Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 8

মিথ্যে স্বাধীনতা থেকে মুক্তির পথে...

মাসখানেক আগে একটা নোট লিখে একটা সুশীলের কাছে “বেজন্মা” গালি খেয়েছিলাম। গালি খাওয়ার কারণ হল
আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তু লেছিলাম। তাই প্রথমেই বলে দিই আপনি যদি “বাংলাদেশ স্বাধীন কি পরাধীন”
এই প্রশ্নে খুব স্পর্শকাতর হন তাহলে এই লেখাটা ইগনোর করেন, গালিগালাজ করে দেশকে কেউ কিছু দিতে পেরেছে বা
পারবে বলে মনে হয় না।

১. স্বাধীনতা ব্যাপারটা আসলে কি? আমরা যেটাকে স্বাধীনতা মনে করি বা দাবি করি সেটা কি আসলেই স্বাধীনটা? এই
স্বাধীনতাকে নিয়ে এই যে আমাদের এত আবেগ, এত অনূভূ তি, এত আত্মত্যাগের গল্প... এটা কি নিছক প্রোফাইল
পিকচারে সাজিয়ে রাখার জিনিষ? এটা কি কেবল গালে পতাকা একেঁ স্মৃতিসৌধে ফু ল দিয়ে বলে ওঠা “আই এম প্রাউড
টু বি এ বাংলাদেশী?”

যাই হোক, যে জায়গাটাতে আসলে সমস্যা সেটা আমরা খুব ভাল করে চিন্তা করেছি কিনা আমার জানা নাই। ১৯৭১
সালে একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জ ন করে। কেন এই যুদ্ধের সূচনা? কারণ পাকিস্তান সরকার
এই অঞ্চলের মানুষের উপর খুব অত্যাচার করত, শোষণ করত। দুই অঞ্চলের মানুষের মাঝে একটা বিভেদ তৈরি করে
দিয়েছিল, যার ফলাফল হল দুটি জাতির মাঝে প্রবল বিদ্বেষ। এ অঞ্চলের মানুষের উপরে শোষণের মাত্রা বাড়তে লাগলো
আর মানুষগুলোও তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে উঠল। পাকিস্তানের জালেম সরকার তখন এ ন্যায্য দাবি দমন
করার জন্য শুরু করল দমন-নিপীড়ণ আর সবশেষে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে নির্বিচারে গণহত্যা। এর পরের ইতিহাস আমরা
জানি, ১৯৭১ সালে এ দেশ স্বাধীন হল, নতু ন একটা পতাকা পেল, পেল একটা সরকার, যে সরকারের মানুষগুলো
স্বজাতির, মানুষ ভাবল কিছু শাসক পরিবর্ত নের মাধ্যমে আসবে “স্বপ্নের বাংলাদেশ।”

তবে স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বপ্নেরই রয়ে গেছে। স্বাধীনতার মানে যদি হয় শোষণ থেকে মুক্তি, এই দেশটা এখনও স্বাধীন হয় নি,
কাছাকাছিও যায় নি, যদিও বা হাসিনা কিংবা খালেদারা বাঙ্গালী! এই দেশের অল্প কিছু রাজনীতিবিদের কাছে আমরা
বন্দী। তারা দেশটাকে আক্ষরিক অর্থে লুটে পুটে খায়, খাম্বার ব্যবসা থেকে শুরু করে পতিতা। আমরা একাধিকবার শেয়ার
বাজারে ধস দেখেছি আমরা দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি দেখে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু দেখা আমাদের জন্য
বাকি আছে। আমরা এত বেশি দেখেছি যে আসলে খুব বেশি কিছু না হলে আজকে আজকাল আমরা চু প মেরে থাকি।
নিজের গায়ে লাগলেই কেবল মিছিল মিটিং করি, নয়তো নয়।

