Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 9

বাংলাদেশে কৃ ষির যান্ত্রিকীকরন

কৃ ষি উৎপাদনে এবং আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহারকেই বলা হয় কৃ ষি যান্ত্রিকীকরন। যান্ত্রিককীকরণ
বলতে শুধু শস্য উৎপাদন নয়।মাছচাষ, গবাদিপশু পাখি পালন প্রভৃ তিও কৃ ষিখাতের মধ্যেই পড়ে। কৃ ষির এই সকল
ক্ষেত্রেই যান্ত্রিকীরণ দরকার।পৃথিবীর বহুদেশেই কৃ ষির এই ক্ষেত্রগুলোকে যান্ত্রিকীকরনের আওতায় আনা হয়েছে।
বাংলাদেশের মতো কৃ ষি প্রধান দেশে এ বিষয়টিতে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া গেলে কৃ ষিতে
বিপ্লবাত্মক পরিবর্ত ন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।কারণ যান্ত্রিকীকরন হলে একদিকে যেমন কৃ ষি শ্রমিকের সময়ানুবর্তি তা
ও কার্যদক্ষতা বাড়ে তেমনি ফলন বাড়ে, চাষ ব্যয় কমে ও মাটির উর্বরতা বাড়ে। কিন্তু একসময় কৃ ষিযন্ত্রের কথা শুনলে
আমাদের দেশের কৃ ষি শ্রমিকরা আতঙ্কিত হতেন। তারা ভাবতেন যন্ত্র এসে তাদের কাজটু কু কেড়ে নেবে। এখন আর সে
অবস্থা নেই। এখন একটি কৃ ষিযন্ত্র গ্রামের একজন তরুণের নিরাপদ কর্মসংস্থান। আধুনিক চাষ পদ্ধতির সঙ্গে টিকে
থাকতে হলে পুরোনো প্রযুক্তি দিয়ে এগোনো এখন আর সম্ভব নয়। এটি সবাই বুঝে গেছে। ((**সময়ের বিবর্ত নে
কাজেরও বহু ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাছাড়া গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার, নগরায়ন প্রভৃ তি কারনে আমাদের দেশে
কৃ ষিশ্রমিকেরও সংকট তৈরি হয়েছে। কৃ ষিশ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণেও কৃ ষি হয়ে উঠেছে ব্যয়বহুল।ফলে কৃ ষি
যান্ত্রিকীকরন এখন সময়ের দাবী।))

বাংলাদেশের কৃ ষিতে যান্ত্রিকীকরনের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের ১৩.৩০ ভাগ আসে কৃ ষি থেকে। কৃ ষিতে শতকরা ৪১ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কৃ ষি শুধু
বাংলাদেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের শুধু খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান করে না, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের জোগানও
দেয়। কৃ ষিপ্রধান বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃ ষি অদূর ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা রাখবে

বাংলাদেশ অস্বাভাবিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রায় প্রতি বছর বন্যা, খরা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃ তিক দুর্যোগে
বাংলাদেশের সম্পদ ও ফসলের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। সম্প্রতি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরাম থেকে
জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রাকৃ তিক দুর্যোগের মাত্রা ও ঝুঁকি আরও বাড়বে। তাছাড়া এই দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল
দেশ (প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১২০০ মানুষ)। একটি দেশের খাদ্য উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সে দেশের
চাষাবাদের ভূ মি ও পানি। একদিকে জনসংখ্যা প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ নতু ন মুখ যোগ হচ্ছে, অন্যদিকে শহর সৃষ্টি,
শিল্পকারখানা নির্মাণ, বাড়িঘর তৈরি ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আবাদি জমির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমছে।
১৯৭১-৭২ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২৮ শতাংশ, তা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। কৃ ষি উন্নয়নে আগে
বিদেশি সাহায্য পাওয়া যেত ওডিএ-এর শতকরা ১৮-২০ ভাগ, যা কমে হয়েছে শতকরা ৪ ভাগেরও কম। অন্যদিকে
মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন অব্যাহতভাবে।

গোটা পৃথিবীতেই প্রতিনিয়ত প্রস্তুতি চলছে কৃ ষি তথা খাদ্য উৎপাদনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য।
অন্যদিকে যান্ত্রিক সুবিধা নিয়ে স্বল্প শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ কীভাবে উৎপাদন করতে পারে সে ভাবনা
রয়েছে অধিকাংশ যন্ত্রের নির্মাণশৈলীতে। জাপানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অল্প সময়ে একজন কৃ ষক একাই
অনেক বেশি পরিমাণ জমি চাষাবাদ করতে পারেন। জমি চাষ, চারা তৈরি, চারা রোপণ, ফসল কাটা, মাড়াই এবং
বাজারজাতকরণের উপযোগী করা- সব কিছুই কৃ ষক যন্ত্রের সাহায্যে করতে পারেন। এটাই হলো আধুনিক জাপানি কৃ ষির
বৈশিষ্ট্য। জাপানে হেক্টর প্রতি চালের উৎপাদনও আমাদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। আমাদের দেশে হেক্টর প্রতি চালের
গড় উৎপাদন ২ দশমিক ২০ টন, জাপানে হেক্টর প্রতি চালের উৎপাদন ৬ দশমিক ৫৪ টন।

বর্ত মানে আমাদের দেশের কৃ ষির পরিস্থিতিরও অনেকটাই পরিবর্ত ন হয়েছে।((** কৃ ষিতে অভূ তপূর্ব সাফল্য রয়েছে।এ
সাফল্যের পেছনে ব্যক্তি-উদ্যোগের অনেক বেশি অবদান। বলা যায়, আমাদের দেশের কৃ ষকই প্রযুক্তির
প্রয়োজনীয়তাকে উসকে দিয়েছেন। এখন তাদের হাতে উপযুক্ত যন্ত্র ও প্রযুক্তি তু লে দেয়াটা প্রয়োজন।কৃ ষি ক্ষেত্রে
যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয় মূলত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃ ষিকে লাভজনক ক্ষেত্রে পরিনত করা।))

