Download as pdf or txt
Download as pdf or txt
You are on page 1of 13

জনীতিক ভূ মিকা, রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃ তি

millioncontent.com

January 31, 2023

সামরিক বাহিনীর রাজনীতিক ভূ মিকা

অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে সামরিক বাহিনীর রাজনীতিক
ভূ মিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে সামরিক বাহিনীর রাজনীতিক
মনোভাব এবং সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীর ভূ মিকা মূলত দুটি পরিবর্ত নীয়ের (variable) উপর
নির্ভ রশীল। এই দুটি পরিবর্ত নীয় হল: (১) সামরিক বাহিনীর প্রকৃ তি (nature of the military) এবং (২)
অসামরিক সরকারের শক্তি-সামর্থ্য (strength of the civilian government ) অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর
ভূ মিকা নির্ধারক হিসাবে অধ্যাপক বল দুটি পরিবর্ত নের কথা বলেছেন।

সামরিক বাহিনীর প্রকৃ তি:

সামরিক বাহিনীর আকৃ তি-প্রকৃ তিই বহুলাংশে তার রাজনীতিক মনোভাব ও ভূ মিকাকে প্রভাবিত করে
থাকে। কোন কোন সামরিক বাহিনী অন্যান্য সামরিক বাহিনীর তু লনায় অধিক পেশাদারী বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এই
পেশাদারী মনোভাব সমাজে সামরিক বাহিনীর মর্যাদাবোধকে প্রভাবিত করে। এর থেকেই সামরিক বাহিনীর
মধ্যে নিজেদের সম্পর্কে গর্ববোধ এবং সমাজের অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে স্বাতন্ত্র্যবোধের সৃষ্টি হয়। এবং এর
মাধ্যমেই সামরিক বাহিনীর বৈশিষ্ট্যযুক্ত মূল্যবোধ ও মনোভাবের অভিব্যক্তি ঘটে। আবার বাধ্যতামূলক
নিযুক্তির ভিত্তিতে গঠিত সৈন্যবাহিনী এবং স্বেচ্ছামূলকভাবে গঠিত সৈন্যবাহিনীর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত
হয়। তবে এ প্রসঙ্গে ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসাবে বল সুইজারল্যাণ্ডের সামরিক বাহিনীর কথা বলেছেন। তিনি
বলেছেন: “... though few match the military conscription of the Swiss, with their
conception of a citizen army with intermittent military service for all males from
twenty to fifty years.” কোন কোন সামরিক বাহিনীতে নিযুক্তির ব্যাপারে বাছাই করা বা এলিট
ব্যক্তিবর্গের (elite recruitment) উপর জোর দেওয়া হয়। আবার কোন কোন সামরিক বাহিনীতে
নিয়োগের ক্ষেত্রে কৃ ষিজীবী সম্প্রদায় এবং নিম্ন-মধ্যবিত্তদের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই কারণে
বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সামাজিক পটভূ মিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন সামরিক
বাহিনীর বিশেষজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত বিচক্ষণতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার ক্ষেত্রে তারতম্য থাকে। এবং তার
ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর সামর্থ্যের মধ্যে

1
পার্থক্য দেখা যায়। সামরিক বাহিনী অসামরিক সরকারকে প্রভাবিত করুক বা না করুক অথবা সরকারী
ক্ষমতা দখল করুক বা না করুক, হিংসার আশ্রয় গ্রহণ, রাজনীতিক অভিজ্ঞতার অভাব ও সরকারী
কার্যপ্রক্রিয়ায় সামরিক মূল্যবোধ ও পদ্ধতির প্রয়োগ সামরিক বাহিনীর দুর্বলতারই দ্যোতক।

রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃ তি:

সামরিক বাহিনীর রাজনীতিক ভূ মিকার অন্যতম নির্ধারক হিসাবে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার প্রকৃ তির
বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। একটিমাত্র রাজনীতিক দলের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বা শিল্পোন্নত
উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কম থাকে। বিপরীতক্রমে
যে সমস্ত রাষ্ট্রে অসামরিক সরকার জনসাধারণের আনুগত্য অর্জ নে ব্যর্থ এবং মর্যাদাহীন, সেই সমস্ত রাষ্ট্রে
সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ক্ষমতা সাধারণত বেশী। কিন্তু অসামরিক সরকারের পিছনে বৈধতা
বর্ত মান থাকে। সামরিক বাহিনী হল এই বৈধতাবিযুক্ত। অসামরিক সরকারের শাসনাধিকার জনগণের
সার্বভৌমত্ব ও ঐতিহ্যগত ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সমস্ত কারণের জন্য বলা হয় যে অসামরিক
সরকারের মারাত্মক রকম দুর্বলতা ও ত্রুটি বিচ্যুতি যদি না থাকে, তা হলে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ সফল
হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই কম। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বলের একটি দীর্ঘ মন্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
তিনি বলেছেন: “The political stability is not always based on the level of socio-economic
development-a comparison of Germany between 1918 and 1933 and India since
1947 is sufficient to cast doubts on the certainty of that relationship - but the lower
the level of economic development, the greater the likelihood of a weaker basis of
legitimacy for the civilian governments."

অসামরিক সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কতকগুলি কারণের জন্য অত্যন্ত জটিল
হয়ে পড়ে। এই সমস্ত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সামরিক ও অসামরিক কর্তৃ পক্ষের মূল্যবোধের মধ্যে
সংঘাত, সংশ্লিষ্ট মূল্যবোধের দৃঢ়তা, অসামরিক সরকারের কার্যপ্রক্রিয়ার জটিলতা প্রভৃ তি। রাজনীতিক
ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ভূ মিকা গভীরভাবে পর্যালোচনার স্বার্থে এবং সংশ্লিষ্ট নির্ধারক বা পরিবর্ত নীয়গুলি
পর্যালোচনার জন্য বল কতকগুলি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপের কথা বলেছেন। এই বিষয়গুলি হল:

● (১) সামরিক বাহিনীর সীমাবদ্ধ হস্তক্ষেপ (limited interference by the military),


● (২) প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ( direct interference) এবং
● (৩) সামরিক শাসনে রূপান্তরিত হস্তক্ষেপ (interference leading to military rule)।

