Download as doc, pdf, or txt
Download as doc, pdf, or txt
You are on page 1of 4

তৃ তীয় অবস্থা

by Collected Notes and Discussion on Monday, October 31, 2011 at 10:37am


যুক্তিবিদ্যায় সাধারনত দুই রকম অবস্থার কথা স্বীকার করা হয়ঃ শুদ্ধ অথবা ভু ল । মানুষ যেহেতু
যুক্তিবাদী তাই মানুষ সাধারনত এই দুই অবস্থায় থাকতে পারে । হয় সে ভু ল করে নয়তো ঠিক করে । একে
বলে বাইনারি অবস্থা । (Binary State). এই অবস্থার মজা হচ্ছে এখানে ২ টা কন্ডিশন থাকেঃ 0 (you
are wrong) অথবা 1(you are right) .

কিন্তু মানুষ অনেক জটিল একটা সৃষ্টি । তাই সাধারন যুক্তিবিদ্যাই মানুষের শেষ সীমা নয় । মানুষ ভু ল বা
শুদ্ধ ছাড়াও আরেক তৃ তীয় অবস্থায় থাকতে পারে । আমার লেখা এই তৃ তীয় অবস্থাকে নিয়েই ।

আমার কথা গুলো অনেকেরই হেঁয়ালি মনে হচ্ছে ।ব্যাপারটা পরিস্কার করি । তার আগে দুইটি বিষয় নিয়ে
কথা বলা দরকার ।

একটা হচ্ছে ইসলামী শারিয়াহ তে বাইনারি কন্ডিশন

আমরা ইসলাম নিয়ে সকলেই জানি ।আমরা ইসলাম সম্পর্কে যতই কম বা বেশী জানি না কেন একটা
বিষয় কিন্তু আমরা সবাই জানি । সেটা হচ্ছে ইসলামে দুই ধরনের কন্ডিশন থাকেঃ একটা হচ্ছে অনুমোদিত
(permitted) আরেকটা হচ্ছে নিষিদ্ধ (forbidden).
এই দুই কন্ডিশনের কোনটি কোন কাজের জন্য প্রযোজ্য সেটা নির্ধারণ করে ইসলামের নিয়ম সমূহ যাকে
বলা হয় শারিয়াহ। এই নিয়ম গুলোর মাধ্যমে আমরা প্রত্যেক কাজকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি ।
অনুমোদিত কাজ আর নিষিদ্ধ কাজ ।ইসলামে এ ব্যাপারে পরিস্কার ।
মোটামুটি এটাই হচ্ছে ইসলামের বাইনারি কন্ডিশন । পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম গুলো তেও মোটামুটি কম বেশী
এই দুই অবস্থা খুঁজে পাওয়া যায় ।

এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দিকে নজর দেই । একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাকঃ মানুষ একটা খারাপ কাজ
করার পর কি করে?
অবান্তর লাগছে কিছুটা , তাই না? মানুষ খারাপ কাজ কেন করে বা কিভাবে করে সেটা নিয়ে ভাবা যায়
কিন্তু খারাপ কাজ করার পর কি করে এটা আবার কি কথা ? বুঝিয়ে বলিঃ মনে করা যাক কেউ একজন
প্রথমবারের মত চু রি করলো । এর পর তার কেমন লাগবে? খুব সংক্ষেপে বলি ।সমস্যা কি নিয়ে ভাবার
আগে একটা জিনিশ আমাদের জানতে হবেঃ মানুষ কখনো মানসিক অশান্তিতে থাকতে চায় না । সে যেই
হোক না কেন । কোন না কোন ভাবে তার মানসিক শান্তি আনতে হবে । এটাই কিন্তু আমাদের অনেক বড়
একটা বৈশিষ্ট্য ।
এখন লোকটার ব্যাপারে আসা যাকঃ সে একটি খারাপ কাজ করেছে । এটি টার মধ্যে সাধারনভাবে
অপরাধবোধ সৃষ্টি করবে । মানসিক অশান্তি তৈরি হবে । এ থেকে মুক্তি পাবার জন্য সে দুইটি কাজ করতে
পারেঃ
১) চু রি করা খারাপ কাজ এই পুরো ব্যাপারটাই মন থেকে মুছে ফেলা ।এটা অনেক ভাবেই করা যেতে পারে