আমরা দেখছি এই দেশে হত্যা একটা নিয়মিত ঘটনা। বড়সড় কিংবা নৃশংস হত্যার ঘটনা না ঘটলে আমাদের আলোচনায়
স্থান পায় না। আগে এমন ছিল যে একটা হত্যার ঘটনা মানুষ বছরের পর বছর মনে রাখত। এখন আমাদের মেমরি সেলে
জায়গা হয় না। সবকিছুকে হজম করার মত অতিকায় পাকস্থলী এই আমাদের তৈরি হয়েছে। অদ্ভূ ত এক স্বাধীনতা
আমাদেরকে ভেতরের মনুষ্যত্বটাকে পর্যন্ত কিনে ফেলেছে ! একাত্তরে পাকবাহিনী অনেক ধর্ষণ করেছিল। আর এই স্বাধীন
বাংলাদেশে কিন্তু এখনও রাস্তায় স্বাধীনভাবে নিরাপত্তার সাথে হাটার সুযোগ ৪০ বছরেও হয়ে উঠেনি। এক আপু দুঃখ করে
বলেছিলেন, “পাকি আর্মি নাই তো কি হইসে, আমরা আছি না?”। আসলেই তাই। পাড়ার মাস্তান, জাবির মানিক আর
রাজনৈতিকদলগুলোর ক্যাডাররা যেন পাকি আর্মিরই সুযোগ্য উত্তরসূরী। স্বাধীনতা কেনা হয়েছিল হাজার নারীর সম্ভ্রমের
বিনিময়ে, আজ সেই স্বাধীনতা যেন দাবি করছে তার প্রাপ্য আরও বাকি আছে। আমরা বুঝতে শিখি না এটাই দেশপ্রেমের
নেচার। বিদেশী জাতির অনাচার সহ্য করতে পারে না কিন্তু স্বজাতির অত্যাচারে বিলকু ল ঘুমিয়ে পড়ে।
এই দেশের বিচার ব্যবস্থা দিয়ে যে একটা মানুষের জীবন শেষ করে দেয়া যায় সেটা আমরা অনেকেই জানিনা। একটা দেশের
সাংবাদিক,পুলিশ আর উকি- এই তিন শ্রেণী যখন খুব দুর্নীতিবাজ হয় তখন আসলে সে দেশ আসলে স্বাধীন নাকি
পরাধীন সেটা একটা অপ্রয়োজনীয় আলোচনা। রাগ করলেন ? একটাবার যদি ভু ক্তভোগী হতেন তাহলে হয়তো বোঝা
যেত ব্যাপারটা। এই দেশে মামলা চালাতে লাখ লাখ টাকা লাগে, এই দেশে নিরপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত “দোষী”
সাব্যস্ত থাকতে হয় ! আর যদি হাতে অনেক টাকা থাকে তাহলে এই দীর্ঘসূত্রীতার বিচারব্যবস্থা অপরাধীকে অপরাধ করে
পার পাওয়ার লাইসেন্স দেয়, কিছু টাকা খরচ করে মামলা আটকে রাখা, এটা কোন ব্যাপার না ! চট্টগ্রাম মেডিকেলের
আবিদদেরকে যারা হত্যা করে তাদের বিচার হওয়া দূরে থাক, তারা প্রকাশ্যে স্বাধীনভাবে নাকি এখনও ঘুরে বেড়ায়, স্বাধীন
দেশ বলে কথা! হাজার হোক, খুনীরা বাঙ্গালী, পাঞ্জাবী-বেলুচি তো আর না ! যে মানুষগুলো এইসব ভোগান্তির শিকার,
একটা লাল সবুজের পতাকা তার দুঃখ মুছে দিতে পারে কিনা আমার খুব জানার ইচ্ছা। পারে বলে মনে হয় না, শোষণ
থেকে মুক্তির জন্য যে স্বাধীনতা আনতে যে কৃ ষকটি কাস্তে ফেলে অস্ত্র তু লে নিয়েছিল সে এখনও শোষিত হয়, যা আদতে
হয়েছে তা হল শোষকের কসমেটিক সার্জারি।

স্বাধীনতা সে তো শহীদ কাদরীর-


"................ধাবমান খাকি
জিপের পেছনে মন্ত্রীর কালো গাড়ি,
কাঠগড়া গরাদের সারি সারি খোপ
কাতারে কাতারে রাজবন্দী।"

১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মোটামুটি শীত থাকে। আমি আপনি হয়তো “প্রথম বাংলাদেশ শেষ বাংলাদেশ“ গান শুনতে
শুনতে স্মৃতিশৌধে ফু ল দিয়ে বিজয় উদযাপন করেছি। আর লালমনিরহাটে হয়তো সে রাতে কিছু মানুষ মারা যাবে
শৈত্যপ্রবাহে। তার ব্যাপারে এই স্বাধীন রাষ্ট্রের কোন দায়িত্ব নেবার ইচ্ছা আছে বলে মনে হয় না। তবে এই স্বাধীন রাষ্ট্র
সেচ্ছায় ২০০ ভরি স্বর্ণের মুর্তি উপহার দেয় ভারতকে, আফটার অল, বন্ধু বলে কথা! এমনই এক বন্ধু ভারত যার জন্য
পানি ছেড়ে দিয়ে এই দেশ পিপাসায় কাতর হয়ে মরতে বসেছে! বাই দ্যা ওয়ে, এটা কিন্তু শোষণ নয়, এটা স্বাধীন দেশের
বন্ধু ত্বসুলভ পররাষ্ট্রনীতি, বুঝতে হবে! এটা এমন এক স্বাধীনতা যেটা বন্ধু ত্বের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়, তবু আমরা
রীতিমত গর্ব করি, “স্বাধীন জাতি”, আর কেউ দ্বিমত পোষণ করলে সুড়ু ৎ করে লোল টেনে গালি দিই, “শালা রাজাকার
পাকি গিয়া মর।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে একটা কোর্স ছিল ইকোনমিক্সের। কথা প্রসঙ্গে স্যার একটা তথ্য দিলেন, সেটা হল এই দেশের
বাজেটের ৮% আসে বৈদেশিক ঋণ থেকে। তবে যারা এই ঋণ দেয় তারা বলে দেয় বাজেটের ৮০% টাকা কোথায় কোথায়
খরচ করতে হবে। স্বাধীন দেশের ইচ্ছার মূল্য ২০%, তাও আবার সেই দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রীদের হাতে। এখানেই শেষ নয়, এডিবি
আর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের দেয়া রঙ্গিন গ্লোবালাইজেশনের মোড়কে মোড়ানো মুক্তবাজার অর্থনীতির ফাঁদে পড়ে এদেশের
অসংখ্য শিল্পকারখানা ধংস হয়ে গেছে। ব্যাপার না! দেশী শিল্পপণ্যের উপর ৩৫% ট্যাক্স ইমপোজ করে দিয়ে বিদেশী
পণ্যের অবাধ অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করে দিলে সেটা হয় স্বাধীন দেশের শোষণ। আমরা “জয় বাংলা” বলে বগল বাজাতে
ভু লি না।

