Professional Documents
Culture Documents
আধুনিকতার ছোঁয়া
আধুনিকতার ছোঁয়া
আমরা আমাদের জীবন গড়ার জন্য পড়াশুনা করছি সেই ক্লাস ওয়ান থেকে। শুধুমাত্র
ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করতেই ষোল বছর পার করে দিচ্ছি। যখন একটি ছেলে কিংবা
মেয়ে ব্যাচেলর শেষ করে তখন তার বয়স হয় কমপক্ষে বাইশ বছর। তারপর আছে
মাস্টার্স; আরো আছে পি এইচ ডি। পড়াশুনা শেষ করতেই জীবনের অর্ধেক সময়
আমরা পার করে দেই যাতে পরবর্তী অর্ধেক জীবন সুখে (!!!) ও সাচ্ছন্দে কাটাতে
পারি। কিন্তু আমরা একটা সত্য প্রায়ই ভু লে যাই তা হল আমরা চিরস্থায়ী নই। আমাদের
মরতে হবে। আমরা ভু লে যাই মৃত্য যেকোন সময় আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে।
আমরা যথাসম্ভব একে ভু লে থাকতে চাই। কিন্তু আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা
যতই চেষ্টা করি না কেন মৃত্যু আমাদের সামনে এসে দাড়াবেই কোন না কোন দিন।
মহান আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তা’আলা বলেন, কিয়ামতের একদিন হবে পঞ্চাশ হাজার
বছরের সমান। আখিরাতের পুরো জীবনের কথা তো বাদই দিলাম। শুধুমাত্র
কিয়ামতের একদিন এত বড় হবে যে তা আমাদের দুনিয়ার জীবনের তু লনায় কিছুই
নয়। আমরা আমাদের অর্ধেক জীবনের জন্য এত পড়াশুনা করছি কিন্তু কিয়ামতের
একদিনের জন্য কি করেছি। তার জন্য কি পাথেয় সংগ্রহ করেছি? নিজেকে একটু প্রশ্ন
করে দেখি। হ্যাঁ ভাই, এই পড়াশুনায় আপনার পার্থিব জীবনে কোন উপকার হয়ত হবে
না; কেউ হয়ত এর জন্য আপনাকে টাকা পয়সা দিবে না। কিংবা ভাল কোন চাকুরীও
পাবেন না। কিন্তু জেনে রাখুন আখিরাত সত্য। শুধু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে থাকবেন
না।
চিন্তা করে দেখুন একটি বার ভাবুন কেন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আমারা
সৃষ্টিকূলের শ্রেষ্ঠ জীব বলে নিজেদের নিয়ে গর্ব্বোধ করি কিন্তু এওবারও ভেবে দেখি না
আমরা কেন শ্রেষ্ঠ। আমাদের মস্তিস্ক অনেক শক্তিশালী, কয়েক হাজার সুপার
কম্পিউটার এর চেয়েও। কিন্তু কেন ভাই? আমরা যদি বানর থেকেই মানুষ হতাম
তাহলে বুদ্ধিটা বানর থেকে এত বেশি হবার তো কারণ নাই। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তার
মস্তিস্কের মাত্র ১০ ভাগ এর মত ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। আপনার কি মনে হয়
আপনার ব্রেইন আইনস্টাইন থেকে পরিমানে কম? না ভাই, পরিমান ঠিকই আছে।
তাহলে? তাহলে কেন আমাদের এত বেশি ব্রেইন দেয়া হল? এর নিশ্চয়ই কোন কারণ
আছে। একটু ভাবুন।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানেন? আমরা
সবাই মনে করি ধর্মটা একটি সংস্কৃ তি যা পালনের ব্যাপার। আর মনে করি ‘আমি তো
জানিই’। আর এখন তো আরও অনেক কিছু যোগ হয়েছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা,
মানবতাবোধ, সভ্যতার মাপকাঠি গণতন্ত্র, আরো কত কি! এইসব গালভরা বুলি
আমরা শিখে নিজেদের শিক্ষিত আর স্মার্ট মনে করি। আর ভাবি যারা ধর্ম নিয়ে
গোঁড়ামি করে তারা মুর্খ। ভাই এগুলো শয়তানের চাল, শয়তান আমাদের সামনে
আমাদের এইসব বুলিকে সুশোভিত করে দেখায়। আর আমরা নিজদের নিয়ে গর্ব করি;
যদিও আমরা জানি যে আমাদের জন্ম নোংরা বীর্য থেকে যা কাপড়ে লাগলে তা
ততখনাত ধুয়ে ফেলতে হয়। আমরা পেটে গু নিয়ে চলাফেরা করি আর টাই স্যুট পরে
কিংবা সেইরকম একটা মেক’আপ নিয়ে ভাবি বেশ স্মার্ট আমি। যারা দাঁড়ি টু পি পড়ে
তাদের মনে মনে বলি ওহে বেকুব, তোদের জীবনে উন্নতি আর সম্ভব না। কিংবা যে
মেয়েরা হিজাব করে তাদের দেখে বলি, ‘আন-কালচারর্ড ’। কিন্তু নিজেকে একবার
যাচাই করে দেখি না, দেখি না যে অফিসে গিয়ে আমি বসের গোলাম হয়ে গিয়েছি;
