Download as docx, pdf, or txt
Download as docx, pdf, or txt
You are on page 1of 9

Review the internal and foreign policies of

Oliver Cromwell as Lord protector.

ভূ মিকাঃ 1653 থেকে 1658 সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং


আয়ারল্যান্ডের লর্ড প্রটেক্টর হিসাবে অলিভার ক্রমওয়েল তার শাসনকালে
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা করেন।
একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা এবং ইংরেজ কমনওয়েলথের
স্বার্থ রক্ষা করা তার নীতির অন্যতম দিক ছিলো।

লর্ড প্রটেক্টর হওয়ার পটভূ মিঃ অলিভার ক্রমওয়েল হান্টিংডমের একজন


ক্ষু দ্র জমিদার ছিলেন। ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে তাঁ র জন্ম হয়। ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি
হান্টিংডেমের পক্ষ থেকে প্রথম চার্লসের পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন ।
তিনি দীর্ঘ পার্লামেন্টের একজন সদস্য ছিলেন এবং সদস্য হিসেবে তাঁ র দায়িত্ব
সুচারুরূপে পালন করেন। তিনি অবশ্য পার্লামেন্টে নেতৃ স্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন
না; কারণ, পার্লামেন্টীয় নেতা হবার মত গুণাবলি তাঁ র ছিল না। দীর্ঘ
পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে তিনি ধর্মীয় প্রশ্নে অত্যন্ত উৎসাহী ছিলেন এবং
'রুট অ্যান্ড ব্রাঞ্চ বিল' ও 'গ্র্যান্ড রেমনস্ট্যান্স'-এর মুসাবিদার কার্যে সহায়তা
করেন।

গৃহযুদ্ধের আবির্ভাবে ক্রমওয়েল স্বীয় দক্ষতার বলে দ্রুত পুরোভাগে স্থান দখল
করেন। যুদ্ধের সময় তিনি অশ্বারোহী যোদ্ধা হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে খ্যাতি
অর্জ ন করেন এবং নিজেকে একজন শ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী সেনানায়ক হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত করেন। পূর্বে তাঁ র কোন সামরিক শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও তিনি
যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতির যোগ্যতা প্রদর্শন করেন। তিনি পার্লামেন্ট
পক্ষের সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন করে দুর্দান্ত 'আয়রন সাইডস' বা 'লৌহপার্শ্ব
সেনাবাহিনী গঠন করেন । এরপর তিনি নিউ মডেল আর্মি' নামে একটি সুদক্ষ
সেনাদল গঠন করেন। এ বাহিনীর দ্বারাই তিনি চূ ড়ান্ত জয়লাভ করে প্রথম
চার্লসের আশা-ভরসা সম্পূর্ণরূপে ধূলিসাৎ করেন।এরূপে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে
ক্রমওয়েল স্বীয় সামরিক প্রতিভাবলে ইংল্যান্ডে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূ ত হন। প্রথম চার্লসের মৃত্যুদণ্ডের পর
শাসনভার রাম্প পার্লামেন্টের উপর ন্যস্ত থাকলেও প্রকৃ ত ক্ষমতা তাঁ র হাতেই
ছিল। এ সময় তিনি আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের রাজসমর্থকগণকে দমন করে
এ দুই দেশে নিজের কর্তৃ ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁ রই নির্দে শে
রচিত 'ইনস্ট্রু মেন্ট অব গভর্নমেন্ট'-এর শর্তানুসারে তিনি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও
আয়ারল্যান্ডের 'লর্ড প্রোটেক্টর' (রাষ্ট্ররক্ষক; রাষ্ট্রনায়ক) নিযুক্ত হন।

ইনস্ট্রু মেন্ট অব গভর্নমেন্ট'-এর শর্তানুসারে ক্রমওয়েল ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে


ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের 'লর্ড প্রোটেক্টর' বা রাষ্ট্ররক্ষক হিসেবে
কার্যভার গ্রহণ করেন। ক্রমওয়েলের প্রোটেক্টর পদ গ্রহণ এবং পরবর্তী পাঁ চ
বছর এ পদে সমাসীন থেকে ইংল্যান্ডের শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
প্রোটেক্টররূপে তাঁ র কার্যভার গ্রহণের পর আধুনিক সংজ্ঞা মতে ইংল্যান্ডে
ডিক্টেটরশিপ বা একনায়কত্বের শাসন আরম্ভ হয়।ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডের
ইতিহাসে প্রথম সাম্রাজ্যবাদী শাসক ছিলেন।

অভ্যন্তরীণ নীতিঃ
আইন সংস্কার:
প্রোটেক্টর হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করার পর ক্রমওয়েল 'কোর্ট অব চ্যান্সারি'
(Court of Chancery) এবং অন্যান্য আইন সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ
করেন। দেশের প্রচলিত আইন ব্যবস্থার কোথায় কি ত্রুটি রয়েছে তা পরীক্ষা
করে দেখার জন্য তিনি বিখ্যাত আইনবিশারদ ম্যাথিউহেলের সভাপতিত্বে
একটি সুদক্ষ কমিশন নিয়োগ করেন। তাঁ র অধীনে নতু ন শাসনতন্ত্র 'ইনসট্রুমেন্ট
অব গভর্নমেন্ট'-এর বিধান অনুসারে পার্লামেন্টীয় সংস্কারের একটি পরিকল্পনা
কার্যকর করা হয় এবং ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড একই পার্লামেন্টের
অধীনে একত্রিত হয়। এরূপে ক্রমওয়েল ইনসট্রুমেন্ট অব গভর্নমেন্ট'-এর
মাধ্যমে ইংল্যান্ডকে একটি লিখিত শাসনতন্ত্র প্রদান করেন। তিনি পার্লামেন্টীয়
শাসনে বিশ্বাস করতেন এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশ শাসনের চেষ্টা
পার্লামেন্টের মাধ্যমে একটি সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থা প্রবর্ত ন করাই তাঁ র লক্ষ্য ছিল।
কিন্তু তাঁ র এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়।এছাড়া, 'বারা' (Borough)-র সদস্যসংখ্যা ৪৩০
হতে ১৩৯-এ হ্রাস করা হয় এবং অপ্রয়োজনীয় বা তু চ্ছ শহরগুলোর সদস্যপদ
বিলুপ্ত করে বৃহত্তর ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বণ্টন করে দেয়া হয় ।
ধর্মীয় নীতিঃ
ধর্মীয় ব্যাপারে ক্রমওয়েল সে যুগের তু লনায় সর্বাপেক্ষা উদার নীতি অবলম্বন
করেন। তিনিই ইংল্যান্ডের প্রথম শাসক যিনি রোমান ক্যাথলিক ছাড়া আর
সকল সম্প্রদায়কে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেন। তাঁ র ধর্মীয় সহিষ্ণু তার ধারণা
বর্ত মান যুগের তু লনায় সংকীর্ণ মনে হলেও তৎকালীন যে কোন ইউরোপীয়
রাষ্ট্রের তু লনায় অনেক বেশি উদার ছিল। তার সমালোচকগণ তাঁ র আকাঙ্ক্ষার
কথা বলেন। তাঁ র আকাঙ্ক্ষা ছিল বটে, কিন্তু তা তাঁ র ধর্ম ও দেশের জন্য। তিনি
কখনও তাঁ র ব্যক্তিগত লাভের জন্য আকাঙ্ক্ষী ছিলেন না এবং যা কিছু
করেছেন সবই দেশের মঙ্গলের জন্য করেছেন। পোপ ও বিশপপন্থীরা (অর্থাৎ
ক্যাথলিকগণ) ছাড়া তিনি পিউরিটানদের সকল ধর্মনীতি দলের প্রতি সহিষ্ণু
নীতি অবলম্বন করেন। প্যারিস গির্জার পুরোহিতগণের কার্যকাল ও চরিত্র
অনুসন্ধান করার জন্য তিনি একটি আদেশ জারি করেন। এ অনুসন্ধানের ফলে
যাঁ রা অসৎ কিংবা কমনওয়েলথের প্রতি আস্থাহীন প্রমাণিত হন, তাঁ দের গির্জা
থেকে বহিষ্কার করা হয়। ক্রমওয়েল পিউরিটান মতবিরোধী অনুষ্ঠানাদি বন্ধ
করে দেন। গির্জার তোজোৎসব এবং খ্রিস্টের জন্মদিনের আড়ম্বরপূর্ণ উৎসব
বন্ধ করে দেয়া হয়।

