Professional Documents
Culture Documents
Rizq Comes From Allah (SWT)
Rizq Comes From Allah (SWT)
পশ্চাত্য সাংস্কৃতির অগভীর ও স্থূল চিন্তাগুলো আজ মুসলিমদের চিন্তা ও চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। পশ্চাত্যের জীবন সম্পর্কে ধারনাগুলো আজ আমাদের
মধ্যে প্রবেশ করছে।ফলে ইসলামের অনেক মৌলিক চিন্তা আমাদের নিকট অস্বচ্ছ ও অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এমন একটি বিষয় হল রিযিক যা ঈমানের একটি
গুরুত্বপূর্ন অংশও বটে।
ইসলামী আকিদাহ অনুসারে আমরা বিশ্বাস করি রিযিক আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত।প্রত্যেক মুসলিম দাবী করে থাকে যে, সে এর উপর বিশ্বাস করে কিন্তু বাস্তব
জীবনে দেখা যায় ঠিক তার উল্টো । বর্তামান সময়ে মুসলিমরা যেভাবে হালাল হারাম ভুলে সম্পদের পিছনে ছুটছে এবং জীবিকার চিন্তায় অনেক ফরয আদায়
করা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে তা দেখে প্রশ্ন জাগে আসলেই তারা রিযিক আল্লাহর পক্ষ হতে আসে এ কথায় বিশ্বাস করে কিনা।বিশেষত আমরা যখন
দেখি রিযিকের যিষয়টি সুস্পষ্টভাবে না বুঝার কারনে অনেকে নিজেকে ইসলামের দাওয়াহ থেকে সরিয়ে নেয়।
ইবনে আব্বাস হতে বর্নিত রাসূল(সা) বলেন, “জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা কিংবা সত্য কথা বলার সময় কারো ভয় পাওয়া উচিত নয় কারন এর মাধ্যমে না
আয়ু কমে যাবে , না তাকে তার রিযিক থেকে দূরে সরিয়ে দিবে”। ( বায়হাকি এবং ইবন নজর)
সুতরাং , রিযিকের চিন্তা যেন আমাদের দ্বীনের এই কাজ হতে দূরে সরিয়ে না দেয়। যার জন্য রিযিক বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট ধারনা থাকা দরকার।
বর্তমানে মুসলিমরা বুঝতে পারছে না, রিযিক কি আসলে আল্লাহর কাছ থেকে আসে? নাকি আমরা তা আমাদের কজের মাধ্যমে অর্জন করি? অনেকে মনে
করেন আমরা রিযিক অর্জনের জন্য যে চেষ্টা করে থাকি শুধুমাত্র তাই রিযিক অর্জনের কারন।আসলেই কি চেষ্টার মাধ্যমেই রিযিক অর্জিত হয় নাকি এর
পিছনে অন্য কারো হাত আছে? নিম্নোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা এই প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজবো।।
আসুন প্রথমে আমরা বুঝি রিযিক কি? রিযিক হল তাই যা আমরা ভোগ করে থাকি অথবা আমরা যে সন্তুষ্টিটা অর্জন করি। সুতরাং আমরা যে খাদ্যদ্রব্য ভোগ
করি শুধু তাই নয় বরং অন্য সকল কিছু যা ভোগ করি সবই রিযিক। রিযিকের বাহিরে কোন কিছু ভোগ করা সম্ভব নয়।
এখন আসুন , বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিশ্লেষনের মাধ্যমে রিযিকের প্রকৃতি অনুধাবনের চেষ্টা করি।প্রথমে আলোচনা করি রযিকের কি শুধুমাত্র আমদের চেষ্টার
মাধ্যমেই অর্জিত হয় নাকি চেষ্টা ছাড়াও অর্জিত হতে পারে? বাস্তবতা থেকে আমরা বুঝতে পারি প্রত্যেক ফলাফলের পেছনে কোন না কোন কারন থাকে।তাই
অনেক মানুষ মনে করে রিযিক এমন একটি ফলাফল যা আমরা এর জন্য চেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করে থাকি সুতরাং, রিযিক আমাদের চেষ্টার ফলাফলস্বরূপ,
আল্লাহর সাথে এর সম্পর্ক নেই।
যেমন ধরুন- আগুন কাঠকে পোড়ায়। এখানে পোড়ানো একটি ফলাফল যার প্রধান কারন হচ্ছে আগুন যার অস্তিত্ব ব্যাতীত পোড়ানো বিষয়টিকে