আমাদের দেশে ফসলের মৌসুমে এখন ৩৫-৪০ শতাংশ শ্রমিকের সংকট থাকে।কৃ ষি শ্রমিকের ঘাটতি থাকায় শ্রমের মজুরি
বেশি হচ্ছে। এতে কৃ ষকের উৎপাদন খরচ ও সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অলাভজনক হচ্ছে কৃ ষি। ফসল উৎপাদন-পূর্ববর্তী
যান্ত্রিকীকরণে যদিও অগ্রগতি অর্জি ত হয়েছে কিন্তু উৎপাদন ও তার পরবর্তী প্রক্রিয়াজাতকরণে পিছিয়ে রয়েছে এ
দেশের কৃ ষি। শস্য কাটার ক্ষেত্রে কৃ ষি যন্ত্রপাতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি শস্য ক্ষেতে পড়ে থাকে তাহলে ঝরে যায়, না হয়
ইঁদুরে খেয়ে ফেলে ।এতে বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়।এছাড়া প্রাকৃ তিক দুর্যোগের প্রবণতাও দিন দিন বৃদ্ধি

1
পাচ্ছে।ফলে ফসল দ্রুত সংগ্রহ করা জরুরী হয়ে পড়ছে।ফলে কৃ ষিকে লাভজনক করার জন্য ভৌগোলিক ও কৃ ষি
পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক একেক এলাকায় একেক ধরনের কৃ ষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হবে।

আজকের দিনে কেবল যান্ত্রিকীকরণেই পাল্টে যেতে পারে কৃ ষি উৎপাদনের হিসাব। ১ বিঘা জমিতে লাঙ্গল দিয়ে চাষ
করলে ব্যয় হবে ২ হাজার টাকা। পাওয়ার টিলার দিয়ে ব্যয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। ট্রাক্টর দিয়ে করলে ৮০০ টাকা। ধান
কাটার ক্ষেত্রে ১ বিঘা জমিতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে ব্যয় হয় ২ হাজার টাকা। কম্বাইন হার্ভে স্টার দিয়ে কাটলে মাত্র ৪০০-
৫০০ টাকা। ধান রোপণের ক্ষেত্রে ১ বিঘা জমিতে ২ হাজার ২০০ টাকা লাগে। ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে লাগালে ৫০০ টাকার মতো
লাগে। সময় তো সাশ্রয় হচ্ছেই। সব ক্ষেত্রেই সনাতন পদ্ধতিতে অর্থ ও সময় অনেক বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিক
পদ্ধতিতে কোথাও অর্ধেক কোথাও এক চতু র্থাংশে নেমে আসে খরচ।কৃ ষি বিশেষজ্ঞদের মতামত, ‘৪৮ লাখ হেক্টর জমির
বোরো ধানের পুরোটা যন্ত্র দিয়ে কাটতে পারলে পাঁচ হাজার ২৭১ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

শুধু তাই নয় ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের কৃ ষকের গড় বয়স ৪৮ বছর। অথচ ১৯৮৮ সালে
দেশের কৃ ষিতে নিয়োজিত চাষিদের গড় বয়স ছিল ৩৫ বছর। তার মানে বাংলাদেশের কৃ ষিতে তরুণদের অংশগ্রহণ কমছে।
কিন্তু বয়স্ক মানুষের শারীরিক সক্ষমতা কমে গেলে তারা কৃ ষিতে সফলভাবে ভূ মিকা রাখতে পারে না। সেকারণে একদিকে
কৃ ষিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো যেমন জরুরি, একইভাবে জরুরি ব্যাপকভাবে কৃ ষির যান্ত্রিকীকরণ। তরুণদের কৃ ষির
প্রতি আগ্রহ কম। তাই কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রবীণ কৃ ষকদের কাজ করাটা সহজ করে হবে
অন্যদিকে যান্ত্রিক কৃ ষির প্রতি তরুণরা আগ্রহী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

যখন ভূ মির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে কৃ ষি উৎপাদন বাড়ানোর নতু ন তাগিদ এসেছে, তখন কৃ ষির যান্ত্রিকীকরণ সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। যুগ যুগ ধরে এ ক্ষেত্রে অনেকটাই উদাসীন ছিল এদেশের কৃ ষি সংশ্লিষ্টরা।
কৃ ষির সঙ্গে খাদ্য জড়িত, আর খাদ্যের সঙ্গে জীবন। এই জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সর্বপ্রথম সনাতন চাষ
পদ্ধতি থেকে বের হয়ে প্রযুক্তি নির্ভ র কৃ ষি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।উৎপাদন বৃদ্ধি, খরচ হ্রাস এবং কৃ ষি শ্রমিকের
সংকট উত্তরণের মাধ্যমে কৃ ষিকে টেকসই করতে হলে কৃ ষি যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই।

কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের ইতিহাস

পৃথিবীতে যখন কৃ ষিতে কাস্তে-কোদালের ব্যবহার শুরু হয়েছে তখনই মানুষ যান্ত্রিকতার সন্ধান পেয়েছে। বহু বছর ধরে শুধু
এ যান্ত্রিকতার বিকাশ ও উৎকর্ষ ঘটেছে। ১০০ বছরের বেশি সময় আগে আমাদের এই দেশের জমিতে প্রথম কলের
লাঙ্গলের কথা ভেবেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর পৈতৃ ক জমিদারি নওগাঁর পতিসরে তিনি এনেছিলেন কলের
লাঙ্গল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কৃ ষি পৃনর্বাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রমে ১৯২০ সালের দিকে ঢাকা ল্যাবরেটরী-মণিপুরী ফার্ম, নওগাঁ-
পতিসর রবি ঠাকু রের ফার্ম, চু য়াডাংগার দর্শনা ও দত্তনগর ফার্ম, দিনাজপুরের কান্তজি ফার্মসহ ভারতের কয়েমবাটোর,
চিনসুরা গ্রীন ও নাগপুরসহ কয়েকটি কৃ ষি ঐতিহ্যের স্থানে উন্নত খামার কৃ ষি যান্ত্রিকীকরনে শুরু হয়েছিল। কিন্তু নানা
কারণে তা প্রসার ঘটাতে পারে নাই।
বাংলাদেশের কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের সূচনা হয় মূলত কৃ ষকদের মাঝে সরকারিভাবে যন্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে।১৯৫০ দশকের
প্রথমদিকে যান্ত্রিক চাষাবাদ শুরু হয় এবং সরকারী উদ্যোগে কৃ ষকদের মাঝে ট্রাক্টর, শক্তিচালিত পাম্প এবং স্প্রেয়ার
বিতরণের মাধ্যমে কৃ ষক পর্যায়ে কৃ ষি যন্ত্রের প্রচলন করা হয়। ১৯৭০ সালে উপকূ লীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে
গবাদি প্রাণীর ব্যাপক প্রাণহানিত পরিপ্রেক্ষিতে উপদ্রুত এলাকায় চাষাবাদের জন্য অল্প কিছু ট্রাক্টর এবং পাওয়ার টিলার
বিতরণ করা হয়।১৯৭৩ সালে দ্রুততম সময়ে খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রথমবারের মত নামমাত্র মূল্যে ভর্তু কি দিয়ে ৪০
হাজার লো লিফট পাম, ২ হাজার ৯ শত গভীর নলকূ প এবং ৩ হাজার অগভীর নলকূ প স্থাপন করা হয়।১৯৮৮ সালে
সারা দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ফসল ও প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।এ অবস্থায় কৃ ষিযন্ত্র আমদানির উপর শুল্ক
প্রত্যাহার, আমদানিকৃ ত কৃ ষি যন্ত্রপাতির মান পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা শিথিল ও এককভাবে সরকারি খাতে আমদানি
করার পরিবর্তে বেসরকারি খাতে আমদানিকারকদের উৎসাহিত করা হয়।ফলে ব্যক্তিখাতের আমদানিকারকগণ ব্যপকভাবে
ছোট ইঞ্জিন ও পাওয়ার টিলার আমদানি করা শুরু করার মাধ্যমে দেশের কিছু অঞ্চলে যান্ত্রিক চাষাবাদ কিছু মাত্রায়
গতিশীল হয়।

কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে ২০০৯-২০১৩ সালে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে
৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে২ ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি"
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে যথাক্রমে ৩৮ হাজার ৩৩৮টি ও ২৫ হাজার বিভিন্ন কৃ ষি যন্ত্র কৃ ষকদের
সরবরাহ করেছে দেশের কৃ ষি বিভাগ।এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাজারমূল্যের ৬০ ভাগ ছাড়ে কৃ ষকের কাছে কৃ ষি যন্ত্র দেয়া হয়।

2
এ যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে বারি ও ব্রি উদ্ভাবিত কৃ ষি যন্ত্রপাতি হাইস্প্রিড রোটারি টিলার, বীজ বপন যন্ত্র, বেড প্লান্টার,
জমি নিড়ানি যন্ত্র, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র, ভু ট্টা মাড়াই যন্ত্র, শস্য মাড়াই যন্ত্র, ধান-গম কর্ত ন যন্ত্র ও শস্য ঝাড়াই যন্ত্র
যা কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

কৃ ষককে যন্ত্র ব্যবহারে আগ্রহী করে তু লতে এবং যন্ত্রের কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিতকরার জন্য এ প্রকল্পে হতে ২৪টি
উপজেলার প্রায় ২০০০ কৃ ষককে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেকানিককে কৃ ষি যন্ত্রপাতির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সেই
সাথে কৃ ষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারকদেরও মানসম্পন্ন কৃ ষি যন্ত্রপাতি তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও কৃ ষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরের খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হতেও ২৫ ভাগ ভর্তু কি মূল্যে কৃ ষকদের মাঝে কৃ ষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়।
যন্ত্রপাতি ব্যবহারে শস্য সংগ্রহত্তোর অপচয় সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ২০ শতাংশ কমেছে।

২০০৫ সালে শাইখ সিরাজ জাপানে গিয়ে ধারণ করে এনে দর্শকদের প্রথম দেখিয়েছয়েছিলেন রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র।
আজ ১৫ বছরেও দেশে এ কৃ ষিযন্ত্রের ব্যবহার সে অর্থে শুরু হয় নি। তার কয়েক বছর পর বাংলাদেশে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার
আসে ঠিকই কিন্তু তা কৃ ষকের কাছে অপরিহার্য করে তোলার জন্য যে তৎপরতা প্রয়োজন ছিল তা চালানো হয়নি। একই
বছর বিএডিসির ঝিনাইদহ বীজ বর্ধন খামারে এসেছিল অত্যাধুনিক কম্বাইন হার্ভে স্টার। আজ ১৫ বছরেও ধান কাটা ও
মাড়াইয়ের এ সমন্বিত যন্ত্রটির ব্যবহার ২-৩ শতাংশের উপরে উঠে নি।তবে গত বছর করোনা পরিস্থিতি জেঁ কে বসার
সময় বোরো ধান ঘরে তোলার জন্য সারা দেশে ধান কাটা সহজতর করতে ২০০ কোটি টাকা ভর্তু কির মাধ্যমে কৃ ষি বিভাগ
প্রায় ১ হাজার ৩০০ কম্বাইন হার্ভে স্টার ও ৯৩৪টি রিপার, ২২টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ বিভিন্ন কৃ ষি যন্ত্রপাতি কৃ ষকের কাছে
পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এ কঠিন সময়ে হাওরের ফসল রক্ষা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এ সময়ে হাওরে এবার ধান
কাটতে ২৯৪টি কম্বাইন হার্ভে স্টার ও ৪০৬টি রিপার ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৭০% ভর্তু কিতে নতু ন ১২৮টি
কম্বাইন হার্ভে স্টার ও ২৩টি রিপার কিনতে পারেন কৃ ষক। জরুরি এ যান্ত্রিকীকরণ সেবা ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির
উত্তরণ যে সম্ভব ছিল না তা সহজেই অনুমেয়।

যান্ত্রিকীকু রনের জন্য বর্ত মানে গৃহীত উদ্যোগঃ


কৃ ষি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃ ষি যন্ত্রপাতি আরও সহজলভ্য করার জন্য কৃ ষকদের ভতু র্কী মূল্যে বিভিন্ন
যন্ত্রপাতি পৌছে দিতে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এবিষয়ে প্রকল্প
পরিচালক মো. নাজিমউদ্দিন বলেন, কৃ ষি শ্রমিকের ঘাটতি থাকায় শ্রমের মজুরি বেশি হচ্ছে। এতে কৃ ষকের উৎপাদন
খরচ ও সময় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অলাভজনক হচ্ছে কৃ ষি। তাই কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণে তৃ তীয় এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। চাষাবাদে
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।"
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতু ন এ প্রকল্পের আওতায় ৫৭ হাজার ২৫০টি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ রাখা হয়েছে
২ হাজার ৭১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ধান, গম ও ভু ট্টার জন্য সাড়ে ১৫
হাজার কম্বাইন হারভেস্টারে ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা, ৯ হাজার রিপার ও রিপার বাইন্ডার ক্রয়ে ১১৯ কোটি টাকা।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মধ্যে রাইডিং টাইপ দুই হাজার এবং ওয়ার্কিং টাইপ তিন হাজার যন্ত্র ক্রয়ে ২২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এছাড়া সিডার বা বেড প্লান্টার ক্রয়ে ৫৬ কোটি টাকা, পাওয়ার থ্রেসার ক্রয়ে ৫২ কোটি ২০ লাখ, পাঁচ হাজারটি মেইজ
শেলার ক্রয়ে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ, পাঁচ হাজারটি ড্রায়ার ক্রয়ে ৮১ কোটি, ১ হাজার ৫০০টি পাওয়ার স্প্রেয়ার ক্রয়ে ২ কোটি
১২ লাখ, ৭৫০টি পাওয়ার উইডার ক্রয়ে ২ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার, তিন হাজারটি পটেটো ডিগার ক্রয়ে ৩৭ কোটি ৪০
লাখ, দুই হাজারটি আলুর চিপস তৈরির যন্ত্র ক্রয়ে ১৮ কোটি এবং ৫০০টি ক্যারেট ওয়াশার ক্রয়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

এছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮ দিনব্যাপী নয় হাজার গ্রামীণ মেকানিক প্রশিক্ষণ, পাঁচ দিনব্যাপী ১৫ হাজার উপসহকারী
কৃ ষি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ, এক হাজার কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ, ৩০ হাজার যৌথভাবে জমি ব্যবহারকারী কৃ ষক বা
উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ, ১ হাজার ৪৪০ জনকে যন্ত্র উপযোগী ধানের চারা উৎপাদন কৌশল প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়া
উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ ২০০টি, ১৯৭টি কৃ ষিমেলা, সমন্বিত খামারে ১ হাজার ২৪০ টন বীজ সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়াও
রয়েছে ৪৩টি কর্মশালা, ১৮টি প্রশিক্ষণ ভবন ও ডরমিটরি নির্মাণ, একটি কৃ ষি যন্ত্রপাতি টেস্টিং ও প্রশিক্ষণ সেন্টার সুবিধা
বৃদ্ধি, একটি টেস্টিং শেড নির্মাণ এবং ৩০০টি উপকরণ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে হাওর এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তু কিতে, হাওর ছাড়া অন্য এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত
ভর্তু কিতে কৃ ষিযন্ত্র কিনতে পারবেন কৃ ষক। মোট যন্ত্রে ভর্তু কি ব্যয় মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ। বর্ত মান সরকারের
কৃ ষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তু কি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য কৃ ষক পর্যায়ে ভর্তু কির সুবিধা পৌঁছানো এবং কৃ ষককে যন্ত্র ব্যবহারে
উৎসাহ প্রদান করা।
কৃ ষকের উৎপাদন খরচ কমানোসহ উৎপাদন বাড়াতে কৃ ষির যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পটি বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন
সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে এসিআই এগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. ফা হ
আনসারী বণিক বার্তাকে বলেন, শস্য কাটার । কাটা মৌসুমে শ্রমিকের সংকট মোকাবেলা, তরুণদের কৃ ষিতে ধরে রাখা,

3
কৃ ষকের খরচ কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে সম্পদশালী করতে যান্ত্রিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা নেবে। এই
প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃ ষকরা অর্ধেক দামে কিনতে পারবে সমস্ত কৃ ষি যন্ত্রপাতি।কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র
জানায়, একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ২৮ লাখ টাকা দাম হলে কৃ ষক দেবে ১৪ লাখ টাকা বাকি ১৪ লাখ টাকা সরকার
পরিশোধ করবে। স্থানীয় কৃ ষি অফিসের মাধ্যমে কৃ ষকের নাম ঠিক করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার কম্বাইন্ড
হারভেস্টার দেওয়া হবে কৃ ষকদের।

সূত্র জানায়, কৃ ষকের খরচ কমাতে কার্যকর ভূ মিকা রাখতে পারে ট্রান্সপ্লান্টার ও হারভেস্টার মেশিন। ৪ সারিবিশিষ্ট রাইস
ট্রান্সপ্লান্টারের এক মেশিনেই ঘণ্টায় ২ দশমিক ৫ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করা যায়। অন্যদিকে, জিপিএস প্রযুক্তি সুবিধা
সম্পন্ন হারভেস্টার দিয়ে একই সঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় ১ দশমিক ৫ থেকে ২ একর জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দি
করা যায়। হারভেস্টারের মাধ্যমে খরচের পরিমাণ ৭০-৮০ শতাংশ, সময় ৭০-৮২ শতাংশ বাঁচানো সম্ভব। কৃ ষির সব
সম্ভাবনা কাজে লাগাতেই প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।মাছ চাষ, দুগ্ধ খামার কিংবা পোলট্রিশিল্পেও বিশ্বব্যাপী বহুবিধ
যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে বলেই এসব খাতে অনেক বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করা গেছে। একই সঙ্গে
উৎপাদিত পণ্যের ক্ষতিও কমানো সম্ভব হয়েছে।তাই শুধু ফসল কৃ ষির জন্যই না, কৃ ষির অন্যান্য উপখাতেও
যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহন করা প্রয়োজন মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে কৃ ষি যন্ত্রের বাজার

আমাদের দেশে ব্যবহৃত কৃ ষিযন্ত্রের কমবেশি ৮০ ভাগই আসছে চীন থেকে। বাংলাদেশ কৃ ষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হিসাব
অনুযায়ী আমাদের দেশে গত বছরের কৃ ষি যন্ত্রপাতির বাজার ১২০ কোটি মার্কি ন ডলারের। তবে কৃ ষিশ্রমিকের হার দ্রুত
কমে আসা, ফসল উৎপাদনে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানা কারণেই কৃ ষিযন্ত্রের এ বাজারের আকার বাড়ছে। এ বিষয়ে
অ্যাগ্রো মেশিনারিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলীমুল এহসান চৌধুরীর মতামত, একটি পূর্ণাঙ্গ
কৃ ষিযন্ত্র আমদানি করতে কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। কিন্তু তারা তৈরি করছেন বা অ্যাসেম্বলিং করছেন প্রায় ২৭ ধরনের
কৃ ষিযন্ত্র। এ যন্ত্রগুলো তৈরি করতে প্রায় ৪০ ধরনের যন্ত্রাংশ প্রয়োজন, এর মাঝে সম্প্রতি ২০-২৫টি ও আগে ১০টি
যন্ত্রাংশের ট্যাক্স রহিত করা হয়। এতে অবস্থা কিছুটা ভালো হয়েছে, যন্ত্রের দাম কিছুটা কমবে। বাংলাদেশে আমদানির
বাইরেও ২০ ভাগ কৃ ষিযন্ত্রের চাহিদা পূরণ করছে দেশীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। সামগ্রিকভাবেই আমাদের ফসল
তোলা, ফসল রোপণ, ফসলের প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং, জমিতে সার প্রয়োগসহ নানা ক্ষেত্রেই কার্যকর কৃ ষিযন্ত্রের
চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশের ২০-২৫টি প্রতিষ্ঠান বড় আকারের কৃ ষিযন্ত্র আমদানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ছোট আকারের
কৃ ষিযন্ত্র ও ক্ষু দ্র যন্ত্রাংশ আমদানিকারকের সংখ্যা তাদের চেয়ে বড়।