জাতীয় চরিত্রের সংশোধনঃ

ক্রমওয়েল জাতীয় চরিত্রের সংশোধনেও সচেষ্ট হন। এ উদ্দেশ্যে তিনি


মদ্যপান, দ্বন্দ্বযুদ্ধ, ঘোড়দৌড়, মোরগ লড়াই, থিয়েটার প্রভৃ তি নিষিদ্ধ করেন।
ধর্মসঙ্গীত ভিন্ন অন্য সঙ্গীতচর্চাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। ক্রমওয়েল আইন
দ্বারা পিউরিটানদের "বিশ্রাম দিবস' কার্যকর করার চেষ্টা করেন। তার দ্বিতীয়
পার্লামেন্ট বিশ্রাম দিবসে ভবঘুরেদের শাস্তি প্রদানের জন্য একটি আইনও পাস
করেন। এ সকল ব্যবস্থা গ্রহণের দ্বারা ক্রমওয়েল জাতীয় নৈতিক আচরণের
সংস্কার ও উন্নতি বিধান করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁ র এ সব ব্যবস্থা গণমনে
বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। কারণ, তাদের কাছে এগুলো দৈনন্দিন
জীবনধারার উপর কঠোর হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হয়েছিল। ফলে ক্রমওয়েল
জনগণের অপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

পার্লামেন্টীয় শাসনঃ
ক্রমওয়েল পার্লামেন্টীয় শাসনে বিশ্বাস করতেন। পার্লামেন্টের মাধ্যমে একটি
সুদৃঢ় শাসনব্যবস্থা প্রবর্ত ন করাই তাঁ র অভ্যন্তরীণ নীতির উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু
তাঁ র এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রোটেক্টর পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ১৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি
প্রোটেক্টরেট পার্লামেন্ট আহ্বান করেন। বিরুদ্ধ সমালোচনার ভয়ে পূর্বাহ্নেই
একশ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়। তবু পার্লামেন্টের সাথে ক্রমওয়েলের বিরোধ
হয়। পার্লামেন্ট অধিবেশনে মিলিত হয়েই শাসনতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা শুরু
করে এবং এর সংশোধন দাবি করে। বিরক্ত হয়ে ক্রমওয়েল পার্লামেন্ট ভেঙে
দেন ।

এর পর তিনি মেজর জেনারেল নামক সামরিক সামরিক শাসন কর্মচারীদের


সাহায্যে দেশ শাসন করেন। ইংল্যান্ডকে দশটি (অথবা এগারটি) প্রদেশে ভাগ
করে প্রত্যেকটি প্রদেশের শাসনভার মেজর জেনারেল নামক কর্মচারীদের
একজন করে মেজর জেনারেলের উপর অর্পণ করা হয়। তাঁ রা ক্রমওয়েলের
নির্দে শক্রমে শাসনকার্য নির্বাহ করতেন। এতে প্রকৃ তপক্ষে দেশে সামরিক
স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনগণ এ ব্যবস্থায় আদৌ সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
কারণ ক্রমওয়েল পার্লামেন্টের বিনা অনুমতিতে কর স্থাপন, বিনা বিচারে
লোককে কারাগারে আটকসহ নানা প্রকার স্বেচ্ছাচার করেন। বস্তুত চার্লসের
তু লনায় তাঁ র শাসন অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারমূলক ছিল। সুতরাং জনগণ একে
সামরিক স্বৈরাচার মনে করে ঘৃণার দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছিল।