২) নিজেকে justify করা । সে যুক্তি দিয়ে দেখাবে তার জন্য চু রি টা মোটেও খারাপ কাজ নয় । এখন এটা
করার সময় ই হবে বিপত্তি ।ঠিক ভাবে যুক্তি দিতে না পারলে তার justification এর জন্য সে তখন নিয়ম
গুলোর অপ ব্যাখ্যা করা শুরু করবে , weak point গুলো ব্যাবহার করবে ।

এবার এই দুইটি বিষয় জোড়া লাগানো যাক । ধরা যাক এক লোক মুসলমান । সে খারাপ কাজ করে
ফেলেছে । বিভিন্ন কারনে সে কাজ টি করতে পারে । কিন্তু যখনই সে জানবে কাজটি নিষিদ্ধ , সাথে সাথে
কাজটি বন্ধ করা (বন্ধ করার আপ্রান চেষ্টা করা) এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাটাই মুসলিম
হিসেবে তার দায়িত্ব । তাকে যে কোন একদিকে যেতে হবে । হয় কাজটাকে গ্রহন করা অথবা আল্লাহকে ভয়
করা । দুইটাই একসাথে করা অসম্ভব । কারন কোন মুসলিম হারাম কে হালাল কোন ভাবেই মনে করতে
পারবে না । ব্যাপারটা মোটামুটি সরল । কিন্তু কাহিনী এখানেই এর শেষ নয় ।
আজকাল মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনেক উন্নতি হয়েছে । উপোরক্ত সরল সমাধান অনেক এযুগের আধুনিক
ছেলে মেয়েদের কাছে গ্রহন যোগ্য নয় । তাদের “সব চাই”
তারা ইসলামের ছায়াতলের শান্তিতে ইহকাল আর পরকাল পার করতে চায়। আবার নিজেকে সব কিছু
থেকে বঞ্ছিত করতেও নারাজঃ
“তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিন চাই...”
কিভাবে রাজ্য সহ রাজকন্যা পাওয়া যায় ?এমন কোন বুদ্ধি যাতে “সাপ মরবে কিন্তু লাঠি ভাংবে না”?
তখন তারা এক অভিনব পন্থা বের করে ।সমস্যা সমধানের জন্য তারা ইসলামের বাইনারি কন্ডিশনঃ
সঠিক আর ভু ল ছাড়াও আরেক অবস্থা উদ্ভাবন করেছে । এই অবস্থাই হল সেই তৃ তীয় অবস্থা ।

যখনই তারা দেখে কোন একটা কাজ ইসলাম নিষেধ করছে কিন্তু সে কাজ টি করতে পছন্দ করে তখন
প্রথমেই তাদের মনে অশান্তির সৃষ্টি হয় । এক দিকে তারা মুসলিম আরেক দিকে হারাম কাজ । কি করা
যায়... তারা তখন প্রথমেই চেষ্টা করে মনের মধ্যে একটা সিস্ট(cyst) এর মত আবরনী তৈরি করতে (১ম
পর্যায়)। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে নিজেকে justify করার চেষ্টা করে ।

“কাজটা এত খারাপ না”

“মানুষ আরো খারাপ কাজ করে ”

“আরে এতো সামান্য ব্যাপার ।আমি অনেক ভালো কাজ করি”


তবে কারো কারো বিবেক একটু উন্নত হয় । তারা এসব ছেলে ভু লানো অর্থহীন কথায় তু স্ট হয় না । তারা
তখন ইসলামী শারিয়াহ কেই বদলানোর চেষ্টা করে(২য় পর্যায়) ।
“ইসলাম এত কঠোর না”

“ইসলাম অনেক মুক্ত ”

“কে বলছে ইসলামে এটা নিষেধ? অই সময় আর এখন এক না ।ব্যাপারটা আলাদা...”