প্রকৃ ত প্রস্তাবে অধ্যাপক বল এইভাবে সামরিক বাহিনীর বিবিধ রাজনীতিক ভূ মিকার কথা বলেছেন।

(১) রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় সীমিত হস্তক্ষেপ

2
সীমিত হস্তক্ষেপের প্রকৃ তি: সামরিক বাহিনী সরকারী নীতিকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে। বিশেষত
সরকারের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিকে প্রভাবিত করার ব্যাপারে সামরিক বাহিনী বিশেষভাবে উদ্যোগী
হয়। তা ছাড়া সামরিক বাহিনী নিজেদের চাকরির শর্ত াদি এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা সরকারের কাছ
থেকে আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়। এ হল রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর সীমিত হস্তক্ষেপ।
সামরিক বাহিনী দেশের রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় এ ধরনের সীমিত হস্তক্ষেপের সুযোগ পেয়ে থাকে। এবং এ
ধরনের সীমিত হস্তক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হল বিশেষ কোন নীতিকে সরকারী মাধ্যমে বাস্তবে রূপায়িত করা
এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দাবি-দাওয়া পূরণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু সামরিক বাহিনী কর্তৃ ক
অসামরিক সরকার অপসারিত করার বা সরকারের সিদ্ধান্ত বা নির্দে শকে অগ্রাহ্য করার ঘটনা সচরাচর ঘটে
না। এই কারণে, বলের অভিমত অনুসারে, উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক বিষয়ে সামরিক
বাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপের ঘটনা নিতান্তই ব্যতিক্রম বিশেষ, একে নিয়ম বলা যায় না। Modern
Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বল বলেছেন: "Direct military intervention in the
political process is the exception rather than the rule in liberal democracies and
socialist states."

বিভিন্ন উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণ-সামরিক বাহিনী অসামরিক কর্তৃ পক্ষের অধীনে থাকে: দেশের
রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনী সীমিত হস্তক্ষেপের যে সুযোগ-সম্ভাবনা পেয়ে থাকে তাও সর্বক্ষেত্রে
সমান নয়। সাধারণত সামরিক বাহিনী স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
অসামরিক সরকারের আদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। একটি রাজনীতিক দলের শাসনাধীনে পরিচালিত
রাষ্ট্রেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ-সামরিক কর্তৃ পক্ষের নির্দে শ ও নিয়ন্ত্রণাধীনে
সামরিক বাহিনী পরিচালিত হয়। মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, হল্যাণ্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যাণ্ড,
ভারত প্রভৃ তি সকল উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এবং গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন প্রভৃ তি এক-দলীয়
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অসামরিক সরকারী কর্তৃ পক্ষের অধীনে থেকে সামরিক বাহিনী তার কাজকর্ম
পরিচালনা করে। এই সমস্ত দেশের অ-সামরিক সরকারের বৈধতাকে সংশ্লিষ্ট সামরিক বাহিনী কখনও
চ্যালেঞ্জ জানায় নি। যদিও উল্লিখিত কোন কোন দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে গৌরবোজ্জ্বল সামরিক
ঘটনা ও রাজকীয় মহিমা জড়িত আছে। মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র সশস্ত্র সামরিক তৎপরতার মাধ্যমে ইউরোপীয়
নিয়ন্ত্রণ থেকেস্বাধীনতা অর্জ ন করেছে। কিন্তু মার্কি ন রাজনীতিক ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর অ-সামরিক
সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকার বিষয়টি বিরোধ-বিতর্কে র ঊর্ধ্বে। তবে মার্কি ন বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ ও
নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পেন্টাগণের চাপকে অস্বীকার করা যায় না। তবে বাস্তব বিচারে এই চাপ হল পরোক্ষ এক
রাজনীতিক চাপ। প্রকৃ ত প্রস্তাবে মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীর উপর অ-সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠিত আছে। অনুরূপভাবে সপ্তদশ শতাব্দীতে ক্রমওয়েল (Cromwell)-এর নেতৃ ত্বাধীন সামরিক
নিয়ন্ত্রণের কথা বাদ দিলে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী সাধারণভাবে অ-সামরিক কর্তৃ পক্ষের অধীনে আছে। গ্রেট
ব্রিটেনের অ-সামরিক সরকারের রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ অনুপস্থিত। তবে
যুদ্ধকালীন অবস্থায় অ-সামরিক ও সামরিক কর্তৃ পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে র বিষয়টি পৃথক মাত্রা
লাভ করে। তবে তা হল একান্তভাবে অস্বাভাবিক অবস্থার এক ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন:
“...it should be noted that war conditions are exceptional in affecting the
civilian-military relationship in all political system."

3
উদারনীতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অ-সামরিক কর্তৃ পক্ষের প্রাধান্য: উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
অ-সামরিক সরকারের দৃঢ়ভিত্তিক বৈধতা এবং সামরিক কর্তৃ পক্ষের উপর প্রাধান্যের কারণ হিসাবে এই
ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থার কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই
সমস্ত বৈশিষ্ট্য এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি হল: স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ইতিহাস, জাতীয়
ঐক্য ও সংহতি, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃ ত স্থায়ী এক প্রক্রিয়া এবং রাজনীতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে
শান্তিপূর্ণ ও বিশেষভাবে স্বীকৃ ত পন্থা-পদ্ধতির অস্তিত্ব। তা ছাড়া উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
জনসাধারণের সার্বভৌমত্বের ধারণা ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিশেষভাবে স্বীকৃ ত এবং প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সমস্ত
কিছু সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক ব্যবস্থায় অ-সামরিক সরকারের বৈধতাকে দৃঢ়ভিত্তিক করে। সমকালীন
রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতিক দলের মত অন্যান্য গোষ্ঠীও আছে। এই সমস্ত গোষ্ঠীও রাজনীতিতে
সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে সামরিক
বাহিনীর নৈতিক অধিকার বা কর্তৃ ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তাছাড়া অন্যান্য রাজনীতিক ব্যবস্থায়
সামরিক বাহিনী যে মর্যাদা ভোগ করে, উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা পায় না, এবং এই ধরনের
রাজনীতিক ব্যবস্থায় অ সামরিক বাহিনীর স্বাতন্ত্র্যের উপরও তেমন একটা গুরুত্ব আরোপ করা হয় না। এ
প্রসঙ্গে বলের একটি মন্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: “The effect of the long British
influence on the Indian army and to a lesser extent on the Malaysian armed forces
may be a factor in the avoidance, in these states of direct military intervention since
independence, although the history, economic development and social structure offer
sharp contrasts with the more industrialised liberal democracies."

