বয়সভিত্তিক বিন্যাস থেকে দেখেছি, ২০থেকে ৩০ বয়সী
রিকশাচালক ছিলো ২২.৩৩%। সবচেয়ে বেশি ছিলো ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক যা
৫৮.২৫% এবং সবচেয়ে কম ১৯. ৪২% ছিলো ৫১ থেকে ৭০ বছর বয়সী রিকশাচালক। এদের মধ্যে
সর্বাধিক সংখ্যক রিকশাচালক ইসলাম ধর্মের অনুসারী যা প্রায় ৬৩.১১%। পাশাপাশি হিন্দু ও বৌদ্ধ
ধর্মাবলম্বীর রিকশাচালকও ছিলো তবে তা ছিলো যথাক্রমে ২৩.৩০% ও ১৩.৫৯%। তাদের শিক্ষাগত
যোগ্যতার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, রিকশাচালকদের একটা বড় গোষ্ঠীই হলো নিরক্ষর। এ
থেকে বুঝা যায় তারা মূলত অক্ষরজ্ঞানহীন হওয়ার কারণেই এই পেশাকে বেছে নিয়েছে। আবার তাদের
মাসিক আয় জানতে গিয়ে দেখলাম অধিকাংশ রিকশাচালকদেরই নিজের কোনো রিকশা নেই ফলে
তারা তাদের আয়ের একটা বিরাট অংশ রিকশার প্রকৃত মালিককে দিয়ে দেওয়ার ফলে তাদের হাতে যা
থাকে তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তাছাড়াও তারা তাদের সন্তানদের পড়াশোনা
চালিয়ে যেতে পারেন না ঠিকমতো সীমিত আয়ের কারণে। ফলে তারা কেউই এই পেশায় সন্তুষ্ট নয়।
কিন্তু তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হওয়ার কারণে তারা পেশাও পরিবর্ত ন করতে পারছেন না। তাদের
পূর্ববর্তী পেশা সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা গেল তারা অনেকেই পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই ছিলেন
রিকশাচালক ।আবার কেউ কেউ ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, চায়ের দোকানী, প্রবাসী কিংবা কৃষক। তাদের
প্রায়ই সবার পিতার পেশা ছিলো কৃষিকাজ।

18
সপ্তম অধ্যায়
উপসংহার ও সুপারিশমালা

আমার গবেষণার বিষয় হলো রিকশাচালকদের আর্থ- সামাজিক জীবনের সংকট, অনিশ্চয়তা এবং
সরকারি সুযোগ সুবিধার উপর একটি সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। গবেষণা কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে যে
সকল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি তার প্রেক্ষিতে উক্ত সমস্যাসমূহের সমাধান খো ঁজার করার চেষ্টা
করবো। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের উচিত সমস্যাসমূহের যথোপযুক্ত সমাধান অনুসন্ধান করা নতু বা তা
আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে তাদের সমস্যাসমূহের জন্য কিছু সুপারিশমালা নিম্নে তু লে ধরা হলো-
১। রিকশাচালকরা যে হারে হেনস্তার স্বীকার হচ্ছে তা বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২। তারা যেন পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।
৩।তারা যেন তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
৪। তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
৫। পুলিশি হয়রানি বন্ধ করে তাদেরকে অবাধে রিকশা চালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।
৬। তাদের আয়ের পুরো অংশ যেন তারা পায় তার জন্য তাদের নিজস্ব রিকশার প্রয়োজন।
৭। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ তাদের সামর্থ্যের মধ্যে ক্রয় করতে পারার মতো পদক্ষেপ নেওয়া।
সুতরাং রিকশাচালকদের মতো একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার
পরিবর্ত ন না ঘটিয়ে কখনো একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফলে এলাকার গণ্যমান্য
ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকতাদের উচিত এই সকল জনগোষ্ঠীর চাহিদাসমূহ
যথাযথভাবে পূরণ করার জন্য এগিয়ে আসা।

19
অষ্টম অধ্যায়

তথ্যপঞ্জিঃ
১.আলম, ড.খুরশিদ – সমাজবিজ্ঞানের ধ্রুপদী ও আধুনিক তত্ত্ব, সপ্তম সংস্করণ।
২. আলম, ড.খুরশিদ -সমাজ গবেষণা পদ্ধতি।
৩. অধ্যাপক মোঃ আবদুল মান্নান ও সামসুন্নাহার খানম মেরী- সামাজিক গবেষণা ও পরিসংখ্যান
পরিচিতি।
৪. মোমিন মেহেদী, জুলাই ১১,২০১৯।
৫. মুন্নি আক্তার, বিবিসি বাংলা ঢাকা।