সুইচ হাতে দাঁড়িয়ে পোষ্টের প্রভু


আধো-আলোকে করে আরো নিভু -নিভু ,
ভয়ার্ত হৃদয়ে প্রভু দের দ্বারে
মিনতি জানায় অবনত শিরে।

স্বাধীন দেশটির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু টির নাম ভারত। তাদেরকে স্বাধীনতার পর বলা হয়েছিল, ৬টা মাসের জন্য বন্দরটা
দাও, আমাদেরটা তো ব্যবহারের অনুপযক্ত। তারা যেন বলল, “শখ কত! ৬ দিনের জন্যও দেয়া হবে না।” তবে তারা
তাদের পেটের ভিতরের ছোট্ট বন্ধু কে দাসের মত করে যত্ন করে, তাই কিনা ৪১ দিনের ফারাক্কা বাধঁ এখনও বহাল তবিয়তে
বন্ধু ত্বের স্মৃতি বহন করে। এই বন্ধু ত্বকে পাকাপোক্ত করতে কিনা টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে পানি বাইপাস করে পাঠানো হচ্ছে
ভারতের নিচের দিকের প্রদেশগুলোতে। তাহলে বাংলাদেশের কি হবে? আমার পরিচিত প্রচন্ড এক স্বাধীনতাবাদী বন্ধু র
মতামত হল, “দেখ, ভারত আমাদের বন্ধু , তাদের মন যুগিয়ে চলতে হবে, তারা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে
না!” তাহলে ৭১ সালে কেন পাকিস্তানের মন না যুগিয়ে ২০১১ তে এসে ভারতের মন যুগাতে হবে, এটা আমার মাথায় ধরে
না। ন্যায্য দাবি আদায় না হলেও স্বাধীনতা তবু এভাবেই আন্তর্জাতিক আর আঞ্চলিক শক্তির সামনে মাথা নত করে টিকে
থাকে প্রোফাইল পিকচারে, বেঁচে থাকে গুগল ডু ডলে। আমরা বাঙ্গালীরা মিথ্যেকে সযত্নে লালন পালন করতে ভালবাসি।

স্বাধীনতা সে তো কাটাতারে ঝু লন্ত ফেলানীর লাশ,


পিলখানায় রক্তের দাগ,
আজন্ম দুই মীরজাফরের…
সাম্রাজ্যবাদী হায়েনাদের অনুগত দাস।

নিশ্চয়ই আমরা “স্কু ল অফ লাইফ” ডকু মেন্টারিটা সবাই দেখেছি। দেখে সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে অশ্রু বিসর্জ ন দিয়েছি,
ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছি, ইচ্ছে হয়েছে চিৎকার করে বলি “আই লাভ ইউ বাংলাদেশ।” ভাই, আমারও না একটা
ডকু মেন্টারি বানাতে ইচ্ছা হয়। সেখানে থাকবে বরিশাল পলিটেকনিক্যালে প্রকাশ্যে দা দিয়ে কোপাকু পির দৃশ্য, সেখানে
থাকবে মেডিকেল কলেজের সামনে কাতঁ ড়াতে থাকা আবিদের জখম করা শরীর। সেখানে থাকবে শুকনো মরুভূ মির
দৃশ্য, সেখানে থাকবে উত্তরবঙ্গের কোন রুক্ষ রাস্তায় পড়ে থাকা চরমপন্থীদের হাতে খুন হওয়া ধড়বিহীন লাশ, কিছু গুম
করা লাশ আর রিমান্ডে কালো মামাদের হাতে ওয়াটার থেরাপি। বোধ করি তাতেও স্বাধীনতার নড়ন চড়ন হবে না।