যেহেতু দেশে এখন পর্যন্ত কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণ সেক্টরটি গড়ে উঠেছে বিচ্ছিন্নভাবে, তাই বর্ত মানে এর সঠিক অবস্থা নিরূপণ
করা সম্ভব নয়। তবে বিছিন্নভাবে এসব তথ্য থেকেই এর প্রয়োজনীয়তা, চাহিদা, প্রসার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সহজেই
অনুধাবন করা যায়। বাংলাদেশ কৃ ষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃ ষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মঞ্জুরুল আলমের ২০১২
সালের এক তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৭১.১৬ টাকার কৃ ষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কৃ ষি যন্ত্রাংশ লেনদেন
হয় তার মধ্যে শুধুমাত্র কৃ ষি যন্ত্রপাতি খাতে ৮০ বিলিয়ন টাকার লেনদেন হয়। এর মধ্যে দেশে তৈরি কৃ ষি যন্ত্রপাতি খাতে
লেনদেন হয় ৩৩.৮৫ বিলিয়ন টাকা। পাওয়ার টিলার খাতে ১৩০০০ মিলিয়ন টাকা, ট্রাক্টর খাতে ৫৫২৫ মিলিয়ন টাকা,
সেন্টিফিউগাল পাম্প খাতে ১৪০০ মিলিয়ন টাকা, কয়েক প্রকার ইঞ্জিনের খাতে ২০০০০ মিলিয়ন টাকা, মাড়াই যন্ত্র খাতে
৬৭০ মিলিয়ন টাকা, ম্প্রেয়ার যন্ত্রাংশ খাতে ৪২ মিলিয়ন টাকা, ইঞ্জিন, পাওয়ার টিলার ও পাম্প স্প্রেয়ার যন্ত্রাংশ খাতে
৩২০০ মিলিয়ন টাকার লেনদেন হচ্ছে। বর্ত মানে দেশে প্রায় ৬৫০০০০ পাওয়ার টিলার ব্যবহৃত হচ্ছে এবং প্রতি বছর গড়ে
প্রায় ৬০ হাজার পাওয়ার টিলার আমদানি হচ্ছে। অন্য দিকে অগভীর নলকূ পের জন্য ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের
সরবরাহ প্রধানত নির্ভ র করছে দেশের স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের ওপর। বর্ত মানে প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার অগভীর
নলকূ প রয়েছে এবং প্রতি বছর এর পাম্পের চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার। দেশে ব্যবহৃত স্পেয়ার সমূহের মধ্যে শুধুমাত্র
পাওয়ার স্প্রেয়ার ব্যতীত প্রায় সকল প্রকার হস্ত ও পা চালিত স্প্রেয়ার বর্ত মানে দেশেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতি বছর এর
চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার। দেশে প্রস্তুতকৃ ত স্প্রেয়ারগুলোর মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ লেনদেন হচ্ছে ঢাকায় এবং বাকি
শতকরা ৭০ ভাগ লেনদেন হচ্ছে দেশের অন্যান্য জেলায়। দেশে ব্যবহৃত মাড়াই যন্ত্রগুলোও এখন দেশের স্থানীয়
কারখানাগুলোতে তৈরি করা হচ্ছে। দেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মাড়াই যন্ত্রের সংখ্যা এখন ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।এবং
প্রতি বছর এর চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার।ফু য়াদ ও ফ্লোরা ২ জন বিজ্ঞানী একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে দেশে নূন্যতম
প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার খামার যন্ত্রপাতির মার্কে ট রয়েছে, যার মধ্যে ট্রাক্টর ও থ্রেসারই হচ্ছে প্রায় ১ হাজার কোটি
টাকার বেশি (ইন্টা.জা.রিসার্চ ইন বিজনেস স্টাডিজ এনড ম্যানেজমেন্ট, ৬:২০১৯)।

4
এছাড়াও দেশে অন্যান্য কৃ ষি যন্ত্রপাতির চাহিদা দিন দিন উচ্চহারে বেড়েই চলেছে। দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর
আজ এর ওপর নির্ভ র করে জীবিকা অর্জ ন করছে। তবে আরো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ সেক্টরে আরো দ্রুত
প্রসার ঘটানো সম্ভব।

দেশের কৃ ষিযন্ত্রপাতি উৎপাদন সক্ষমতা

দেশের কৃ ষি যন্ত্রাংশের ওপর মাঠপর্যায়ে গবেষণারত কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ কৃ ষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃ ষি শক্তি
ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. প্রকৌশলী এটিএম জিয়াউদ্দিন এর তথ্যানুসারে আশির দশকের গোড়ার দিকে দেশীয়
কারখানার যন্ত্রাংশ উৎপাদন শুরু হয়। পুরনো ঢাকার জিনজিরা, ধোলাইখাল টিপু সুলতান রোড, নারায়ণগঞ্জের
ডেমরায় বিপুল পরিমাণে কৃ ষি যন্ত্র উৎপাদন শুরু হয়। বর্ত মানে বগুড়া, টাঙ্গাইল, কু মিল্লা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন
স্থানের ওয়ার্ক শপে এখন প্রচু র পরিমাণে মানসম্মত যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। দেশীয় এরকম ছোট ছ্ােট শিল্প কারখানা ৮৬
সালে ঘোষিত প্রথম শিল্পনীতিতে শিল্পায়নে জাতীয় মডেল হিসাবে স্থান পায়। এ কারখানায় বিদেশ হতে আমদানি বিকল্প
অসংখ্য ক্ষু দ্র যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে। এসব কৃ ষি যন্ত্রাংশের মধ্যে পাওয়ার পাম্প, পাওয়ার টিলারের টাইন, ব্লেড, লাইনার
পিস্টন, পিস্টন রিং, গজপিন ও অন্যান্য স্প্রেয়ার পাম্প বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃ ষিযন্ত্রের যে কোনো পার্ট সের
৬০ ভাগ চাহিদা পূরণ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এগুলো যন্ত্রাংশ তৈরির মধ্যে শুধুমাত্র বর্ত মানে বগুড়ায় ৮০-৮৫
শতাংশ যন্ত্রাংশ তৈরি হয়।