এক বছর পর ক্রমওয়েল মেজর জেনারেলের শাসন প্রত্যাহার করে আবার


পার্লামেন্ট আহ্বান করেন (১৬৫৬ খ্রি.)। এটা দ্বিতীয় প্রোটেক্টরেট পার্লামেন্ট।
এবারও পূর্বাহ্নে একশত সদস্যকে বহিষ্কৃ ত করা হয়। অবশিষ্ট সদস্যরা
ক্রমওয়েলের সমর্থক ছিলেন। তাঁ রা 'বিনীত আবেদন ও পরামর্শ নামে একটি
নতু ন শাসনতন্ত্রের খসড়া ক্রমওয়েলের কাছে উপস্থিত করলে ক্রমওয়েল কিছু
সংশোধিত আকারে তা অনুমোদন করেন। এ শাসনতন্ত্র অনুযায়ী পার্লামেন্টের
একটি দ্বিতীয় কক্ষ গঠিত হয়। কিন্তু পুনর্গঠিত দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের
সাথেও ক্রমওয়েলের মতবিরোধ হয়। সুতরাং তিনি শীঘ্রই এ পার্লামেন্টও
ভেঙে দেন । এর সাত মাস পরেই ক্রমওয়েলের মৃত্যু হয় । ইংল্যান্ডকে একটা
সন্তোষজনক ও স্থায়ী শাসন ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষ্যে তাঁ র সকল চেষ্টাই ব্যর্থ
হয়। তাঁ র মৃত্যুর পর অল্পদিনের মধ্যেই তাঁ র শাসনব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে।
ফলে ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের জনগণ পুনরায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে
এবং সে সঙ্গে অন্তবর্তীকালীন শাসনতান্ত্রিক পরীক্ষারও অবসান ঘটে। এরূপে
ক্রমওয়েলের অভ্যন্তরীণ নীতির লক্ষ্য ব্যর্থ হয়। দক্ষ শাসক হয়েও
পার্লামেন্টের সাহায্যে কিংবা এ ছাড়া আর কোন অবস্থাতেই তাঁ র শাসন
প্রচেষ্টা সার্থক হয়নি।

পররাষ্ট্রনীতিঃ অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ না করলেও ক্রমওয়েল তার


পররাষ্ট্র নীতির দ্বারা ইংল্যান্ডের শক্তি, মর্যাদা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে সক্ষম
হয়েছেন। তাঁ র পররাষ্ট্র নীতির উদ্দেশ্য ছিল- ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক ও
সামুদ্রিক প্রাধান্য স্থাপন করা, ইউরোপে প্রোটেস্টান্ট মতবাদকে সমর্থন করা,
ইংল্যান্ডের সিংহাসনে স্টু য়ার্ট বংশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা রোধ করা এবং ইউরোপীয়
রাজনীতির ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের মর্যাদা বৃদ্ধি ও প্রাধান্য স্থাপন করা। প্রোটেক্টর
পদে অধিষ্ঠিত হবার অব্যবহিত পরেই ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডের মর্যাদা অক্ষু ণ্ণ
রেখে ডাচদের সঙ্গে সন্ধি করে ওলন্দাজ যুদ্ধের অবসান করেন। এ সন্ধির
শর্তানুসারে ওলন্দাজরা নেভিগেশন আইনের শর্তাদি মেনে চলতে, ইংলিশ
চ্যানেলে পতাকা অবনমিত করে ইংরেজ জাহাজকে সম্মান দেখাতে এবং
ইংল্যান্ড থেকে আগত স্টু য়ার্ট আশ্রয়প্রার্থীদের তাড়িয়ে দিতে রাজি হয় । এর
পর ক্রমওয়েল ডেনমার্ক , সুইডেন ও পর্তু গালের সাথে বাণিজ্য চু ক্তি করে
ইংল্যান্ডের বাণিজ্যিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করেন।
ক্রমওয়েল ইউরোপীয় ঘটনাবলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে ইংল্যান্ডের
মর্যাদা বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধের অবসান হওয়া
সত্ত্বেও ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে তখনও যুদ্ধ চলছিল। উভয় দেশই
ক্রমওয়েলের সাহায্য কামনা করত। স্পেনকে সাহায্য করার বিনিময়ে
ক্রমওয়েল স্পেনের নিকট স্পেনীয় আমেরিকায় ইংরেজদের বাণিজ্য করার
অধিকার এবং ধর্মপালনের স্বাধীনতা প্রদান প্রভৃ তি শর্ত আরোপ করেন। স্পেন
এ সমস্ত দাবি মানতে অস্বীকার করলে ক্রমওয়েল ফ্রান্সের সাথে মৈত্রী স্থাপনে
অগ্রসর হন। ফ্রান্সের সাথে মৈত্রী স্থাপনের বিনিময়ে তিনি যে সকল শর্ত
আরোপ করেন, ফরাসিরাজ তা মেনে নেন।