কিংবা কেউ অবিচার করলেও আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র সাহস নাই এর প্রতিবাদ করার।
যাই হোক, সামনে ভ্যালেন্টাইন দিবস। এ সম্পর্কে কিছু কথা শেয়ার না করে পারছি না।
একবার মুসা (আঃ) দেখলেন, তাঁর গোত্রের এক লোকের সাথে আরেক ব্যক্তির ঝগড়া
হচ্ছে। তখন তিনি ওখানে গেলেন ও নিজ গোত্রের ব্যক্তির পক্ষে কথা বললেন এবং ঐ
লোকটিকে একটি হাল্কা ঘুষি দিলেন। কিন্তু এতেই তাঁর মৃত্যু হল। যাই হোক, পরদিন
তিনি তাঁর গোত্রের ঐ লোকটিকে আবার অন্য আরেকজনের সাথে লড়তে দেখলেন।
তখন তিনি বললেন, ‘ তু মি তো চড়ম ঝগড়াটে লোক’। লোকটি তার দিকে মুসা (আঃ)
কে আসতে দেখে বললঃ তু মি তো সেই লোক যে গতকাল একজনকে হত্যা করেছ আর
আজ আমাকে হত্যা করার জন্য তেড়ে আসছ। ভাই দেখেন কি অবস্থা। যার জন্য
করলাম চু রি সেই বলে চোর। মুসা (আঃ) যার জন্য লড়লেন সেই তাকে অপবাদ দিচ্ছে।
আপনার কি ধারণা কেন এমন করল সেই লোকটি? আসলে কারণ কিছুই না। কারন
হল লোকটি তার ব্যক্তিত্ববোধ আগেই হারিয়ে বসেছিল। ফিরাউনের শাসনে থেকে সে
আসলে স্বার্থপর একটা জন্তুতে পরিনত হয়েছিল। যখনই কোন জাতি জালিম শাষকের
অধীনে বহুকাল থাকে তখন তারা তাদের ব্যক্তিত্ববোধ ও স্বকীয়তাকে বিসর্জ ন দেয়।
কেননা যদি তারা তা না করত তাহলে তাদের ওই যালিম শাষকের অধীনে থাকতে হত
না। এবার ভাবুন আমরা কবে থেকে শাষকদের জুলুম আর অন্যায়ের মধ্যে বাস
করছি। হাসিনা, খালেদা, এরশাদ কিংবা এদের মত যারা আমাদের শাসন করেছে
তাদের সবাইকে আমরা মেনে নিয়ে চু পচাপ স্বার্থপরের মত ‘ইয়া নাফসী’, ‘ইয়া নাফসী’
করেছি। আর এখনও করছি। কারন আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। যাই হোক,
অনেকে ভাবছেন এসব নিয়ে কথা বলার সাথে ভ্যালেন্টাইন দিবসের কি সম্পর্ক ? হ্যাঁ
ভাই, সম্পর্ক আছে। যখনি কোন জাতি অপ্রেশনের মধ্যে থাকে তখন তারা এমন
কাউকে ফলো করে যারা তাদের চেয়ে শক্তিশালী। কারণ শক্তিশালী জাতিকে দেখে তারা
ভাবে তাদের প্রথা অনুসরণ করলেই হয়ত তারা আবারো মাথা উঁচু করে দাড়াতে শিখে
যাবে। কিন্তু আসলে তা কখনই হবার নয়। আমরা মনে করি পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত
হলেই আমরা আমাদের জাতিকে সভ্যতার চূ ড়ায় উঠিয়ে ফেলব। কিন্তু একবারও ভেবে
দেখি না আমরা কে কিংবা আমরা আসলে কারা। কারণ আমরা অন্ধ হয়ে গেছি।
আমাদের সামনে মুলা ঝু লছে; অনেক টাকার স্বপ্ন কিংবা অনেক সুখ পুরনের প্রত্যাশা যা
কিনা আমাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিবে।
তাই যখনি দেখলাম, পাশ্চাত্য সমাজে ছেলে মেয়েরা খোলাখুলি চু মাচু মি করে তাই আর
নিজেদের আটকে রাখতে পারলাম না, বের হয়ে পড়লাম টি এস সি চত্বরে। আর
দেখলাম এই ভ্যালেন্টাইন দিবসটা আসলে চড়ম একটা দুই নাম্বারি করার সুযোগ তখন
আর নিজেকে নিবৃত করতে পারলাম না। অনেকে হয়ত বলবেন, আমরা তো ভালবাসা
প্রদর্শন করি মন থেকে। যারা মন থেকে ভালবাসার পক্ষপাতী তাদের জন্য বলব,
আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে সত্যই ভালবেসে থাকেন তাহলে বছরের বাকি দিনগুলি কি
দোষ করল? নাকি বাকি দিনগুলি আপনার কলিগের জন্য আর এই দিনটি আপনার স্ত্রীর
জন্য? আমার কথাগুলো নোংরা শুনাচ্ছে কিন্তু ভাই এগুলো সত্য। আসুন আমরা যাকে
ভালবাসি তারা সত্যিকার অর্থেই ভালবাসি। অভিনয় নয়। ভ্যালেন্টাইন দিবসের
কারচু পি করা ভালবাসা নয়। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বছরের সব দিনগুলি
ভালবাসায় ভরিয়ে তু লি।
সবশেষে মহান আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তা’আলার নিকট প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ
আমাদের সত্য ধর্ম ইসলামকে জানার ও বুঝার তৌফিক দেন। আর আমাদের পাশ্চাত্য
সভ্যতার দাসত্ব থেকে মুক্ত রাখেন। আর আমাদের ক্ষমা করেন।