বর্ত মানে দেশে ছোট বড় প্রায় ৮০০টি কৃ ষি যন্ত্রপাতি তৈরি কারখানা বারি এবং ব্রি মডেলে কৃ ষি যন্ত্রপাতি তৈরি করছে।
এছাড়াও ৭০টি ফাউন্ডারি সপ, ১৫০০টি ক্ষু দ্র যন্ত্রাংশ তৈরি কারখানা এবং ২০০০০টি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা
এই সেক্টরের সাথে জড়িত (প্রফেসর ড. মো. মঞ্জুরুল আলম, ২০১২)। এর ফলে দেশের ক্ষু দ্র ক্ষু দ্র কারখানা গড়ে ওঠার
পাশাপাশি আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্ত ন। বাংলাদেশে কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা
থাকলেও প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগ ও কার্যকরী যথাযথ অবকাঠামো না থাকায় এ সেক্টরের ক্রমবিকাশ যতটু কু
গড়ে ওঠা দরকার তা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত কৃ ষি যন্ত্রপাতি মাঠ পর্যায়ে প্রচু র জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বারির
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরের উদ্ভাবিত হাইস্পিড রোটারি টিলার ৪,০০০টি, বারি বীজ বপন যন্ত্র
১,০০০টি, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র ১৬,০০০টি, ধান, গম কর্ত ন যন্ত্র ১০০টি, শস্য মাড়াই যন্ত্র ৪,০০,০০০টি, ভু ট্টা
মাড়াই যন্ত্র ৪,০০০টি, শস্য কর্ত ন যন্ত্র ২০০টি কৃ ষকের মাঠে সঠিক কর্মদক্ষতার সাথে কাজ করছে।

কৃ ষি যান্ত্রিকীকরন নীতিমালা ২০২০

কৃ ষিযন্ত্র কিনতে কৃ ষকদের ঋণসুবিধা দেওয়ার বিধান রেখে গত জানুয়ারি মাসে ‘জাতীয় কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা
২০২০-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।নীতিমালা তৈরির কাজটি করেছে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।পরিকল্পনা
কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও বাংলাদেশ কৃ ষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান ড. মো. সাত্তার মন্ডলকে আহ্বায়ক
করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ কৃ ষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃ ষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের
অধ্যাপক ড. মনজুরুল আলম, বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রাক্তন নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর,
বাংলাদেশ কৃ ষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. ক্ষিরোদ চন্দ্র রায় ও কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খামার
যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মো. নাজিম উদ্দিন। পত্রপত্রিকার সূত্রে
জানা যায় কমিটির সদস্যরা যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক, আমদানিকারক, মেকানিক ও কৃ ষকদের প্রস্তাবনা গ্রহণ ছাড়াও
বগুড়ার খুচড়া যন্ত্রাংশ তৈরির হাব পরিদর্শন করে বিভিন্ন মহলের মতামতের ভিত্তিতে এ নীতিমালা প্রনয়নের কাজটি
করেছেন।

দেশের কৃ ষি সংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রতিনিয়তই জনপ্রিয় হচ্ছে কৃ ষি যন্ত্রপাতি। সরকারী সহায়তায় কেনা কৃ ষি যন্ত্রপাতির
পরিমাণ বাড়ছে। সারাদেশে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ২৬৮টি পাওয়ার থ্রেশার, ১ হাজার ৭২৩টি রিপার,
৪৪৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৭টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও ১ হাজার ১৯৫টি সিডার কিনেছেন কৃ ষকেরা। বছরটিতে বিতরণকৃ ত
যন্ত্রের পরিমাণ ৪ হাজার ৬৪১টি। কৃ ষি মন্ত্রণালয় বলছে,দেশে ধান কাটার যন্ত্রটির চাহিদা তিন বছরে বেড়েছে ১২ গুণ।
এটা গত বছরের তু লনায় তিন গুণেরও বেশি। কৃ ষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য , গত বছরের তু লনায় ধান কাটার আরেক
যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টারেরও চাহিদা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। এছাড়া বেসরকারিভাবে কৃ ষিতে বাড়ছে যন্ত্রপাতির প্রসার।
দেশের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা। বগুড়ার খুচরা যন্ত্রাংশের হাব এরই মধ্যে নজর কেড়েছে। নীতিমালা
তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শেখ মো.
নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘কৃ ষি যান্ত্রিকীরণ নিয়ে আগে কোনো নীতিমালা ছিল না। এটি নিয়ে প্রথমবারের মতো কাজ
শুরু হয়েছে। নীতিমালা না থাকায় এসব যন্ত্রের উৎপাদন ও আমদানিতে কিছু সমস্যা ছিল। এছাড়া উৎপাদক পর্যায়ে

5
স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়াতেও ছিল সমস্যা। নীতিমালা হওয়ার পর কোথায় কী অগ্রাধিকার দিতে হবে তা সহজেই চিহ্নিত করা
যাবে। ফলে খুব সহজেই সুনির্দি ষ্ট কার্যক্রমও গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’

ওই নীতিমালায় কৃ ষকরা যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে এবং সহজ শর্তে বিভিন্ন ধরনের কৃ ষিযন্ত্র কিনতে পারেন সেই সুযোগ রাখা
হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেনার সুযোগ রাখার পাশাপাশি সমবায় পদ্ধতিতেও যাতে কৃ ষি যন্ত্রপাতি কেনা ও ব্যবহারের
সুযোগ পান সেটি ওই নীতিমালায় নতু নভাবে অন্তর্ভু ক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া নীতিমালায় কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণের ভিশন,
লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসহ কৃ ষি কৌশল, কৃ ষিযন্ত্র সেবা প্রদানকারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃ ষিযন্ত্র উৎপাদন শিল্পের
সম্প্রসারণ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, কনজারভেশন অ্যাগ্রিকালচার, বিশেষ অঞ্চলভিত্তিক যান্ত্রিকীকরণ, যুবশক্তির
অংশগ্রহণ, নারীর অংশগ্রহণ, নীতিমালা বাস্তবায়নের কর্মপদ্ধতি ও মনিটরিং ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