এ সময় ডিউক অব স্যাভয় প্রোটেস্টান্টদের উপর অসহনীয় নির্যাতন


চালিয়েছেন। ক্রমওয়েল ফরাসিরাজের কাছে দাবি করেন যে, তিনি যেন
ডিউকের উপর চাপ প্রদান করে তাঁ কে প্রোটেস্টান্ট নির্যাতন বন্ধ করতে বাধ্য
করেন। ইংল্যান্ডের বন্ধু ত্ব অর্জ ন করতে আকাঙ্ক্ষী ফরাসিরাজ তৎক্ষণাৎ
ক্রমওয়েলের দাবি পূরণ করেন। এর ফলে ক্রমওয়েল ইউরোপে
প্রোটেস্টান্টদের রক্ষক বলে বিবেচিত হন। এর অল্পকাল পরেই ফ্রান্সের সঙ্গে
আলোচ্য চু ক্তি সম্পাদিত হয়।
ইতোমধ্যে ক্রমওয়েল হিস্পানিওলা নামে একটি স্পেনীয় উপনিবেশ আক্রমণ
করার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটি অভিযান প্রেরণ করেন। হিস্পানিওলা
আক্রমণ করতে গিয়ে ইংরেজরা ব্যর্থ হলেও তাঁ রা এ অভিযানে স্পেনের
জ্যামাইকা দ্বীপটি দখল করতে সক্ষম হয় । এরপর ফ্রান্সের সাথে মৈত্রী চু ক্তি
সম্পাদনের পর ক্রমওয়েল ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সাথে একযোগে
স্পেনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এ যুদ্ধে ইংরেজ
এডমিরাল ব্লেক অসাধারণ কৃ তিত্ব প্রদর্শন করেন। ক্রমওয়েল ব্লেকের নেতৃ ত্বে
ভূ মধ্যসাগরে একটি অভিযান প্রেরণ করেন। ব্লেক একদল ইংরেজ বন্দীকে
মুক্ত করার জন্য তিউনিস আক্রমণ করেন। এটিই ইংরেজ জাতির স্পেনের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ভূ মধ্যসাগরে প্রথম অভিযান। এছাড়া ব্লেক ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে
কার্ডি জ বন্দর অবরোধ করেন, স্পেনের অনেক ধনরত্নবাহী জাহাজ হস্তগত
করেন এবং ১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সান্তাক্রু জ বন্দর আক্রমণ করে একটি স্পেনীয়
নৌবহর ধ্বংস করেন। এরূপে সমুদ্রবক্ষে ইংরেজ জাতি অপ্রতিহত ক্ষমতার
অধিকারী হয়। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-ফরাসি যুগ্মবাহিনী তিউনিসের যুদ্ধে
স্পেনকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে। এ বিজয়ের ফলে স্পেনের মর্যাদা হ্রাস
পায় এবং ইউরোপ মহাদেশে ইংল্যান্ডের গুরুত্ব বেড়ে যায় ।