মার্কি ন অ-সামরিক ও সামরিক কর্তৃ পক্ষ: তবে উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক সামরিক
হস্তক্ষেপের কোন সম্ভাবনা থাকে না, তা কিন্তু নয়। এ ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনী অ
সামরিক সরকারকে মর্যাদা দেয় এবং মেনে চলে। এতদসত্ত্বেও রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা পালন
করে। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “President Eisenhower, in his farewell message in 1961,
warned of a 'military-industrial complex, that could dominate the government of the
United States. " মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক খাতে বাজেটের বহর বিরাট। মার্কি ন সামরিক যন্ত্রপাতি
অতিমাত্রায় জটিল প্রকৃ তির। মার্কি ন পররাষ্ট্র নীতির উপর মার্কি ন সামরিক নীতির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া
অনস্বীকার্য। এই সমস্ত কারণে মনে করা হয় যে মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে
সামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। এতদসত্ত্বেও এ বিষয়ে দ্বি-মতের অবকাশ নেই যে মার্কি ন
সরকারের একটি মৌলিক নীতিই হল অ-সামরিক সরকারের প্রাধান্য। প্রকৃ ত প্রস্তাবে বৃহত্তর মার্কি ন সমাজের
যাবতীয় মৌলিক মূল্যবোধের অন্যতম অংশীদার হল মার্কি ন সামরিক বাহিনী। সুতরাং মার্কি ন সামরিক
বাহিনীর মূল্যবোধের মধ্যে মার্কি ন সমাজেরই মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। অতএব এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের মাত্রা
প্রতিরক্ষা দপ্তরের মত অ-সামরিক সংগঠনের দক্ষতার উপর নির্ভ রশীল। এ প্রসঙ্গে বল মন্তব্য করেছেন: “...
military is one group among many attempting to influence relevant decision-making,
and the controls are essentially similar to those exercised over other groups in the
American system of government."

4
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও সামরিক বাহিনীর উপর অসামরিক কর্তৃ পক্ষের প্রাধান্য থাকে: উদারনীতিক
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও সামরিক বাহিনীকে অ-সামরিক কর্তৃ পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে
থাকে। সামরিক বাহিনীর উপর অ-সামরিক সরকারের এই প্রাধান্য বা কর্তৃ ত্বের ব্যাপারে উদারনীতিক
গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে মোটামুটি সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “In
socialist states such as the Soviet Union, civilian supremacy over the armed forces is
as worked as in most liberal democracies."

বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক সরকারী ব্যবস্থা এবং এক-দলীয় রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনী ছাড়াও অন্যান্য সশস্ত্র
বাহিনী গড়ে তোলা হয়। এই সমস্ত বাহিনীর রাজনীতিক বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দল ও
সরকারের সম্পূর্ণ আস্থা থাকে। আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে গোলযোগ নিবারণ ও নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং সামরিক
অভ্যুত্থানের আশংকা রোধে এই সমস্ত বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। আবার নাৎসীবাদী বা ফ্যাসিবাদী
স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন নেতার রাজনীতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে নিরঙ্কুশ করার জন্য এ রকম
বাহিনী গঠন করা হয়। এ প্রসঙ্গে বলের দীর্ঘ মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: “It is also useful for
socialist government to build up armed forces that are completely separate from the
regular army, and in whose political reliability the government can fully trust. These
forces are used for internal security and as a 'countervailing force' that can, if
necessary, be used against the attempts at military takeover."

(২) প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ

রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ: রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ বলতে কী বোঝায়
সে বিষয়ে আলোচনা করা আবশ্যক। রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ সামরিক নিয়ন্ত্রণ বা পরিপূর্ণ সামরিক
শাসনের অবস্থাকে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বলা হয় না। এ হল এক মধ্যবর্তী অবস্থা। রাজনীতিক
প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর সীমিত হস্তক্ষেপ এবং পূর্ণাঙ্গ সামরিক শাসন বা সামরিক নিয়ন্ত্রণের এক
মধ্যবর্তী অবস্থাকেই বলা হয় প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ। এ রকম সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা যে-কোন
ধরনের রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই ঘটতে পারে। বল বলেছেন: "Direct interference by the military in
politics, but falling short of the assumption of power by the military, may occur in any
type of political system.” রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপের পিছনে নানা কারণ বা উদ্দেশ্য
বর্ত মান থাকে। এই সমস্ত উদ্দেশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কোন একটি অ-সামরিক সরকারের অপসারণ
এবং সামরিক বাহিনীর পছন্দমাফিক অন্য কোন অ-সামরিক সরকারের ক্ষমতাসীনকরণ, সামরিক
বাহিনীর বিশেষ কোন উদ্দেশ্য সাধন প্রভৃ তি। সামরিক বাহিনী অনেক সময় বাহিনীর সদস্য নিয়োগ
পদ্ধতির পরিবর্ত ন সাধন, বাহিনীর সদস্যদের অভাব-অভিযোগ অপসারণ ও সুযোগ-সুবিধা আদায় প্রভৃ তি
উদ্দেশ্যেও রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে। আবার মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন নজিরও আছে
যেখানে রাজনীতিকে দুর্নীতি ও কায়েমী স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য সামরিক বাহিনী রাজনীতিক

5
ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “The military may merely exert direct
pressure to attempt to achieve a particular political goal, may create the conditions
for a change of government or even dictate what type of civilian government
achieves power."

সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন পূরণের জন্য রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের দরকার হতে পারে। অনেক সময়
সামরিক বাহিনীর রাজনীতিক উদ্দেশ্য থাকে। সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও ক্ষমতাসীন সরকারের
অপসারণ এবং অভিপ্রেত একটি সরকারের ক্ষমতাসীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এই সমস্ত বিষয়
ব্যাখ্যা করার জন্য অধ্যাপক বল বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারণা করেছেন।

কেনিয়া, তানজানিয়া ও উগাণ্ডার সামরিক বিদ্রোহ: ১৯৬৪ সালে কেনিয়া, তানজানিয়া ও উগাণ্ডায়
সামরিক বাহিনী বিদ্রোহের সামিল হয়। এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহ ব্রিটিশ সামরিক
বাহিনীর সাহায্যের জন্য আবেদন জানাতে বাধ্য হয়। সামরিক বাহিনীর এই বিদ্রোহের মূলে যে সমস্ত কারণ
বর্ত মান ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেতন ও কাজ-কর্মের অবস্থা প্রসঙ্গে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের
মধ্যে অসন্তোষ; সামরিক বাহিনীর উচ্চপদগুলিতে আফ্রিকানদের নিয়োগ প্রভৃ তি। সমকালীন ক্ষমতাসীন
সরকারগুলিকে উৎখাত করার কোন সুপরিকল্পিত বা সজ্ঞান অভিপ্রায় সংশ্লিষ্ট সামরিক বাহিনীর ছিল না।
এবং সামরিক শাসন কায়েম করার কোন দুরভিসন্ধি ত ছিলই না। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে
গুত্তেরিজ (W.F. Gutteridge) লিখিত The Military in African Politics শীর্ষক গ্রন্থে।

বিভিন্ন কারণে রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ ঘটে: রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপের পিছনে বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন উপাদান ক্রিয়াশীল হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সত্য বা সর্বজনীন কোন কারণ উল্লেখ করা
কঠিন। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “It is difficult to find general reasons underlying the military
interventions in other African states with similar problems of development, and with
British influences in the military and political structures.” অর্থাৎ বিভিন্ন কারণে রাজনীতিতে
সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটতে পারে। এই সমস্ত কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
অ-সামরিক সরকারের অসামর্থ্য ও ব্যর্থতা, রাজনীতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন অচলাবস্থা ও সংকট
প্রভৃ তি। এ প্রসঙ্গে বলের অভিমত হল: “Nevertheless, in spite of the difficulty in finding
common denominators for different levels of military intervention, there are some
factors which tend to inhibit full military control."

ফ্রান্সের উদাহরণ: বল এ ক্ষেত্রে ফরাসী ইতিহাসের উল্লেখ করেছেন। ফ্রান্সে তৃ তীয় প্রজাতন্ত্রের গোড়ার দিকে
বিভিন্ন সামরিক সমস্যা-সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ১৭৮০ সালের পর ফ্রান্সে উদারনীতিক গণতন্ত্রের
সাফল্য এই সমস্ত সংকটকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। এতদসত্ত্বেও ১৯৫৮ সালে চতু র্থ প্রজাতন্ত্রের অবসানের
ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে ফরাসী
উপনিবেশগুলিতে সরকার-বিরোধী সংগ্রাম, ইন্দো-চীনে ফ্রান্সের পরাজয়, সুয়েজ সমস্যা, আলজিয়ার্সে ফরাসী
সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত সংগ্রাম, আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজনীতিক অস্থিরতা প্রভৃ তি ফ্রান্সের সমকালীন

6
অ-সামরিক সরকারকে দুর্বল করে তোলে। ফ্রান্সের অ-সামরিক সংগঠনগুলি ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের।
কিন্তু সেই সময় ফ্রান্সে পর পর যতগুলি সরকার গঠিত হয়েছিল সবগুলিই ছিল অত্যন্ত অস্থায়ী প্রকৃ তির। তা
ছাড়া চতু র্থ সাধারণতন্ত্রের রাজনীতি ছিল অচল-অনড় প্রকৃ তির। এই অবস্থায় সামরিক বাহিনী, বিশেষত
আলজিয়ার্সে ফরাসী বাহিনী ফ্রান্সের অ-সামরিক সরকারের বৈধতা ও শাসন করার অধিকারের বিরুদ্ধে
চ্যালেঞ্জ জানায়। সামরিক বাহিনী সরকারের আদেশকে অমান্য করে ও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সরকারী আদেশ অমান্য করা ও আনুগত্যহীনতার জন্য সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা
গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই সংকটকালীন অবস্থায় ফরাসী সরকারের
সমর্থনে ফরাসী সমাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ এগিয়ে আসেনি। সামরিক বাহিনী খোলাখুলিভাবেই
অ-সামরিক সরকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করতে থাকে। এই অবস্থায় চার্লস দ্য গল (Charles de
Gaulle) -এর নেতৃ ত্ব জনসাধারণ ও সামরিক বাহিনীর কাছে এক গ্রহণযোগ্য বিকল্প কর্তৃ পক্ষ হিসাবে
প্রতিপন্ন হয় এবং দ্য গল ক্ষমতাসীন হন। ১৯৬১ সালে আবার সামরিক বাহিনী বিদ্রোহী হয়। কিন্তু এইবার
পরিস্থিতি ছিল একেবারে আলাদা। দ্য গলের নেতৃ ত্বাধীন সমকালীন ফরাসী সরকারকে দুর্বল অ-সামরিক
সরকার বলা যাবে না। তা ছাড়া এই বিদ্রোহ কেবলমাত্র আলিয়ার্সের সৈন্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ফ্রান্সের সামরিক ইউনিটগুলি এবং জার্মানীতে অবস্থিত সৈন্যবাহিনী এই বিদ্রোহকে সমর্থন করে নি।
সর্বোপরি জেনারেল দ্য গল বিদ্রোহী সৈন্যাধ্যক্ষদের বিরুদ্ধে ফরাসী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশকে
সংগঠিত করতে পেয়েছিলেন। ফ্রান্সের অ-সামরিক জনসাধারণের বিরোধিতার মুখে এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