বাংলাদেশে কৃ ষি যান্ত্রিকীকরনের

প্রতিবন্ধকতা ও করনীয়

কৃ ষিতে বাংলাদেশের যেমন সফলতা ও সম্ভাবনা আছে তেমনি আছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। ফু য়াদ ও ফ্লোরা সংকলিত তথ্যম
শতবর্ষব্যাপী খামার যান্ত্রিকীকণের বড় সমস্যা ছিল ক্ষু দ্রায়তন ফসল মাঠ, আর্থিক, যন্ত্রায়ন ও যন্ত্র মেরামত সমস্যা,
ফসল সিকু য়েন্সিং বা সমন্বিত হারভেষ্ট প্লানিং সমস্যা, অনিশ্চিত পণ্যমূল্য ইত্যাদি।ভর্তু কি সুবিধা সহ আধুনিক যন্ত্র নির্ভ র
কৃ ষি প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত পরিপূর্ণ ভাবে পৌছানো ও টেকসই কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণ আক্ষরিক অর্থেই অত্যন্ত কঠিন একটি
কাজ এবং এটি নিশ্চিতের জন্য আরো সুনির্দি ষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন।বাংলাদেশে কৃ ষি যান্ত্রিকীকরনের যে সব বাধা রয়েছে
এবং তা থেকে উত্তোরনের কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করসা হলঃ

১।দরিদ্র কৃ ষকদের স্বল্প বয়্যে যন্ত্র ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ

দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সল্প জ্ঞানের কারনে প্রান্তিক কৃ ষকদের উচ্চ মূল্যের ও জ্ঞান ভিত্তিক যন্ত্রপাতি
ক্রয়ের সামর্থ্য ও আগ্রহ নেই। তারা বেসরকারি কৃ ষি যান্ত্রিকীকরণ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে একর প্রতি হারে এই
যন্ত্রপাতি ভাড়া নিবে। সেক্ষেত্রে প্রান্তিক কৃ ষকদের ভর্তু কির সুবিধা নিশ্চিতকরণে ভর্তু কি মূল্যে সরবরাহকৃ ত যন্ত্রের একর
প্রতি ভাড়া নির্ধারণ প্রয়োজন।তা না হলে মালিকেরা অন্যায্য ভাড়া আদায় করলে যান্ত্রিকীকরনের উদ্দেশ্য মার খাবে।
দামী যন্ত্র সমবায়ের মাধ্যমে কিনে ব্যবহার করলেও কৃ ষকরা বড় ও দামী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। বাংলাদেশে জরিপ
চালিয়ে গবেষকগণ প্রমাণ পেয়েছেন যে, - আধুনিক কৃ ষি যন্ত্রপাতি যৌথ উদ্যোগে ক্রয় করা হলে শতকরা ৭০ থেকে
৮০ ভাগ মূলধন সাশ্রয় হয়।যন্ত্রপাতি মেরামতে খুবই ন্যূনতম খরচ হয়। তাছাড়া নিয়মিত ব্যবহারের কারণে সহজে নষ্ট হয়
না।

২। চাহিদা নির্ভ র পরিকল্পন প্রণয়ন

6
কৃ ষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উদ্ভাবন ও উন্নয়নকাজে নিয়োজিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজের সঙ্গে মাঠের
কার্যকর যোগসূত্রের অভাব প্রতিনিয়তই পরলিক্ষিত হচ্ছে।যন্ত্র ব্যবহারে আগ্রহী কৃ ষকদের যন্ত্র ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিতকরণে
উপজেলাভিত্তিক মাটির গঠন, প্রকৃ তি, ফসল উৎপাদনে কৃ ষক সংস্কৃ তি ও যন্ত্র ব্যবহারে কৃ ষকের আগ্রহের ওপর ভিত্তি
করে যন্ত্রের চাহিদা নিরূপণ এবং সুনির্দি ষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে যান্ত্রিকীকরনের সফলতা পাওয়া যাবে।

৩।মুনাফার অনিশ্চয়তা দূর করাঃ

কৃ ষি যন্ত্রপাতি ক্রেতা ভর্তু কি মূল্যে যন্ত্র ক্রয়ের পরে যন্ত্রের দ্বারা প্রতি বছর প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জ ন নিশ্চিতকরণে
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃ ষককে ফসল উৎপাদনে বাধ্য করতে যৌথ জমি ব্যবহারকারী কৃ ষক প্রশিক্ষণের
পাশাপাশি কৃ ষকের জমি ব্যবহারের বিধিমালা তৈরি প্রয়োজন।

৪। ব্যবহার পরবর্তী সংরক্ষনঃ

যেহেতু যন্ত্রগুলো বছরের নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত অন্য সময় অব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে তাই যন্ত্র যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণ
নিশ্চতকরণ, মাঠে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, দক্ষ যন্ত্রচালক তৈরিকরণ, যন্ত্র
ব্যবহারের উপযোগী করে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যে কোন যান্ত্রিক সমস্যায় বিক্রয় পরবর্তী সেবা ও খুচরা
যন্ত্রাংশের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ, কৃ ষি যন্ত্র আমদানি ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভর্তু কি মূল্যে
পূর্বের সরবরাহকৃ ত যন্ত্রগুলোর যথাযথ ব্যবহার এবং তার সফল বাস্তবায়নে সার্বক্ষনিক তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে।তা
না হলে অল্প দিনের মধ্যেওই যন্ত্রগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে।কৃ ষক যন্ত্র ব্যবহার করে লাভবান না হওয়ায় আগ্রহ
হারিয়ে ফেলবে।

৫।ভর্তু কির যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তাঃ

মুনফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী ভর্তু কি মূল্যে কৃ ষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করে বর্ত মানে বাজার মূল্যে যন্ত্রটি অন্যত্র বিক্রি করে দিতে
পারে যা ভর্তু কির উদ্দেশ্য ব্যাহত করবে। প্রতিটি যন্ত্র ক্রেতাকে তার যন্ত্র প্রত্যাশিত জীবনকাল অবধি যথাযথ ব্যবহার
নিশ্চিত করতে হবে। তাই দুর্নীতি রোধ, সঠিক যন্ত্র ক্রেতা নির্বাচন, নির্ধারিত ভাড়ায় যন্ত্র সরবরাহ ও যন্ত্রটি প্রত্যাশিত
জীবনকাল অবধি ব্যবহার নিশ্চিতকরণে যন্ত্র ক্রেতা আইন তৈরি এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। প্রকল্পের ব্যয়
করা অর্থের ন্যায্যতা এবং টেকসই যান্ত্রিকীকরণের জন্য এসব আবশ্যক। অন্যথায় প্রকল্পটিতে যন্ত্র ক্রেতা এবং প্রান্তিক
কৃ ষক উভয়েরই বঞ্চিত হওয়ার, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বাড়ার এবং বিপুল অর্থের অপচয় হওয়ার
আশংকা রয়েছে যা পরবর্তী উন্নয়নের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