20
নবম অধ্যায়
পরিশিষ্ট

১.প্রাথমিক অংশঃ
এলাকাঃ
গ্রামের বাড়ি/ জেলাঃ
রিকশার ধরনঃ
▪ অটো
▪ ম্যানুয়াল
১.১।নামঃ
১.২।বয়সঃ
১.৩।লিঙ্গঃ
▪ নারী
▪ পুরুষ
▪ অন্যান্য
১.৪।ধর্মঃ
▪ ইসলাম
▪ হিন্দু
▪ বৌদ্ধ
▪ খ্রিস্টান
১.৫।বৈবাহিক অবস্থাঃ
▪ বিবাহিত
▪ অবিবাহিত
▪ একপত্নীক
▪ বহুপত্নীক
১.৬।আপনার সন্তান সংখ্যাঃ

21
২.শিক্ষাগত গতিশীলতাঃ
২.১। আপনি পড়াশোনা করেছেন?
▪ নিরক্ষর
▪ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন
ক) কতটু কু পড়েছেন?
খ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ
২.২। সুযোগ পেলে কি আর পড়তে চাইবেন?
▪ হ্য াঁ
▪ না
২.৩।আপনার বাবা পড়াশোনা করেছে?
▪ হ্য াঁ
▪ না
ক) হ্য াঁ হলে কতটু কু পড়েছে?
▪ প্রাথমিক
▪ মাধ্যমিক
২.৪।আপনার মা পড়াশোনা করেছে?
▪ হ্য াঁ
▪ না
২.৫।আপনার সন্তানদের শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ক)
খ)

৩. পেশাগত গতিশীলতাঃ
৩.১। আপনার পূর্ববর্তী পেশা কি ছিলোঃ
ক)এই পেশায় আসার কারণ কি?
৩.২। আপনার স্ত্রী কি কোন পেশায় সম্পৃক্তঃ
▪ হ্য াঁ
▪ না
ক) হ্য াঁ হলে কারণ কিঃ

22
৩.৩।আপনার সন্তানদের কেউ কি কোনো পেশায় যুক্ত আছেঃ
▪ হ্য াঁ
▪ না
ক) হ্য াঁ হলে কোন পেশায় সম্পৃক্তঃ
৩.৪। আপনার বাবার পেশা কি ছিলোঃ
৩.৫। (বয়স বেশি হলে) এই বয়সে রিকশা চালানোর যথোপযুক্ত কারণ কিঃ
৩.৬। আপনি কি এই পেশার সাথে সবসময়ই যুক্ত থাকতে চান নাকি পরিবর্ত ন করতে চান?

৪. পরিবার সংক্রান্তঃ
৪.১। পরিবারের সদস্যসংখ্যাঃ
৪.২।আপনার বাবা মা কি আপনার সাথে থাকে?
▪ হ্য াঁ
▪ না
ক) না হলে কারণ কি?
৪.৩।(বহুবিবাহ হলে) সকল স্ত্রীদের সমানভাবে ভরণপোষণ করেন?
▪ হ্য াঁ
▪ না
ক) না হলে কারণ কি?

৫. দৈনিক ও মাসিক আয় সংক্রান্তঃ


৫.১। আপনার নিজের রিকশা আছে?
▪ হ্য াঁ
▪ না
৫.২।ভাড়া হলে রিকশার মালিককে দৈনিক কত টাকা দিতে হয়?
৫.৩।আপনার দৈনিক আয় কত?
৫.৪।আপনার মাসিক আয় কত?
৫.৫। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে কোনো সমস্যা হয়?

23
৫.৬। উপার্জনের অন্য কোনো মাধ্যম আছে?
▪ হ্য াঁ
▪ না

৫.৭। আপনি কি এই পেশায় সন্তুষ্ট?


৫.৮। কখনো সামাজিকভাবে হেনস্তার স্বীকার হয়েছেন?
▪ হ্য াঁ
▪ না
৫.৯। আপনি আপনার পেশাকে সম্মান করেন?
▪ হ্য াঁ
▪ না

৬. আর্থিক অনুদান সংক্রান্তঃ


৬.১। (বয়স্ক হলে) বয়স্ক ভাতা পান?
▪ হ্য াঁ
▪ না
৬.২।সরকারি অনুদানের কতটু কু আসে আপনার কাছে?
৬.৩।এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আর্থিকভাবে সাহায্য করে?
▪ হ্য াঁ
▪ না

24
দশম অধ্যায়
চিত্র সংযুক্তিঃ

চিত্রঃ জোবরা গ্রামের মানচিত্র

চিত্রঃ সামাজিক মানচিত্র

25
তথ্য সংগ্রহের কিছু চিত্র সংযোজন করা হয়েছে।

26

You might also like