জার্মানীর উদাহরণ: বল জার্মানীর উদাহরণ দিয়েও রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূ মিকার সীমাবদ্ধতা
প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি বলেছেন: “The example of Germany after 1818 also exposes the
limitations of the army's role in the political process." ফ্রান্সে চতু র্থ সাধারণতন্ত্রের শেষের দিকে
দেশের রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনী ছিল অপর্যাপ্ত ক্ষমতার অধিকারী। অনুরূপভাবে ১৯১৮
থেকে ১৯৩৩ সালের মধ্যে দেশের রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় জার্মান সৈন্যবাহিনীর ভূ মিকা ছিল অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় জার্মানীর অ-সামরিক সরকার এবং রাষ্ট্রের রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্বলতা ছিল
সর্বজনবিদিত। এই সময় নবজাত সাধারণতন্ত্রের বিরুদ্ধে শত্রুর অভাব ছিল না। এই অবস্থায় বিপদাপন্ন
সরকারকে সমর্থন করতে সামরিক বাহিনী সম্মত হয়নি। তার ফলে অ-সামরিক সরকারের দুর্বলতা আরও
বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ফ্রান্সে জেনারেল দ্য গলের নেতৃ ত্বের মত জার্মানিতে হিটলারের নেতৃ ত্বে শক্তিশালী
অ-সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামরিক বাহিনীর স্বাধীনতার অবসান ঘটে এবং
অসামরিক সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রসঙ্গে বল মন্তব্য করেছেন: “... as with the French
example, once the civilian government had been strengthened with a Hitler or de
Gaulle, the independence of the army came to an end and with it the strong political
influence that it had previously held."

(৩) সামরিক নিয়ন্ত্রণ

7
পূর্ণাঙ্গ সামরিক শাসন: প্রকৃ ত প্রস্তাবে সামরিক নিয়ন্ত্রণের অর্থ হল সামরিক শাসন। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ সামরিক
শাসনকেই বলা হয় সামরিক নিয়ন্ত্রণ। এই অবস্থায় রাষ্ট্র-কর্তৃ ত্ব বা সরকারী ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর দখলে
থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে, প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ (direct military interference) এবং সামরিক শাসন বা
নিয়ন্ত্রণ (military control) এর মধ্যে পার্থক্য প্রতিপন্ন করা মুশকিল। সামরিক নিয়ন্ত্রণের মাত্রায় এবং তার
প্রকৃ তি ও পদ্ধতিতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সামরিক হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণের মাত্রাগত তারতম্যের কারণে এ
বিষয়ে ব্যাপকভাবে কোন শ্রেণীবিভাজন করা সহজ নয়। বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “There are difficulties
in measuring the exact degree of military interference short of direct military control,
and arriving at a broad classification of the reasons why this particular level is
reached in particular regimes. The same problem is present in an examination of
regimes that suffer direct military control."

সামরিক-অসামরিক যৌথ সরকার: অনেক সময় সামরিক ও অ-সামরিক কর্তৃ পক্ষ যৌথভাবে সরকার গঠন
করে ও পরিচালনা করে। নিজের শাসনের বৈধতাকে দৃঢ়ভিত্তিক করার জন্য সামরিক শাসন অনেক সময়
এই পথ ধরে। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে বল আর্জে ন্টিনার কথা বলেছেন। আর্জে ন্টিনার অর্থনীতিক বিকাশের
মান অপেক্ষাকৃ ত উন্নত। এতদসত্ত্বেও অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রের মতই এই দেশটিও সামরিক হস্তক্ষেপের শিকার।
আবার সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক কোন রাজনীতিক পরিবর্ত ন ছাড়াই সামরিক সরকারের
অ-সামরিকীকরণ ঘটতে পারে। বল বলেছেন: "Military governments may become more
civilianised after the passage of time without any dramatic political changes taking
place." উদাহরণ দিতে গিয়ে অধ্যাপক বল বলেছেন যে ১৯৫২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইজিপ্টে এই
ঘটনাই ঘটেছে। স্পেনে সুদীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। কালক্রমে এই সামরিক
শাসন কর্তৃ পক্ষ সমকালীন শাসকগোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বনে পরিণত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা
আবশ্যক। যে সামরিক অ-সামরিক যৌথ সরকার বা পূর্ণাঙ্গ সামরিক সরকারের স্থায়িত্ব কতকগুলি বিষয়ের
উপর নির্ভ রশীল। এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জনসাধারণের রাজনীতিক চেতনার মান,
দেশের আর্থনীতিক বিকাশের স্তর, অ-সামরিক সংগঠনসমূহের প্রসার ও প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রভৃ তি।

সামরিক সরকারের অ-সামরিকীকরণ: কোন কোন সামরিক একনায়কতন্ত্রে জনসাধারণের সমর্থন অর্জ নের
আশায় সরকারী কার্য পরিচালনার ধারায় অ-সামরিকীকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই উদ্দেশ্যে
রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, মন্ত্রিসভা গঠন, প্রতিনিধিত্বমূলক আইনসভা গঠন প্রভৃ তি উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করা
হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ব্রাজিলের কথা বলা হয়েছে। বল বলেছেন: “Some military
dictatorships are camouflaged by presidential elections and representative
assemblies with the military leaders assuming civilian status in order to perpetuate
army control, as in Brazil." অনেক সময় একটি অ-সামরিক সরকারকে সরিয়ে আর একটি
অ-সামরিক সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, এবং এই ধারা চলতে থাকে। এ রকম অবস্থায় সামরিক
নিয়ন্ত্রণকে বিচ্ছিন্ন করে বোঝা যায় না। ১৯৪৫ সাল থেকে সিরিয়ার রাজনীতিতে এই ধারা পরিলক্ষিত হয়।
এ হল সামরিক নেতৃ ত্বকে আড়াল করার জন্য অ-সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে এক
আপাতপ্রয়াস। সামরিক নিয়ন্ত্রণের মাত্রাকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সামরিক নেতৃ ত্বের কার্যপ্রক্রিয়া এবং

