Download as doc, pdf, or txt
Download as doc, pdf, or txt
You are on page 1of 3

কেন যে ঈশ্বর আছেন!

by Mohammad Rakibul Hasan

শিক্ষা,অভিজ্ঞতা,পারিপার্শ্বিকতা* ইত্যাদি প্রতিটি মানুষকে স্বতন্ত্র করে তোলে বিশ্বাস,মূল্যবোধ আর


ব্যবহারের দিক দিয়ে।আমার note গুলো আমার ব্যক্তিগত দর্শনমাত্র।কারো সাথে মতের অমিল থাকা
অস্বাভাবিক নয়।

যদি ঈশ্বর না থাকলে আমরা এমন অনেক কিছুই করতে পারতাম !

ধরেন আপনি আপনার কোনও আত্বীয়ের বাড়ি গেলেন বেরাতে।আপনার আত্বীয় আবার বিশাল টাকা
পয়সার মালিক।আপনি খেয়াল করলেন যে আপনার আশেপাশে কেউ নেই।সামনে ৫০০ টাকার একটা
নোট।আপনার বাসায় খুব অভাব চলছে।৫০০ টাকা হলে আপনি খুব ভালভাবেই চলতে পারেবন।আর
আপনার আত্বীয়ও কোনো দিন টের পাবে না।যেহেতু আপনার আত্বীয় আবার খুব ধনী ব্যক্তি,৫০০ টাকা
তার কাছে কোনো ব্যপারই না,সেহেতু টাকাটা না নেয়াটা কি চরম বোকামি হবে না?

এবার ধরেন আপনার অফিসে আপনার কাছে একজনের একটা ফাইল আটকা আছে।আপনি জানেন যে
যার ফাইল সে ভালই টাকা ওয়ালা।আপনি আবার খুবই অভাবে আছেন।আপনি বাড়ি ভাড়া দিতে
পারছেন না।আপনি যদি তার কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করেন ভবিষ্যতে ধরা খাওয়ার ও কোনই
চান্স নাই।এমন অবস্থায় কি করলে আপনি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করবেন?আমি হলে কিন্ত টাকা আদায়
করেই ছারতাম।

ধরেন আপনার রুম এ ৪ জন থাকেন।কোন একটা আবাসিক হলে।আপনার এক রুমমেট খুব জোরে
সাউন্ড দিয়ে গেমস খেলে সারাদিন।আপনি একদিন দেখলেন রুম এ সে রুমমেট নাই।আপনার মনে হল
যে এ সুযোগে তো ওর সাউন্ড বক্স ভেঙ্গে দিলে সে বুঝতেই পারবে না।কিংবা সন্দেহ করলেও আরো ২ জন
কেও করতে হয়।শুধু আপনাকে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসে না।আপনি তখন কি করবেন?আমি হলে ভেঙ্গে
ফেলতাম।

আর বেশি ধরানোর ইচ্ছা আমার নাই।বিশ্বাস করেন।এই শেষ বারের মতো ধরেন যে,আপনি শাহবাগে
দাড়িয়ে আছেন।রাত ১০ টা।যাবেন পলাশি।দাড়িয়ে আছেন ৪৫ মিনিটের মতো।সমস্যা হল রিক্সা অনেক
হলেও পলাশি কেউ ই যাবে না।সব জমিদার।যাই ২-১ জন রাজি হয় তারা আবার ২৫ টাকার নিচে যাবে
না যেখানে প্রকৃ ত ভাড়া হল ১৫ টাকা। আপনি বিরক্ত হয়ে করলেন কি রাজি হয়ে গেলেন ২৫ টাকায়।
এবার পলাশি পৌছে দেখলেন আপনার ৫ টা বন্ধু ।আপনি করলেন কি রিক্সাচালককে ধরিয়ে দিলেন ১৫
টাকা।রিক্সাচালক আরো দশ টাকা চাইলে আপনি একটা ঝারি দিয়ে বললেন এটাই ন্যায্য
ভাড়া,ফাইজলামি কর?শাহাবাগ থেকে পলাশি ২৫ টাকা ভাড়া?আপনাদের সংখাধিক্যের কারনে সে আর
কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।

আমাদের মস্তিষ্ক আমদের যে সিদ্ধান্ত দেয় তা যদি আমরা মেনে নেই তবে ন্যায় অন্যায় এর সংজ্ঞা দেয়া
যাবে না।কারন উপরের উদাহরন গুলোতে যা আপনার কাছে মনে হয়েছে অন্যায় নয় তা আরেক জনের
কাছে অন্যায়।আপনার আত্বীয় আপনাকে টাকাটা ওভাবে নিতে দেখে ফেললে অবশ্যই আপনি ভালো কাজ
করেছেন মনে করবে না।
যার কাছ থেকে আপনি ঘুষ আদায় করেচছেন তার কাছে আপনি আপনার সততার জন্য স্মরণীয় হবেন
না বরং আপনি ঘুষখোর রুপেই স্মরণীয় হবেন।আপনার রুমমেট যদিও খুবই বিরক্তিকর আপনাদের
জন্য তথাপি সে জানতে পারলে তার কাছে অন্যায় বলেই মনে হতো আপনার কাজটিকে।

এবার আসেন রিক্সাচালকের ঘটনায়।অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে রিক্সাচালকরা তো ঠিক করছে
না কাজটা।যা ভাড়া তাই নেয়া উচিত।তাছাড়া ওদের লাইসেন্সের সময় শর্ত থাকে যে নির্ধারিত ভাড়ায়
যে কোন জায়গায় যেতে বাধ্য থাকবে।তাহলে ঠিক ই আছে ১৫ টাকা দেয়া।তাদের জন্য নিচের কথাগুলো
প্রযোজ্য।