ফলাফলস্বরূপ পাওয়া সম্ভব নয় অথবা আগুনের প্রয়োগের মাধ্যমে অবশ্যই পোড়ানো ফলাফলটি অর্জন করা সম্ভব। অন্যভাবে বলা যায় ছুরি যার প্রয়োগের
মাধ্যমেই ফলস্বরূপ কোন কিছু আমরা কাটতে পারি অথবা বলা যায় ছুরির প্রয়োগ ব্যাতীত কোন কিছু কাটা সম্ভব নয়। এখানে আগুন ও ছুরি উভয়ই প্রধান
কারন যার মাধ্যমে আমরা ফলাফলস্বরূপ আমরা পোড়ানো ও কাটা অর্জন করতে পারি।সুতরাং, পোড়া ও কাটা এই ফলাফলগুলি আগুন ও ছুরি ব্যাতীত যদি
অর্জিত হয় তবে বুঝতে হবে এরা প্রধান কারন নয় বরং প্রধান কারন অন্য কিছু।একইভাবে, যদি আমরা বলি আমাদের চেষ্টার মাধ্যমেই রিযিক অর্জিত হয়
তবে ব্যপারটি এমন হতে বাধ্য যে চেষ্টা ব্যাতীত রিযিক অর্জন সম্ভব নয়।আর যদি এমন হয় চেষ্টা ছাড়াও রিযিক অর্জিত হয় তবে বুঝতে হবে রিযিক নামক
এই ফলাফলটির প্রধান কারন চেষ্টা নয় বরং অন্য কোন কিছু।
চিন্তা করুন আপনি কোন ব্যবসা করছেন , আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারবেন এর মাধ্যমে আপনি রিযিক অর্জন করতে পারবেন ? না পারবেন না। তাহলে
কিভাবে বলবেন ব্যাবসার মাধ্যমে রিযিক অর্জিত হয়। ধরুন আপনার কোন আত্মীয় আপনাকে কোন কিছু উপহার হিসাবে পাঠালো, এখানে আপনি কোন
প্রকার চেষ্টা ছাড়াই রিযিক অর্জন করছেন। সুতরাং , রিযিক এমন একটি ফলাফল যা কোন চেষ্টা ছাড়াও অর্জিত হতে পারে, তাই আমরা বলতে পারি না
রিযিকের কারন হল চেষ্টা বরং তা বলা যেতে পারে রিযিক অর্জনের একটি মাধ্যম হল চেষ্টা।
তাই, রিযিক এমন একটি বিষয় যা আমদের নিয়ন্ত্রনাধীন বলয়ের মধ্যে নাই। আমরা জানি কোন কিছুই কারন ছাড়া হয় না তাহলে রিযিকের কারন কি? চেষ্টা
যেহেতু রিযিক অর্জনের একটি মাধ্যম মাত্র ,তাহলে কারনটি কি হতে পারে? আমাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষন ও অনুভবের মাধ্যমে আমরা বুঝতে
পারি অন্য কেউ এই রিযিককে নিয়ন্ত্রন করছেন আর তিনিই হলেন আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা।
নিম্নে কোরানের রিযিক বিষয়ক আয়াতগুলো তুলে ধরা হলঃ
ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর বর্তায় না এবং যার সম্পর্কে তিনি জানেন না, কোথায় সে থাকে এবং কোথায়
তাকে সোপর্দ করা হয়। সবকিছুই একটি পরিষ্কার কিতাবে লেখা আছে (হুদ:০৬)
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর পথে বাড়ি-ঘর ত্যাগ করেছে এবং জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য -সহায়তা করেছে তারাই সাচ্চা মুমিন।
তাদের জন্যে রয়েছে ভূলের ক্ষমা ও সর্বোত্তম রিযিক। (আনফাল:৭৪)
তোমার রব যার জন্য চান রিযিক প্রশস্ত করে দেন আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন। তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন।
(বনী-ইসরাঈল:৩০)
আল্লাহই তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিযিক প্রসারিত করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা সংকীর্ণ করে দেন । নিশ্চিতভাবে আল্লাহ সব জিনিস জানেন।
(আনকাবুত:৬২)
এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর কাজ
সম্পূর্ণ করে থাকেন। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের জন্য একটা মাত্রা ঠিক করে রেখেছেন। (তালাক:০৩)
অথবা বলো,রহমান যদি তোমাদের রিযিক বন্ধ করে দেন তাহলে এমন কেউ আছে,যে তোমাদের রিযিক দিতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এসব লোক বিদ্রোহ ও