অনেক সুন্দর করে ইসলামকে নিজের মত করে বানিয়ে নেয় । নিজের পছন্দ –অপছন্দ ঠিক রেখে কিভাবে
যে ইসলামকে “modify” অথবা “correct” করা হয় দেখলে আসলেই অবাক হতে হয় । ইজমা কিয়াস
করে কুরআনের নিয়ম/ আয়াত পরিবর্ত ন করার কথা বলতেও তাদের দ্বিধা হয় না ।

তবে অনেকেই এই উদ্ভট আর অন্যায় উপায়ে শান্তি পায় না । তারা বুঝতে পারে যে কোন ভাবেই কাজ টি
কে হালাল করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না ।তখন শুরু হয় তৃ তীয় অবস্থার চরম পর্যায়ঃ তাদের মনকে তারা
কঠিন করে ফেলে । খারাপ কাজ করার পর তারা একবারো মনে করে না কাজ টা কি উচিৎ হচ্ছে কি না ।

আমার লেখাটি যারা এই তৃ তীয় অবস্থায় থাকেন তাদের উদ্দেশে লেখা ।


আপনি তো মুসলমান । আর এক জন মুসল্মানের যেই জিনিশ থাকবেই তা হল কুরআন আল্লাহর বানী এটি
বিশ্বাস করা । আপনি করেন তো ? সত্যিই বলছেন ? কুরআন আল্লাহর বিধান ? তাহলে শুনুন... আল্লাহ
বলেছেনঃ

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ
করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।সুরা মায়িদা-৩

আপনি কি মনে করেন এখানে সব কিছু মধ্যযুগীও নিয়মে ভর্তি ? নাকি সমগ্র বিশ্বের সর্ব কালের জন্য
এখানে সমধান আছে ?

“আরে বাবা এখানে কি এখনকার life style এর কথা বলা আছে নাকি ? এখন কম্পিউটারের যুগ। মানুষ
এখন আধুনিক। সমাজ অন্য রকম ... ”
সত্যিই বলা নাই ? আপনি কুরআন কতটু কু পড়েছেন ? কুরআন সর্বকালের জন্য নাজিল হয়েছে । আপনি
যেই অবস্থায় থাকুন না কেন.. কুরআন আপনাকে সমাধান দিতে সক্ষম ।এটা বিশ্বাস করেন? নিজেকে
জিজ্ঞেস করুন তো honestly আপনি কতটা sincerely উত্তর খুজেছেন ?
আবার ইসলামের কিছু পছন্দ না হলে “আমার মনে হয় না এটা এরকম……”,আরে আপনার মনে হওয়া
না হওয়া দিয়ে কি আসে যায়?আপনার মন কি শরীয়ত নাকি? আপনার মন যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই
পারতো তবে তো আল্লাহর কুরআন পাঠানোর দরকার ছিলো না ; ছিলো কি ??আপনার কি মনে পড়ে নাঃ
O you who have believed, enter into Islam completely [and perfectly] and do not
follow the footsteps of Satan. Indeed, he is to you a clear enemy.(Baqarah:208)
আপনি যে নিজের মত করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন; ইসলামকে নিজের পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে নতু ন করে বানিয়ে
নিচ্ছেন কে আপনাকে এই অধিকার দিয়েছে?? আপনার কি যোগ্যতা আছে ? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিজেও
চাইলে কুরআন এর একটা কথা পরিবর্ত ন করতে পারবেন না । আর আপনি বলতে চান ইজমা কিয়াস
দিয়ে আয়াত পরিবর্ত ন করতে? কে আপনাকে এই সাহস দিলো ? নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন তো
সত্যিই আপনি মুসলমান কি না ?
যেখানে একটা আয়াত নিয়ে স্কলাররা ৪-৫ বছর ধরে পি,এইচ, ডি করেন আপনি শুধুমাত্র তার “অনুবাদ”
পড়ে সব বুঝে ফেলেছেন?

আর যারা চরম পর্যায়ে আছেনঃ “কিছুতেই আর কিছু আসে যায় না” আপনাকে একটি কথাই বলিঃ নিজের
কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াবেন না । সবার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো গেলেও আল্লাহর কাছ থেকে পালাতে
পারবেন না । এখনো সময় আছে , একটু ভাবুন । ভেবে দেখুন আপনি কি করছেন ।

 কিছু অনিবার্য কারনে লেখাটি কিছুটা অবিন্যস্ত হয়ে গিয়েছে । লেখক এজন্য আন্তরিকভাবে
দুঃখিত ।

by Fahim Anjum

You might also like