8
রাজনীতিক প্রকৃ তিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সামরিক সরকার অ-সামরিকীকরণের মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা ও
বৈধতা বৃদ্ধির এবং ক্ষমতাসীন থাকার মেয়াদকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে। অ-সামরিকীকরণের আপাত
উদ্যোগের আড়ালে ক্ষমতা সামরিক নেতৃ বৃন্দের কুক্ষিগত থাকে। নির্বাচনের মাধ্যমে অ-সামরিক সরকার
প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সামরিক সরকার যে উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করে তা হল তার নিজের বৈধতা প্রতিপন্ন
করার উদ্যোগ। অনেক সময় সামরিক সরকার অ-সামরিক সরকারের হাতে আংশিকভাবে ক্ষমতা অর্পণ
করে, অ-সামরিক সরকারের সামর্থ্য ও স্থায়িত্ব যাচাই করার চেষ্টা করে। যেমন, ব্রহ্মদেশের সামরিক বাহিনী
১৯৫৮ সালে ক্ষমতা দখল করে। এর আঠার মাস পরে সামরিক কর্তৃ পক্ষ আংশিকভাবে ক্ষমতা অসামরিক
কর্তৃ পক্ষের হাতে ন্যস্ত করে। কিন্তু ১৯৬২ সালে সামরিক বাহিনী আবার সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতা করায়ত্ত করে।
১৯৬৬ সালে নক্রুমা (Nkrumah) -র অপসারণের পর সামরিক বাহিনী ঘানায় সরকারী ক্ষমতা দখল
করে। তবে অ-সামরিক সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে ১৯৬৯ সালে এক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী হয় ও সফল হয়নি, এবং সামরিক বাহিনী পুনরায় পরিপূর্ণ ক্ষমতা করায়ত্ত করে।

সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের মাত্রার নির্ধারক: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে
নিয়ন্ত্রণের মাত্রাগত বিভিন্নতার জন্য কঠোরভাবে শ্রেণীবিভাজনের যে-কোন ব্যবস্থা অর্থবহ হতে পারে না।
তবে লাতিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঘন ঘন
সামরিক হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের মাত্রার নির্ধারক হিসাবে কতকগুলি বিষয়ের
উল্লেখ করা হয়। এই বিষয়গুলি হল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্তর, অ-সামরিক সংগঠনসমূহের শক্তি সামর্থ্য
ও প্রভাব-প্রতিপত্তি, রাষ্ট্রের সমস্যাদির প্রতি সামরিক বাহিনীর প্রতিক্রিয়ার প্রকৃ তি প্রভৃ তি। এই সমস্ত
বিষয়ের সঙ্গে সামরিক একনায়কতন্ত্রের যোগাযোগের বিষয়টি অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান রাজনীতিক
ব্যবস্থার প্রকৃ তির গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে অবহেলা করা যায় না।

সামরিক বাহিনী কর্তৃ ক সরকারী ক্ষমতা দখলের অনুকূল পরিস্থিতি: দেশের রাজনীতিবিদরা যদি
দুর্নীতিপরায়ণ ও অযোগ্য হন তা হলে জনসাধারণ প্রতিরোধ করার পরিবর্তে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপকে
স্বাগত জানাতে পারে। বিদ্যমান রাজনীতিক সংগঠনসমূহের বৈধতা সম্পর্কে এবং ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠীর
বৈধতা সম্পর্কে জনসাধারণের মনে সংশয়-সন্দেহ থাকলে সামরিক বাহিনী সহজেই সরকারী ক্ষমতা দখল
করার সুযোগ পায়। অ-সামরিক সরকারী কর্তৃ পক্ষ জনগণের মৌলিক দাবি-দাওয়াকে দীর্ঘকাল ধরে উপেক্ষা
করলে বা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে, অ-সামরিক প্রশাসন প্রতিকারহীন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হলে,
সরকারী মদতে মুষ্টিমেয় মানুষের স্বার্থ সাধিত হলে, অ-সামরিক সরকার দেশবাসীর আস্থাহীন হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় সামরিক বাহিনীর সরকারী ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত ও সুগম হয়। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: “In
the states that experience direct military control the legitimacy of the existing political
institution and of the ruling elites is disputed. The regime has not acquired the
respect that puts it beyond the challenge of the armed forces. Thus, far from meeting
widespread opposition to its intervention, the army may be wel comed as a means of
ridding of the state of the old corrupt and ineffcient politi cians," উপরিউক্ত কারণসমূহের
জন্য ১৯৫২ সালে মিশরে এবং ১৯৫৮ সালে ইরাকে সামরিক বাহিনী কর্তৃ ক সরকারী ক্ষমতা দখলের অনুকূল
অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আরও কতকগুলি বিষয়ের উল্লেখ করা দরকার। এই বিষয়গুলিও সামরিক

9
বাহিনী কর্তৃ ক নিয়ন্ত্রণ আরোপের অনুকূলে পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল
রাজনীতিক দল, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী, শ্রমিক সংঘ প্রভৃ তি অ সামরিক সংগঠনসমূহের সীমাবদ্ধতা ও
দুর্বলতা এবং এদের বৈধতার ব্যাপারে জনমনে সংশয়-সন্দেহ; সতত বৈদেশিক আক্রমণের আশংকা ও
বহিঃশক্তির চাপে সামরিক খাতে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি; জাতীয় সম্পদের অসম বণ্টন ও ধনী-দরিদ্রের মধ্যে
ব্যাপক বৈষম্য প্রভৃ তি। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত অভিপ্রেত পরিবর্ত নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামরিক বাহিনী
দেশবাসীর আস্থা অর্জ ন করতে পারে এবং রাজনীতিক ক্ষমতা দখল করতে পারে। কিন্তু আর্থ-সামাজিক
ক্ষেত্রে উন্নয়নের মান যদি আশাপ্রদ না হয়; অ-সামরিক সরকারও সংগঠনসমূহের বৈধতার ব্যাপারে
জনসাধারণ যদি সন্তুষ্ট থাকে; রাজনীতিক স্থিতিশীলতা যদি বজায় থাকে, তা হলে সামরিক নিয়ন্ত্রণের
সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