স্বাধীনতা সে তো কোনকো ফিলিপস, নাইকো, ইউনিকল'


দূর্নীতিতে বিশ্ব জয়ী,
গুম হওয়া সন্তানের মায়ের
এক ফোঁটা অশ্রুজল।

স্বাধীনতার পরে দুই দশকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন আর গণতান্ত্রিক শোষণ দেখার পরেও যদি কেউ ভেবে থাকেন এ দেশ
“স্বাধীন” তাহলে হয়তো সে স্বাধীনতার অর্থ বুঝতে পারেনি অথবা সে নিজেকে স্বাধীন কল্পনা করে আত্মতু ষ্টিতে ভোগে।
মানুষ অদ্ভূ ত প্রাণী সে যখন ভু ল করে তখন সে ভু লটা শোধরে নেয়, অথবা নিজেকে ভু লটাকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে
নিজেকে জাস্টিফাই করে, বোধকরি এই বাঙ্গালী জাতির ২য়টা হয়েছে। মেমেনটো মুভিটা কেউ দেখেছেন ? সেখানে
মধ্যবয়স্ক একটা লোক একটা এক্সিডেন্টের পর “শর্ট টার্ম মেমরি”র সমস্যায় পড়ে। তার দুর্ঘটনার আগের সব ইতিহাস
মনে থাকে, কিন্তু দুর্ঘটনার পর তার স্মৃতিধারণক্ষমতা কমে যায়, সে কিছুক্ষণ পর পর একটু আগে কি হয়েছে ভু লে যায়।
এই শর্ট টার্ম মেমরির সাথে বাংলাদেশের মানুষের মিল আছে। এদেশের মানুষ দূর্নীতিবাজ শাসকদের ইতিহাস ভু লে যায়,
ভু লে যায় তাদের অত্যাচারের গল্প, শুধু মনে রাখে এদেশ এক কালে স্বাধীন হয়েছিল ! কিন্তু সেই স্বাধীনতাকে এদেশের
রাজনীতিবিদরা এবং বহিঃশক্তি কিনে নিয়ে বইয়ের পাতায় আর মেকি আনুষ্ঠানিকতায় বন্দী করেছে তা আবেগী মন
মানতে চায় না।
মানবে কি করে? এদেশের তরুণ সমাজের দিকে একটা বার তাকান। ভোগবাদী এ তরুণ সমাজের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য
হল highest sensual pleasure, বছরে দু’একটা দিন যে স্বাধীনতা আর বিজয় নিয়ে লাফাতে তাদের দেখি সেটা তো
একটা উৎসবের দিন ছাড়া কিছু নয়। মুখে মুখে বাঙ্গালিয়ানা আর দেশপ্রীতি এই সমাজের ঠোট থেকে দিনে দিনে
ভূ পাতিত হয়। ঐ দেশের তাগিদ দিয়ে মানুষকে “ভাল” বানানো যায় না ভাই, বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন,
যদিও চেষ্টা কম করা হয় নি।

স্বাধীনতা সে তো এক আনুষ্ঠানিকতা,
লৌকিকতা
দাসত্বের বেড়াজালে আবদ্ব এক পঙ্গু প্রজন্ম।

২. এত এত সমস্যায় যখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি তখন মিডিয়াগুলোতে আতেঁ ল বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক
নেতৃ বৃন্দ “৭১ এর চেতনায়” ফিরে যেতে বলেন, সেখানেই নাকি আমাদের সমস্যার সমাধান আছে। আমি ১৯৭১ এর
সময়টাতে জন্মগ্রহণ করিনি, আমি ঠিক পরিষ্কারভাবে জানিনা তারা আসলে কি ভেবেছিল এই স্বাধীনতা নিয়ে।
বুদ্ধিজীবিরা বলে থাকেন সেটা নাকি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা। আমি তাদেরকে বিশ্বাস করি না। সাম্রাজ্যবাদীদের
বিরুদ্ধে তারা সবসময় নীরব, আর ইসলামের বিরুদ্ধে তারা সরব।

আমি যা বুঝি তা হল মানুষ তখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, এবং মানুষ যখন শোষিত হয় তখন মানুষ তার
ন্যাচারাল ক্যাপাসিটি থেকে শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সে যে আদর্শেরই হোক না কেন। এখানে কোন পরিষ্কার ধারণা ছিল
না যে আসলে কিভাবে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায়। exactly কোন ধরণের আদর্শ এবং জীবনব্যবস্থায় আমাদের সমাধান
নিহিত তা নিয়ে খুব সুচিন্তিত ধারণার উপর আন্দোলন হয় নি।