প্রথম দুজন স্টু য়ার্ট রাজার আমলে ইংল্যান্ড ইউরোপে যে মর্যাদা হারিয়েছিল,
ক্রমওয়েল তা পুনরুদ্ধার করেন। এভাবে বিচার করলে দেখা যায়,
ক্রমওয়েলের বৈদেশিক নীতির সাফল্যের তু লনায় তাঁ র অভ্যন্তরীণ নীতির
সাফল্য -নগণ্য ছিল।
সমালোচনাঃ ক্রমওয়েলের পররাষ্ট্র নীতি ইংল্যান্ডের জন্য সে সময় বিরাট
সুফল নিয়ে এলেও অনেক ঐতিহাসিকের মতে এটি ভবিষ্যতের নিরিখে
ত্রুটিহীন ছিল না। ক্রমওয়েল স্পেনকে ইংল্যান্ডের প্রধান শত্রু বলে ধরে
নিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃ তপক্ষে স্পেন ছিল পতনোন্মুখ, অপরদিকে ফ্রান্স ছিল
দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। সুতরাং স্পেনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সকে সাহায্য করে
ক্রমওয়েল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রধান শত্রু ফ্রান্সকেই অধিকতর শক্তিশালী
হবার সুযোগ দিয়েছেন। ভবিষ্যতের ঘটনাবলি এর সাক্ষ্য বহন করেছে। চতু র্দ শ
লুইয়ের শাসনাধীনে ফ্রান্স কিছুকাল পরেই ইউরোপের শান্তি ও স্বাধীনতার
পক্ষে বিঘ্নস্বরূপ হয়েছিল। ক্রমওয়েলের বৈদেশিক নীতির সমর্থনে বলা যেতে
পারে যে, এর বিকল্প হিসাবে ক্রমওয়েলের তখন আর করার কিছুই ছিল না।
কারণ, প্রায় এক শতাব্দী যাবৎ স্পেন ও ইংল্যান্ডের মধ্যে ধর্মীয় প্রশ্নে ঘোর
বিরোধিতা চলছিল। এ ধর্মীয় প্রশ্নই ক্রমওয়েলকে স্পেনবিরোধী নীতি অবলম্বনে
প্ররোচিত বা বাধ্য করেছিল এবং শুধু ক্রমওয়েলকেই নয়, তাঁ র
সেনাবাহিনীকেও। এটি ভু ললে চলবে না যে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেলে
ক্রমওয়েলের ক্ষমতা এক সপ্তাহও টিকত না; আর তা নিশ্চয় ঘটত যদি
ক্রমওয়েল স্পেনের সাথে মৈত্রীস্থাপন করতেন।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ক্রমওয়েল ইংল্যান্ডকে একটি স্থায়ী ও


সন্তোষজনক শাসন ব্যবস্থা প্রদান এবং নবপ্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্রকে স্থায়ী করার
জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু সকল সদিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁ র এ অভ্যন্তরীণ নীতি
ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতা এ কারণে যে, তাঁ র ধ্যান-ধারণা তাঁ র যুগের তু লনায় অনেক
অগ্রগামী ছিল। তার ধর্মীয় সহিষ্ণু তার নীতি এবং পার্লামেন্টীয় সংস্কার কার্যসমূহ
অকালপক্ক ছিল। সুতরাং কেউই সেগুলোর যথার্থতা অনুধাবন করতে পারেনি।
অধিকন্তু, তাঁ র প্রবর্তি ত শাসনব্যবস্থা ফলোৎপাদক ও সুনিপুণ হওয়া সত্ত্বেও তা
সামরিক স্বৈরতন্ত্র ছাড়া আর কিছুই ছিল না। জনগণ অল্পকালের মধ্যে উপলব্ধি
করে যে, তারা রাজার স্বেচ্ছাতন্ত্রের পরিবর্তে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী
স্বেচ্ছাতন্ত্রের অধীন হয়েছে। সুতরাং ক্রমওয়েল বৃহত্তর জনসমষ্টির সন্তুষ্টি ও
সমর্থন লাভ করতে পারেননি এবং তাঁ র মৃত্যুর পর অল্পকালের মধ্যেই তাঁ র
প্রবর্তি ত শাসন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

You might also like