সামরিক বাহিনী সাধারণত দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীকে সাহায্য করে: রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সামরিক
বাহিনী সাধারণত রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করে। বল বলেছেন: “... generally the military
tends to support conservative groups..." উদাহরণ হিসাবে ব্রাজিলের সৈন্যবাহিনীর ভূ মিকার কথা
বলা হয়েছে। ১৯৬১ সালে ব্রাজিলের সামরিক বাহিনী বামপন্থী রাষ্ট্রপতি গোউলার্ট কে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং
১৯৬৪ সালে একটি দক্ষিণপন্থী একনায়কতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। তবে দেশের আর্থিক অনগ্রসরতা
ও দুর্দ শার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনী বিপ্লবী গোষ্ঠীকেও সমর্থন করতে পারে। মিশরে সামরিক
অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনাই ঘটে। এ প্রসঙ্গে বল বলেছেন: "However, the low level of
economic development may lead the army to intervene on the part of radical forces
in the country aiming at a more egalitarian social structure." এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে
১৯৭৪ সালে পর্তু গালে সামরিক অভ্যুত্থানের কথা বলা যায়। বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী রাজনীতির প্রতি
ঝোঁকের ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর প্রবীণ ও নবীন পদস্থ অফিসারদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিতে পারে।
এবং এই বিরোধ সামরিক বাহিনীতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা প্রকট হয়ে পড়ে বৈদেশিক
সামরিক সাহায্যের পরিপ্রেক্ষিতে। মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রকে দরাজ হাতে সামরিক সাহায্য
প্রদান করে থাকে। পশ্চাদপদ বা উন্নতিশীল দেশগুলির সামরিক বাহিনীকে মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র-শস্ত্র,
সামরিক সাজসরঞ্জাম, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ এবং নগদ টাকাকড়িও সরবরাহ করে। এই মার্কি ন উদ্যোগের উদ্দেশ্য
হল পশ্চিমীপন্থী সরকারসমূহের প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করা। তা ছাড়া এ ধরনের সামরিক সাহায্য প্রদানের
মাধ্যমে মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র বিপ্লব-বিরোধী প্রবণতাকে পরিপুষ্ট করে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিতে গিয়ে বল
বলেছেন: “The American government encouraged the Chilean army to overthrow the
radical Allende government in the September 1973, and the ensuing military
dictatorship brutally suppressed any form of left-wing political activity."

আঞ্চলিক বিরোধের কারণে সামরিক নিয়ন্ত্রণ: কোন রাষ্ট্রের মধ্যে আঞ্চলিক পার্থক্যসমূহ প্রকট হয়ে পড়লে
সমস্যা-সংকটের সৃষ্টি হয়। এবং এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের জন্য
প্রত্যক্ষভাবে উদ্যোগী হয়। সামরিক বাহিনী কর্তৃ ক রাজনীতিক ক্ষমতা দখলের এ ধরনের উদাহরণ দিতে
গিয়ে বল বলেছেন: “Nigeria since independence is a clear example of regional divisions
leading to military dictatorships." স্বাধীনতা ও সংহতির দীর্ঘ ইতিহাস যে সমস্ত দেশের আছে, সেই

10
সমস্ত দেশেই এ ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অধিক। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে
অধ্যাপক বল স্পেনের কথা বলেছেন। তা ছাড়া সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে এবং যে সমস্ত রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় সরকারের
প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তে উপজাতিগত আনুগত্য অধিকতর প্রবল, সেই সমস্ত রাষ্ট্রে সামরিক নিয়ন্ত্রণ
কায়েম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর প্রকৃ তি গুরুত্বপূর্ণ: সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর নিজস্ব আকৃ তি-প্রকৃ তির বিষয়টিও বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বল যথার্থই
বলেছেন: “The nature of the armed forces is a factor great significance in the
establishment of a military government.” অনেক রাষ্ট্রেই সামরিক বাহিনীকে জাতীয় ঐক্য ও
সংহতি এবং জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসাবে প্রতিপন্ন করা হয়। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের সংরক্ষক
হিসাবে সামরিক বাহিনীর ভূ মিকার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বলা হয় যে মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা ও
দক্ষতার সহাবস্থান সামরিক বাহিনীর মধ্যেই সম্ভব। পরাধীন দেশের অধিবাসীরা জাতিগত বিভেদকে
বিসর্জ ন দিয়ে সংঘবদ্ধ হয় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সামিল হয়। কিন্তু স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর জাতিগুলির
মধ্যে ঐক্য ও সংহতির উন্মাদনা উঠে যেতে বিলম্ব হয় না। তখন দেশবাসীর ঐক্যবোধে ফাটল ধরে। এই
অবস্থায় জাতীয় স্বার্থের পরিবর্তে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক স্বার্থ প্রাধান্য পায়। এই অবস্থায় জাতীয়
ঐক্য ও সংহতি তথা জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সামরিক নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। তা ছাড়া
সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগ্য প্রশাসক ও দক্ষ প্রযুক্তিবিদরা থাকেন। এঁদের সাহায্যে অনগ্রসর বা উন্নতিশীল
দেশগুলিতে সামরিক বাহিনী এর উন্নয়নমূলক ভূ মিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। বল এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
“Certainly in new and underdeveloped countries the military may monopolise certain
adminis trative skills and posses most of the trained manpower of engineers,
surveyors etc." বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে
‘পাশ্চাত্তীকরণ’ বা 'আধুনিকীকরণ' (modernization) স্বাভাবিকভাবেই সম্পাদিত হয়। কোন সাবেকী,
গ্রামীণ উপজাতীয় ও ক্রমোচ্চ-স্তরবিন্যস্ত সমাজব্যবস্থায় এই সামরিক বাহিনীর ভূ মিকার তাৎপর্য
অনস্বীকার্য। এই সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করলে যে ধরনের পরিকাঠামো গড়ে তোলে তার মধ্যে
উপজাতিগত বা অন্যান্য বৈষম্য বিশেষভাবে হ্রাস পায়। এ প্রসঙ্গে আর একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার।
ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি সাধারণত স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আগের উপনিবেশসমূহের সামরিক বাহিনীকে নিজেদের
ধারায় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাপারে উদ্যোগ-আয়োজন গ্রহণ করে। এই সমস্ত ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির
সামরিক পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণ পৃথক প্রকৃ তির হয়ে থাকে। প্রাক্তন উপনিবেশগুলির সামরিক বাহিনীর
বিভিন্ন অংশ যদি বিভিন্ন দেশের সামরিক শিক্ষায় স্বতন্ত্রভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের
সৈন্যবাহিনীর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হওয়ার আশংকা থাকে। দৃষ্টিভঙ্গি ও পেশাগত পার্থক্যের
পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর একটি অংশ অপর অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা করতে পারে।
এবং এই সূত্রে সামরিক অভ্যুত্থানের আশংকাকে অস্বীকার করা যায় না। এ ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের
উদাহরণ হিসাবে বল ঘানার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: “It was fear of Nkrumah's mistrust of
the army, his spics and his proposals to train more officers in Soviet Russia that
finally induced the army to bring down his regime in 1966 and establish a period of
military dictatorship."