মানুষ যখন সারভাইভ করার জন্য স্ট্রাগল করে তখন সে একটা কিছু থেকে মোটিভেশন খুজতে চেষ্টা করে। আর তাই
সে সময়ে মোটিভেশন স্বরুপ এ বাংগালী জাতির মুখে রাজনৈতিক নেতারা ঠেলে দিয়েছিলেন বিষাক্ত জাতীয়তাবাদের
পেয়ালা। বাঙ্গালী স্বপ্ন দেখল এ নতু ন পরিচয়ে তারা জেগে উঠবে, এ নতু ন জাতিসত্ত্বা তাদেরকে অনাচারে শৃঙ্খল থেকে
মুক্তি দেবে, মুক্তি হয় নি। স্বাধীনতার ব্যাপারে এভাবে অনেকেরই এভাবে একটা ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে আর তা
হল নিছক বিদেশী শাসন থেকে মুক্তি। আসলে কি তাই? ইতিহাসের পাতায় ভিন্নজাতির সুশাসনেরও ইয়া লম্বা ইতিহাস
আছে, সেখানে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেনি, তথাকথিত “স্বাধীনতার” ডাক ওঠে নি। আর স্বাধীনতা মানে যদি হয়েও থাকে
ভিন্ন জাতির শাসন থেকে মুক্তি তাহলেও এই দেশ স্বাধীন হয় নি। মুখ ফু টে এই কথাটা কেউ বলতে চায় না, বললেও
গাল শুনতে হবে, “রাজাকার”, “ছাগু”। রাজনীতিবিদরা, আঁতেল বুদ্ধিজীবিরা এবং একপেশে মিডিয়া সেই পুরোন
ক্যাসেট বাজিয়েই যাচ্ছে। তাই একটা পতাকা দেখে ভেবে বসে থাকি আমরা স্বাধীন, কিন্তু বুঝতে পারি না সুতোটা পিছনে
থেকে নাড়ছে কিছু সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র- এভাবেই ভার্চু য়াল স্বাধীনতার দেয়ালে আমাদের বন্দী করে, নয়া সাম্রাজ্যবাদের (neo-
colonialism) এটাই বৈশিষ্ট্য।

শুনতে খারাপ লাগলেও বলি, ৭১ এর চেতনা অসম্পূর্ণ চেতনা। শুধু দেশপ্রেম দিয়ে দেশোদ্ধার করা যায় না, দেশপ্রেমের
প্রকৃ তিটাই এমন। আমরা যেখানে থাকি সে জায়গাটার উপর আমাদের ন্যাচারালি কিছু ভাল লাগার ভালবাসার
অনূভূ তি থাকবেই। (তবে পদ্মার পানি গঙ্গা থেকে বয়ে আসলেও আমরা কেন যেন শুধু পদ্মাকে ভালবাসি, গঙ্গাকে না!!)
কিন্তু শুধু এই আবেগ দিয়েই তো দুনিয়া চলে না। দুনিয়া চালাতে হলে জীবনের অর্থ আর উদ্দেশ্য লাগে, নৈতিকতা, ন্যায়
অন্যায় আর আইন কানুন বলে আমাদের জীবনে কিছু ব্যাপার আছে, আছে আধ্যাত্মিকতা, রাষ্ট্র আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা-
এগুলোর উত্তর দেশপ্রেম দেয় না। দেশপ্রেম হচ্ছে একটা প্রবৃত্তিগত বৈশিষ্ট্য, যেটা জেগে ওঠে কোন নির্দি ষ্ট ভূ মির
মানুষজন যখন বহিঃশত্রুর দখলদারিত্বের শিকার হয়, যখন দখলদারিত্ব থেমে যায় তখন সেই দেশপ্রেম ভ্যানিশ হয়ে যায়।
তাই, দেশপ্রেম দিয়ে আমরা survive করেছি, revive করতে পারি নি।

অসম্পূর্ণ এই চেতনার সুযোগ নিয়েছে ভারত, ব্রিটেন এবং পরবর্তীতে আমেরিকা তাদের দোসর (বা বলতে পারেন নব্য
রাজাকার) কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের হাতে ব্রেইনওয়াশড কিছু বুদ্ধিজীবি নামের জ্ঞানপাপীদেরকে ব্যবহার করে।
আর তারা স্বাধীনতার মোড়কে মুড়িয়ে এই দেশকে শোষণ করতে শুরু করে। আর আমরা স্বাধীন জাতি, স্বাধীনতার
ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমাই।

তাদের এজেন্ডা কি? তাদের এজেন্ডা হল তাদের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক-পুজিবাদী ব্যবস্থা চাপিয়ে এবার তারা শোষণ করা
এবং এই এজেন্ডায় তারা সফল, আমাদের আবেগী মন রঙ্গিন পতাকা দেখে ব্যাপারটা মানতে চাইলেও সত্যি। একটা
সত্যকে যদি আমরা অস্বীকার করি তার মানে এই না যে সেটা মিথ্যা হয়ে গেছে।

যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে এই চমৎকার দেশটাকে গড়ে তোলার একটা চমৎকার সুযোগ পেলেও আমরা সে সুযোগ কাজে
লাগাতে পারি নি। কারণ আমরা এমন একটা জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করেছি যাতে আমাদের মুক্তি নেই। আমরা ধার নিয়েছি
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় আইন আর নৈতিকতার সংজ্ঞা নিয়মিতভাবে পরিবর্ত ন হয় মানুষের স্বার্থের উপর ভিত্তি
করে। আমরা ছুটেছি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পিছনে যার প্রকৃ ত সংজ্ঞাটা হল, “for the company, of the colonialist, by
the capitalists”। আমরা নিয়েছি পুজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেটা থাকলে আসলে শাসকের জাত-পরিচয় কোন
ব্যাপার না, জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় বেনিফিট, আর যে সমাজের বেঁচে থাকার একমাত্র প্রণোদনা বেনিফিট,
সেখানে থাকবে শোষণ আর বিষম প্রতিযোগিতা, থাকবে অস্থিরতা আর স্বার্থপরতা। চরম ভোগবাদী লাইফস্টাইলে বুদ হয়ে
থেকে মুক্তির আশা করা তাই কৌতু কের মত শোনায়। দেশপ্রেম আর বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ আমাদের শিখিয়েছে বৃথা
অহংকার আর শুনিয়েছে আত্মতু ষ্টিদানকারী শ্রেষ্টত্বের গল্প। নিজের সম্পদ আর চেহারা নিয়ে বড়াই করলে আমরা বলি
“অহংকার”, দেশজাতি নিয়ে করলে নাম দেই “গর্ব”। “আমি বাঙ্গালী, তাই আমি সেরা” , “আমি আরব, তাই আমি
সেরা”- অযৌক্তিক মুর্খের মত ঢোল বাজিয়ে আর কতদিন? আরে ভাই আরবের আরবত্ব বা বাঙ্গালীর বাঙ্গালীত্বের মধ্যে
তো সেরা হওয়ার কিছু নেই, ভাল খারাপ সব জায়গাতেই আছে। চোর বাঙ্গালী হলেও চোর, কিন্তু আমরা ক্রিমিনাল
ইউনুস আর জাফরদেরকে ডিফেন্ড করি কারণ তারা বাঙ্গালী, আরে আজব তো, বাঙ্গালী বলে কি কারও সাত খুন মাফ
হয়ে যাবে নাকি? এটা কি পাড়ায় পাড়ায় মারামারির মত ঘটনা, যেখানে ন্যায় অন্যায় বলে কিছু নেই, “আর কিছু শুনতে
চাই না,আমাদের পাড়ার লোককে পিটিয়েছে বলে আমরা পিটিয়েছি” টাইপ ব্যাপার হয়ে গেল না? এই জাতীয়তার বড়াই
আমাদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে বাস্তবতা থেকে আর শিখিয়েছে মিথ্যা অহমিকার ফু লঝু ড়ি। দেশের প্রতি ভালবাসা
একটি স্বাভাবিক চেতনা কিন্তু এই চেতনা যে মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণতা দিতে পারে না, আমরা কি বুঝব না? “আসুন
দেশ এবং মানুষের সেবা করি, মানুষকে ভালবাসি” টাইপের vague চেতনা দিয়ে কোন জাতির জাগরণ হয় নি, হবেও না,
হতে পারেও না। বাঙ্গালী জাতির স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা হিসেবে পরিচিত হতে গিয়ে জন্ম দিয়েছে এক শংকর প্রজাতির
কালচারের। পশ্চিমা আদর্শ আর ইন্ডিয়ান কালচারের সামনে জাতিসত্ত্বা যেন মাথা নত করে দাঁড়িয়ে গেছে।

আজ আমাদের এই অবস্থার কারণ হল আমরা আমাদের জীবনটাকে ভু ল ভাবে সাজাতে চেয়েছি, আমরা ভু ল সমাধান
নিয়ে বৃথা আস্ফালন করেছি। আজ আমাদের জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই, আমরা জানিনা আমরা কেন বেঁচে থাকি।
আমরা বেঁচে থাকি বেঁচে থাকার জন্য, জীবনের কোন real value নেই, কারণ আমরা ভু লে গেছি আমরা কোথা থেকে
এসেছি এবং কোথায় ফিরে যাব।
“তোমরা আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং ঐ অঙ্গীকারকেও যা
তোমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন, যখন তোমরা বলেছিলেঃ আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আল্লাহকে ভয়
কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন।” [১]

আমরা কেন আল্লাহর কথা স্মরণ করব? কারণ আমরা মহামহিম আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছি আর তার কাছেই ফিরে
যাব, আর এই মহাসত্যকে উপেক্ষা করে আসা আর যাওয়ার মাঝের জীবন পার করে দেয়ার চেষ্টা একটা চরম বোকামি,
ভ্রষ্টতা আর অকৃ তজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। তাই আমাদের জীবনের অন্ধকার এখনও আমাদের কাটে নি।

তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা
অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। [২]

আমরা সবাই মুখস্তের মত বলে আসছি, “ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা”, কিন্তু আমরা তা বুঝি না এবং বোঝার
পথ বন্ধ করার জন্য শাসকগোষ্ঠী আর ধর্মব্যবসায়ীরা তৎপর। কারণ তারা জানে, আমরা হলাম মুসলিম আর মুসলিমরা
আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। তারা পশ্চিমা আদর্শের দাসত্ব করে না, তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন শক্তির
আনুগত্য করে না। তারা যদি ইসলাম বোঝে তাহলে তাদেরকে দাস বানিয়ে রাখা যাবে না, বরং তারা অপ্রতিরোধ্য এক
জাতি হয়ে উঠবে যেমনটি হয়েছিল এর আগে।

আপনি মুসলিম হয়ে কি ভু লে গেছেন ইসলামের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের কথা? আপনি কি ভু লে গেছেন যখন মুসলিমরা
ইসলামকে সত্যি সত্যি তাদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে নিয়েছিল আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন এবং
পুরুষ্কৃ ত করবেন আখিরায়? আপনি কি ভু লে গেছেন দুই উমরের কথা যারা ইসলামের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন
জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যাদেরকে আজও আমরা গর্বভরে স্মরণ করি?

যদি মনে রাখেন তাহলে কেন আল্লাহর কিতাব বাদ দিয়ে এডাম স্মিথ আর কার্ল মার্ক্সের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন? কেন ছুটছেন
সুলতানা কামাল, আসিফ নজরুল আর জাফর ইকবালদের পেছনে যারা তাদের সীমিত জ্ঞান দিয়ে ট্রায়াল এন্ড এরর
দিয়ে দুনিয়া চালায়? কেন আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) থাকতে মুজিব আর জিয়ার কাছে থেকে ত্রুটিপূর্ণ আদর্শ ধার
করতে হচ্ছে? কেন আজ আমরা বাঙ্গালী পরিচয়ে সম্মান খুজছি যখন আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন মুসলিম
হিসেবে? ইসলাম কি শিখিয়ে দেয় নি কিভাবে ন্যায় বিচারে সাথে শাসন করতে হয়? ইসলাম কি আমাদেরকে শিখিয়ে দেয়
নি কিভাবে নিজেকে এবং রাষ্ট্রকে চালাতে হবে? কেন আজ ইসলামকে বাদ দিয়ে পুজিবাদ, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতাকে
জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছি যখন আমরা সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি জানেন আমরা
কখন কি করি?

“আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার
থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দে শে তাঁরই পথের দিকে।”
[৩]

আজকে বুদ্ধিজীবির দল “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল”- এই বলে মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে
রাখতে চায়। তারা দাবি করতে চায়, “গণতন্ত্রের জন্য এ যুদ্ধ”। তাদের দাবির সত্যতা কোন প্রমাণ নেই। আর যদি তাদের
দাবি সত্য হয়েও থাকে, আমি খুব পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, ঐ ভ্রষ্ট চেতনা যদি আমরা ৭১ এ গ্রহণ করেও থাকি,
এ ভু লের দোহাই দিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা করে বহু বছর কাটিয়ে নিজেদের সর্বনাশ করেছি, আর দরকার নাই, আমরা
মুসলিমরা সেইসব কু ফর চেতনা ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলি। আমাদের মুসলিমদের ইসলাম আছে, আমরা আল্লাহকে মান্য
করি, কোন মানবরচিত চেতনার উপাসনা করতে আমরা আসি নাই। ইসলামের মাধ্যমে কিভাবে অন্যায় অত্যাচারে
মোকাবেলা করে শোষনমুক্ত সমাজ গড়তে হয় তা আল্লাহই বলে দিয়েছেন এবং দেখিয়ে দিয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর
মাধ্যমে, এটা বোঝার জন্য দালাল বুদ্ধিজীবিদের কাছে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ
অবতীর্ন করেছেন? [৪]

কিভাবে দারিদ্র্য দূর করা হবে, কিভাবে সমাজ থেকে অপরাধপ্রবণতা দূর করা যাবে, কিভাবে জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর
দেয়া পানির ন্যায্য বন্টন নিশ্চিত করতে হবে তা ইসলামে আছে। মুসলিমরা আল্লাহর দেয়া বিধান দিয়ে নিজেদের জীবন
পরিচালনা করে আর আল্লাহ তার যথার্থ প্রতিদান দেয়ার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞা করেছেন।