যারা দেশের পুঁজিবাদী শ্রেণীর তারা তাদের ইচ্ছামত আমাদের উপর তাদের নির্ধারিত মূল্য চাপিয়ে
দিচ্ছে,সেটা কোন সমস্যাই না।আমরা বিনাবাক্য ব্যায়ে মেনে নেই।মোবাইল
কোম্পানি গুলো তাদের কল চার্জ ইচ্ছেমতো বাড়ায় কমায়।তখন তো কারো কিছু বলার থাকে না।cats
eye,monson তাদের পণ্যের দাম ইচ্ছে মত নির্ধারণ করছে।তখন তো কেউ কিছু বলে না।চালের
দাম,নুনের দাম ইচ্ছামত বাড়ানো হলে তো আপনার আমার কিছুই করার থাকে না।এ সকল ব্যবসায়ীরা
দোকানে বসে থাকে।খদ্দের আসলে বিক্রি করে।কিন্তু একজন রিক্সাচালক সে বসে বসে টাকা নেয় না।
নিজের শরীরের ঘাম ঝরিয়ে সে উপার্জ ন করে।তার বেলায় কেন জোড় খাটান।পারলে মোবাইল
কোম্পানির সাথে আপনার বাহাদুরি দেখান না।রিক্সার চাইতে মোবাইল বেশি ব্যবহার করেন অনেকেই।
চাল কার পরিবারে লাগে না?আপনার ছেলের টিউটর যে ইচ্ছেমত তার ফি বাড়িয়ে যাচ্ছে যান না তাকে
গিয়ে ন্যায্য শেখান না।একজন দিন মজুর এর সাথে যার ছেলে ২ টাকার 'মজা'(চকলেট,আচার ইত্যাদি)
খেতে পারলেই তার বাবাকে আনন্দে আত্বহারা হয়ে জড়িয়ে ধরে,আপনার ছেলের মতো বার্গার,চকবার
পেয়েও আরও কিছু পাবার জন্য মন খারাপ করে বসে থাকে না।তার সাথে ন্যায্য শেখানোর কাজ কারো
কাছে ন্যায্য বলে প্রতীয়মান হতেও পারে।যদি এখনও আপনার কাছে মনে হয় ঠিকই আছে,তাহলে কষ্ট
করে আরেকবার আপনাকে ধরতে হবে।

এবারে ধরেন আপনি একজন BUET ছাত্র যে টিউশনি করতে চান।তো আপনার কাছে অফার আসলো
যে উত্তরা গিয়ে টিউশনি করতে হবে,সপ্তাহে ৪ দিন,৬০০০ টাকা।আপনি যদি প্রকৃ তপক্ষে বুয়েট ছাত্রই হন
তবে এ টিউশনিটা সপ্তাহে ৩ দিন হলেই ক'জন করত তা ভাল ভাবেই জানেন।তো এবারে আপনাকে বলা
হল যে সপ্তাহে ৩ দিন পড়াতে হবে,৮০০০ টাকা।তো আপনি রাজি হলেন যে পড়াবেন।মাস শেষে
আপনাকে ৪৮০০ টাকা দিয়ে বলল এটাই ন্যায্য।তু মি ছাত্র মানুষ এত টাকা দিয়ে তোমার কি দরকার?
আপনি যদি খুশি মনে বাড়ি...না না হলে ফিরে আসেন তো এবার আমিও বিশ্বাস করে নিব যে আসলেই
ভাড়ার ঐ ঘটনাটা ঠিকই ছিল।

এ ছবিটি নেয়া হয়েছে তার Profile থেকে যে রিক্সাচালকের ঘটনার অনুরুপ একটি ঘটনা ঘটিয়েছে।
আমি যদিও ভাড়ার পরিমান ঠিক লিখি নাই।ঘটনাটা ধরানোর বুদ্ধি এসেছে তার এক কাছাকাছি ঘটনা
থেকে...

কথাটাতে প্রচন্ড ধার আছে।যুক্তি আছে।কিন্তু আমাদের ভেবে দেখা দরকার যে মনুষ্যত্ব বলতে আমরা
যাকে বুঝি তার সংজ্ঞা ত্রুটিপূর্ণ।কারন মনুষ্যত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত সার্বজনীন সত্য না হবে তার সংজ্ঞা পূর্ণতা
পাবে না।অর্থাৎ মনুষ্যত্বকে এমন ভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে যেন তা ধ্রুব থাকে।যেন স্থান-কাল-
পাত্রভেদে তার রূপ না বদলায়।এখন কারো কাছে মনে হতে পারে যে জীবন রক্ষা হল ফরজ।জীবন
বাঁচানোর জন্য অনেক হারাম ও হালাল হয়ে যায়।কিন্তু সেক্ষেত্রেও চু রি হালাল হয় না।হারাম খাবার
হালাল হয়।যার যা প্রাপ্য সেটাকে যদি আমি বলি হক,তবে মানুষের প্রাপ্য থেকে তাকে বঞ্চিত করা হবে
জুলুম।খাওয়া অন্যের হক না।

ঈশ্বর যদি না ই থাকেন তবে প্রত্যেককে চলতে হবে তার নিজের সংবিধান অনুযায়ী যা প্রতিনিয়ত
পরিবর্ত নশীল।আর সকলের সংবিধান সমান সমৃদ্ধ নয়।ধ্রব সংবিধানের জন্য তাই ঈশ্বরকে মেনে নিতে
হয়।আমি মেনে নিয়েছি।

You might also like