11
সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সামাজিক পটভূ মি: সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের পেশার প্রতি গভীর
অনুবর্তি তাও এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ পদ্ধতি, সদস্যদের
সামাজিক ও আঞ্চলিক পটভূ মি প্রভৃ তিও এ ক্ষেত্রে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। বল বলেছেন: “The degree of
professionalisation of the army is important, but a factor that may cut across it and
have important consequences itself is the area of recruitment." বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য
বল মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সামাজিক পটভূ মি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। সাধারণত
নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য নিযুক্ত হন। কারণ এই শ্রেণীর
মানুষই সমকালীন রাজনীতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্ত নের ব্যাপারে অতিমাত্রায় আগ্রহী ও উদ্যোগী ছিলেন।
অন্য কোন রাজনীতিক বা সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এই পরিবর্ত ন সাধন সম্ভবপর ছিল না। সামরিক
বাহিনীকেই তারা এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেন এবং এই বাহিনীতে যোগ দেন। সামরিক
বাহিনী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সংস্কার সাধনে সক্ষম হন। আবার সামরিক
পেশার ব্যাপারে দেশের কোন বিশেষ অঞ্চলের মানুষের নেতিবাচক মনোভাব থাকে। এই কারণে সেই দেশের
সৈন্যবাহিনীতে অন্য অঞ্চলের অধিবাসীদের আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে অধ্যাপক
বল নাইজেরিয়ার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের সামন্ততান্ত্রিক রাজনীতিক নেতারা সামরিক
বাহিনীর সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টিকে হীনতা বলে মনে করতেন। এই কারণে নাইজেরিয়ার সামরিক
বাহিনীতে উপকূলবর্তী অঞ্চলের উপজাতীয়দের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।

উপসংহার: অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে সকল রাজনীতিক ব্যবস্থাতেই সামরিক বাহিনীর কতকগুলি
সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য বর্ত মান। এই সমস্ত সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্যের সুবাদে সামরিক বাহিনী রাজনীতিক
প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের সুযোগ লাভ করে। আবার অনুরূপভাবে সামরিক বাহিনীর কিছু অসুবিধাজনক
উপাদানও আছে। এই সমস্ত অসুবিধাজনক উপাদানের জন্য সামরিক বাহিনী কতকগুলি নিয়ন্ত্রণ আরোপের
ব্যাপারে বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়। রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ বিভিন্ন ধরনের হতে
পারে। এই হস্তক্ষেপ কেবলমাত্র প্রভাব বিস্তারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, আবার তা পরিপূর্ণভাবে
সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠাও হতে পারে। যাইহোক সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের ধরন বা প্রকৃ তি কতকগুলি
বিষয়ের উপর নির্ভ রশীল। এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার
চেহারা-চরিত্র, রাজনীতিক সংগঠনসমূহের স্থায়িত্ব এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্তর। তা ছাড়া সামরিক
বাহিনীর সংগঠন, বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ পদ্ধতি এবং সামরিক পেশার প্রতি তাদের অনুবর্তি তার
মাত্রাও এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ। এ ছাড়া অ-সামরিক সমাজজীবনের মূল্যবোধের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর
মূল্যবোধ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা-ও এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিককালে যোগাযোগ ব্যবস্থার
অভাবনীয় বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছে। তাছাড়া আন্তর্জ াতিক স্তরে মতাদর্শ-ভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভূ মিকা
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় সামরিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বৈদেশিক শক্তির প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার গুরুত্বকে
অস্বীকার করা যায় না। সর্বোপরি জনসাধারণের সমর্থনের বিষয়টিকে অবহেলা করা যায় না। সামরিক
বাহিনী রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় তার যে কোন ধরনের হস্তক্ষেপকে সর্বসাধারণের সমর্থনের উপর প্রতিষ্ঠিত
করতে চেষ্টা করে। কিছু টা জনসমর্থনের ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে সামরিক বাহিনী সাধারণত রাজনীতিক
প্রক্রিয়ায় কোন রকম হস্তক্ষেপের ব্যাপারে উদ্যোগী হয় না। রাজনীতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের ঘটনা সংঘটিত

12
হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামরিক বাহিনীর যাবতীয় সমস্যার সমাপ্তি ঘটে না। সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরোপের মত
নিয়ন্ত্রণ একটি পর্যায় থেকে পিছিয়ে আসা সামরিক বাহিনীর কাছে কম সমস্যার বিষয় নয়। আবার
উচ্চপর্যায়ে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হলে সরকারী কার্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্কে র
পরিবর্ত ন শুরু হয়। তার ফলে সরকারের যাবতীয় অপ্রিয় সিদ্ধান্তের জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়বদ্ধ হতে
হয়। সামরিক বাহিনী সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক স্বার্থের পরিবর্তে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের
পৃষ্ঠপোষকতা করে’—এই বিশ্বাসের উপরও আঘাত আসতে থাকে। এবং সামরিক বাহিনীর ঐক্যেও ফাটল
ধরার আশংকা দেখা দেয়। অ সামরিক সরকারের সঙ্গে পূর্বতন সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী
সমস্যার সম্মুখীন হয়। এমনকি সামরিক বাহিনীর নেতাদের দণ্ডভোগের আশংকাকেও একেবারে উড়িয়ে
দেওয়া যায় না। পরিশেষে বলের এক দীর্ঘ মন্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: “Often the
very act of intervention may lose the army its most important asset, that of potential
intervention. The factors that determine the level of military interference are seldom
remo

13

You might also like