আমরা যেদিন ইসলাম নিয়েছি সেইদিন থেকে আমাদের পরিচয় মুসলিম। আমরা দেশকে ভালবাসি তবে দেশকে পূজা
করি না। দেশের আলো-বাতাস-পানি দেশ নিজে দেয় নি, এগুলো আল্লাহ দিয়েছেন, দেশ কোন entity নয়। আল্লাহকে খুশি
করতে চাই বলে দেশের সেবা করি। জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ পরিচয়ে পরিচিত হতে আল্লাহ আমাদের বলেন নাই। একমাত্র
তাকওয়ার মাপকাঠি ছাড়া অন্য কোন উপায়ে একজন আরব একজন অনারবের থেকে কিছুতেই শ্রেষ্ঠ নয়। আমাদের
মুসলিমদের কাছে আগে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্যটাই আগে, জাত-পাত-বর্ণ না। জাতির গরম আমরা দেখাই না,
আমরা মুসলিমরা এক জাতি এবং আমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করি। এদেশের বুদ্ধিজীবিরা প্রায়ই বাঙ্গালী সংস্কৃ তির
দোহাই দিয়ে এটা সেটা জায়েজ করতে চান। জেনে রাখুন, “বাঙ্গালী সংস্কৃ তি” নামক লাইসেন্সটি মুসলিমদের সাথে চলে
না, সংস্কৃ তির আরেক নাম হল বাপ-দাদার অন্ধ অনুকরণ, আল্লাহ বলছেনঃ

"আর যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ "অনুসরণ কর যা আল্লাহ আদেশ করেছেন", তখন তারা বলেঃ "না, আমরা
সে বিষয়ের অনুসরণ করি তার যার উপরে আমাদের বাপ-দাদাদের দেখেছি ।" (কি!) যদিও তাদের বাপ-দাদাদের
বুদ্ধি বিবেচনা কিছু ছিল না এবং তারা পথনির্দে শ গ্রহণ করেনি (তবুও)?"[৫]

“The Prophet (pbuh) said: Allah, Most High, has removed from you the pride of the pre-
Islamic period and its boasting in ancestors. One is only a pious believer or a miserable sinner.
You are sons of ADAM and ADAM came from dust. Let the people cease to boast about their
ancestors. They are merely fuel in Jahannam; or they will certainly be of less account with
Allah than the beetle which rolls dung with its nose.” [৬]

মুসলিম হিসেবে আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া, ঘৃণা ভালবাসা আল্লাহ নির্ধারণ করেন, আমরা না। তাই আমরা
মুসলিমরা রাজাকারদের (এবং একই সাথে তাদের সমকক্ষ আঃলীগ, বিএনপিকেও) ঘৃণা করি এজন্য না যে তারা
স্বজাতিকে হত্যা করেছে, বরং এজন্য ঘৃণা করি কারণ তারা অন্যায় করেছে এবং সেটাকে ইসলামের নামে লাইসেন্স দিতে
চেয়েছে। অন্যায়ের কোন জাতিপরিচয় নাই, যদিও বুদ্ধিজীবিরা সিলেক্টিভিলি আমাদের মধ্যে racism এর বিষ ছড়িয়ে
দিতে চায়। আমরা আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ) কে ভালবাসি, ক্ষমতা বা রাজত্ব না। আমরা শুধু আল্লাহর কাছে
প্রতিদান চাই, আমরা ভারত আমেরিকার পা চাটতে এই দুনিয়ায় আসি নি। আমরা মুসলিমরা এসেছি আল্লাহর দ্বীনকে
সমুন্নত রাখতে আর সকল মিথ্যা আদর্শের কবর রচনা করতে। আমরা মুসলিমরা সত্যের জয়ে সামিল হতে এসেছি।
আমরা কেবল এক আল্লাহর আনুগত্য করি এবং তার কাছে সাহায্য চাই, বিনিময়ে তিনি আমাদেরকে এই দুনিয়াতে শোষণ
থেকে মুক্ত করবেন এবং আখিরাতে পুরুষ্কৃ ত করবেন। আর যদি আমরা মুসলিমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কোন
জীবনব্যবস্থাকে মুক্তির উপায় হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে আমাদের কপালে এই দুনিয়ায় এবং পরকালে দুঃখ-দূর্দ শা ছাড়া
কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাই উমর (রাঃ) বলেছিলেনঃ

We were the most humiliated people on earth and Allah gave us honor through Islam. If we
ever seek honor through anything else, Allah will humiliate us again.

***
[১] সূরা মায়িদাঃ২০
[২] সূরা ইমরানঃ৮৩
[৩] সূরা ইবরাহীমঃ ১
[৪] সূরা আন'আমঃ১১৪
[৫] সূরা বাক্বারাঃ১৭০
[৬] আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ ৩৬, হাদীস নং-৫০৯৭
কবিতাগুলো মুহাম্মদ ফিরোজ আর রাজীব ভাইয়ের

Collected From
Brother
Zim Tanvir

You might also like