সত্য বিমুখতায় বদ্ধপরিকর। (মূলক:২১)
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ আমাদের রিযিক দান করেন ও এতে বিশ্বাস করা ঈমানের একটি স্তম্ভ। এখন একশ্রেনীর
মুসলিমদের কাছে মনে হতে পারে রিযিক যেহেতু নির্ধারিত তাহলে এর জন্য কষ্ট করার দরকার কি? হ্যাঁ চেষ্টা ছাড়াই রিযিক অর্জন সম্ভব কিন্তু আল্লাহ
আমাদের রিযিকের জন্য চেষ্টা করার আদেশ দিয়েছেন ।
তিনিই তো সেই মহান সত্তা যিনি ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। সুতরাং, তোমরা এর বুকের ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর দেয়া
রিযিক খাও। আবার জীবিত হয়ে তোমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। (মূলক:১৫)
অতএব যখন জুমুয়ার নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথীবিতে ছড়িয়ে পড়ো আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো, আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্বরন করো,
আশা করা যায় তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে। (আল জুমুআঃ ১০)
সুতরাং আমাদের রিযিকের জন্য মেহনত করতে হবে।এটা ঠিক যে আমরা আমাদের রিযিককে বর্ধিত করতে পারি না আবার সংকুচিত করতে পারি না কিন্তু
আমরা এর মাধ্যমগুলো নির্বাচন করতে পারি। যেমন ধরুন আপনার রিযিকে যা আছে তা আপনি হয় ব্যাবসা করে অর্জন করবেন অথবা চাকরি করে তা
আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
ইতিহাস থেকে আমরা দেখি, রাসুল(সা) ও তার সাহাবাগন এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা থাকার কারনে রিযিক নিয়ে চিন্তিত হতেন না বরং আল্লাহর উপর আস্থা রেখে
রিযিকের সন্ধান করতেন , পাশাপাশি অন্য সকল ফরযগুলো আদায় করতেন। তারা ছিলেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আগ্র পথিক অন্যদিকে রিযিকের
সন্ধানও তারা করতেন কিন্তু তা কখনোই তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা জানি হযরত ওসমান(রা) কিভাবে দ্বীনের জন্য তার সম্পদ দান
করেছিলেন।
আল্লাহ বলেন, “আমি অবশ্যই (ঈমানের দাবীতে) তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয় ভীতি, কখনো ক্ষুধা অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জান মাল ও
ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে (তোমাদের পরীক্ষাকরা হবে।যারা ধৈর্যের সাথে এর মোকাবেলা করে); তুমি সেই ধৈর্্যশীলদের জান্নাতের সুসংবাদ দান কর”।
(আল বাকারাঃ ১৫৫)
সুতরাং আল্লাহ আমাদের রিযিক দান করেন এবং তিনিই আমাদের রিযিকের মাধ্যমে পরীক্ষা নিবেন; সুতরাং আমরা যেন পূর্ন আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে এই
সকল পরীক্ষার মোকাবেলা ও ধৈর্য ধারন করতে পারি আল্লাহর কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা। ইনশাল্লাহ, আল্লাহ সেই সকল ধৈর্যশীলদের জন্য রেখেছেন
জান্নাত।
পরিশেষে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে দুয়া করি যেন তার সাহায্য ও সহায়তা বৃদ্ধি পায়, তিনি যেন আমাদের বিষয়াদিগুলোকে সহজ করে
দেন ।
‘’এবং যারা আল্লাহ কে ভয় করে,আল্লাহ তাদের জন্য তাদের বিষয়াদি সহজ করে দিবেন।‘’-(আত তালাকঃ৪)
‘’ এবং যারা আল্লাহ কে ভয় করে,আল্লাহ তাদের মুক্তির একটা পথ করে দেবেন।‘’-(আত তালাকঃ২)