৬।গবেষণার ব্যবস্থাঃ

অঞ্চলভিত্তিক মাটির গঠন, প্রকৃ তি, ফসল উৎপাদনে কৃ ষক সংস্কৃ তি ও যন্ত্র ব্যবহারে কৃ ষকের আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে
যন্ত্রের চাহিদা নিরূপণ করে যন্ত্র নির্মান এবং ফলাফল যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গবেষণার। কৃ ষি গবেষণা
প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে কাজ করলেও তা চাহিদার তু লনায় অপ্রতু ল ।পৃথিবীর দেশে দেশে সব গবেষণা ও উন্নয়নের
প্রশ্নে সবচেয়ে বড় ভূ মিকা রাখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আমাদের দেশে পরিস্থিতিটা ভিন্ন। আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
অধিকাংশ গবেষণা শিক্ষাগত ডিগ্রি লাভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কৃ ষির যান্ত্রিকীকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃ ষি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অগ্রগতি, তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রফেসর ড. মনজুরুল আলমও স্বীকার করে নিয়েছেন, সরকারের প্রকল্পগুলোয়

7
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তেমন সম্পৃক্ততা থাকে না। ফলে কৃ ষির যান্ত্রিকীকরনের সুফল পেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও
এই বিষয়ে গবেষণার উপর জোর দিয়ে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন।

৭। দক্ষ জনবল নিয়োগঃ

যান্ত্রিকিকরনের সফলতার লক্ষ্যে সরকার সকল নীতিমালা ও আইন তৈরি এবং পরিকল্পনা গ্রহন করলেও পর্যাপ্ত
প্রকৌশল জনশক্তি নিয়োগ এবং কৃ ষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দপ্তর, সংস্থা ও গবেষণা কার্যক্রমে জড়িত সকল প্রকৌশল
জনবলকে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনবলে রূপান্তর এবং একসূত্রে বাঁধা ব্যতীত এর সফল বাস্তবায়ন এবং সার্বক্ষনিক
তদারকি কোন ভাবেই সম্ভব নয়।মাঠ পর্যায়ে কৃ ষি প্রযুক্তি সম্প্রসারন কাজের জন্য পর্যাপ্ত প্রকৌশল জনবলের অভাবে
এখনো কৃ ষির প্রকৌশল বিদ্যা কার্যকর ভাবে কৃ ষকের দোর গোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। যেমন বাংলাদেশ কৃ ষি উন্নয়ন
কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ক্ষু দ্রসেচ বিভাগের শুধু উন্নত সেচ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্যও পর্যাপ্ত জনবল নেই।
অতিসত্বর উপজেলা ভিত্তিক প্রকৌশল জনবল নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি বিএডিসি ক্ষু দ্রসেচ বিভাগকে শুধু সেচ
যান্ত্রিকীকরণ ও সেচ ব্যবস্থপনা কার্যক্রমে আবদ্ধ না রেখে বর্ত মান চাহিদা অনুযায়ী কৃ ষির অন্যান্য অংশ যান্ত্রিকীকরণেও
ব্যবহার করা জরুরি।

৮।যন্ত্রের যথাযথ মাননিয়ন্ত্রণঃ

সস্তা যন্ত্র কিনে তা মেরামত করতে করতে কৃ ষক যান্ত্রিকীকরণের উপর চরমভাবে বিরক্ত হয়ে গেছে। অথচ সরকারী
আর্থিক সহযোগিতায় ভালমানের দেশের পরিবেশে টেকসই যন্ত্র ক্রয় করলে তা হত না। কৃ ষি উন্নয়নের সফলতার
চাবিকাঠি যান্ত্রিকীকরণের কোন বিকল্প নাই।প্রতিটি কোম্পানির যন্ত্রই পরীক্ষা করে বাজারজাত করতে হবে। একই সঙ্গে
সেগুলোর মানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে কিনা সেটিও তদারক করতে হবে।বর্ত মান বছরে বোরো মৌসুমে কম্বাইন
হারভেষ্টার ও রীপারসহ প্রায় হাজারখানেক যন্ত্রপাতি মাঠস্থ করা হয়েছে। এর মধ্যে গুণগত মান সম্পন্ন ব্র্যান্ড যন্ত্রগুলো
ভাল কাজ করেছে। এদের মূল্য একটু বেশি হলেও তা নিয়ে তেমন অসন্তোষ্টি পরিলক্ষিত হয় নাই।তাই সস্তা নয় কার্যকর
দ্রব্য দরকার।

৯।কৃ ষককে যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলাঃ

চাষ, মাড়াই ও সেচের জন্য যে ধরনের যন্ত্র ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতাই যথেষ্ট আর সিডার, হার্ভে স্ট
ও কীটনাশক বা সার প্রয়োগের জন্য যে যন্ত্রগুলো রয়েছে তা প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতার প্রয়োজন।পাশাপাশি
জ্ঞানমূলক শিক্ষার প্রয়োজন ।সেকারনে এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারে কৃ ষকদের মাঝে অনাগ্রহ লক্ষ্যনীয়। ফলে যন্ত্র ব্যবহারে জন্য
যন্ত্রের পেছনে থাকা মানুষটিরও কিছুটা দক্ষতা অর্জ নের প্রপয়োজনীয়তা রয়েছ।। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে
কৃ ষককে দক্ষ করে তু লতে পারলে ওই যন্ত্রগুলোও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, ব্যবহার বাড়বে।

শেষ কথা

কৃ ষির আধুনিকায়ন চলমান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত
হচ্ছে। পাশাপাশি তা সংযোজিত হচ্ছে কৃ ষি উন্নয়নে। কৃ ষি ও কৃ ষকের চাহিদাগুলো বিবেচনা করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে
আমাদের আগামীর কৃ ষিকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে লালন–পালন করে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে, আমরা
ভালোভাবে বেঁচে থাকব। আর তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন কৃ ষির উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সব ক্ষেত্রে টেকসই কৃ ষি

8
যান্ত্রিকীকরণ। বিভিন্ন মেয়াদি এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়নে কৃ ষিযন্ত্রের যথাযথ ব্যবহারের জন্য কৃ ষির
বিভাগকে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

You might also like